জ্বী ভাই, আপনার কষ্টময় ক্লিক বৃথা যাইবে না। আপনি যদি স্হুলকায় হইয়া থাকেন তবে ইহা পঠনপূর্বক কার্য সিদ্ধিতে সপ্তাহে তিন কেজি পর্যন্ত ঝরাইয়া লইতে পারিবেন।
বিবাহের পরবতী বার মাসে শশুড়বাড়ীর খানা পেটে পড়িয়া আদমের ওজন বাড়িয়া যায় বাড়াবাড়ি রকমের বার কেজি। কর্মস্থল হইতে বন্ধুমহল, সকলস্থানেই পেটকু, মোটকু, গোল্লা ইত্যাদি নামে অলংকৃত হইতেছিল। এমন সময় ওহীর মত ঠেকিল জিএম ডায়েট নামের নূরানী তরিকা। তবে হুবহু অনুসরণ করিতে না পারিলেও প্রায় কাছাকাছি করিয়া এক সপ্তাহে তিন কেজি কমাইয়া লইয়াছি। কিভাবে?...আসুন জানিয়া লইঃ
প্রথম দিনঃ ফলমূল
এই সময়টা, বিশেষ করিয়া গরমের সময়টা প্রচুর পাওয়া যায়। সকল ফল (কলা বাদে) জায়েজ আছে বিধায়, বিবিধ ফল দিয়া ইচ্ছামত উদরপূর্তিতে কোন বাধা নাই। তবে অধিক পরিমানে তরমুজ আর বাংগি লইলে আপনার কাজ আগাইয়া যাইবে বহুদূর। দিনে কমপক্ষে আট গ্লাস পানি খাইবেন। খুব বেশী ক্ষুধা লাগিলে মুড়ি চিবাইতে পারেন। আমার বউ অবশ্য সরিষার তেল আর পিঁয়াজ মরিচ দিয়া মুড়ি বেশ করিয়া ভাজিয়া দিয়াছিল। অন্য কোনপ্রকার খাবার গ্রহণ করিতে যাইবেন না। পরিলে সকালে ডাবের পানি খাইবেন, আপনার শরীরে মিনারেলের ঘাটতি রোধ করিবে। আমি আনারসও খাইয়া গলা নষ্ট করিয়া ফেলিয়াছিলাম।
দ্বিতীয় দিনঃ সবজি
চরম বেদনাদায়ক দিন। ভাত ছাড়া আমি কোনকালে সবজি চাখিয়া দেখিয়াছি মনে হয় না। কিন্তু, উপায় নাই...আজ হুদা সবজি গিলিতে হইবে। এক্ষেত্রেও আমার বউ তেলেসমাতি দেখাইল। সেরকম করিয়া আমার জন্য ভেজিটিবল সুপ আর চায়নিজ ভেজিটিবল রাঁধিয়া দিল। আমিও মনের সুখে কোপাইলাম। পূর্বের দিনের ন্যায় ডাব ও মুড়িও চলিল।
তৃতীয় দিনঃ ফলমূল ও সবজি
সারাদিন ধরিয়া ফাঁকে ফাঁকে তরমুজ আর শশা খাইলাম। বউ শশা, টমেটো আর পিঁয়াজ মরিচ দিয়া মাখাইয়া দিল। চমৎকারভাবে সালাদখান শেষ করিলাম। নিজে বুদ্ধি করিয়া টক দই আর পুদিনা পাতা দিয়াছিলাম...বলাবাহুল্য গিলিতে পারি নাই। বউ লান্চ আর ডিনারে আবার সেই সুপখান রাঁধিয়া দিল। খাইয়া জান বাঁচাইলাম। পূর্বের দিনের ন্যায় ডাব ও মুড়িও চলিল।
চতুর্থ দিনঃ দুধ আর কলা
এইদিনের ডায়েট বেশ সহজ। সারাদিনে আটখান কলা আর চার গ্লাস দুধ খাইবেন। অবশ্য জিএম ডায়েটে দুধ ফ্যাট ফ্রি কিনা, এই বিষয়ে কিছু বলা নাই। তাই বাসার নিডো দুধই খাইলাম। আর জিএম ডায়েটের আটখান কলার জায়গায় দশ/এগার খান গিলিলাম। কেননা, আমেরিকানদের কলার সাইজ আমাদের বঙ্গদেশীয় চম্পাকলা হইতে নিশ্চয় বড় (কলা এখানে কেবলই ফ্রুট )। পূর্বের দিনের ন্যায় ডাব ও মুড়িও আছে।
পঞ্চম দিনঃ গরুর মাংস আর টমেটো
