somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ইচ্ছেবিকেলের চিঠি....

২১ শে এপ্রিল, ২০১১ সকাল ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ ছিল আমার ইচ্ছেবিকেলের দিন।ইদানিং কি জানি হয়েছে,খুব একটা কোন কিছু করতেই উৎসাহ পাইনা।ইচ্ছা করেনা অনেক কিছু করতে,চুপ মেরে বসে থাকতে ভাল লাগে।আর সেটা যদি নদীর কাছেধারে হয় তবে তো আরও শান্তি।
পানি জিনিসটা কেন জানি আমার প্রচন্ড রকম ভাল লাগে।আমি পানি দেখলে হৈ হৈ করে উঠি।আজ সে ইচ্ছাতেই চলে গিয়েছিলাম রুজভেল্ট আইল্যান্ড।খুঁজে পেতে একটা জায়গা পেলাম,যেখানে আশে পাশে মানুষজনের এত সোরগোল নেই।আমি চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে ছিলাম।ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস।আজ বেশ দূরে যেয়ে ফোন কার্ড কিনেছি,কিছু প্রিয় মানুষদের ফোন করব। কথা হয়না অনেকদিন। রিং হচ্ছে,রিং হচ্ছে-কেউ ফোন ধরলো না।সবাই ঘুম! দিনরাত্রির এই পার্থক্যটায় আমার ভারী কষ্ট হয়।কাউকেই তেমন সময়মত পাইনা।আবার ওরা যখন করতে পারে আমি তখন ঘুম কিংবা কাজ! বড্ড বিচ্ছিরি সময়ের জাল।কি আর করা।আরেকটু কাছে গেলাম পানির।রেলিং পেরিয়ে গেলেই আমি পানিতে।ভাল লাগছিল অনেক।একটা বসার জায়গা পেয়ে বসলাম,তাকিয়ে দেখছিলাম ছোট ছোট ব্যাপারগুলো, পানিতে ঢেউ, একটা হাঁসের গা ঝাড়া, দুরে একটা বয়স্ক লোকের সিগারেট খাওয়ার সময় মুখটা কুচকে যাওয়া,একটা যুগলের গল্প করতে করতে হেসে দেয়া।একটা ফুল পড়ে ছিল-সেটা মুখে চিবোতে থাকা চুইংগামটায় বসিয়ে দিলাম।টবের মত লাগছিল।গোলাপি চুইংগামের মাটিতে থাকা ফুলটা দেখতে খুব মজা লাগছিল।দমকা দমকা বাতাস হচ্ছিল।আরাম!!
কিছুক্ষণ পরে দৃষ্টি সরলো একটা পরীর উড়ে যাওয়ায়।একটা ছোটপরী দৌড় দিল আমার চোখের সামনে।উপরে সাদা আর নিচের দিকে হালকা গোলাপী রংএর পরীটাইপ ফুলানো একটা জামা পড়া সোনালী চুলের একটা মেয়ে। এত ছোট,এত সুন্দর!! আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। ছোট বাচ্চাকাচ্চা দেখলে আমার মন ভাল হয়ে যায়,যত খারাপ ই থাকুক, আমি ওদের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেই, ওরাও এত সুন্দর ভাবে সেটা ফিরিয়ে দেয়।এই বাচ্চাগুলোর কাছথেকে আমাদের বড়দের অনেক কিছু শেখার আছে।হয়ত ওদের এত মনে থাকেনা। কিন্তু যাকে ভালবাসে, বা যার কাছ থেকে কোন অনুভব পায়-সেটা এত চমৎকার ভাবে গ্রহণ করে।ওদের অত চিন্তা হয়না, অতকিছু ভাবেনা ওরা।যতটা না নেয়,তার চেয়ে অনেক বেশি ফেরত দেয়।বড়দের মত ওদের ভালবাসাটা এত ভেবে চিন্তে হয়না। ওরা যেন শুধু দেয়ার জন্য ভালবাসে,ভালবাসার জন্য বাসে।এত পবিত্র!!
আরেকটা ছোট বেবিসাইকেলে চড়া নীল রং এর গেন্জি প্যান্ট পরা আমেরিকান ছেলে আসল।এমন ভাবে চালাচ্ছিল যে মনে হচ্ছে দুনিয়ার সেরা বাইকটা ওর কাছে।বিকেল বেলায় বাবা হাঁটতে বের হয়েছে, সাথে তার ছোটভাই বুকের মাঝে ঐ বাচ্চাদের কোলে নেয়ার জিনিসটায় আটকানো।বাচ্চাটাকে দেখে খুব মজা লাগছিল, আমি যে দেখছি সেটা বুঝে একটু লুকায়,আবার লুকিয়ে দেখে আমি দেখছি নাকি।আবার তখন আমিও তাকিয়ে হেসে দেই। বেচারা লজ্জা পেয়ে যায়।তার বাবা তাকে একটা পাউরুটি দিল, সে সেটা খেতে বাইক থেকে নেমে একটা ইটের উচু জায়গায় উঠে গান গেতে গেতে খাচ্ছিল-
লা লা লা.
লা লা লালালা..লালললাললা...লাইলাইলাইলালা
লালা লালা লা লা লা...।
আমি বলতে পারছিনা ওর মত করে।এত চমৎকার লাগছিল।পরী-রাজপুত্র!
কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি আসতে লাগল।হালকা হালকা! আমেরিকার বৃষ্টিটা কেমন যেন-মন খারাপ করা।সেই রকম ভাবে উচ্ছ্বাস নেই যেন তার।যেন তাকে কেউ নিয়ম করে বলেছে- এখন তোমাকে পড়তে হবে!! ব্যাস! সেও পড়ে!!
আমার মনে হয়-ঝরবেই যখন, সব ছেড়ে দিয়ে ঝরো! নিজেকে উজাড় করে ঝরে পড়ো!! এমন ভাবে ঝড়ো যেন তোমার স্পর্শে হয় কান্না পাবে,নয় হাসি! এভাবে কেন? ঘুম ঘুম বৃষ্টি আমার একদম ভাল লাগেনা। একদম না!!!

