এলোমেলো অনেক কথায় ব্লগে লেখা ও কপি পেষ্ট করেছি। কিন্তু ধর্মীয় বিষয়ে তেমন একটা লেখা হয়নি। তাই একটু ব্যতিক্রমী পোস্টঃ
সূরা আল-আসর (ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়)
وَالْعَصْرِ (1) إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ (2) إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ (3)
অর্থঃ
সময়ের কসম। মানুষ আসলে খুবই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং পরস্পরকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে।
নামকরণঃ
প্রথম আয়াতের “আল আছর” শব্দটিকে এর নাম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
নাযিল হবার সময়কালঃ
অধিকাংশ তাফসিরকারক একে মাক্কী বলেছেন। এর বিষয়বস্তু থেকে বোঝা যায় মাক্কী যুগের প্রথম অংশে অবতীর্ণ।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্যঃ
এর মধ্যে স্পষ্ট ভাষায়, মানুষের সাফল্য ও কল্যাণ এবং ধ্বংসের পথ বর্ণনা করা হয়েছে।
ইমাম শাফেয়ী বলেন- মানুষ যদি এই একটি সুরা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে তাহলে এটিই তাদের হেদায়েতের জন্য যথেষ্ট।
‘রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাহাবীদের মধ্য থেকে যখন দুই ব্যক্তি মিলিত হতেন তখন তারা একজন অপরজনকে সুরা আছর না শোনানো পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হতেন না।’ (তাবারানী)
ব্যাখ্যাঃ
মূলবিষয়ঃ এ সুরায় চারটি গুণাবলীর অধিকারী ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে যারা সময়ের ভেতর অবস্থানকালীন ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে-
– ঈমান
– সৎকাজ
– পরস্পরকে ভালোকাজের উপদেশ দেয়া।
– পরস্পরকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দেয়া।
এখানে সময়ের কসম খাওয়ার অর্থ হলো যাদের মধ্যে উল্লিখিত চারটি গুনাবলী রয়েছে তারা ছাড়া বাকী সমস্ত মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে সময় সাক্ষী।
১-৩ আয়াতঃ
সময়ের কসমঃ সময় বলতে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। এটি কোন দীর্ঘ সময় নয়। ভবিষ্যতের গর্ভ থেকে বের হয়ে আসা বর্তমান অতীতে নিপতিত হচ্ছে। অতীতের কসম হলো ইতিহাসের সাক্ষ্য। বর্তমানের কসম হলো বর্তমানের অতিবাহিত সময় মানুষকে কাজের জন্য দেয়া হচ্ছে। দ্রুত অতিবাহিত সময়ই হলো আসল মূলধন।
সময় সম্পর্কে ইমাম রাযীর সুন্দর একটা উদাহরণ -
এক বরফ ওয়ালা বাজারে হেকে চলছিল, দয়া করো এমন এক ব্যক্তির প্রতি যার পুজি গলে যাচ্ছে।
১) “মানুষ” বলতে সমস্ত জাতিকে বোঝানো হয়েছে।
২) “ক্ষতি” বলতে সাধারন অর্থে লাভের বিপরীত হলেও এখানে কল্যাণ ও সফলতা বিপরীত অর্থে।
৩) (সাফল্য ও ক্ষতির ব্যাখ্যা করতে হবে) প্রকৃত অর্থ হলো দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গায় ক্ষতি বিরাজমান। চারটি গুন সম্পন্ন লোক দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গাতেই লাভবান।
চারটি গুনঃ
১) ঈমানঃ ঈমানের সমন্বয় হলো ক) মৌখিক স্বীকৃতি খ) অন্তরে বিশ্বাস গ) কাজে পরিণত করা।
কোরআনে ঈমানের ব্যাখ্যা-
“যারা বলেছে আল্লাহ আমাদের রব তারপর তার উপর অবিচল হয়ে গেছে।”(হা-মীম সিজদা-৩০)
“আসলে তারাই মূমিন আল্লাহর কথা উচ্চারিত হলে যাদের দিল কেপে উঠে।”(আনফাল-২)
“আসলে তারাই প্রকৃত মুমিন যারা আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে এরপর কোনরূপ সন্দেহে পতিত হয়নি।”(হুজুরাত,১৫)
“যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে সর্বাধিক ও অত্যন্ত মজবুতির সাথে ভালোবাসে।” (বাকারা-১৬৫)
ঈমানের আসল লক্ষ্য হলো প্রকৃত ঈমান, কেবল মৌখিক স্বীকারোক্তি নয়।
হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনো।”(নিসা-১৩৬)
২) সৎকাজঃ
দ্বিতীয় গুণটি হলো ভালোকাজ। ঈমান ও ভালোকাজ বীজ আর বৃক্ষের মতো।
পরবর্তী দু’টি গুণ হলো – যারা ঈমান আনে ও ভালো কাজ করে তারা পরস্পরকে হক কথা বলা হক কাজ করা এবং ধৈর্য্য ধারণের উপদেশ দিতে হবে।
চতুর্থ গুনটি হলো ধৈর্যঃ বিপদ মোকাবেলায় তারা পরস্পরকে অবিচল ও দৃঢ় থাকার উপদেশ দিতে থাকবে।
-ঃ শিক্ষাঃ-
(১) দুনিয়া ও আখেরাতের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রকৃত ঈমানদার হতে হবে।
(২) প্রকৃত ঈমানদারকে অবশ্যই সৎকাজ করতে হবে এবং পরস্পরকে হক কথা বলতে হবে।
(৩)বিপদে আপদে অবশ্যই ধৈর্য্য ধরে সামনে অগ্রসর হতে হবে।
সংগৃহীত পোস্ট
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:৩৫