somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্যাটিক্যানের পথে ঘাটে (ছবি ব্লগ প্রতিযোগিতা)

২৬ শে জুন, ২০২১ সকাল ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১৬ সালে জানুয়ারী মাসে ইতালী ভ্রমণের এক দারুন সুযোগ এলো। অবশ্যই এটা ব্যক্তিগত না। এক সপ্তাহের চেয়েও বেশি সময়ের এই ভ্রমণে আমি প্রায় ইতালীর বড় বড় সব শহরে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়িয়েছি। ইতালীতে প্রবেশ করেছিলাম মিলানো এয়ারপোর্ট দিয়ে আর বের হয়ে এসেছি রোমা এয়ারপোর্ট দিয়ে। মিলান থেকে আশেপাশের শহরগুলি ঘুরে দেখেছিলাম গাড়িতে করে, যার মাঝে আছে ভেনিসের দুর্দান্ত এক ভ্রমণ (এটা নিয়েও ভবিষ্যতে একটা পোস্ট হতে পারে)।

মিলান থেকে রোমায় গিয়েছিলাম ইউরো ট্রেনে। পয়তাল্লিশ ইউরো দিয়ে টিকিট কেটে সন্ধ্যার পর উঠে বসলাম ইউরো ট্রেনে। সময় লাগবে শুনেছিলাম প্রায় চার ঘন্টা। ট্রেন ছেড়ে দেবার অল্প কিছুক্ষণ পরেই ফুল স্পীডে চলতে শুরু করলো, এভারেজ স্পীড ছিল প্রায় তিনশ কিলোমিটার পার ঘণ্টা। তিন ঘন্টা চল্লিশ মিনিট পরে আমাকে নামিয়ে দিলো রোমা টারমিনি রেল স্টেশনে।


ছবি ১ - রোমা রেল স্টেশনের ভিতরে। প্রায় মধ্যরাত। স্টেশন ফাঁকাই ছিল। এটা থেকে ইউরোপের যেকোন শহরে যাওয়া যায়। শুধু ইউরোপীয়ান পাসপোর্ট থাকলেই হবে। অথবা সেঞ্জেন ভিসা।

মিলানে খাওয়া দাওয়ার যে ভয়াবহ সমস্যা ছিল রোমাতে এসেই কেটে গেল। স্টেশনের খুব কাছেই দেশি ভাইদের অনেকগুলি হোটেল পেলাম। রাতে কাচ্চি বিরিয়ানী দিয়ে জম্পেস এক খাওয়া দাওয়া হলো। এই কয়দিন পাউরুটি খেতে খেতে লাইফ প্রায় শেষের দিকে চলে যাচ্ছিল!

খুব সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই হোটেলে নাস্তা সেরে সারা দিনের প্ল্যান নিয়ে বসলাম। রাতে একটা সিটি প্ল্যানের ম্যাপ নিয়ে এসেছিলাম। সকালবেলা রোমার কিছু জায়গা ঘুরে ঠিক করলাম দুপুরে লাঞ্চ শেষ করেই ভাটিক্যান দেখতে যাবো। রোমে আসবো আর ভ্যাটিকান সিটিতে যাবো না সেটা তো হতেই পারে না। প্রচণ্ড উত্তেজনায় তখন থেকেই মনের ভিতরে ভার্চুয়াল কাঁপাকাঁপি লেগে গেলো। আমার কপাল খুব ভালো সেইদিন ছিল শনিবার আর শনিবারে নাকি দুপুরের পর ভ্যাটিক্যান ভ্রমণে কোন টিকিট কাটতে লাগে না।
রোমা শহরের মাঝে দিয়ে বয়ে যাওয়া টিবের নদীর খুব কাছেই ভ্যাটিকান সিটির অবস্থান। দুপুরের পর টিবের পার হয়ে চলে আসলাম ভ্যাটিকান সিটির সীমানা প্রাচীরের সামনে। (আমার সাথে আরো তিনজন সাথী ছিল এবং সঙ্গত কারণে এদের পরিচয় উহ্য রাখা হলো। বেশিরভাগ ছবি আমার মোবাইলে তোলা, কিছু ছবি বাকিদের মোবাইলে তুলেছিলাম)


