নির্বাচন নিয়ে আমার ইশতিহার গুলি নীচে তুলে দিলাম। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, এই ইশতিহার গুলি অবশ্যই দেশের জন্য সুফল বয়ে নিয়ে আসবে…
১. গনতন্ত্র পূর্ণ ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগনের মৌলিক ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নির্ভয়ে সবাই নিজ নিজ ভোট কেন্দ্রে যেয়ে ভোট নিজের ইচ্ছায় দিতে পারে সেটার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
২. নির্বাচন কমিশন কে স্বতন্ত্র এবং শক্তিশালী রূপে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এখানে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আইন এবং কাঠামো থাকা অতীব জরুরি। ক্ষমতায় থাকা সরকার এতে কোন ভাবেই কোন নিয়োগ দিতে পারবে না।
৩. তত্তাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। এটা আমাদের দেশে ইতিমধ্যেই তার সাফল্য দেখাতে পেরেছে। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ভাবে কাজ করার জন্য তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই। পর পর দুই বারের বেশী কেউ একটানা প্রধানমন্ত্রী পদে থাকতে পারবেন না। নির্বাচনের তিন মাস আগে তত্তাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা দিয়ে পূর্বের রাজনৈতিক সরকার পদত্যাগ করে চলে যেতে হবে।
৪. দুর্নীতি দমন কমিশন কে স্বতন্ত্র এবং শক্তিশালী রূপে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এখানে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আইন এবং কাঠামো থাকা অতীব জরুরি। ক্ষমতায় থাকা সরকার এতে কোন ভাবেই কোন নিয়োগ দিতে পারবে না।
৫. বিচার বিভাগীয় পূর্ণ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একে সম্পুর্ন ভাবে স্বতন্ত্র এবং শক্তিশালী রূপে কাজ করার জন্য অবকাঠামো তৈরী করতে হবে। বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রত্যেক ক্যান্ডিডেটের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বা সংযোগ আছে কিনা সেটা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। কোন ভাবেই কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়া চলবে না। প্রমোশন বা প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে জেষ্ঠতাই প্রাধান্য পাবে। বিচার বিভাগে সব রকম দূর্নীতি কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
৬. বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমান অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। পাচার কৃত এই সব অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের টাকায় বিদেশে বসে যারা অবৈধ ভাবে অপচয় করছে তাদের আইনের আওতায় এনে সব টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা নিতে হবে।
৮. সন্দেহ জনক চাঞ্চল্যকর সকল হত্যাকান্ড গুলি নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের আওতায় এনে আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৯. ভোক্তা অধিকার আইন সংস্কার এবং প্রয়োজনে জনগনের স্বার্থ মাথায় রেখে নতুন নতুন আইন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সব সময় সরকারের মাথায় রাখতে হবে, নতুন আইন গুলি হবে জনগনের স্বার্থকে প্রতিষ্ঠা করা, ব্যবসায়ীদের নয়।
১০. পি এস সি বা সম মানের সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ব্যাপারে একটা স্বতন্ত্র কমিশন গঠন করে একে শক্তিশালী রূপে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এখানে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আইন এবং কাঠামো থাকা অতীব জরুরি। ক্ষমতায় থাকা সরকার এতে কোন ভাবেই কোন নিয়োগ দিতে পারবে না বা কোন প্রভাব খাটাতে পারবে না।
১১. শিক্ষা ব্যবস্থা কে পুরোপুরি নতুন ভাবে ঢেলে সাজাতে হবে। সৃজনশীল শিক্ষার নামে বর্তমানে শিক্ষা ব্যবস্থাকে একেবারে ধংশ করে দেয়া হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কঠোর এবং নির্মম শাস্তির আইন প্রবর্তন করতে হবে। দলীয় নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট নিয়োগ পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে। নিয়মিত সারা দেশের সব শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় ট্রেনিং এবং মনস্তাতিক ট্রেনিং এর ব্যবস্থা নিতে হবে। এর সাথে সাথেই দুই ধরনের প্রচলিত মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকায়ন এবং যুগপোযোগী করে তুলতে হবে।
১২. টি সি বি কে আবার নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য নিয়ন্ত্রনে রাখতে জনগনের স্বার্থ মাথায় রেখে নতুন নতুন আইন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সব সময় সরকারের মাথায় রাখতে হবে, নতুন আইন গুলি হবে জনগনের স্বার্থকে প্রতিষ্ঠা করা, ব্যবসায়ীদের নয়।
