যারা দেশে আছেন তাদের টাটকা মিষ্টি কিনে খেতে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু আমার মতো অনেকেই যারা প্রবাসে আছেন এবং মিষ্টি পছন্দ করেন তাদের জন্য মিষ্টি খাওয়া বিরাট এক ঝক্কি ঝামেলার...যদিও প্রায় অনেক দেশেই বাংলাদেশি দোকান আছে এবং সেখানে মিষ্টিও পাওয়া যায়,তবে সেগুলো ফ্রোজেন। কিনে আনবার পরে দেখা যায়, কোনোবার কচকচে চিনি নয়তো ভিতরটা শক্ত...একটা দুটো খেয়ে পুরোটাই ফেলে দিতে হয়েছে বেশ কবার।
দুঃখে, কষ্টে শেষে সিদ্ধান্ত নিজেই বানাবো মিষ্টি, কি আছে জীবনে
সিদ্দীকা আপাই ভরসা..উনার রেসিপি দেখে রসগোল্লা বানালাম...বানাবার পরে দেখি, মিষ্টির ভিতরে শক্ত বিচি মানে ভিতেরর টুকু সিদ্ধ হয়নি, বরং চিনির সিরাতে ডুবানোর পরে শক্ত হয়ে গেছে...তার পরে অ-নে-ক দিন মিষ্টির প্রজেক্ট বাদ...বেশ কিছু পরে এক ভাইয়ের মেয়ের জন্মদিনে, ভাবী পানতোয়া বানালেন...খেয়ে সবাই মুগ্ধ, আর চেহারাও হয়েছিলো মাশাল্লাহ্...ভাবীকে জিজ্ঞাসা করলাম কিভাবে বানালেন...ভাবী বললেন খুবই সোজা...শুধু গুড়ো দুধ, ডিম, চিনি আর সুজি মিশিয়ে গোল্লা বানিয়ে চিনির সিরাতে দিলেই হয়ে যাবে....আমি আনন্দে নাচতে নাচতে এসে বাসায় বানিয়ে ফেললাম পানতোয়া...কর্তাকে দিয়ে বললাম খেয়ে দেখোতো কেমন হয়েছে..খাবার পরে বলে ভালোইতো, কিন্তু জিনিসটা কি? মিষ্টি বলার পরে বলে ওটা নাকি দেখতে হয়েছে ডুগডুগির মতো স্বাদ যেহেতু ভালোই, তাই বললাম আরো কয়েকটা দেই তোমাকে....উনি বললেন, দেখেই নাকি খাবার সাধ মিটে গেছে...কি আর করা, খাবার ফেলে দিতে কষ্ট লাগে তাই নিজেই কয়েকদিন ধরে বসে বসে ডুগডুগি মিষ্টি খেলাম তারপরে কান ধরলাম, ফ্রোজেনই খাবো তবুও এই প্রজেক্ট আর হাতে নিবো না....
কিছুদিন পরে আবার আরেক ভাবীর বাসায় যেয়ে সন্দেশ খেয়ে এত ভালো লাগলো যে, কিসের প্রতিজ্ঞা... সব ভংগ করে ঠিক করলাম আজকেই বাসায় যেয়ে বানাবো...প্রথমবার ছানা না করতে পারার জন্য ঠিকমতো হয়নি..কিন্তু তার পরের বার থেকে এত ভালো বানাই, যে মিষ্টি পছন্দ করে না সেও দুই দিন পর পর বলে, আজকে বুঝি সন্দেশ বানাচ্ছো!!!!...আর বানানোর সাথে সাথে একদিনেই শেষ
আরেকটা বড় ব্যাপার চিনির সিরা করার ঝামেলা নাই।
তাইতো কবি বলে গেছেন, একবার না পারিলে দেখো শতবার...
এখন আসেন দেখি এই সন্দেশ বানাতে কি কি লাগবে...
২ লিটার দুধ, ভিনেগার ৫০ মিলিলিটার, এভাপোরেটেড মিল্ক ১ কৌটা, চিনি এক কাপ, এলাচ ১ টা।
একটু ঘন দুধ হলে ভালো, আমি এখানে ব্যাবহার করেছি ৩.৬ ঘনত্বের দুধ। প্রথমে দুধটাকে জ্বাল দিন, একবার ফুটে উঠার সাথে সাথে চুলাটা বন্ধ করে তার পরে ভিনেগার দিয়ে দিন।
আমি একবার করে দেখেছি লেবুর রসে ছানাটা ঠিকমতো হয়না, আমার মতে ভিনেগার দিয়ে ছানাটা অনেক ভালো হয়...ভিনেগার কম হলেও ছানাটা ঠিকমতো হবেনা, আবার বেশি হলে টক হয়ে যাবে...তাই সঠিক পরিমাপটা জরুরি।
বেশ কয়েকবার করার পরে মাপটা ঠিক মতো বুঝতে পেরেছি...
২ লিটার দুধের জন্য ৫০ মি.লি. ভিনেগার
চুলার জ্বালটা বন্ধ করার পরে ভিনেগারটুকু দিয়ে দিলাম
দুধটা জমাট বেধে এমন ছানা হবে
পানিটুকু খুব ভালো করে ঝরিয়ে ফেলতে হবে এবং খোলা বাতাসে ঘন্টাদুয়েক শুকিয়ে নিতে হবে
২ লিটার দুধ থেকে এই পরিমানের ছানা পাওয়া যাবে
এভাপোরেটেড মিল্ক না পেলে কনডেন্স মিল্ক বা দুধটাকে বেশি পরিমানে জ্বাল দিয়ে ঘন করে নিয়েও করা যেতে পারে
এরপরে চুলায় একটা ফ্রাইপ্যান ( ননস্টিক হলে ভালো হয়) দিয়ে, সেখানে ছানা, এভাপোরেটেড মিল্ক, চিনি এক কাপ (মিষ্টি কম/ বেশি পছন্দ অনুযায়ী চিনি যোগ করা যেতে পারে), এলাচ দিয়ে নাড়তে হবে। নাড়তে নাড়তে মিশ্রনটা শুকিয়ে এলেই চুলা বন্ধ করে দিতে হবে। হালুয়ার বরফির মতো খুব বেশি শক্ত হবে না, একটু নরম থাকতেই নামিয়ে ফেলতে হবে।
শুকানোর পরে মিশ্রনটা এমন হবে
পাত্রে ঢেলে কাঠের চামচ দিয়ে চারকোনা শেইপ করে, উপরেও সমান করে দিতে হবে। গরম অবস্থাতেই ছুরি দিয়ে সন্দেশের আকারে কেটে রাখুন, তুলবেন না ওভাবেই ফ্রিজে রেখে দিন দুঘন্টা।
ব্যাস হয়ে গেলো সন্দেশ বানানো, এবার শাহরুকখান না, সন্দেশখান