-সত্যি করে না হয় নাই বা বললেন, মিথ্যে করে একবার বলেন না? মাত্র একবার?
-আপনার এসব বস্তা পঁচা ডায়লগ দেয়া বন্ধ করেন। কত বার বলেছি কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করবেন না।
-কাউকে ভালোবাসি বলাটা কি এত কঠিন?
-সহজ কি কঠিন সেটা ব্যাপার না, আপনাকে বলাটা ঠিক হবে কিনা সেটা চিন্তা করে দেখতে হবে ...
-আর কত দিন চিন্তা করবেন? আমাকে এত কষ্ট দিতে কি আপনার ভালো লাগে?
-আপনাকে কষ্ট পেতে কে বলেছে? আমি বলেছি? আমার পিছনে ঘুরাঘুরি বন্ধ করে দিন। আর কষ্ট পেতে হবে না।
-এত দিন, এত কিছুর পরে এসে আপনি এই কথা আমাকে বলতে পারলেন ?
-পারলাম, আরো শুনতে চান? চাইলে বলি?
-এত নিস্ঠুর হন কিভাবে আপনি? একবারও কি আমার কথা ভাবেন না। শুনেছি মেয়েদের মন নাকি নরম হয়! আপনার মন তো মনে হয় ষ্টিলের তৈরী।
-মন ষ্টিলের না । মনের বাউন্ডারি ষ্টিলের । আপনার মতো বেকুব ছেলেদের টেপ রেকর্ডারের মতো একিই কথা শুনতে শুনতে আমি চরম বিরক্ত। এজন্যই মনে ষ্টিলের বাউন্ডারি দিয়েছি। যদি তাতে আপনার কোনো আক্কেল বুদ্ধি হয় ।
-বকা দিচ্ছেন কেন ?
-তো কি দিব? আপনাকে কত বার বলেছি আমার একটা এফেয়ার আছে। একটা ছেলের সাথে গত ছয় মাস ধরে আমার সর্ম্পক। হুট করে এসে আজগুবি একটা প্রস্তাব দিলেই হবে?
-ভিলেন তো থাকবেই, তাই বলে কি কেউ নায়ক হবে না?
-আপনাকে কে আমার নায়ক হতে বলেছে? ভাগেন এখান থেকে। নির্বোধ, বেকুব, হাঁদারাম কোথাকার ?
দূর দূর করে ম্যাসান্জার থেকে আমাকে তাড়িয়ে দিয়ে ফোন কল কেটে দিল। আজকে রাতের ঘুমটা শেষ। এভাবে আর কত রাত না ঘুমিয়ে কাটাবো? যখনই ফোন করি ৫০% সময় দেখি বিজি, ২৫% সময় ফোন ধরে না আর বাকি ২৫% সময় ফোন ধরলে কথা শেষ হয় এভাবে। মেয়ের মুড কি সব সময় এরকম থাকে, না আমার ফোন পেলে এরকম হয়ে যায় আল্লাহ মালুম। কপালে মনে হয় বড় কোন শনি আছে কপালে!
আমার নাম শুভ হলে কি হবে কপালে যে কি অশুভ আছে? হতাস হয়ে মোবাইলটা বিছানায় আছাড় মারলাম। মোবাইল ভাংলে আবার আরেক বিপদ! শালার প্রেম ভালোবাসার নিকুচি করি। জীবন টা ভাজা ভাজা করে দিল এই মেয়ে! সর্ম্পকের খ্যাতা পুরি। আমার শালা ফাটা কপাল! সারা জীবনে একটা মেয়েকেই পছন্দ করলাম আর মেয়েটা আরেকটা ছেলের সাথে প্রেম করে বেড়ায়। মাঝে মাঝে মনে হয় ১টা ১৫ পাউন্ডের হ্যামার নিয়ে যেয়ে ছেলেটার মাথা ফাটিয়ে দিয়ে আসি! তারপর যা হবার হবে!
এক
হতাস হয়ে একটা সিগারেট ধরালাম। মেয়েটার কথা ভাবতে বসলাম। কত কি চাইলাম আর কি হলো এসে.....আহা!
