somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদৃশ্য এক বাড়ি...

০৩ রা জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছোটমেয়েটা হাঁটছিল একটা রাস্তা দিয়ে। আশে পাশের সবাইকে যেন দেখেও দেখতে চাচ্ছেনা। মানুষগুলো কেমন যেন চোখ বাঁকিয়ে বাঁকিয়ে দেখে।পছন্দ হয়না। খুব কান্না পাচ্ছে। কিন্তু কাঁদাও যাবেনা। এই বিশ্রী অভ্যাসটা যদি একেবারে বন্ধ করে দেয়া যেত! মানুষ জন দেখলে কান্নায় পাশে থাকা তো দূর, কোলাহল করে উঠবে।তখন নিজেকে নিয়ে কী করবে ও? পাশে থাকার মানুষের বেলায় যতটা জনমানব শূন্য লাগে, গায়ে পড়ে বিদ্রুপ করার মানুষের তো কোন অভাব হয়না। তাই নিজেকে লুকিয়ে রাখতে ভাললাগে মেয়েটার।মাঝে মধ্যে মনে হয়, শুধু যদি ছায়া হয়ে থাকা যেত। অদৃশ্য কোন ছায়া। যার ছায়া আছে কিন্তু সশরীরে তাঁকে দেখা যাবেনা। কী যে সব আবোলতাবোল ভাবে মেয়েটা !
এমন ভাবতে ভাবতেই হেঁটে চলে আসল একটা বড় রাস্তার মোড়ে। অনেক গুলো মানুষ মিলে একটা বাড়ির উঠানে বসে গল্প করছে। কেউ হাসাতে ব্যস্ত, কেউ আবার কাঁদাতে। সবাই ভাগাভাগি করে যাচ্ছে নিজেদের ভাবনা- অনুভূতি গুলো।
মেয়েটা আড়ালে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখে। প্রথম প্রথম ভাবে কী করে মিশবে এদের সাথে, সবাই যে অনেক জানে। সেখানে ছোট মেয়েটা একদমই অজ্ঞ! এক পা দুই পা করে এগিয়ে যায় মেয়েটা। কাউকে চিনেনা। কারো কথা শুনেনি কখনও। প্রথম প্রথম চুপ করে শুধুই শুনে। ভাবতে থাকে। নিজের অদৃশ্য হওয়ার চিন্তাটা বলা যায় একরকম বাদ ই দেয়। আবার বলা যায়, অদৃশ্য হয়েই সবার গল্পের একজন নীরব শ্রোতা হয়ে থাকে।
ওর এলোমেলো ভাবনাগুলো এই সব ভাবনার তোড়ে খুব কমই ব্যাতিব্যস্ত করার সুযোগ পায় ওকে।
আস্তে আস্তে নিজেরও কিছু বলতে ইচ্ছা হয়। একটু একটু করে বলতে শুরু করে। অনেকটা এমন ভাবেই- যেন কেউ শুনছেইনা। কিন্তু পাশে থাকা মানুষগুলো এত ভাল যে এতদিনের তাদের শ্রোতার এলোমেলো বলাটা খুব মনযোগ দিয়ে শুনতে লাগল। ছোটমেয়েটার কোন ভয় কাজ করছে না।কী আশ্চর্য !!
আর করবেই বা কেন? কেউ তো ওকে দেখতে পাচ্ছে না। কেউ ওকে চিনে না। ওতো এক ছায়া হয়েই আছে-অদৃশ্য হয়ে।
আস্তে আস্তে কান্নাগুলো শুনতে গিয়ে মানুষের মধ্যেও আবেগ ছোঁয় হয়ত। মানুষগুলো এত ভাল যে, এসে বলে- "মেয়ে এত কান্না কীসের তোর!! কীসের এত কষ্ট? একবার হাসতো দেখি?"
মেয়ে কী আর বলতে পারে তার সব কষ্ট। বললে যে আর অদৃশ্য থাকা হবেনা। কিছু না বলে চুপ করে উপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখ বেয়ে জলগুলোও যেন শুকিয়ে যাচ্ছে।বাস্তবতা, জীবনের বাজি, অনুভূতি, দূর্ঘটনা- কয়টাই বা কাউকে বলা যায়! বা বলতেও তো ইচ্ছা হয়না। মেয়েটা চুপ করেই থাকে।
হঠাৎ কয়েকজন এসে মেয়েটাকে আর প্রশ্ন করা বন্ধ করে বলে-
"ঠিক আছে রে মেয়ে! এবার তবে আমার গল্প শোন।"
মেয়ে মুগ্ধ হয়ে শুনে। যতক্ষণ ও এই সবে থাকে, মন ভাল থাকে। লুকিয়ে থাকতে থাকতেও কী করে যেন আটকে যায় মানুষগুলোর সাথে।আর আটকাবে না-ই বা কেন-ওরা যে ওর কান্নাগুলোকে অবহেলা করেনি।মনযোগ দিয়ে ওঁর দু:খ গুলো শুনেছে। ওর সেই ছোটবেলার ডায়েরিটার মত।
অনুভব করতে শুরু করে। ছোট চুপচাপ মেয়ে আস্তে আস্তে বেশ কথা বলা মানুষ হয়ে যায়। সবাইকে তাঁর খুব আপন লাগে। সবার সব কথাতে তার মধ্যে অনেক প্রভাব পড়ে। নিজের একাকিত্বের সময়ে এই মানুষগুলোই ওর সবচেয়ে বড় বন্ধু হয়ে যায়। কাউকে চিনেনা, জানে না, দেখে নাই-কী করে যে মানুষগুলো ওর মত এক আবোল তাবোল ছোট মেয়েকে এতটা আদর করল- ভেবে পায়না মেয়ে। ও তো অদৃশ্যই থাকতে চেয়েছিল। তবে কী ভালবাসা বা আবেগের অনুভব-অদৃশ্যতেও অনুরণিত হয়??
হয় বোধ হয়।কারণ ভালবাসা , স্নেহ আর শ্রদ্ধা'র অনুভূতিই কে কবে কোনদিন দেখেছে? অদৃশ্যে আর অদৃশ্যে এ যে এক জোড় মেলবন্ধন!
