somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যাপ্টেন বাবাকোয়া রিটার্নস 'খ'

০৭ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ক্যাপ্টেন বাবাকোয়ার সমস্যার সমাধান অবশ্য সেকেন্ড লেফটেনেন্ট মুরগীই করল (পদবী ডাউন করে দেয়ার পর)। বৃহস্পতিবার সকাল সকাল নোভেরা আর জাহিদ যার যার অফিসে চলে যাওয়ার পর যথারীতি খালেদা বেগম ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে টিভি রূমে গিয়ে সোফায় গা এলিয়ে টিভি দেখা শুরু করল। একটু পর পর লাল দাঁত বের করে হেসে গড়িয়ে পড়ছে টিভিতে কিছু একটা দেখে। খাওয়া চলছে তার সাথে।
বাবাই উদাস মুখে নীল হেলমেটটা মাথায় দিয়ে রান্না ঘরে গেছে বাবলির জন্য ফিডার আনতে। এখানেই কোথাও বানিয়ে রাখার কথা। টুল নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল কোন তাকে রেখেছে ফিডার। সেকেন্ড লেফটেনেন্ট মুরগীকে দেখা গেল সে খাবারের তাকে উঠে কি যেন খুঁজছে অনুসন্ধিৎস্যু মুখে। মনে হয় ব্যক্তিগত কোন মিশনে এসেছে। বাবাই পাত্তা দিল না। এদিক ওদিক তাকিয়ে ফিডার খুঁজতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখল খাবার রাখার তাকে বড় একটা গামলায় অনেকগুলো মাংসের চপ রাখা। নোভেরা বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দিয়েছিল। খাবার সময় বের করে ওভেনে গরম করে নিত কেবল। এখানে রাখা কেন এগুলো? ফ্রিজেই না থাকার কথা- অবাক হয়ে ভাবে বাবাই। খোলা অবস্থায় রেখে দিয়েছে কে? ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিতে যাবে- হঠাৎ দেখলো ভেতরে কি জানি একটা নড়ছে।
চোখ বড় বড় করে দেখলো দুটো কালো শূঁড় উঁচিয়ে উঁকি ঝুঁকি মারছে একটা গাবদা গোবদা তেলাপোকা। সেকেন্ড লেফটেনেন্ট মুরগীর তাড়া খেয়ে বোধ হয় এখানে এসে লুকিয়েছে। বাবাই শঙ্কিত হয়ে ভাবল- খাবারের মধ্যে তেলাপোকা থাকা ঠিক না। অসুখ হয়। নোভেরা বারবার বলে দিয়েছে তেলাপোকা যাতে খাবারে না যায়।
বাবাই চিন্তিত মুখে টুল থেকে নেমে পড়ল। টিভি রূম হয়ে নোভেরাদের ঘরে চলে এলো। খালেদা বেগম এখনো আইসক্রিম খেতে খেতে টিভি দেখছে আর ফোনে কথা বলছে উঁচু গলায়। কাকে যেন আসতে বলছে বাসায়। সেই লিকপিকে শুঁকনা লোকটা নাকি? পাত্তা দিল না ক্যাপ্টেন বাবাকোয়া।
কয়দিন আগে বাসায় ব্যাঙ ঢুকেছিল। নোভেরা ব্যাঙ ভয় পায়। জাহিদ তখন বাথরুমের হারপিক ছিটিয়ে সেই ব্যাঙটাকে মেরেছিল। হারপিকে নাকি কার্বলিক নামের এসিড থাকে। পোকা মাকড় সমানে ভয় পায় এটাকে।
