somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রশিক হাডারি সাহেবের ভোঁজ ঊপাখ্যান

০৩ রা অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




এবাড়ীর হাডারি সাহেব বেজায় কুঁড়ে, বিশাল তার ভুঁড়ি, ব্যাপক তার নাম ডাক, বড্ড ঘুম কাতুরে আর ভীষণ ভোজন রসিক। সাহেব কানে সুড়সুড়ি দিয়ে খুব আরাম বোধ করেন ,সাহেব পুরো গরমকাল টা খালি গায়ে,সারা বর্ষাকাল টা ছাতি মাথায় না দিয়ে আর সমস্ত শীতকাল টা লেপ-কম্বল না গায়ে দিয়েই কাটিয়ে দেন। ঘুম পেলে সাহেব বড় বড় হাই তোলেন, আর বিকট হুঙ্কার ছাড়েন।। তাঁর নাসিকাগর্জনে ঘরের ঘুরন্ত পাঁখা মাঝে মাঝে থেমে যায় আর কি! নাকডাকানির চোটে বোলতা ঘরে ঢুকে ই ভয়ে বেরিয়ে যায়। সাহেব খেতে বড্ড ভালবাসেন তা সে যা' হোক, দর্পের সঙ্গে বলেন সাহেব " anything that is not moving,while I am eating"চচ্চড়ি থেকে চিংড়ি ,বিয়ার থেকে বিড়ি, কাটলেট টু চকোলেট, পেস্ট্রি কি মিষ্টি ,বেগুনপোড়া থেকে সিঙ্গাড়া, সর্ষে কাঁকড়া দিয়ে শুরু করে পোস্ত-আমড়া, চিলি পর্ক টু মৌরলার টক, বিরিয়ানী সে লেডিকেনি তক সানন্দে গ্রহণ করেন। সাহেব যখন বিদেশে ছিলেন তখন যে সব 'edible exotica'র দ্বারা তাঁর gastronomic satisfaction হয়েছিল সেসব খাবারের গল্প এখনো সুযোগ পেলেই ছেলেকে শোনান। কারন সাহেব বিশ্বাস করেন যে সাহিত্য,অঙ্কের মত চর্চা না করলে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাবে তাঁর 'rude food'এর রসনাতৃপ্তির সুখস্মৃতি। একদা জিভের কোণে হারিয়ে যাওয়া অয়েস্টারের ঘিলু কিংবা দাঁতের ফাঁকে আটকে যাওয়া বেবি অক্টোপাসের শুঁড়--এই সব আর কি! "কি ভালই না খেয়েছিলাম জানিস।" সিঙ্গাপুরের পেল্লাই সি ফুড প্লাজায় কবে শার্ক-ফিন-স্যুপ খেতে খেতে বাবু হাঙ্গরের সাইজটা আন্দাজ করেন,কখনো স্টার-ফ্রায়েড-স্কুইড খেতে খেতে ডিস্.কভারি চ্যানেলে দেখা অতলান্তিকের তলায় অজস্র শুঁড় তোলা স্কুইডের ছবি ভেসে ওঠে তাঁর চোখে। অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে সাহেব অক্স্-টাং-ইন -অরেঞ্জ সস খেয়ে ভেবেছিলেন,এই কি সেই তার বাবার মুখে গল্প শোনা হলস্টাইন ষাঁড়ের জিভ চুষছি?--তুলতুলে নরম, কি সুস্বাদু!