১৩. বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে দলীয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। কোন ছাত্র সংগঠন দেশের কোন রাজনৈতিক দলের পৃষ্ঠপোষক্তায় চলতে দেয়া যাবে না। এটা যদি প্রতিষ্ঠা করা না যায়, তাহলে বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দিতে হবে।
১৪. দেশে এবং আমাদের সমাজে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। কিছু টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশের নোংরা মানসিকতার সাংস্কৃতিক আগ্রাসন অবশ্য অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। দেশীয় নতুন নতুন টিভি চ্যানেল খোলার জন্য ভর্তুকি দিয়ে নোংরা বিদেশী টিভি চ্যানেল সম্প্রচার এদেশে বন্ধ করতে হবে।
১৫. ইনকাম ট্যাক্স আদায়ের ক্ষেত্রে সরকার কে আরও যুগপোযোগী আইন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। উন্নয়নের জন্য অর্থ প্রয়োজন। সরকার ইচ্ছে করলেই দেশের ভিতর থেকে সেটা যোগার করতে পারে। বর্তমানে দেশে বেশীর ভাগ লোকজন সুযোগ পেলেই ইনকাম ট্যাক্স দেবার সময় চুরি বা অনৈতিক পন্থা অনুসরণ করে, সেটা কঠোর হস্তে বন্ধ করতে হবে। একই দেশে একজন নিজের কষ্টার্জিত টাকা ট্যাক্স দিবে আর বাকিরা সবাই চুরি করবে সেটা হতে পারে না।
১৬. ট্রান্সপোর্ট সেক্টরে সরকার কে ব্যাপক ভাবে বিনিয়োগ করে পাব্লিক মাস ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ছোট ছোট একশ গাড়ির চেয়ে বড় একটা বা দুইটা গাড়ি সব দিক থেকে লাভ জনক এবং পরিবেশ বান্ধব। দুই তলা বা বড় বড় গাড়ি সরকারী দায়িত্বে চুরি না করে চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
১৭. ব্যাংকিং আইনে ব্যাপক রদ বদল করতে হবে। খেলাপি ঋনের জন্য নির্মম এবং কঠোর আইন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়োগের জন্য স্বতন্ত্র কমিশন গঠন করে একে শক্তিশালী রূপে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এখানে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আইন এবং কাঠামো থাকা অতীব জরুরি। ক্ষমতায় থাকা সরকার এতে কোন ভাবেই কোন নিয়োগ দিতে পারবে না বা কোন প্রভাব খাটাতে পারবে না।
১৮. মানবাধিকার কমিশন কে দুর্নীতি দমন স্বতন্ত্র এবং শক্তিশালী রূপে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এখানে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট আইন এবং কাঠামো থাকা অতীব জরুরি। ক্ষমতায় থাকা সরকার এতে কোন ভাবেই কোন নিয়োগ দিতে পারবে না।
১৯. দেশের উন্নয়নের জন্য বিদেশী বিনিয়োগের কোন বিকল্প হতে পারে না। গনতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠা করে, বিদেশী বিনিয়োগের অবকাঠামো তৈরী করে আর ঘুষ বন্ধ করার মাধ্যমে বেশী বেশী করে বিদেশী বিনিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। দরকার হলে নিজস্ব ইকোনমিক জোন এবং প্রয়োজনীয় ট্যাক্স হলিডের ব্যবস্থা নিতে হবে।
২০. চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। কোন সরকারী চাকুরীরত চিকিৎসক প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবেন না। প্রত্যেক ঔষুধের সরকারের নিজস্ব মূল্য দেয়া থাকবে, এর চেয়ে বেশী দাম দিয়ে বাজারে কোন ঔষুধ বিক্রি করা যাবে বা। প্রতিটা ট্রিটমেন্ট এর জন্য সরকারের নিজস্ব মূল্য দেয়া থাকবে। ভুল চিকিৎসার কারনে কোন রুগির মৃত্যু হলে তার উপযুক্ত বিচার করার আইন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বি এম এ সারা দেশে ইচ্ছে মতো কোন ভাবেই চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিতে পারবে না।
২১. বেসরকারী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের পজেটিভ আটিচুড থাকতে হবে। যেই সব পন্য তৈরীতে আমাদের দেশে স্বয়ং সম্পুর্ন সেগুলি ইম্পোর্ট করার উপর নিষেধাজ্ঞা এবং উচ্চ ট্যাক্স আরোপ করতে হবে। দেশের মানুষকে নিজের দেশের পন্য ব্যবহার করার জন্য আগ্রহী করে তুলতে হবে।
২২. ঘুষ সহ সকল দূর্নীতিকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে।
২৩. সংবাদ পত্র সহ সকল মিডিয়ার বাক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
২৪. নতজানু এবং ব্যক্তি স্বার্থের জন্য পা চাটা পররাষ্ট্র নীতি পরিত্যাগ করতে হবে। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে মত প্রকাশ করার পররাষ্ট্র নীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
শুভ নববর্ষ!
সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, ডিসেম্বর , ২০১৮
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৯ সকাল ১০:৩৩