সমস্যা হইলো, এইদিন পড়িল পহেলা বৈশাখ। কাজেই আমিষের উৎস গরুর মাংসের পরিবর্তে ইলিশ মাছ খাইলাম। জিএম ডায়েটের হ্যাম বার্গারের কার্বহাইড্রেট লইলাম যৎকিঞ্চিত ভাত হইতে। সামান্য ভাতের সাথে ব্যপক করিয়া গরুর গোশত খাইলাম। সংগে টমেটো আর শশাতো আছেই। ডাব চলিতেছে। পানি চলিবে কমপক্ষে বার গ্লাস। টমেটো খাইতে হইবে কমপক্ষে ছয়খানা।
ষষ্ঠ দিনঃ গরুর মাংস আর সবজি
এই দিন অফিস খোলা। কাজেই মনমত খাইবার ফুরসত কোথায়? বউ বাটি ভর্তি করিয়া শশা, টমেটো, গরুর গোসত আর টোস্ট দিয়া দিল। দুপুরতক টমেটো আর টোস্ট খাইলাম। দুপুরে সামান্য ভাতের সাথে প্লেট ভর্তি করিয়া মিষ্টি কুমড়ার সবজি নিলাম। সাথে লইলাম একবাটি গরুর গোসত। আর শশাতো আছেই। রাত্তিরে বউ আবার সেইরাম করিয়া সস দিয়া গরুর গোসত ছোট ছোট পিস করিয়া পাকাইয়া দিল, নাম নাকি অনিয়ন বিফ। পেট পুরিয়া খাইয়া লইলাম। ডাব চলিতেছে। পানি চলিবে বার গ্লাস।
সপ্তম দিনঃ লাল চালের ভাত, সবজি আর ফল
মীনা বাজার বা এগোরাতে বালাম চাল বা বিভিন্ন ধরণের লাল চাল পাইবেন। আধা কেজি কিনিয়া লইলাম। সকালে অফিসে গিয়া দোকান হইতে সবজি কিনিলাম। একফাঁকে দশটার দিকে খাইয়া লইলাম। দুপুর আর রাত্তিরে একটু এলোমেলো হইয়া গেল। তেমন কিছু খাওয়া হইল না। পানি চলিতেছে বার গ্লাস। ডাবও আছে।
অষ্টম দিনঃ
আজকের দিন সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন। কারন, আজকে আপনি আপনার ওজন মাপিবেন। সকালে দেহ হালকা করিয়া, ওজন মেশিনে দাঁড়াইলাম। হুমমম...আশি কেজি হইতে কমিয়া সাতাত্তরে কাছাকাছি আসিয়াছে। মন্দ নয়...কি বলেন? যদিও আমার বউয়ের সাথে এখনও এই বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় নাই...
পরিশিষ্টঃ
জিএম ডায়েট মোটামুটি কার্যকরী একটি পদ্ধতি। তবে ওজন হ্রাসের পরিমান ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হইতে পারে। আটাশ বছরের উর্দ্ধে যেকোন সুস্থ ব্যক্তি এটি করিতে পারেন। তবে নিয়মমাফিক সাত দিন পার করিতে হইবে। শেষ করিয়া আবার পুরানো নিয়মে ফিরিয়া গেলে সাতদিনে শ্রম পুরাই পন্ড হইবে। কাজেই পরিমিত আহার বাঞ্ছনীয়। তবে আমার মনে হইয়াছে, মূল ওজন কমে মূলত প্রথম তিন দিনে। বাকী দিনগুলাতে খুব একটা হেরফের হয় না। মাসে বা দেড় মাসে এটি রিপিট করিতে পারেন, তবে ঘনঘন না করাই উত্তম। কেননা আমাদের দেশের খাদ্যে ও ফলে ভেজালের কল্যাণে এগুলার পুষ্টিমান এমনিতেই অনেক কম। কাজেই বেশী নিয়ন্ত্রিত আহারে আপনি অসুস্থ হইতে পারেন। নিয়মিত হাঁটিবার অভ্যাস করিলে ডায়েটটি শরীরে ধরিবে অতিদ্রুত। কাজেই কম করিয়া হইলেও হাঁটিবার অভ্যাস করুন। এই এ্যাপ হইতে হাঁটিয়া কত কিলোক্যালরী ঝরাইলেন জানিতে পারিবেন। জিএম ডায়েট সম্বন্ধে আরও জানিতে জোরে ক্লিক করুন এইখানে। কাজেই আর দেরী কিসের...ওজন কমাইতে কত কিছুই তো করিলেন, সাতটা দিন আর একটু না হয় কষ্ট করিয়া দেখেন না দাদা/দিদিমনিরা
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:০১