বাবাই বাথরুমে ঢুকে খুঁজে বের করল হারপিকের বোতলটা। গম্ভীর মুখে ওটা নিয়ে রান্না ঘরে চলে এলো। টিভি রূম থেকে রান্না ঘরটা ভাল করে দেখা যায় না। তাই খালেদা বেগম দেখতে পেল না বাবাইকে। সে ফোনা কথা বলায় ব্যস্ত। নাকের লোম ছিঁড়তে ছিঁড়তে কেমন ন্যাকা ন্যাকা গলায় বলছে, “মজিদ, তোমারে একবার না বলছি আমারে আপা ডাকবা না? খালেদা ডাকবা শুধু। আর এইটারে তোমার নিজের বাসা মনে করবা। চলে আসো এখন। একটু সুখ দুঃখের আলাপ করি। আর ব্যাগটাও নিয়া যাও। ডাক্তারনী ছেমড়ি আয়ে পড়লে তো ঝামেলা। রাতে যা সরাইছি দিনে দিনে নিয়া যাও।”
ওপাশের কথা শোনা গেল না আর।
বাবাই তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। রান্নাঘরে এসে টুলে উঠে চপের গামলায় হারপিকের বোলতটা টিপে ধরল। ব্যাঙ মরলে তেলাপোকাও মরবে নিশ্চই। খাবার দাবার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার।
ক্যাপ্টেন বাবাকোয়া আনন্দের সাথে দেখলো তেলাপোকাটা প্রায় সাথে সাথেই মারা গেছে। চামচ দিয়ে তেলাপোকাটাকে নিয়ে নিচে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিল, ঢাকনা দিয়ে সুন্দর করে ঢেকে দিল চপের গামলাটা। ফিডার খুঁজে পায়নি। বানায়নি বোধ হয় খালা। সেকেন্ড লেফটেনেন্ট মুরগীকে নিয়ে ফিরে এলো বাবলির কাছে। ডাইনিং টেবিলের নিচে দাবা বোর্ডে উপুর হয়ে ঘুটি চিবানোর চেষ্টা করছে মাড়ি দিয়ে।
ক্যাপ্টেন বাবাকোয়া উদাস মুখে হারপিকের বোতলটা একপাশে রেখে বলল, “তোর ফিডার পাওয়া যায়নি। অনেক খুঁজেছি। আম্মা এলে বানায় দিতে বলতে হবে। ঐ মোটকা খালা বানায় দিবে না মনে হয়।”
কথা শেষ হতে না হতেই কলিং বেলের শব্দ হল। বিরক্ত মুখে বাবাই বলল, “ওই শুঁটকা লোকটা আবার আসছে মনে হয়।”
বাবলি গভীর আগ্রহ নিয়ে হারপিকের বোতলটার দিকে হাত বাড়াতেই বাবাই নিয়ে নিল ওটা, “উঁহু। এটা তোর খাওয়ার জিনিস না। তোর বয়স মাত্র সাড়ে ছয় মাস। ছোট বাচ্চাদের শুধু দুধ খেতে হয়। আরেকটু বড় হ, তখন খাবি।” বাবাই হারপিকের বোতলটা আবার বাথরুমে রেখে আসে। গন্ধটা ভাল না, তাই বাবাইয়ের খেতে ইচ্ছা হয়নি। না হলে একটু খেয়ে দেখা যেত।
যাবার সময় ড্রইং রূমে উঁকি দিয়ে দেখল সেই লিকপিকে লোকটা আবার এসেছে। বেড়ালের মত গোঁফে তাঁ দিতে দিতে গল্প করছে সোফায় বসে। মোটকা মহিলাটা প্রায় কোলে উঠে পড়বে যেন লোকটার। একটা চটের ব্যাগ বের করে অনেকগুলো ওষুধ দিয়েছে লোকটাকে।
“যাই তাহলে খালেদা?” উঠে দাঁড়াতে গেল লোকটা।
হাত ধরে টেনে বসালো আবার, “এত তাড়া কিসের মজিদ? বসো না? সব সময় তো খালি মুখেই উঠে যাও। একটু বসো। কিছু খায়ে যাও?”
বাবাই চলে আসছিল দরজা থেকে। শেষ কথাটা শুনে আবার ফিরে তাকাল, মহিলাটা কেমন ঢুলু ঢুলু নয়নে তরল গলায় বলছে, “তোমার জনয কয়তা মাংসের বড়া বানায়ে রাখছিলাম। সারাদিন তো কত খাটা খাটুনি যায় তোমার ওপর দিয়া। কিছুই ঠিক মত খাও না। একটু বসো। আমি নিয়াসি।”
বাবাই মহাবিরক্ত হল মোটকা মহিলাটার ওপর। আম্মার বানানো চপ নিজের নামে চালাচ্ছে। আবার খেতেও দেবে এই লোককে! এটা মেনে নেয়া যায় না। মোটেই না!