এখানেই কাউকে কাউকে খুব আপন লাগে। ছোট বোন বলে কেউ এসে মাথায় হাত বুলিয়ে যায়। কেউ আবার দুষ্টামি করে। কেউ বা ঝগড়া করে। সবই উপভোগ করে মেয়ে। আস্তে আস্তে সবার মধ্যেই মিশে যেতে লাগল যেন।সবার আন্তরিকতায় আর নিজের মধ্যে কাউকে আকড়ে থাকার ইচ্ছা থেকেই হয়ত- মনে হতে লাগল- যত ক্ষুদ্র হই, তবে আমি এদেরই অংশ। এই জায়গায় আমারও একটা স্হান হল।
কাউকে না চিনে না জেনে বন্ধুত্ব হয় কী করে ? এত বিশ্বাস আসে কী করে ? নিজেকেই প্রশ্ন করে মেয়ে মাঝে মধ্যে।
নিজের ভিতর থেকেই উত্তর আসে- যার দৃষ্টিক্ষমতা নাই, তবে কী তার বন্ধু হওয়া বারণ ? আমি না হয় আমার মত করেই অনুভব করব, বিশ্বাস করব। যে নিতে পারবে , সেই নিল। সবাই হয়তো নিবেও না। মনে হবে এটা বোধহয় আধিখ্যেতা কিংবা ন্যাকামি কিংবা গোত্রবদ্ধের পূর্বাভাস! তবে আমি তো জানি আমি এদের কতজনকে কী করে অনুভব করি! আমার এই অনুভূতিই আমার মনের স্বর্ণকোঠরে আমার হয়ে থাকুক।
এর মধ্যেই অনেকে চলে যায়, যে চলে যাবে- তাঁকে আটকানোর ক্ষমতা কী কোন কালে মানুষের হয়েছে?
এভাবে অনেকেই হয়ত হারিয়ে গেছে। কষ্ট হয় ভীষণ মেয়েটার। কেঁদে কেঁদে চোখ ফোলায়। এই অল্প কয়দিনে কেন এত মানুষজনকে আপন ভাবা ! মেয়েটার কষ্ট আর শেষ হবার নয়। অভ্যাসটাই যে খারাপ।
একটা সময় চুপসে যেতে থাকে মেয়েটা। ইচ্ছেডুব ভীষণ ভাবে মাথায় খেলছে। সবকিছু সবকিছুই অসহ্য হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। আড়ালে আবার লুকিয়ে যেতে ইচ্ছা হয়।
তার মধ্যে হঠাৎ একদিন এসে দেখে- তিনটা ছোট মেয়ে, ওর চেয়েও ছোট-ঠিক ওর ছোটবেলার মত করে খেলছে। গল্প বলছে ইচ্ছামত।
আদর নিয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েটা। মুগ্ধ চোখে ওদের মধ্যে নিজের কোন পরিচয় খুঁজতে বসে যেন। নিজের সাথে মিলে বলে আদরটা যেন বেড়ে বেড়ে স্নেহ হয়ে যাচ্ছে। তিনটা মেয়ের মধ্যে প্রত্যেকেরই নিজের স্বকীয়তা আছে।এদের মধ্যে যে সবচেয়ে ছোট- তারও ভীষণ মন খারাপ। চুপ করে থাকতে চেষ্টা করে। কিন্তু ছোটমেয়েটা দেখে ঠিকই বুঝতে পারে,মুখে কিছু বলতে না চাইলেও মেয়েটার মনে হাজার কথা জমে আছে। মেয়েটাও কাঁদতে পারেনা।যদি ওর মতই জমে যায় ? ভয় করে। লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েটা দেখতে থাকে তার স্বরূপ কে যেন।আর চোখ বন্ধ করে বলে-"প্লিস! আর না !! ওকে জমতে দিও না খোদা! "
তার পরের যে ছোট তার মুখটা বেশ ভার , কীসের যেন মন খারাপ।কিন্তু যখন টুপ করে হেসে দেয়-এর চেয়ে সুন্দর নিষ্পাপ কিছু বোধহয় হয়না।
আদুরে একটা মেয়ে ভীষণ। একটু এলোমেলো- খামখেয়ালি। ছোটমেয়েটারই মত। একটা চক পেয়ে রাস্তার মাঝেই আঁকতে শুরু করে নীল লাল সব প্রজাপতি!
আর এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় যে- চুপচাপ লক্ষ্মী মেয়ের মত বসে বসে কী জানি ভাবে। এত স্হির, এত গভীর- যে আড়ালে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটার খুব ইচ্ছা হয় ওর মত হতে।
খুব ইচ্ছা হয় ছুটে যেয়ে আদর করে আসতে। ওর নিজের ই বিভিন্ন সময়ের রূপ যেন এরা।
এদের মধ্যে যেন কখনও না থাকা কোন ছোটবোনের সন্ধান পায় মেয়েটা।
কিন্তু ভালবাসতেও ভয় লাগে, যদি ওরা না বুঝে। যদি আর সবার মত হারিয়ে যায় ? তারচেয়ে বরং লুকিয়ে লুকিয়ে গল্প শোনাই ভাল।অনুভূতিগুলো থাকুক নিজের কাছেই।
ওদের সেই সুন্দর নিষ্পাপ গল্প শুনতে গিয়ে নিজের মন খারাপ যেন কেটে যায়....তাই ঠিক ই আড়াল থেকে ওদেরকে দেখে। মাঝেমধ্যে যেয়ে কথা বলে। এভাবে বড়দের আদর প্রশ্রয়ে আর ছোটদের মাঝে নিজের ছোটবেলা খুঁজতে গিয়ে কীভাবে জানি ছোটমেয়েটার একটা অনুভবের পৃথিবী হয়ে যায় ঐ গল্পের আসরের ছোট বাড়িটা । মেয়েটা এই বাড়ির খোলা প্রাঙ্গনে বসে সবাইকে নিয়ে জোসনা রাতে আড্ডা দেবার স্বপ্ন দেখে।কান্না হাসিতে মাখামাখি সেই আন্তরিকতার আলোতে যেন বড় ছোট কেউ বাদ না পড়ে-কেউ না!!

