জাতি হিসেবে আমরা বেশ বিভক্ত। অন্তত: তাত্বিকভাবে। এই বিভত্তির পেছনে মূল কারন হিসেবে কাজ করে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ। এই জন্য আমরা আজো নিশ্চিত হতে পারি নাই যে আমরা কি বাঙ্গালী না বাংলাদেশী, পাহাড়ীরা উপজাতি না আদিবাসী, বঙ্গভঙ্গ ভালো ছিল না কি খারাপ ছিল ইত্যাদি। এই বিভক্তির রেশ ধরেই আমরা কেউ কেউ মহাসমারহে এপ্রিলফুল পালন করি কিংবা ইতিহাসের বিভিন্ন বড় বড় রথী-মহারথীদের নিয়ে মেতে উঠি অনুচিত রসিকতায়, তাদের নিয়ে ফান করতে ভালবাসি।
ইতিহাসের এমনি একজন মহৎ কিন্তু বর্তমানে বিনির্মীত সং ধর্মী চরিত্র হলেন প্রাচীন বাংলার এককালীন প্রতাপশালী সুবাহদার শায়েস্তা খাঁ।
খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো
বর্র্গী এলো দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে খাজনা দেবো কিসে
ধান ফুরালো পাট ফুরালো খাজনার উপায় কি
আর কটা দিন সবুর করো রসুন বুনেছি।
বাংলার জনগণ যখন আরাকানী মগ ডাকাতদের অত্যাচারে অতিষ্ট, পর্তুগিজ হার্মাদদের হার্মাদিতে নিষ্পেষিত সেই সময়কালটাতে প্রাচীন ইসলামাবাদের (হালের চট্টগ্রাম) সুবাহদার হিসেবে নিযুক্ত হন শায়েস্তা খাঁ। কঠোর ও ন্যায়পরায়ন বাদশা আওরঙ্গজেবের নিযুক্ত এই সুবাহদারও ছিলেন একজন ইস্পাত দৃঢ় মানসিকতার মানুষ। তিনি কঠোর হস্তে মগ আর হার্মাদদের শায়েস্তা করা শুরু করেন। তার সাহসী ও বীরোচিত পদক্ষেপসমূহের কারনে এই সকল মগ, হার্মাদ রা উচ্ছেদের লালবাতি দেখলো চোখে মুখে। এই অঞ্চলের নারী-পুরুষ কিংবা শিশুদের ধরে ধরে কৃতদাস বানানো বা শস্য ভান্ডার ডাকাতি করা তো দূরের কথা, এই অঞ্চলে জীবন নিয়ে টিকে থাকাই তাদের জন্য মুশকিল হয়েছিল। তার এই কঠোর ও নিয়মতান্ত্রিক শাসনে এই অঞ্চলের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন, অর্থনীতির স্থীতিবস্থা ও সুশাসন নিশ্চিত হয়। যার ফলাফল স্বরূপ তৎকালীন যৌক্তিক মূল্যে পাওয়া যেত যেকোন পন্য। পেটে ভাত জুটতে লাগলো সকল শ্রেণীর মানুষের।
অথচ আমরা বর্তমানে দেখি দেশীয় মগ প্রথম আলো সুযোগ পেলেই এক হাত নেয় শায়েস্তা খা কে, সফল মুসলিম শাসক তাই শরীরে ফিল করে অস্বস্তিকর চুলকানী । কোথাকার কোন দূর্নীতিবাজ ঠিকাদার কাজ পাবার লোভে অসম্ভব কম মূল্যে টেন্ডার দাখিল করলো আর প্রথম আলো শায়েস্তা খাঁ র সাথে তুলনা করলো এই দূর্নীতিবাজের। বাজারে আলুর দাম কম ব্যাস শুরু হলো শায়েস্তা খাঁকে নিয়ে প্রথম আলোর ফটকামি বাজী। ইদানিং দেখছি রক্তচোষা মোবাইল কোম্পানীর বিজ্ঞাপনে শায়েস্তা খাঁ রূপী এক ভাঁড়ের কথোপকথন। এই সকল তুলনাকারী গর্দভ ও অর্ধমূর্খ সাংবাদিক কিংবা বিজ্ঞাপন নির্মাতারা কি একবারও ভেবে দেখে কিভাবে অপমানিত করা হচ্ছে আমাদের ইতিহাস-অগ্রনায়কদের! না তারা ভাবে না। কারন তারা দেখে এক শ্রেণীর পাঠক কিংবা দর্শক ঠা ঠা করে হেসে উঠে এই ধরনের স্থুল রসিকতায়, আরও রঙ্গ চায়। কিন্তু আমরা, যারা ইতিহাসের এহেন অধিকর্তাদের বাব-দাদাদের চেয়ে কোন অংশে কম সম্মানিত ভাবি না তারা খুবই ব্যাথিত হই, হাত খুবই নিশপিশ করতে থাকে এই ধরনের গান্ডুষধারীদের কপোলদ্বয়ে করতলের তীব্র স্পর্শ দিতে।