গট গট করে হেটে এসে রান্নাঘরে ঢুকল মোটকা মহিলাটার পেছন পেছন, রাগী রাগী গলায় বলল, “খালা, চপ আম্মা বানিয়েছে। কাউকে খেতে দেবেন না।”
মুখ বাঁকা করে হাসি দিল, “এহ্‌। কি একখান অর্ডার দিলোরে! যা ইচ্ছা খাবো, যারে ইচ্ছা খাওয়াবো। তোমার কি? গিয়া খেলা করো। এইখানে ঝামেলা করবা না।”
বাবাই রেগে মেগে পা দাপিয়ে বেরিয়ে এল রান্নাঘর থেকে। সে “ক্যাপ্টেন বাবাকোয়া”; তাকে রাগা মানায় না। তাই রাগ দমন করে চলে এলো বাবলিদের কাছে।
খানিক বাদেই বসার ঘর থেকে শুনতে পেল মোটকা মহিলাটা ন্যাকা ন্যাক গলায় বলছে, “হা করো মজিদ ভাই। আমি খাওয়ায় দেই।”
মজিদ নামের লোকটা কেমন সন্দিহান গলায় বলল, “আপনি- মানে তুমিই বানাইছো তো? কেমুন ওষুধ ওষুধ গন্ধ না?”
“আরে ধুর। এত সব ওষুধ নিয়া বসে আছো দেখে এই রকম লাগতেছে। আমি নিজেই সারাদিন ওষুধ পত্রের মধ্যে থাকি দেখে আইসক্রিম খাইলেও মনে হয় ডেটল খাইতেছি।........ হা করো- ”
ফ্রিজটা ডাইনিং টেবিলের পাশেই রাখা। রান্নাঘরে জায়গা কম বলে এখানে নিয়ে এসেছে নোভেরা। ক্যাপ্টেন বাবাকোয়া হেলমেট পরে রাগে দুঃখে ফ্রিজের ভেতর গিয়ে ঢুকে পড়ল। যাওয়ার আগে বিদায় নিল সেকেন্ড লেফটেনেন্টের কাছ থেকে, “আমি গেলাম। এখানে থাকা আর সম্ভব না আমার পক্ষে। এত নিপীড়ন, এত অন্যায়- মেনে নেয়া যায় না! যায় না!!” নতুন শেখা শব্দ ‘নিপীড়ন’ আর ‘অন্যায়’কে জায়গা মত ব্যবহার করতে পেরে খুশি হল। অল্প কিছুদিন হল চে গুয়েভরার ওপর একটা সিনেমা দেখে শিখেছে বাবাই। বাংলায় রূপান্তরিত ছিল সেটা। ফ্রিজের দরজা লাগিয়ে ঢুকে পড়ল যেন বিপ্লবী চে বিদায় নিলেন কিউবা থেকে!
কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কিউবায় যুদ্ধ লেগে গেল যেন। ক্যাপ্টেন বাবাকোয়া অবাক হয়ে অস্পষ্ট গলায় দুটো ধাড়ি গলায় গগণ বিদারী চিৎকার শুনতে পেল। চে সাহেব ফ্রিজের দরজা সামান্য ফাঁক করে কিউবার দিকে তাকালেন। তাকিয়ে যা দেখলেন তাতে আঁতকে উঠলেন।
টিভি রূম, ডাইনিং রূম, রান্নাঘর- সব তোলপাড় করে দশাসই শরীর নিয়ে ঝড়ের বেগে দৌড়াচ্ছে মোটা মহিলাটা! সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়াচ্ছে শুঁটকা লোকটাও! দুজনেই পেট খামছে ধরে একবার এইদিক, একবার ঐদিক দৌড়াচ্ছে।
কিউবায় কি নতুন কোনো বিপ্লব শুরু হল? স্লোগান দিতে দিতে দৌড়াচ্ছে নাকি? ক্যাপ্টেন বাবাকোয়া সবে দরজা খুলে নেমেছে ফ্রিজ থেকে- শুঁটকা লোকটা দৌড়ে এসে ফ্রিজ থেকে একটা পানির বোতল বের করে ঢক ঢক করে গিলে ফেলল। বাবাই একটু অবাক হয়ে তাকাল। বোতলটায় পানি নেই। ওটাতে আম্মা আচার বানানোর সিরকা রেখেছিল। কথাটা এখন বলে লাভ নেই। খেয়ে ফেলেছে। আম্মা অনেক রাগ করবে। সূক্ষ্ম একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করল বাবাকোয়া।