ছবি ২ - রোমের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া এবং ভ্যাটিক্যানে পাশ দিয়ে বইয়ে যাওয়া একটা ছোট নদী। আমাদের দেশের খুব ছোট নদীগুলির তুলনায়ও এটা বাচ্চা নদী।

পথে হেঁটে যেতে যেতেই চোখে পড়লো স্থাপত্য শিল্পের দারুন দারুন সব নমুনা। ইউরোপীয়ান কাউন্সেলের আদালত বিল্ডিং। সামনাসামনি দেখতে এতই দারুন যে ছবি না তুলে পারলাম না।


ছবি ৩ - বিশাল আকার এবং স্থাপত্যের কারুকাজ দুর্দান্ত। যে কেউ দেখলেই মুগ্ধ হয়ে যাবে। যথারীতি সামনে ইতালীয়ান এবং ইউরোপীয়ান কাউন্সেলের পতাকা ঝুলছে।[/sb

হেঁটে হেঁটে আরো কিছুটা অগ্রসর হলাম। রাস্তা বিশাল বড়। সেই তুলনায় লোকজনের চলাচল কম। প্রচুর ত্যুরিস্ট এখানে সেকাহ্নে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। চারপাশের পরিবেশ এক কথায় দুর্দান্ত। কোনটা রেখে কোনটা দেখি? রাস্তার পাশে ছোট ছোট অনেকগুলি প্রাচীন বিল্ডিং। কয়েকটার ভিতরে ঢুকে ঘুরে আসলাম। ছাদের উপর যুদ্ধের জন্য প্রাচীন অস্ত্র রাখা।


ছবি ৪ - বিল্ডিংগুলির ছাদে প্রাচীনকালের বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র রাখা। বিভিন্ন রকমের, সাইজের। কিছু জায়গায় হাত দিয়ে ধরে দেকাহ যায় আবার কিছু জায়গায় দূর থেকে দেখতে হয়।

কিছুদূর এগুতেই দেখতে পেলাম “ক্যাসেল সেইন্ট এঞ্জেলো”, এটা মিস করার প্রশ্নই উঠে না। সব জায়গায় ইচ্ছেমতো গাদা গাদা ছবি তুলেছি। এই পোস্ট দেবার সময়ে ইচ্ছে করেই খুব কমন ছবিগুলি বাদ দিয়ে দিয়েছি। এমন সব এক্সক্লুসিভ ছবি দেয়ার চেষ্টা করেছি যা সহজলভ্য না। এগোতে এগোতে দেখা পেলাম হাজার হাজার দর্শনার্থীর। সমৃদ্ধশালী ও বৃহত্তম জাদুঘরসম এই জায়গাটা দেখার রোমাঞ্চ সবার চেহারায় ফুটে উঠেছে। যারা যারা এখানে ভিজিট করতে চান, পারলে একটা গাইড ভাড়া করে নেবেন। কারণ ভ্যাটিকানের সবকিছুর সাথেই অনবদ্য ইতিহাস ওতোপ্রতোভাবে জড়িত, কিন্তু ইতালীয়ান ভাষা না জানার জন্য অনেককিছু বুঝতে পারবেন না এবং জানতেও পারবেন না। কেউ বলে বা দেখিয়ে না দিলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য মিস হয়ে যেতে পারে। আমরা ভিতরে ঢুকে যখন এটা বুঝতে পেরেছি কিন্তু তখন আর কোন উপায় ছিল না। সব জায়গা লাতিন এবং ইতালীয়ান ভাষায় লেখা। ইংরেজি প্রায় চোখেই পড়েনি।
কিছুক্ষণ পরেই সেইন্ট পিটার্স স্কয়ার, সেইন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার পাশ দিয়ে ঢুকে পড়লাম ভ্যাটিক্যান মিউজিয়ামে। চত্ত্বরের শুরুতেই এক চিলতে সবুজ এলাকা, এরপর দুর্দান্ত এক মর্মর প্রাসাদের সমাহার। অসম্ভব সুন্দর সব চিত্রকর্ম আর সুনিপুণ হাতের সূক্ষ্ম কারুকাজ, হাজার হাজার অবিশ্বাস্য রকমের যেন জীবন্ত ভাস্কর্যগুলো ভিতরের পথের দুইপাশেই সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মেঝেগুলোও দেখার মত, আকর্ষণীয় সব নকশা, বিভিন্ন ধাঁচের মোজাইক কেটে কেটে বানানো হয়েছে।


