somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্বাসিতের আপনজন। পর্ব-১।

০৭ ই নভেম্বর, ২০০৭ রাত ২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সর্বদাবেলায়েত লিখিত কয়েকটি পোস্ট দেখে মনে হোল যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কিছু একটা লেখা দরকার। এটা এক ধরণের ঋণ-স্বীকার বলতে পারেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে।

আজকের পর্বের শুরুটা করি আশির দশকের মাঝামাঝি একটি সময়ে। ততদিনে আমার ঢাকার পড়াশুনার পাট শেষ এবং তখন আমি আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট। সেই সেমেস্টারে একটা কঠিন কোর্স নিয়েছি। বিষয়টা ছিল ডিএনএ অণুর গঠনমালার বিভিন্ন দিক। পুরো ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি। যিনি পড়াচ্ছিলেন তিনি (আজ তিনি বেঁচে নেই) ছিলেন কিছুটা সাধু প্রকৃতির মানুষ। শুনেছি তাঁর নাকি এক ভারতীয় গুরুও ছিল। সেভেন হান্ড্রেড লেভেল ক্লাশ, ছাত্র সংখ্যা বেশী নয়, গোটা বারো হয়তো হবে। আমি কাউলা বাদে সবাই সাদা আমেরিকান।

যাই হোক, ক্লাশের প্রথম দিনেই টের পেলাম কোর্সটি ভয়াবহ রকমের কঠিন। কিন্তু কি আর করা? পীর-মুর্শিদের নাম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। গরীব দেশের অশিক্ষিত মানুষ বলে ক্লাশের অন্য ছাত্ররা বেশী পাত্তা দেয়না আমাকে। কবিগুরুর "একলা চলো রে" গানই তখন সকাল-সন্ধ্যার বীজমন্ত্র। সেই ভরসায় চলতে শুরু করলাম। কিছুদিন পর দেখি, প্রফেসর যা পড়াচ্ছেন তা আমি বেশ ভালই বুঝতে পারছি। অন্যদের মুখের দিকে তাকানো যায়না। এমনই করুণ অবস্থা। আমি মনেমনে মিটিমিটি হাসি। এখন কেমন বুঝতাছেন, ভাইজান?

ফাইনাল পরীক্ষার রেজাল্ট বার হ'বার পর কান্নাকাটি অবস্থা। আমিই একমাত্র 'এ' পেয়েছি, অনেকেই পাশ করতে পারেনি। বোঝা গেল সাধুবাবার লেকচার সবারই মাথার উপর দিয়ে চলে গেছে। পরে মেকআপ টেস্ট দিয়ে কোনমতে মান বাঁচলো সবার।

তারপর বেশ কয়েক মাস কেটে গেছে। একদিন আমি আর আমার এক আমেরিকান বন্ধু বব ডিপার্টমেন্টের করিডরে হাঁটছি। বব বললো যে সে একটু ঐ প্রফেসরের সাথে কথা বলতে চায়। কেন, জানতে চাইলাম। উত্তরে বব একটু মুচকি হেসে বললো যে প্রফেসরের নাকি একটা সুন্দরী মেয়ে আছে, এবং বব মেয়েটির প্রতি একটু দুর্বল। তাই সে সুযোগ পেলেই প্রফেসরের সাথে নানান বাহানায় খেজুরে আলাপ করে থাকে। অতএব তার সাথে গেলাম।

একথা সেকথার পর বব বললো, 'তা তোমার মেয়ের খবর কি?'
প্রফেসর বললো,'ভালই। তবে সে কোন কলেজে পড়বে সেটা নিয়েই বেশ টেনশনে আছে।'
'কোথায় তাকে পাঠাতে চাও তুমি?' প্রেমিকার সম্ভাব্য অন্তর্ধানের আশংকায় ববের মুখ শুকিয়ে আসে।
'আমি যেখানে তাকে পাঠাতে চাই সেখানে কি আর ও চান্স পাবে?'
'কি বলো? ও এতো ভাল ছাত্রী। কি এমন স্কুল যেখানে সে চান্সই পাবেনা?'
প্রফেসর মৃদু হাসেন। তারপর আমার দিকে আংগুল তুলে বললেন, 'ও যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছে, আমার খুব ইচছা মেয়েটিকে সেখানে পাঠানোর। নির্বাসিত, তোমার কি মনে হয় তোমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেবে আমার মেয়েটিকে?'

কথাটা শুনবার পর বুকের মধ্যে কি যেন একটা আটকে গিয়েছিল। কান্না পাচ্ছিল কেন যেন। আর কোন কিছুই কানে যাচ্ছিলনা তখন।

শুধু মনে পড়ছিল লাল ইঁটের কার্জন হল। কৃতগ্গতার সাথে স্মরণ করলাম আমার শিক্ষকদের। কত কষ্ট করে তাঁরা আমাকে এইসব শিখিয়েছেন। ভাল বই ছিলনা, জার্নাল ছিলনা, ল্যাবে কেমিক্যালস ছিলনা। ব্ল্যাকবোর্ডে টানা ইকুয়েশন লিখতে লিখতে চকের গুঁড়োয় ভরে গেছে তাঁদের গায়ের জামা। তবুও একটু একটু করে হাতে ধরে কত না মায়ায় শিখিয়েছেন আমাদের।

সেদিন আমার আমেরিকান প্রফেসর তার একটি ছোট্ট কথায় আমার প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর তার শিক্ষকদের মাথায় এমন একটি মুকুট পরিয়ে দিলেন, যার হীরক-দ্যুতি চিরটা কাল আমার মনে আলো ছড়াবে।

আমি আমার সমস্ত শিক্ষকদের মনেমনে কদমবুসি করলাম।

স্যারেরা, অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে শিক্ষাদানের জন্য।

পর্ব-২



সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০০৮ রাত ৩:৫৫
২২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×