লোকটা সেটা খেয়েই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকাল বাবাইয়ের দিকে। কয়েক মুহূর্ত থম থমে নীরবতা। তারপরেই ঘরের ছাদ ফাটানো একটা চিৎকার দিয়ে ওখানেই পড়ে গেল লোকটা। ক্যাপ্টেন বাবাকোয়া সহ সেকেন্ড লেফটেনেন্ট মুরগী, বাবলিও চমকে উঠল। সেকেন্ড লেফটেনেন্ট সাহেব ভয় একটু বেশিই পেলেন মনে হয়। কেন না উনি লাফ দিয়ে ডানা ঝাপটে উড়ে যেতে গেলেন। কিন্তু পড়লেন একেবারে খালেদা বেগমের হাতির পাড়ার সামনে। কক্‌রো কক্‌ করে আরেক দিতে দৌড় লাগালেন। খালেদা বেগম তাল সামলাতে পারলেন না। হা হড়কে সোজা এসে পড়লেন শুঁটকা মজিদের ঠিক ওপরেই। দেহে যা কিছু বল অবশিষ্ট ছিল মজিদ সাহেবের, পর্বতশৃঙ্গ ধ্বসে মোটামুটি ভূমির সঙ্গে মিশে গেলেন। কেবল নিচ থেকে চিঁ চিঁ গলায় ভেসে এল, “ও বাজিরে! ইতা হাতি আই ফড়িচ্চে!!” পরবর্তী কথাগুলো আর শোনা গেল না। ভোল্টেজ কমে গেছে- অনুমান করলেন ক্যাপ্টেন বাবাকোয়া। একটা নিঃশ্বাস ফেলে হেলমেট খুলে সেটাকে বুকের সামনে ধরল সহানুভূতি ভরা মুখে।

ঘরের ভেতরের এই বিশাল সুনামি বয়ে যাওয়ার শব্দ পাশের বাসার বিন্তিদের কানেও গিয়েছিল। বিন্তির মা আর ছোট মামা এসে দরজা ধাক্কা ধাক্কি শুরু করতেই বাবাই টুল নিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল। ভেতরে ঢুকেই আক্কেল গুড়ুম তাঁদের। ঘরের সারা মেঝেতে ওষুধ পত্র ছড়ানো ছেটানো। নানা রকম ছোট বড় শিশি বোতলে ভর্তি। ডাইনিং রূমের ফ্লোরে বিশালাকায় এক মহিলা বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে লিকপিকে এক শুঁটকো লোকের ওপর। বাবলি মহা উৎসাহে মেঝেতে থাবা দিচ্ছে ওদের পাশে উপুর হয়ে শুয়ে। দেখে মনে হচ্ছে যেন কুস্তির এ পর্যায়ে রেফারি বাবলি কাউন্ট করছে ১, ২, ৩.......
বিন্তির মা বিড়বিড় করে বললেন, “কান্ডটা কি হল!”
কাপ্টেন বাবাকোয়া গম্ভীর মুখে বললেন, “শরীর ভাল রাখার জন্য নিয়মিত দৌড়াতে হয়। ওনারা মনে হয় সকালে দৌড়ায় নাই। তাই ঘরের ভেতর পিটি করতেছিল।”
বিন্তির মা শূণ্য দৃষ্টিতে তাকালানে বাবাইয়ের দিকে। বাবাই হেলমেট পরে গম্ভীর মুখে পেছনে হাত নিয়ে পায়চারি করে লাগল ওষুধ পত্রেও ওপর দিয়ে।

বিন্তির মায়ের ফোন পেয়ে জাহিদ আর নোভেরা বিশ মিনিটের মাথাতেই চলে এল হন্ত দন্ত হয়ে। ঘরের ভেতরে ঢুকেই নোভেরা চারপাশ এক নজর দেখেই যা বোঝার বুঝে নিল। ঠান্ডা মাথার মানুষ নোভেরা। মেঝেতে এত সব ওষুধ পত্র আর লিকপিকে অজ্ঞান লোকটাকে দেখেই হতাশ ভাবে মাথা নাড়তে লাগল, জাহিদের দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার ক্যাপ্টেন সাহেব তো আবারও চোর ধরেছে দেখছি!”