ছবি ৫ - আবক্ষ মুর্তিটা কাছ থেকে খুব আকর্ষনীয় লাগছিল, এটা এ্যাঞ্জেল গ্যাব্রেয়েলের ছবি। কে বানিয়েছে নীচে ইতালীয়ান ভাষায় লেখা ছিল। দূঃখিত আমি ইতালীয়ান ভাষা জানি না।

আমরা বাকি সবার সাথে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেছি। কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছি কিছুই জানি না। ভ্যাটিকান সিটির এই জায়গাগুলি এতই বিশাল এবং সংগ্রহশালা এতরকম জিনিসে পরিপূর্ণ যে সমস্ত সংগ্রহ দেখা তো অসম্ভব, এমন কী অতি বিখ্যাত নিদর্শনগুলোও একদিনে দেখা সম্ভব নয়! শুধু মুগ্ধ হয়ে যেদিকে যাচ্ছি যতটা পারি কাছাকাছি যেয়ে ছবি তুলে রাখা চেষ্টা করেছি। ইতিমধ্যেই আমরা ঠিক করে নিয়েছি, আমরা হেঁটে যাবো একদিক ধরে, পথের মাঝে যা যা পাবো সেটাই ভালো করে দেখে নেবো।

হাঁটার সময়ে আরেক ঝামেলা। কোন দিকে তাকাবো? পাশে, উপরে না নীচে? কিছুক্ষণ দেখার পর উপলব্ধি করলাম মেঝের চাইতে লক্ষগুণ সুন্দর উপরের ছাদগুলো, নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চলে যাওয়া ছাদের এক ইঞ্চি জায়গাও বাদ রাখেনি এর চিত্রশিল্পীরা। এঁকে গেছেন একের পর এক অত্যাশ্চর্য চোখ ধাঁধানো পেইন্টিং। ছাদের দিকে না তাঁকালে মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর অনিন্দ্য সুন্দর কীর্তি আর কোনদিন হয়তো দেখতেই পেতাম না। হাঁটার সময়ে যেই সিরিয়ালে দেখতে পেয়েছি সেভাবেই ছবি দিয়ে গেলাম। কোনটা কিসের জিজ্ঞেস করবেন না, আমিও নিজেও ভালোমতো জানিনা। সেখানে কাউকে জিজ্ঞেস করার মতো পরিস্হিতিও ছিল না। প্রচন্ড ভীড়। এক জায়গায় বেশিক্ষণ দাঁড়ানোও যায় না।


ছবি ৬ - মিউজিয়ামের ছাদে হাতে আঁকা ছবি। কাছ থেকে এত সুন্দর লাগে যে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়। কতটা ধৈর্য্য থাকলে এভাবে ছাদে ছবি আঁকা যায় ভেবে দেখুন? আজো ছবিগুলি আগের মতোই আছে।
.


ছবি ৭ - হাতে আঁকা ছবির কারুকাজ। দেখলেই অবাক হতে হয়! কী যে সুন্দর লাগছিল!