ছাত্রাবস্থায় ,আমেরিকাতে থাকাকালীন 'রেড-লবস্টার' রেস্তোরাঁতে কিং সাইজ জাম্বো-মাম্বো গলদার রংচঙে ছবি দেখে বাবুর মনে হ'ত,"ইস ! ঢাকার জঞ্জালের ভ্যাটে যদি এর খোলা পড়ে থাকে তবে কুকুর-ছানা তার মধ্যে দিয়ে ঢুকবে আর বেরুবে।" আমেরিকায় ছাত্রাবস্থায় এই লবস্টার affordকরা কি মুখের কথা? হতো যদি লেক-বাজার থেকে কিনে এনে আলতা বানুর মাকে বলতে পারতাম মালাইকারি বানাতে। কিন্তু দশ ডলার দিয়ে একটা মাছ খেতে বুকে বড় ব্যাথা হয়,হাঁটুতে খঞ্জনি বাজতে শুরু করে। কারন বাবা আসবার সময় বলে দিয়েছেন,ছাত্রাবস্থায় ডলার একদম নষ্ট না করতে, আগে চাকরী পাবে তার পর । তাই লবেস্টার-কো-বাবালোগ দের নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হোত। কোনদিন বাবু তার শালাবাবুর সাথে জমিয়ে বিয়ার খেতে খেতে প্যাসিফিকের তীরে বসে শ্যাম্পেন উইথ ক্যাভেয়ার সেবনের গল্প করেন।

সদ্য কাটা স্টার্জন মাছের ডিম কে দু-ফোঁটা লেবুর রস আর সস দিয়ে শ্যাম্পেনের সাথে পরিবেশন করা হয়। "কোনদিন দেখবে, বর্ষায় থৈ থৈ লেকের জল থেকে কৈ মাছ ধরে ,হৈ হৈ করে তার পেট থেকে দুষ্প্রাপ্য কৈ-ডিম্ব কে বার করে ঐ ভাবে বিক্রি করা হচ্ছে"সাহেব বললেন।


এ তো গেল সাহেবের ভোজনবিলাসিতা। সাহেব যখন প্রথম মায়ের আঁচল ছেড়ে হোস্টেলে গেলেন ইঞ্জিনীয়ারিং পড়তে, ragging ধাক্কায় মিশমিশে কলো,সুললিত গোঁফজোড়ার একদিকটি ছেলেরা কামিয়ে দিয়েছিল|পরের বার বাড়ি আসার পরে মা তো তাঁর শ্বশ্রুগুম্ফহীন পুত্রকে দেখে তো মাথায় হাত! সাহেব আসলে বাঁশবেড়িয়ার বাঁড়ুজ্যে ।

নাম তরিক আলি হাডারি। সাহেব বরাবর ই বিস্তর বুদ্ধিমান। বিদ্বানবাবু বিজ্ঞানশাস্ত্রে ব্যুত্পত্তি লাভ করে,বিদেশ থেকে বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে পুনরায় স্বদেশে প্রত্যাগমন করেছিলেন; সেইখানেই সাহেবের সাথে আর পাঁচজন বৈজ্ঞানিকের তফাত। সাহেব বইয়ের পোকা। লেখনীর জোর ও বাগ্মী হিসেবে বিদ্বজনমহলে সাহেবের কদর আছে।

সাহেব বিগব্যাং থেকে বিশ্বযুদ্ধ,থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি থেকে গোদেল'স থিয়োরেম ম্যালথাস থেকে মুদ্রাস্ফিতী নিউটন থেকে নবাব সিরাজঊদ্দৌলা, এমন কি সেক্সপিয়ার থেকে রবি,নজরুল - এ সব কিছু নিয়েই বহুক্ষণ আলোচনা চালাতে পারতেন। সাহেব খেলাধূলায় বিমুখ কিন্তু প্রত্যেক খেলার নিয়মাবলী বা সাজ-সরঞ্জাম বিষয়ে তাঁর জ্ঞানের পরিধি যেকোনো ক্রীড়াসাংবাদিককেও হার মানিয়ে দেবে। কোন পোশাকে বিলিয়ার্ড রুমে ঢুকতে হয়্,গল্ফকোর্সের কোথায় গর্ত থাকে,পোলো খেলাতে কখন বিরতি হয় বা ফর্মুলা ওয়ান রেসিং এ কখন কটা পিটস্টপ হবে,এ সব তার নখদর্পণে।