জাহিদ অবাক হয়ে তাকাল, “মানে?”
“বলেছিলাম না স্টোর থেকে ওষুধ চুরি যাচ্ছে? সব ওষুধ আসলে এই খালেদাই সারাচ্ছিল। আমি বাসায় না থাকলে ওষুধের ডিলার এই মজিদ বদমাশটার বাছে বেচে দিত। আগে আমাদের হসপিটালেই ছিল- ওষুধ চুরির জন্য জেলে গিয়েছিল। এখন দেখি বেরিয়ে এসেও একই কাজ করে যাচ্ছে!”
“কি বলো!” চোখ গোল গোল করে জাহিদ মেঝেতে পড়ে থাকা খালেদা আর মজিদের দিকে তাকালো। জ্ঞান ফিরেছে দুজনেরই, পেট ধরে কোঁকাচ্ছে।
“পুলিশে দেয়া দরকার” জাহিদ বলল।
“কিন্তু এদের এই অবস্থা হল কীভাবে?” নোভেরা চিন্তিত মুখে বলল।
বাবাই ডাইনিং টেবিলের নিচে বাবলি আর সেকেন্ড লেফটেনেন্ট সাহেবকে নিয়ে চুপচাপ বসে ছিল। ও গম্ভীর মুখে বলে উঠল, “ওরা মাংসের চপ খেয়েছে।”
নোভেরা সন্দিগ্ধ গলায় বলল, “মাংসের চপ খেলে এই অবস্থা হবে কেন?”
“ওখানে তেলাপোকা পড়ে ছিল।”
“তেলাপোকা? তেলাপোকা থাকলেই এই অবস্থা হয়?” সরু চোখে তাকালো নোভেরা।
“না....... আমি হারপিক এনে তেলাপোকাটাকে মেরে ফেলেছিলাম। তাও যে কেন এ রকম হল বুঝি নাই। মনে হয় তেলাপোকাটায় অনেক জীবাণু ছিল...” আমতা আমতা করে বাবাই।
জাহিদের চোয়াল ঝুলে পড়ল, মাছের মত খাবি খেতে বলল, “এরা হারপিক খেয়েছে? চপের সাথে?”
“অল্প, বেশি দেই নাই।”
নোভেরা মাথা নাড়তে নাড়তে মোবাইল বের করে হাসপাতালে ফোন দিল, “এদের হাজতে পাঠানোর আগে হাসপাতালে পাঠানো দরকার! তোমার ছেলে যে কোনদিন যে কি বিপদে ফেলে দেয় আমাকে.....”