যারা ভ্যাটিকান সিটি সম্পর্কে খুব বেশী জানেন না তাদের জন্যে বলে রাখি, ভ্যাটিকান সিটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পৃথিবীর খুব ছোটো একটা স্বাধীন রাষ্ট্র এবং সম্ভবত একমাত্র দেশ যেটা অন্য একটি দেশের মধ্যখানে অবস্থিত। এই কারণে রোমকে অনেকেই একসঙ্গে দুটি দেশের রাজধানী বলে থাকেন। ভ্যাটিকান শাসন করে থাকেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু পোপ। ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম পুণ্যভূমিও এই ভ্যাটিকান। মূলত খ্রিস্টান ধর্মের উত্থানের সঙ্গে রোম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভ্যাটিকান সিটি। ইতালিয়ানরা বলেন সিটা ডেল ভ্যাটিকানো। বিশ্বের ক্ষুদ্রতম এই দেশ খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিশেষ করে রোমান ক্যাথলিকদের কাছে পবিত্র তীর্থভূমি। ইতালির রোম শহরের মধ্যে টিবের নদীর পশ্চিমপাড়ে অবস্থিত অতিক্ষুদ্র এই দেশটার আয়তন মাত্র ১১০ একর। আর জনসংখ্যা মাত্র ১০০০ জন। এই ভ্যাটিকান সিটিকে দেশ না বলে বরং একটা শহর বললে বোধহয় ভালো হয়। রোমে টিবের নদীর ওপর পাথর কুঁদে অলংকৃত সেতু পেরিয়ে প্রবেশ করতে হবে দুর্গপ্রাচীরে ঘেরা ছোট্ট এই সার্বভৌম দেশের এলাকাতে। অতীতে ইতালি সহ ইউরোপের অনেকাংশ এলাকাই ছিল খ্রিষ্টান ধর্মযাজক পোপের শাসনাধীন। ১৮ শতকে ইতালিতে পোপের শাষনকাল শেষ হলে ১৯২৯ সালে ইতালির রাজার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী মুসোলিনি ও ভ্যাটিকান সিটির পোপের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে স্বাধীন এক সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করে ভ্যাটিক্যান সিটি। এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রেনেসাঁ যুগের কালজয়ী সব স্থাপত্য। চারপাশে চোখে পড়বে অপরূপ দুর্দান্ত সব ভাস্কর্য।

ভ্যাটিকানের এই মিউজিয়াম ১৬ শতকে পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াস নির্মাণ করেন। ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় সাজানো আছে চিত্রকলা, ভাস্কর্য, পোপদের ব্যক্তিগত দুর্মুল্য এবং অসাধারণ সব সামগ্রী। সিস্টিন চ্যাপেলের প্রার্থনা কক্ষে পোপের অভিষেক হয়। ১৪৮৩ সালে তৈরি এই স্থাপত্যের সিলিং অলংকৃত করেছিলেন বিশ্ববরেণ্য চিত্রকর মাইকেল অ্যাঞ্জেলো। ১৫০৮ থেকে ১৫১২ সাল ধরে এর সিলিংয়ে তিনি এঁকেছিলেন ৯টি প্যানেল পেইন্টিং সেগুলি আজও অমর হয়ে রয়েছে। পোপের আগের ব্যবহৃত ঘর এবং তালিকা দেখে আসলাম।


ছবি ৮ - প্রধান যাজকের শয়ন কক্ষ, সম্ভবত আগে ব্যবহৃত হতো। অতীতের স্মৃতি হিসেবে সযত্নে রেখে দিয়েছে
.