এই মেয়ের সাথে পরিচয়টা বেশ অদ্ভুত। যদি এটাকে পরিচয় বলে ধরে নেয়া যায়! রাপা প্লাজার সামনে বিকাল বেলা দাড়িয়ে সিগারেট ধরাচ্ছিলাম। হঠাৎ চোখ পড়ল সামনের সিড়ির দিকে। পার্পল কালারের ড্রেস পরে একটা মেয়ে সিড়ি দিয়ে নেমে আসছে। চুল খোলা বাতাসে উড়ছে। বুকে একটা সাথে সাথেই ধাক্কা খেলাম। এই মেয়েটা অত সুন্দর কেন? চুল গুলি এত সুন্দর কেন? আমার সমস্ত পৃথিবী মনে হলো স্তব্ধ হয়ে গেল। আমার ২৫ বছরের জীবনে এই প্রথম মনে হলো এই মেয়ে আমার, শুধুই আমার। এই রাজকন্যার জন্মই হয়েছে শুধুই আমার জন্য। আমি এক হাতে সিগারেট আরেক হাতে লাইটার নিয়ে মেয়েটার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। আমার নিশ্বাস প্রশ্বাস নেয়াও মনে হয় বন্ধ হয়ে গেছে। আমার মাথা কাজ করছে না। এই কি সেই মেয়ে যার জন্য আমি এতটা বছর ধরে অপেক্ষা করে আছি? প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে একজন বিশেষ কেউ থাকে, ঠিক সেই একজনের জন্যই সারাটা জীবন অপেক্ষা করে কাটিয়ে দেয়া যায়, তাকে ভালোবাসার জন্য হাজার মাইল হেটে পাড়ি দেয়া যায়, সাত সমুদ্র পাড়ি দেয়া যায়, একাকী গহীন সমুদ্রের বুকে দুঃসাহসী নাবিক হয়ে দিবানিশি প্রার্থনা করা যায়। এমন কারো জন্য ভালোবাসার অনুভুতি কখনো মরে যায়না, শেষ হয়ে যায় না, এটা চোখের ভাজে লেপ্টে থাকে, তাই কেউ তা দেখতে পায় না শুধু চোখ বুঝলে অনুভব করা যায়। আমার মনে তখন আকাশ পাতাল চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।
-নির্লজ্জ বেহায়া কোথাকার? জীবনে কোনোদিন মেয়ে দেখেন নি?
কঠিন একটা ধমক খেয়ে সাত আসমান থেকে সাথে সাথে মাটিতে নেমে আসলাম! মাই গড, মেয়ে আমার সামনে দাড়িয়ে! পরপর কয়েকটা হার্টবিট মিস করলাম।
এত সুন্দর কেন মেয়েটা? আরেকটু কম হলে পারতো না? মাথা কাজ করছেনা, কি বলব ?
হতম্ভব হয়ে আমি শুধু মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
-এভাবে বেহায়ার মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন?
নির্বোধের মতো হঠাৎই বলে বসলাম-
-আপনি অত সুন্দর কেন?
-আমি সুন্দর তাতে আপনার কি? জীবনে সুন্দর মেয়ে দেখেন নি?
-আপনার মতো কখনো কাউকে দেখিনি! আপনি এত সুন্দর কেন হলেন?
মেয়ে আমার বেকুবের মতো কথা শুনে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার ভালো করে দেখলো। তারপর বলল-
-আরেক বার উলটা পালটা কথা বলবেন, ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় গাড়ির নীচে ফেলে দিব। সামনে থেকে সরে দাড়ান।
-যদি না সরি?
আমার কথা শুনে মেয়ে দেখি সাথে সাথে ক্ষেপে গেল। হাত তুলে আমার পিছনে রাস্তা দেখিয়ে বল-
-ওই যে ট্রাকটা আসছে না, ওটার নীচে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব। দেখতে চান আমি ফেলে দিতে পারবো নাকি?
