আশ্চর্য, এমন একাকীত্ব !
সবার মাঝেই তো বসে আছি ,
দূর মন্দিরের কীর্তনীয়া সুর বাতাসের স্রোত বেয়ে
ভেসে এসে কানে কানে ফিসফিসিয়ে কি যেন বলে ,
ডাকছে আমায় ?
তবু সবকিছু অবহেলা করে তুচ্ছাতিতুচ্ছ
এই মনের এমন অস্থিত্ব , এমন অসহ্য !
চারদিকে সবই আছে-
বল্টু পল্টুর খোঁজে ফুটো কি করে বুজে
ভাবে সাইকেলের চাকার ,তারপর যাবে মাঠে,
পাশের ফ্লাটের রশ্মি গিয়েছে ভাবির স্নেহের তলায়
আবদেরে গলায় অগোছালো কেশ রাশি বিছিয়েছে কোলে
এই ভরদুপুর বেলায়, আর চার তলার বারান্দায়
রাতুলের গিটারে তারের উপর আঙুলের তাণ্ডবে
খেলায় সুরে আনচান মন নাচে।
এই বিল্ডিংয়ের ঘরগুলি যেন এক একটা কুঠরি ,
সবাই নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে যেমন শামুকেরা করে ,
হঠাত্ খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসেন অসফল
মাঝবয়সী ভদ্রলোক ,ধমকান পাহারাদারদের ,
চোখ দিয়ে বিভৎস আক্রোশ ঠিকরে বেরয়,
বুয়া তার অভ্যস্ত অনিচ্ছায় সাবান ঘষে হাঁড়ি ,
পাতিল আর পেয়ালায় , কর্কশ সুর কাপড়ের
আছড়ে পড়ার শব্দে, ঝাড়ুর প্রচন্ডতায় বাতাস
ভাসে মেঝের ধুলোয় ।
শফিক ভাই ঘরে বসে ভাবে চুপচাপ, চাকরিটা হারিয়েছে
সামনে কি বিপন্ন অন্ধকার ,নাহার ভাবি নির্বিকার
হামেশাই তো ঘটে, নতুন কি সমাচার ?
সকালবেলা ক্রিং ক্রিং শব্দে কাগজ দেয় হকার,
ফারাক্কার পানিতে ডুববে দেশ , রামপালের ধোঁয়ায়
আকাশ অন্ধকার , বিশ্বাসঘাতকদের হচ্ছে শাস্তি ,
গরুতে বাম্পার ফলন , কোরবানির মিটবে প্রয়োজন।
বস্তা কাঁধে ঘুরে টোকায় ,এখান থেকে বেশ দেখা যায়
এঁটো ময়লা ঘেঁটে তুলে নেয় তার ব্যবসার রসদ
রিকশা ভ্যানে সবজি ফেরি করে বেড়ায় ফেরিওয়ালা
আতর শিশি ,শাড়ি-লুঙ্গি ,চুড়ি কাঁধেও দেখা যায়
বাসা বাড়ির বৌ-মেয়েরা তখন নেমে আসে রাস্তায় ।
শেফালিকে দেখেছি কাল হাসি মুখে দাঁড়িয়ে ,
রাগে জ্বলেছে গা , হাসি মুখে হাত নেড়ে এসেছি পালিয়ে ।
সবকিছু তো আছে ?
সোহিনী ফোন দিয়েছে সকালবেলা যেতে ফুচকা তলা
ঠিক সাড়ে চার বাজলে বিকেলবেলা , এখন দুপুর,
আকাশে মেঘ জমেছে , বৃষ্টির ঝাঁঝালো নেশায় দুলছে
আমার অস্তিত্ব , আর একাকীত্ব , কি ভীষণ একাকীত্ব !
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:০৮