ছবি ৯ - প্রধান যাজকদের নামের তালিকা। অনেক লম্বা তালিকা। ইতালীয়ান ভাষায় নাম এবং নামের পাশেই ক্রম দেয়া। এই নামগুলি সম্ভবত পোপ হবার পর নেয়া হয়েছে। ২০০৫ সাল পর্যন্ত আপডেট করা আছে।

সেদিন খুব ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সেইন্ট পিটার্স ব্যাসেলিকায় যেতে পারলাম না। আসলে একদিন মিউজিয়াম এবং এই ব্যাসেলিকা দেখে আসা প্রায় অসম্ভব। ভিতরে ঢুকার পর জিজ্ঞেস করে জানতে পেয়েছিলাম যে সেখানে যেতে হলে আবার বের হয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে ঢুকতে হবে। আমরা তখন মিউজিয়ামের প্রায় মাঝখানে। সাথে সাথেই সেই চিন্তা বাদ দিয়ে দেই।

ভিতরের বেশ কিছু ছবি কিছুটা অন্ধকার আসার কারণ ফটোগ্রাফীর সমস্যা না, আলোর স্বল্পতা। তাছাড়া প্রায় সব জায়গায় দর্শনার্থীদের কাছে থেকে দেয়াল দূরে রাখার জন্য বেশ কিছুটা সামনে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়া ছিল। যেই কারণে ছবি কিছুটা জুম করে তুলতে হয়েছে।

এছাড়াও আরেকটা সমস্যা আছে, ভয়াবহ। কিছু জায়গায়, দেখা মাত্রই যেতে ইচ্ছে করে এইরকম, সামনে সিক্যুরিটি গার্ড বসানো। সামনে এগুতে গেলেই জিজ্ঞেস করে, “ক্রিষ্টিয়ান?” মিথ্যা কথা এমনিতেই বলি না, তার উপর এই ধর্মীয় জায়গায় বলার প্রশ্নই উঠে না। সিক্যুরিটি গার্ডরা হাত দিয়ে পাশে সরিয়ে দেয় পরেরজন এগিয়ে আসার জন্য। আমি সরে যাবার আগেই কোনরকমে কিছু ছবি তুলে নিয়েছি।


ছবি ৯ - এইসব জায়গা রেস্ট্রিকটেড করা খ্রীষ্টান নয় তাদের জন্য। সামনে সুইস গার্ড এবং ফাদার'রা পাহারা দেয়। ঢুকার আগে জিজ্ঞেস করে নেয় রিলিজিয়নের ব্যাপারে। কনফার্ম হলেই আরো ভিতরে ঢুকতে দেয়। আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি প্রাউডলি বলেছি "আই এ্যাম মুসলিম" ফলাফল মূল লাইন থেকে সরিয়ে দেয়া

পুরো এলাকা এত বড় যে কোন দিক দিয়ে সময় কেটে গেছে আমরা টেরই পেলাম না। ছাদ কতটা উঁচূতে বুঝানোর জন্য মিউজিয়ামের প্রায় মাঝখানে দাঁড়িয়ে একটা ছবি তুলেছিলাম। তখন বুঝেছিলাম ছাদ কতটা উঁচুতে।

আমার ছবিগুলিতে ক্যামেরার টাইম ঠিক নেই। এটা বাংলাদেশের টাইমও না। সম্ভবত কাতারের হোটেলে একবার এডযাস্ট করেছিলাম। সুতরাং টাইম দেখে গিট্টূ লাগার কোন কারণ নেই। তাছাড়া ইতালীতে তখন প্রায় রাত আট’টার দিকে সন্ধ্যে হয়। আমাদের হোটেল ছিল অনেক দূরে। সুতীব্র অনিচ্ছা সত্ত্বেও একবার পুরো ঘুরে আসার পর মিউজিয়াম থেকে বের হয়ে আসতে হলো। মিউজিয়াম বন্ধ করে দেয়ার সময় প্রায় ঘনিয়ে এসেছিল। সিড়ি দিয়ে নামার সময় চোখে পড়লো সেই বিখ্যাত সুইস গার্ডদের। ভ্যাটিকান সিটির অফিশিয়াল নিরাপত্তারক্ষীর নাম ‘পটেনশিয়াল সুইস আর্মি’। সদস্য সংখ্যা মাত্র ১৩৫। পোশাকটা যথেষ্ট ভুতুড়ে হলেও এই বাহিনীতে যোগ দিতে যথেষ্ট নিয়মকানুন মানতে হয়। বয়সসীমা ১৯ থেকে ৩০। প্রত্যেকের উচ্চতা হতে হয় কমপক্ষে পাঁচ ফিট সাড়ে আট ইঞ্চি। ক্যাথলিক হতে হয়, এর চেয়েও বড় ব্যাপার এদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ। অনেক বছর ধরে এই বাহিনী পোপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আসছে।