মাথা ঘুরিয়ে দেখলাম সত্যি সত্যি একটা বড় ট্রাক এদিকে আসছে। এই বিকাল বেলা এই রাস্তায় ট্রাক আসলো কোথা থেকে বুঝলাম না। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে পরিস্থিতি ভালো মনে হলো না। চোখের দিকে তাকিয়ে একটু ভয় লাগলো, কি যেন আছে ঠিক বুঝলাম না। পিছনে তাকিয়ে দেখলাম একটা সাদা প্রিমিও গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ও আচ্ছা, এটাতে উঠবে মনে হয়। কিন্তু সরে দাড়ালে তো মেয়ে চলে যাবে, কি করি? দাড়িয়ে থাকাটা একটু রিস্ক হয়ে যায়। গাড়িটার সামনে থেকে পাশে সরে দাড়ালাম। মেয়েটা সাথে সাথে গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতে যাচ্ছে। কি সর্বনাশ, এত তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেয়া তো যাবে না! এক ষ্টেপ এগিয়ে গিয়ে সাহস করে বললামঃ
-আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই।
মেয়ে আমার মুখে বিয়ের কথা শুনে একেবারে হতভম্ব! বলে কি এই ছেলে! একবার দেখেই কোন ছেলে যে, কোন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারে এটা বিশ্বাস করতে পারছে না! সাথে সাথেই গাড়িতে ঢুকা বন্ধ হয়ে গেল। আহ, এটাই তো চেয়েছি। আমার চেহারাটা ভালো করে দেখে নিক। ভবিষ্যতে কখনো যেন দ্বিতীয় বার চিনতে ভূল না হয়! ৫ সেকেন্ড নিল স্বাভাবিক হতে। গাড়িতে যে এক পা উঠিয়ে দিয়েছিল নামিয়ে নিল। আমার দিকে তাকিয়ে ডান হাত থেকে শপিং ব্যাগ গুলি বাম হাতে নিয়ে আমার দিকে এক ষ্টেপ এগিয়ে এলো। আমার কাছে পরিস্থিতি সুবিধার মনে হলো না। কিভাবে যেন আমার দিকে এগিয়ে আসছে? আমি দুই তিন পা পিছিয়ে গেলাম। সাবধান থাকা ভালো।
-কি? এত তাড়াতাড়ি বিয়ের শখ মিটে গেল? সাহস থাকলে আমার সামনে এসে আরেক বার বলেন!
খুব ইচ্ছে করছিল সামনে যেয়ে জোরে জোরে চিৎকার দিয়ে আরেকবার বলি! কি আছে জীবনে? কিন্তু মেয়ের দিকে তাকিয়ে সত্যই সাহস পেলাম না। কেন আমি জানি না! আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকেই বললামঃ
-আমি আপনাকে সত্যি বিয়ে করতে চাই। বিশ্বাস করুন। আপনার বাসার অ্যাড্রেস টা দিন আমাকে? অন্তত কোন একটা ফোন নাম্বার! একবার আমাকে আমার শখ আছে নাকি সেটা প্রমান করার সুযোগ দিন? এভাবে WWE রেসলার দের মতো যুদ্ধেংদেহি হলে তো হবে না! এত সুন্দর একটা মেয়ে আপনি, এভাবে কথায় কথায় ক্ষেপে যেয়ে টেম্পার লুজ করলে হবে? কেমন দেখতে লাগছে আপনাকে? ভ্যানিটি ব্যাগে আয়না থাকলে বের করে একবার নিজের চেহারাটা দেখুন। বিয়ে কি করবেন না কখনো? সারা জীবন একা থাকতে চান?
মুর্হুতের মধ্যে মেয়েটার ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গেল। আর একটা কথাও না বলে সামনে রাস্তায় দাড়ান গাড়ির দরজা খুলে ঢুকে পড়ল। আমি কিছু বুঝার আগেই গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে দিল। ধক করে উঠল বুক টা। হায় হায়, সর্বনাশ। মেয়ে তো চলে যাচ্ছে? আমার মনে হচ্ছে আমার হৃদপিন্ডটা ছিড়ে নিয়ে মেয়েটা চলে যাচ্ছে। ওহ গড, দোস্তরা বলে ক্রাশ খাওয়া। কিসের ক্রাস? আমার মনে হয় জীবনের ইন্জিন ফেল করা! এই মেয়েকে না পেলে আমার জীবনের ইন্জিনই আর স্টার্ট নিবে না। আমি কি প্রেমে পড়লাম? না মনে হয়, প্রেমে পুরাপুরি ডুবে গেছি। হাবুডুবু খাবারও সময় পেলাম না। আমার খবর আছে! বিকাল সাড়ে পাঁচটায় আমি আমার জীবনের ১২ টা বাজার ঘন্টার আওয়াজ শুনতে পেলাম। মাথা এখনো ভালো ভাবে কাজ করছে না। বার বার একটা কথাই ঘুরে ফিরে মনে হচ্ছে, এই মেয়েকে না পেলে আমি বাঁচব না। কেয়ামাত সে কেয়ামত ত্ক আমি এই মেয়েকে খুজে বের করবোই। কিন্তু কিভাবে? কথায় বলে চোর পালালে নাকি বুদ্ধি বাড়ে আর আমার একেবারে শেষ মুহুর্তে বুদ্ধিটা আসল। পকেট থেকে মোবাইল বের করে গাড়ির BRTA এর নাম্বার প্লেট টার একটা ছবি তুলে রাখলাম। আল্লাহ ভরসা! ঢাকা-মেট্রো! তাহলে তো আমার কাজ আরো কমে গেল! গাড়িটা চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য আগেই আমি নিজের কাছে ওয়াদা করলাম, আগামী ৫ দিন পার হবার আগেই আমি ওকে খুঁজে বের করবো, ঢাকা শহরের যে প্রান্তেই, যেখানেই থাকুক না কেন?