সাহেব বেজায় কাবু হয়ে যান একটি ব্যাপারে,যখন তাকে গান নিয়ে কোনোও প্রশ্ন করা হয়। সঙ্গীত ও আনুষাঙ্গিকের ওপর তার নেই কোনো টান-টুন। এ জন্মে তার কন্ঠে তিশমা,মিলার, মতো বেসুর আর হস্তে বাঘার মতো বেতাল,তাই পরের জন্মে কোকিলের মাংসের বার্-বি-কিউ খাবার বাসনা আছে তার। তাহলে যদি সুরেলারা একটু কৃপা করেন। জগতের বুকে প্রতিনিয়ত কত ই না সুরসাধনা চলেছে, তাতে সাহেবের কোনো হেলদোল নেই।

সাহেবের কাছে যাহাই সঙ্গীত তাহাই শব্দ,যাহাই শব্দ তাহাই দুষণ রূপে পরিগণিত হয়।কে হেমন্ত,কে বসন্ত, কে আশা আর কে নিরাশা, কে রাঘব কে বোয়াল ,কে সোনু আর সে কি হনু, এসব নিতান্ত ই তুচ্ছ। দাদরা,কাহারবা,কিম্বা jazz, rock, pop, reggae....মানেই "শব্দ-কল্প-দ্রুম্"|কেবল নিজের গালে পটাপট থাপ্পড় কষিয়ে আধুনিক তবলায় লহরী তোলার কড়া সমালোচক তিনি।


বিদ্যাসাগর-বঙ্কিমের যুগে আমরা যে সাহেব চরিত্রের পরিচয় পাই সেই তথাকথিত সাহেবদের থেকে আমাদের বংশের মুখ উজ্জ্বলকরা বংশগোপাল সাহেব বাবু সম্পূর্ণ আলাদা। ইনি বাপ-দাদার পয়সায় ফুটানি না মারা সাহেব।ইনি হেড অফিসের বড়সাহেবের মতো ঘুষ না নেওয়া শান্তবাবু। কখনো তার অকালপক্ক কেশরাজিকে রঞ্জিতকুন্তলে পরিণত না করা সাহেব।

বিদেশের ভালটুকু নিয়ে ,আর বাঙালীয়ানাকে বিসর্জন ন দিয়ে বিদেশ থেকে ফিরে আসা সাহেব। সাহেব ভোজন-পানীয়-নিদ্রা বিলাসী কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত নয়। তিনি পূর্বসুরীদের পয়সায় ফোতোকাপ্তেনি করা সাহেব নন যিনি ঈদের শেষে নীলকন্ঠ পাখী না উড়িয়ে উত্তরসুরীদের জন্য সঞ্চয় করেন। আধুনিক সমাজে যে বেগুণ সম্পন্ন সাহেব উৎপন্ন হচ্ছে তা দেখলে মনে হয় এরূপ সাহেবের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে বাঙালীর ভবিষ্যতে হাতে হ্যারিকেন,গলায় গামছা।

হঠাত্ বড়লোক সাহেব তার্কিক সাহেব ,অধুনা বড়লোক সাহেব 'মিস্-ড্-কল্-কালচারে' অভ্যস্ত সাহেব হালেরশাইন করা সাহেব ' blue-arrows 'চড়া সাহেব |সদ্য বড়লোক হওয়া সাহেবের বাড়ীর মাছ-ভাত রোচেনা | বেশীবড় বিদ্বান সাহেব বিদেশে গিয়ে দেশের কথা ভুলে যান। বেঁড়ে পাকা আজকের সাহেবদের ছদ্মগাম্ভীর্য ই সার । বিশ্বায়নের প্রবল গতিতে তাদের বিচার,বুদ্ধি,বিবেক প্রায় লোপ পেতে বসেছে | আর ঘুমিয়ে একবার পড়লে আর রক্ষা নেই










৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×