অ্যাম্বুলেন্স এসে যখন খালেদা আর মজিদকে নিয়ে যাচ্ছে- বাবলি তখনো মেঝেতে আনন্দ সূচক থাবা দিয়ে যাচ্ছে। সেকেন্ড লেফটেনেন্ট মুরগী গম্ভীর মুখে নতুন তেলাপোকার খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এবং ক্যাপ্টেন বাবাকোয়া লন্ড ভন্ড কিউবার দিকে তাকিয়ে আছে উদাস মুখে। এই কিউবাকে ঠিক করতে গিয়ে আজ আম্মুর খবর হয়ে যাবে।


বাবলির দুটো দাঁত গজিয়েছে। তার প্রধান কাজ হল ক্যাপ্টেন বাবাকোয়া দাবা বোর্ডের ওপর ঘুমিয়ে পড়লে বাবাইয়ের কান গিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করা। বাবাই মহা বিরক্ত এটা নিয়ে। আজকাল শান্তি মত ঘুমাতে পারে না সে। ঘুমিয়ে থাকলেই বাবলি ওর পিঠের ওপর উঠে ঘুমিয়ে পড়ে। এবং পাঁচ মিনিট যেতে না যেতেই বাবাইয়ের ঘুম ভেঙে যায়- বাবলি হিসু করে দিয়েছে পিঠের ওপর। এত জায়গা থাকতে ঠিক বাবাইয়ের পিঠের ওপর উঠেই কেন ঘুমায় বাবলি- এটা বিশাল একটা রহস্য বাবাইয়ের কাছে।
“ক্যাপ্টেন বাবাকোয়ার গোপন মিশন সমূহ” নামক ডায়েরিতে বাবলির ওপর অনেক বড় একটা অধ্যায় রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন কিছু না কিছু যোগ হচ্ছে। আজও দুপুরে খাওয়ার পর টেবিলের নিচে হেলমেট পরে ডায়েরিতে পেন্সিল দিয়ে খস খস করে লিখছে বাবাইঃ

“বাবলি নামক এই ছোট মানুষটা ক্যাপ্টেন বাবাকোয়াকে বেশ কয়দিন যাবত অনেক জ্বালাচ্ছে। এইটা ঠিক না। সে যখন তখন বাবাকোয়ার কান খেতে আসে। আর ঘুমিয়ে থাকলেই পিঠের ওপর উঠে ঘুমিয়ে পড়ে। ভিজিয়ে দেয় সব সময়। এইটা অন্যায়, এইটা নিপীড়ন। ওর কান খাওয়া থেকে বাঁচতে এখন সব সময় হেলমেট পরে থাকে বাবাকোয়া। গরম লাগে মাথায়। এইটা কি ঠিক? কান একটা খাওয়ার জিনিস হল?...........”

ডায়েরি বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায় বাবাই। হাই তুলছে ঘন ঘন। ঘুম পাচ্ছে। নোভেরার ঘরে এসে ঘুম ঘুম চোখে দেখল নোভেরা আর বাবলি গভীর ঘুমে। ইদানীং বিছানাতেই ঘুমায় বাবলি।
বাবাই হেলমেট পরেই বিছানায় উঠে আম্মুর অন্য পাশে শুয়ে পড়ল। উপুর হয়ে শোয়ার অভ্যাস বাবাইয়ের। শোয়ার প্রায় সাথে সাথেই ঘুম।
খানিক বাদে দেখা গেল বাবলি উঠে পড়েছে। একবার চিন্তা করল কান্না কাটি শুরু করবে কিনা। ঘুম ভাঙলেই সে গলা ফাটিয়ে চেঁচানো শুরু করে। বাবাইয়ের ভাষ্য মতে ‘গলা পরিষ্কার করে’। কিন্তু আজকে কান্নার চিন্তাটা বাদ দিয়ে বোধ হয় ভাবল আরেকটু ঘুমায় নেয়া যাক। তাই নোভেরাকে ডিঙ্গিয়ে বাবাইয়ের পিঠের ওপর এসে আবার ঘুমিয়ে পড়ল।

পাঁচ মিনিট পর.......
“আম্মা!!! এইটা আবার আমার উপর হিসু করে দিছে!!! আর জায়গা নাই?” ক্যাপ্টেন বাবাকোয়ার গলা ফাটানো চিৎকারে চমকে জেগে ওঠে নোভেরা। চোখ লাল করে বাবাই-বাবলির দিকে তাকিয়ে থাকে। ভেজা গেঞ্জি নিয়ে হেলমেট মাথায় জবুথবু হয়ে বসে আছে বাবাই। বাবলি উপুর হয়ে মহানন্দে থাবা দিচ্ছে বিছানায়।
হাসবে না হাসবে না করেও হেসে দেয় নোভেরা। ছেলে মেয়ের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে চোখে পানি এনে ফেলে।
পৃথিবীতে মা হওয়ার চেয়ে বড় আনন্দের জিনিস আর কি আছে?


উৎসর্গঃ
এবারেও ব্যতিক্রম কিছু নয়। পৃথিবীর সব বাবাই আর বাবলিদের জন্য রইল অনেক অনেক ভালবাসা আর ভালবাসা। তোমরা আছো বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর। তোমাদের অসংখ্য দুষ্টুমী দিয়ে পৃথিবীটাকে সরব করে রেখো হাজার হাজার বছর।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১২:২৭
৯টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×