কোথায় যেন পড়েছিলাম, কাউকে ভালবাসলে এতটাই ভালবাস যেন সেটার কোন সীমা পরিসীমা না থাকে, কারো জন্য অপেক্ষা করলে এতটাই কর যেন অন্য কিছু করার সময় না থাকে, কাউকে আশ্রয় দিলে এমনভাবে দাও যেন তার আর কারো আশ্রয়ের প্রয়োজন না হয়, আর কাউকে আপন করলে এতটা আপন করে নাও যেন অন্য কারো তার উপর অধিকার না থাকে। কাউকে এই বুকে জায়গা দিলে এমন ভাবেই দিবে যেন আর কারও জায়গা না হয়।
আমি কোন কিছু না বুঝে, না জেনে আমার বুকের সমস্ত ভালোবাসা বুকটা খালি করে এই অচেনা মেয়েটাকে একবারে দিয়ে দিলাম। আমি এই মেয়ের জন্য আমার সারাটা জীবন অপেক্ষা করে যাব, কিছু পাই বা না পাই! আমার সাজান গোছানো ২৫ বছরের সুন্দর জীবনটার ছন্দপতন মনে হয় এভাবেই শুরু হলো!
দুই
মিরপুরের BRTA এর অফিস থেকে নাম্বার প্লেটের জন্ম ইতিহাস বের করতে দুই দিন আর এক হাজার টাকা শেষ। কিছু দিন আগেই ড্রাইভিং লাইসেন্সটা করিয়েছিলাম এক দালাল কে দিয়ে, এই ব্যাটাকেই কাজে লাগালাম। লোকটা কাজের! পুরো গাড়ির রেজিস্ট্রেশন প্রিন্ট আউটটা এনে দিল। হাতে নিয়ে ভালো করে অ্যাড্রেস টা পড়লাম। ও, শ্বশুর বাড়ি তাহলে ঝিকাতলা! ল্যাংটা কালের এক জিগার দোস্ত থাকে ওখানে। আজকেই তাহলে একবার ঢু মেরে আসা যাক! পাক্কা আড়াই দিন ডার্লিং কে দেখি না, একটু খোঁজ খবর নেয়া দরকার। বেশি দিন হয়ে গেলে আবার নিজের জামাই কেই শেষে ভূলে যাবে!
পটভূমি: পাঠকদের আগ্রহের কারনে শুভ আর শবনমের কুসুম কুসুম প্রেম কাহিনীর প্রথম অংশ প্রকাশ করলাম। অনেকেই অনুরোধ করেছেন প্লট বড় হলে ভাগ করে দিতে। প্রিয় ব্লগারদের কথা আমি রেখেছি। জানি না কেমন হয়েছে? মূল্যায়নের দায় ভার পাঠকদের কাছেই ছেড়ে দিলাম।
যারা শুভ আর শবনম আর সাথে পরিচিত নন, তাদের কে অনুরোধ করবো শুভ আর শবনম পরের পর্ব পড়ে আসার জন্য। সূত্র: Click This Link
এই সিরিজের সাথে ও সব সময় আমার পাশে থাকা জন্য আমার সকল শুভানুধ্যায়ি ও সহ ব্লগারদের জন্য রইল আমার প্রানঢালা শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা।
সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভ কামনা রইল!
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ নীল আকাশ, সেপ্টেম্বর, ২০১৮