কয়েকদিন ধরে শরীরটা ভালো যাচ্ছে না রুদ্রর। অফিস থেকে রোজ ফিরতে দেরী হচ্ছে। কাজের চাপ
বেড়েই চলেছে, সাথে বেড়েই চলেছে মানসিক ক্লান্তি। যেদিন ফিরতে দেরী হয়, সেদিন রাতে আর
বাবা-মাকে জাগায় না রুদ্র। অগ্নীলা অবশ্য প্রতিদিন তার জন্য অপেক্ষা করে...অপেক্ষা করতে করতে
হয়তো কোনদিন খাবার টেবিলে মাথা রেখে , আর কোনদিন হয়তো সোফার মধ্যেই ঘুমিয়ে পরে মেয়েটা।
আজও ব্যতিক্রম হয়নি... রাত এখন প্রায় এগারোটা। বাইরেটা জ্যোস্নার আলোয় আলোকিত।
এমন জ্যোস্না রাতে কতোদিন অগ্নীলাকে নিয়ে রিক্সায় চেপে ঘুরে বেড়িয়েছে রুদ্র । অবশ্য বিয়ের পর
থেকে মেয়েটাকে একদম সময় দিতে পারে না কাজের চাপে।
বার দুয়েক কলিং বেল চেপে বুঝতে পেরেছে যে অগ্নীলা ঘুমিয়ে পরেছে। দরজাটা খোলাই ছিলো।
ভিতরে প্রবেশ করে ফাইলটা টেবিলের উপর রাখলো রুদ্র। সোফায় পরে ঘুমাচ্ছে অগ্নীলা।
ফ্লোরোসেন্ট লাইটের উষ্ণ আলোয় খুব মায়াবী লাগছে অগ্নীলার মুখটা,
ঠিক যেন একটা বাচ্চা মেয়ে অভিমান করে ঘুমিয়ে আছে। রুদ্র শোবার ঘর থেকে ফিরে ওকে জাগাবে
ভাবছিলো কিন্তু
ততক্ষনে অগ্নীলার ঘুম ভেঙ্গে গেছে।
রুদ্র ফ্রেশ হতে হতে, টেবিলে খাবার রেডি করছে অগ্নীলা। আর অভিমানের সুরে রোজকার মতো
বিরতিহীন ভাবে বলেই যাচ্ছে বিয়ের পূর্বের স্মৃতিময় সেইসব দিনের কথা। ...আগে দুজনের মধ্যে কি
মধুর সম্পর্কই না ছিলো, অথচ তার মতে আজকাল রুদ্র অনেক বদলে গেছে...
... রোজকার মতো আজও তরকারীতে লবন কম হয়েছে। প্রচন্ড পিপাসাও লেগেছে রুদ্রর। পানি নিয়ে
আসার জন্য অগ্নীলাকে ডাকছে, কিন্তু গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বেরুচ্ছে না রুদ্রর। হঠাত কিছু একটা
মনে পড়ায় থমকে গেলো রুদ্র... তার অগ্নীলা তো...
তিন মাস হলো রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে...
রুদ্রর মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো...
ফ্যানের বাতাসে টেবিলের উপরের ফাইলটা থেকে একটা কাগজ বের হয়ে গেছে... বড় হরফে লেখা
"অ্যাফেক্টেড ইন ডিমেনশিয়া"
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৬