ছবি ১০ - ব্যাসিলিকার ভিতরের সুইস গার্ডরা পাহারা দিচ্ছে। ইচ্ছে ছিল এদের কাছে যেয়ে এবং পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলবো। সিড়ি দিয়ে নামার সময় দেখলাম একদম রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছে। কেন যেন কোন রোবটের সাথে ছবি তুলতে ইচ্ছে করলো না।


সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার ঠিক সামনে অশ্বক্ষুরাকৃতির পাথর বাঁধানো প্রশান্ত চত্বর। এটাই সেন্ট পিটার্স স্কোয়্যার। দু’পাশে অর্ধবৃত্তাকারে রয়েছে ২৮৪টি স্তম্ভ যার মাথায় দাঁড়িয়ে আছে ১৪০ জন ধর্মযাজকের মূর্তি। চত্বরের মাঝে রয়েছে দুটি ফোয়ারা আর মিশর থেকে আনা সুউচ্চ ওবেলিক্স পাথর খণ্ড। এই চত্বরটিকে বার্নিনি শিল্পমণ্ডিত করে তুলেছিলেন। এই চত্বরে প্রতি বুধবার সকালে ও বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের দিনে পোপ দর্শনার্থীদের সামনে এসে উপস্থিত হয়ে প্রার্থনা করেন।

এখানে একসাথে ষাট হাজার লোক অবস্থান করতে পারে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বেশী মানুষ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন খ্রিষ্টান স্থাপত্য এবং ক্যাথলিকদের কাছে অতি পবিত্র তীর্থস্থান। পৃথিবীর অন্যতম নয়নাভিরাম এই চত্বরটির কাজ শুরু হয় ১৬৫৬ সালে, ভ্যাটিকানের বরপুত্র, রেনেসাঁ আমলের অন্যতম প্রতিভা বার্নিনির তত্ত্বাবধানে।


ছবি ১১ - এটাই সেই সেইন্ট পিটার্স ব্যাসেলিকার সামনে প্রার্থনা করার বিখ্যাত জায়গা

প্রায় একযুগ পরে শেষ হয় ভ্যাটিক্যানের নির্মাণ কাজ, এই সুবিশাল চত্বরের ঠিক কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে দ্য উইটনেস নামের ৮৪ ফুট উচ্চতার এক ওবেলিস্ক স্তম্ভ। বিশ্বের ২য় উচ্চতম এই ওবেলিস্কটির উচ্চতা ভিত্তি থেকে ১৩০ ফিট! মিশর থেকে প্রায় ২০০০ বছর আগে আনা এই স্তম্ভটির সাথে জড়িয়ে আছে ক্যালিগুলাসহ অন্যান্য ঐতিহাসিক সব চরিত্র। এর চত্বরে আরো স্থান পেয়েছে বার্নিনির নির্মিত এক বিশালাকার অনিন্দ্যসুন্দর ঝরনা যার নকশা তৈরি হয় ১৬১৩ সালে, এই স্ফটিক স্বচ্ছ জলধারা আজো পূর্ণ বেগে বহমান। চত্বরের অন্য পাশেই ভ্যাটিকানের সীমানা শেষ, শুরু রোম তথা ইতালি!


