somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার লাস্ট লেকচার

১২ ই আগস্ট, ২০০৮ রাত ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত শনিবার ছিল টিচার হিসেবে বুয়েটে আমার শেষ লেকচার। ইচ্ছাকৃত ভাবেই রেগুলার লেকচারের বদলে আমি এটাকে এক্সট্রা ক্লাস হিসেবে নিয়েছি। টপিকটাও ছিল স্টুডেন্টদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ- টার্ম প্রোজেক্ট বিষয়ক। বরাবরের মত ০৭ ব্যাচের সবাইকে এবার সি প্রোগ্রামিং কোর্সে একটি করে টার্ম প্রোজেক্ট করতে হবে। আমি টার্মের শুরু থেকেই তাদেরকে বলে আসছিলাম যে, ব্যাপারটা চ্যালেঞ্জিং হলেও খুবই ইন্টারেস্টিং। প্রতিটি স্টুডেন্ট রাত জেগে জেগে হাজার লাইন প্রোগ্রাম লিখে সুন্দর সুন্দর গেম কিংবা কাজের কোন সফটওয়্যার বানিয়ে শিক্ষকদের তাক লাগিয়ে দিচ্ছে, আর শিক্ষকরাও নিজের মুগ্ধতাকে যথাসম্ভব ঢেকে রেখে গম্ভীর ভাবে নানান ভুল ত্রুটি খুঁজে বের করে ছাত্র-ছাত্রীদের তাক লাগিয়ে দিচ্ছে- ব্যাপারটি ভাবতেই খুব রোমাঞ্চকর লাগে।

আমাদের বুয়েটের ছেলেমেয়েরা প্রতিটি টার্মেই অন্তত একটি করে প্রজেক্ট করে থাকে। একেবারে 'শূন্য' নলেজ নিয়ে তারা প্রতি টার্মের শুরুতেই একটি করে প্রজেক্টের কাজ শুরু করে। তাদের সাথে একজন শিক্ষক অ্যাডভাইজার হিসেবে থাকেন, যিনি বস্তুত রিকুয়্যারমেন্টস গুলি ঠিকঠাক করে দেন। কাজটার পুরো কৃতিত্ব সন্দেহাতীত ভাবে ছাত্রের নিজের। চোথাবাজি করার সুযোগ থাকলেও আমাদের ছেলে-মেয়েরা এই একটা ক্ষেত্রে সবাই জানপ্রাণ দিয়ে কাজ করে। অন্তত আমি যাদের নিয়ে কাজ করেছি তার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, এরা সত্যিই একেকটা জিনিয়াস।

সেদিন ০৭ ব্যাচের স্টুডেন্টদের চেহারা দেখে মনে হলো তারা সবাই কম বেশি চিন্তিত। সকাল আটটার সময় গোটা ক্লাস হাজির। লেকচার শুরু করলাম ঠিক সাড়ে আটটায় ৫০২ নম্বর রুমে। ৫০২ এর একটি মাহাত্ম্য আছে আমার কাছে। এই ক্লাসরুমটিতেই ছাত্রাবস্থায় বেশিরভাগ ক্লাস করেছি, টিচার হিসেবে শেষ লেকচারটিও এই রুমেই দিতে চেয়েছি তাই। লেকচারের বিষয়বস্তু ছিল- ভিজ্যুয়াল সি ব্যবহার করে কি করে গ্রাফিক্যাল জিনিসপত্র আঁকাআঁকি করা যায় সেটার ওপর। ভিজ্যুয়াল সি ব্যবহার করে খুব একটা সহজে আঁকাআঁকির কাজ করা যায়না, অনেককিছু শিখতে হয় তার জন্য। অন্যদিকে, আমি আমার ছাত্র-ছাত্রীদের মান্ধাত্যার আমলের টারবো-সি এর গ্রাফিক্স ব্যবহার করতে দিতে চাইনা, যেটা গোটা পৃথিবী থেকে কয়েক দশক আগে উঠে গেলেও অনেকদিন যাবত আমাদের বুয়েটে টিকে ছিল। তাই সমাধান কল্পে, প্রয়োজনীয় কিছু আঁকাআঁকির ফাংশন লিখে ওদেরকে একটা টুলস বানিয়ে দিয়েছি। ওটা ব্যবহার করে ওরা তাদের প্রোজেক্ট করবে ভিজ্যুয়াল সি তে। স্টুডেন্টদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন কোর্সটিচারও আমার লেকচারটি মন দিয়ে শুনল কারণ, আমি তাদের বলে রেখেছিলাম যে, তোমাদের কিছু শেখার থাকলে এক্ষুনি ছাত্রদের সাথে একসাথে বসে শিখতে হবে, আমি আমেরিকা চলে যাবার পর ইমেইল করে কান্নাকাটি করে কোন লাভ হবেনা