কিছু কথা: আমার খুব প্রিয় তিনজন ছোটমেয়েকে উৎসর্গ করলাম লেখাটা।
জানিনা কখনও বুঝাতে পেরেছি কীনা বা বুঝেছো কীনা- তবে আমি জানি-

সত্তা যখন নিজেকে খুঁজে পায়
ভাবতে বসে ছোট বোনকে
তখন এই তিনটা ছোট মানুষের কথা
মাথায় প্রথম আসে...

হোক না হয় অদৃশ্যভাবে, ভালবাসা আর স্নেহ- সেটা তো নিজেরই কোন দৃশ্যরূপ থাকেনা। অনুভবটাকেই তুলে রাখি..যদি কখনও সেটার মেঘ যেয়ে তোমাদের মধ্যে বৃষ্টি হয়-তখন মনে করো- এই আপুটা তোমাদের অনেক ভালবাসে, অনেক মিস করে।জানি মন খারাপে বিষন্ন দিন চলছে।এই মন খারাপের সময়গুলোও যেন ঐ বৃষ্টির সাথে ঝরে পরে যায়-সেটাই প্রার্থনা! এই তো আর কটা দিন, এর পরই তো বর্ষা !!

তোমাদের জন্য..আমার ভীষণ প্রিয় একটা গান
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১১ রাত ১২:২৫
৪৫টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×