ছবি ১২ - এটাই সেই বিখ্যাত ওবেলিস্ক - দ্য উইটনেস

*** এই লেখার জন্য প্রায় ৫০টা ছবি সিলেক্ট করেছিলাম, কিন্তু দেখি প্রতিযোগীতার নিয়ম অনুসারে মাত্র ১২টার বেশি ছবি দেয়া যাবে না। নিতান্ত বাধ্য হয়েই বাকি ছবিগুলি পোস্ট থেকে সরিয়ে দিলাম। বেশিরভাগ ছবি তোলা হয়েছি শাওমী রেডমাই নোট টু মোবাইল দিয়ে। এর ক্যামেরা খুব ভালো। অত্যন্ত দূঃখের বিষয় হচ্ছে আমার খুব প্রিয় এই মোবাইলটা চুরি হয়ে যায় দেশে ফেরার কিছুদিন পরেই। ভাগ্যিস সব ছবি আমি আগেই নামিয়ে রেখেছিলাম!

*** এই পোস্ট লিখবো লিখবো করেও কেন যেন এতটা বছর লেখা হয়নি। ভ্রমণ কাহিনী আগে লিখিনি দেখে কিছুটা সংকোচও কাজ করছিল। এবার ব্লগে ছবির প্রতিযোগীতার আয়োজনে দেখে মনে হলো এটাই উপযুক্ত সময় এই পোস্ট লেখার।
এই পোস্ট উৎসর্গ করা হলো ব্লগে আমার খুব প্রিয় একজন মানুষ’কে যিনি মাত্র কয়েকদিন আগেই আমাকে আবারো কৃতজ্ঞতার আষ্টেপিষ্টে বেঁধে ফেলেছেন।
.
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ প্রতিটা ছবি আমার তোলা। সবগুলি ছবি কপিরাইট আইনের অধীনে আমার নিজস্ব সম্পত্তি।

সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইলো
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, জুন ২০২১
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:২৮
৩৪টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুদ্ধে মিডিয়া একটি বড় অস্ত্র।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১:০০


যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য নানাবিধ কৌশল অবলম্বন করা হয়। যুদ্ধে জেতার জন্য সেনাপতি তার কৌশলগুলো পর্যায়ক্রমে প্রয়োগ করতে থাকে। যারা সাঞ্জুর আর্ট অব ওয়ার পড়েছেন, তারা যুদ্ধের অনেকগুলি কৌশলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অজানা সত্য কাহিনি: রবার্ট দ্য ব্রুস, আউটল’ কিং

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১:২৭



ব্রেভহার্ট ছিল ১৯৯৫ সালের একটি মহাকাব্যিক যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র, যেটি পরিচালনা করেছিলেন বিখ্যাত অভিনেতা মেল গিবসন এবং যেখানে তিনি নিজেই অভিনয় করেছিলেন ১৩শ শতকের স্কটিশ বিদ্রোহী যোদ্ধা উইলিয়াম ওয়ালেস... ...বাকিটুকু পড়ুন

নবীজির জন্মের আগে আরবে গজব অবস্থা ছিলো

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৯ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:০২



নবীজির জন্মের আগে আরবে বেশ কিছু ধর্ম ছিলো।
ধর্ম না বলে কুসংস্কার বলা ভালো। সেই সময় মানুষ রসিকে সাপ মনে করতো। মগজহীন মানুষ দিয়ে ভরা ছিলো আরব। সেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনু গল্পঃ ব্যর্থ বাসনার দাহ

লিখেছেন সামিয়া, ০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৮

ছবিঃনেট

খুব তাড়াহুড়া করে বের হয় তন্দ্রা, আজ স্কুলে যাবে না, কোনো টিউশনি করাবে না, ফোন করে সব student-কে মানা করে দিয়েছে। এগারোটার আগে ওকে এয়ারপোর্ট পৌঁছতে হবে।

নাবিল আসছে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৫২

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৯ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



এনসিপি আওয়ামীলীগকে এত ভয় পাচ্ছে কেন?
অলরেডি আওয়ামীলীগের তো কোমর ভেঙ্গে গেছে। তবু রাতদুপুরে এত আন্দোলন কেন? দেশে ১৮/২০ কোটি মানুষ। তারা তো আওয়ামীগকে ভয় পাচ্ছে না। তাহলে এনসিপির এত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×