শুরুতে ওদের কিছুক্ষণ মাউস আর কী-বোর্ড কে প্রোগ্রামিং করে কি করে কন্ট্রোল করা যায় তা শেখালাম। বুঝলাম, ব্যাপারটা তাদের কাছে তেমন ইন্টারেস্টিং কিছু মনে হলনা। সবাই যেন ব্যাপারটিকে খুব সাধারণ ভাবেই নিল। অথচ কী-বোর্ডের সবকটি কী প্রোগ্রামেবল করার জন্যে আমার এ্যাসেম্বলি, ওপেনজিএল সবকিছু ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়েছিল। যাক গে, আমি এবার পরবর্তি চাল চাললাম- ওদের এখন ড্রয়িং ফাংশন গুলো দেখাবো। একে একে বাংলাদেশের পতাকা, রঙবেরংয়ের ফুল, সুন্দর সুন্দর ছবি আর টেক্সট বসানো শেখালাম। এবার মনে হলো সবাই একটু মজা পাচ্ছে। এরপর শুরু করলাম এনিমেশনের কাজ। একটা ছোট্ট সাদা বল এঁকে সেটাকে নড়াচড়ার কোড লিখে দিলাম। প্রোগ্রাম রান করাতেই হল ভর্তি ছাত্র-ছাত্রীরা হাততালি দেয়া শুরু করল। বলটি সরতে সরতে কিছুক্ষণ পর স্ক্রীণের বাইরে চলে যাচ্ছিল, ওদের অনুরোধে সেটাকে স্ক্রীণে আটকে রাখার ব্যবস্থা করলাম। স্পীড একটু বাড়িয়ে দিতেই ছোট্ট সাদা বলটি মাঝারি সাইজের একটা উইন্ডোর ভেতরে ছুটোছুটি করতে লাগলো। এক প্রান্ত থেকে বাড়ি খেয়ে বলটি যখন আবার নিজে থেকেই দিক পরিবর্তন করে অন্যদিকে যাচ্ছিল, তখন অপলক দৃষ্টিতে সবাই সেটার দিকে তাকিয়ে। ২০-২১ বছরের ৬০-৭০ জন যুবক-যুবতী একটা বলের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে হাততালি দিচ্ছে, ব্যাপারটা নিজের চোখে না দেখলে কাউকে বোঝানো যাবেনা।

এই মুগ্ধতাটাই ছিল আমার পাওনা। এটা থেকেই ওদের মাঝে সৃষ্টি হবে কাজ করার প্রেরণা, ওরাও চাইবে তাদের কাজ দিয়ে অন্যকে মুগ্ধ করে দিতে। আমি জানি যে, আর ঠিক ১০ সপ্তাহ পর তারা প্রত্যেকে এমন এমন কাজ করে সাবমিট করবে যে, সেটা দেখে ডিপার্টমেন্টের ছাত্র-শিক্ষক প্রত্যেকে অভিভূত হয়ে যাবে। সেই মুহূর্তটায় আমি তাদের মাঝে থাকবোনা- ভাবতেই মনটা খারাপ লাগছে।







সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০০৮ রাত ১:০৮
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×