কিছু শক্তিশালী যুক্তি-তর্ক ও মতামত প্রকাশ করছি এবং একই সাথে এর বিপরীতে যুক্তি-খন্ডন আশা করছি। সরাসরি মূল পয়েন্টগুলোতে চলে যাই -
১. (প্রসঙ্গ: ঢাকা) প্রচন্ড যানজট, রাস্তাঘাটে অসম্ভব সময়-নষ্ট, যা কল্পনারও বাইরে। এখানে প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাস। প্রতিদিন আমাদের প্রায় ৩-৪ ঘন্টা (নূন্যতম) সময় ব্যয় হয় যানজটে। শুধু গাণিতিক ভাবেই (অন্য প্রভাবকগুলোর কথা বাদই দিলাম) প্রমাণ করা সম্ভব যে, আমরা কখনই আমাদের ১০০% কর্মক্ষমতা, কর্মদক্ষতা এবং উৎকর্ষতা দিতে পারব না শুধুমাত্র এই অনর্থক সময়নষ্টের কারণে। আর, ২ কোটি মানুষ প্রতিদিন ৩-৪ ঘন্টা সময়নষ্ট করলে ভবিষ্যতে আমরা কতটুকু উন্নতি করতে পারব বা আদৌ উন্নতি করতে পারব কি না ভেবে দেখবেন কি?
২. অসহনীয় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, কাজে গাফিলতি, অদক্ষতা, মূর্খতা, নীচ মানসিকতা, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা, যোগ্য ব্যক্তির অবমূল্যায়ন, তোষামোদকারীর পদোন্নতি - সকল কর্মক্ষেত্রে এমন দুরবস্থা দেখে কি আপনার মনে প্রশ্ন জাগে না, আমরা কখনও কি কর্মঠ, উন্নত জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারব তো?
৩. মাত্রাতিরিক্ত সন্ত্রাস, চাদাবাজি, খুন, ধর্ষণ, চুরি, রাহাজানি, অপহরণ, ছিনতাই, পকেটমার, আ্ইন-শৃঙ্খলার অবনতি, আইনের ফাঁক-ফোকর, বিচার-ব্যবস্থার দুর্বলতা, সর্বত্র নিরাপত্তাহীনতা - এগুলো শুধু ১-২ দিন বা মাসের কথা নয়, বরং একটি চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রতীয়মান, যা আগামীতে আরও ভয়ংকর ও নৃশংস হতে চলেছে। এগুলো দেখতে দেখতে কি ভাবতে পারেন যে, আমরা আদৌ কখনও কোন দেশের জন্য উন্নতির উদাহরণ হতে পারবো?
৪. নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, ভঙ্গুর অর্থনীতি, অস্থিতিশীল রাজনীতি, সকল ক্ষেত্রে সামগ্রিক ব্যর্থতা কি আমাদের জাতীয় ব্যর্থতা নয়?
৫. শহরে বাচ্চাদের ডরেমন-ম্যানিয়া, মা-খালাদের সিরিয়াল-ম্যানিয়া (অবশ্যই হিন্দি সিরিয়াল), সর্বত্র বলিউডি গান-সংস্কৃতির অবচেতন মনের চর্চা কি আমাদের সামনে এগিয়ে নিচ্ছে নাকি ক্রমশ অস্তিত্ব-সংকটের সম্মুখীন করে দিচ্ছে? প্রশ্ন রাখলাম।
৬. অনেকে বলবেন, আমরাতো অনেক উন্নতি করে ফেলেছি । এখনতো গ্রামে একটাও কুঁড়েঘর নেই, সব পাকা টিনের ঘর। কেউ আর না খেয়ে মরেনা, সবাই ভালো আছে। আমি বলি, আমার পাশের দেশরা যদি চাঁদে অভিযান চালানোর ঘোষনা দেয়, আর আমি যদি আমার "পাকা টিনের ঘর" নিয়ে সন্তুষ্ট থাকি তাহলে আমার আর কিছু বলার নেই।
৭. আমাদের বলার মত কিছু আদৌ আছে কি? হাতের কাছে আপাতত কিছুই নেই। না আছে পারমানবিক শক্তি (যদি থাকত, তাহলে অন্তত আশেপাশের দেশ থেকে কিছু রেসপেক্ট পাওয়া যেত), না আছে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি (থাকলে নিশ্চয় বিশ্ব ব্যাংক, আই.এম.এফ, জাপান, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশের দুয়ারে দুয়ারে ভিখারীর বেশে ঘুরতাম না), না আছে উন্নত প্রযুক্তি (আমরা যে কোন(!) দুনিয়ায় বাস করি সেটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রযুক্তির ব্যবহার আর একটা ছোট্ট গুগল সার্চ-এর মাধ্যমে বিভিন্ন নতুন নতুন পণ্যের লিস্ট দেখে চোখ ছানাবড়া হওয়া দেখলেই বোঝা যায়)।
তাহলে আমাদের আছেটা কি? আমি বলব, হ্যাঁ, আমাদের এখনও একটা জিনিস অবশিষ্ট আছে, আর তা হল আমাদের ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি হাত। এই হাতগুলো দিয়ে যদি এই মুহূর্ত থেকে সমাজের জমে থাকা ময়লা গুলো সাফ করে, এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে সবাই শুধু নিজের দায়িত্বটুকু যথাযথভাবে পালন করি, তাহলেই এই জাতি তার ভাগ্য পরিবর্তনে সক্ষম হবে এবং দ্রুততম সময়ে। অন্যথায় যত দেরি করব ততই এই হাতগুলোতে জং ধরবে এবং একসময় পচন ধরবে সারা শরীরের। আপনি কি সহ্য করতে পারবেন, আপনার চোখের সামনেই যা ঘটছে / ঘটে চলেছে তা হয়ত ওই প্রক্রিয়ারই নামান্তর?
সময় পেলে পরবর্তী পর্ব লিখব। সবাই ভালো থাকবেন। শুভ রাত্রি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:১৬