ছাতা খুললাম।আমার বেগুনি রং এর ছাতাটা ধরে হাঁটতে লাগলাম।বৃষ্টি যেন আমার ধমকটা আমার অভিমানটা বুঝে গিয়েছে। হঠাৎ করে সে দমকে উঠল। আমার ছাতাটা যেন প্রায় উড়িয়ে নিয়ে যাবে।আমি অনেকক্ষণ জোরাজুরি করে শেষমেষ ভাবলাম-কি দরকার! ছেড়ে দিলাম তাকে তার মত। ঠিক ছেড়ে দেয়া না, আমি উল্টে যাওয়া বেগুনি রংএর ছাতাটা ধরে সে যেদিকে যায় যেতে লাগলাম।
আমার তো এমনিতেও কোন গন্তব্য নাই। যায় না সে যেদিক যায়!
হঠাৎ করে আমার মন ভাল হয়ে গেল। আমি গান গাচ্ছিলাম....

ভালবাসি...ভালবাসি
এই সুরে কাছে দূরে জলে স্হলে বাজায়
বাজায় বাঁশি...
ভালবাসি!!

আমাকে আমার মত থাকতে দাও...
আমি নিজেকে নিজের মত গুটিয়ে নিয়েছি
যেটা ছিলনা ছিলনা সেটা না পাওয়াই থাক
সব পেলে নষ্ট জীবন.....।

ঠিক সন্ধ্যা নামার মুখে
তোর নাম ধরে কেউ ডাকে
মুখ লুকিয়ে কার বুকে..
তোর গল্প বলিস কাকে.....

যদি ডেকে বলি..এসো হাত ধরো..চল ভিজি আজ বৃষ্টিতে
এসো গান গাই এই মেঘমল্লারে.....করুণাভরা দৃষ্টিতে

আমি চাইনে. আমি চাইনে তপন, চাইনে তারা..
আমার নিশিথ রাতের বাদলধারা........

এভাবে একগান থেকে এক গানে ভ্রমণ করে চলতে লাগল আমার আজকের ইচ্ছেবিকেল। আমি গাই, আমিই শ্রোতা......নিজেকে নিয়ে আজ বেশ ভালভাবে কাটালাম বিকেলটা। নিজেকে সময় দেয়া আসলেই খুব দরকার।মাঝেমধ্যে নিজের জন্য করা উচিত অনেক কিছু। শুধুই নিজের জন্য। কারণ এই আমিটা সবসময়ই এই আমার সাথে থাকব, সব কিছুর পরও এই আমি-টা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিজেকে ছেড়ে যাই না। তাই অন্তত এই বিশ্বস্ততার জন্য কিছুটা ভালবাসা আর গুরত্ব পাওয়াটা বোধকরি তার একরকম অধিকার। নিজের জন্য বাঁচা ব্যাপারটা আজ খুব মনে হচ্ছিল আমার।ধন্যবাদ ইচ্ছেবিকেল, আর ধন্যবাদ সেই চোখ রাঙানোয় শুধরে যাওয়া মেঘ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১১ সকাল ৯:১৬
৪২টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×