বিজনেস ম্যাথ পড়ানোর ফাঁকে হঠাৎ স্যার জিজ্ঞেস করলেন “স্নাতক” শব্দটি কোথা হতে এসেছে তা আমরা জানি কিনা। আমরা হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। যদিও আমরা স্নাতক করছি, হিসাববিজ্ঞান কোথা থেকে এসেছে তার আদ্যোপান্ত জানলেও স্নাতক কোথা থেকে এসেছে তা জানি না। জানার প্রয়োজন ও মনে করি নাই। হয়তো স্যার তা জানতেন, তাই নিজেই উত্তর দিলেন। প্রাচীনকালে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার পরে ছাত্রদের স্নান বা গোসল করানো হত। যারা সেই স্নান করতো তাদের বলা হত স্নাতক।
স্যারের কথা শুনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল মাথার ভেতর।
তাহলে সেই ছাত্ররা কি গ্রাজুয়েশনের আগে কোনদিন স্নান করতো না?
অসম্ভব না। অনেক নাগা ঋষি আছেন যারা গোসল করেন না। প্রশ্নটাকে জোর করে মাথা থেকে বিদায় করলাম।
সাথে সাথে আরেকটা প্রশ্ন মাথার ভেতর ঢুকে গেল যা বিদায় করা সম্ভবপর হলো না।
‘গ্রাজুয়েশন করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে হবে। প্রাচীনকালে কি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল?’
উত্তর হল- ছিল।
প্রায় দেড় হাজার বছর আগে বিহারে স্থাপন করা হয় এক বিশ্ববিদ্যালয় যার নাম “নালন্দা”।
সেই সময়ে প্রায় ১৪ হেক্টর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠা এক বিশ্ববিদ্যালয়। অনেকে বলে থাকেন খৃষ্টপূর্ব ৩০০ তে সম্রাট অশোক এর বূৎপত্তি করেন। তবে বেশীরভাগ ঐতিহাসিক একমত যে ৮২৭ খৃষ্টাব্দে গুপ্ত বংশের রাজা কুমারগুপ্ত এটা প্রতিষ্ঠীত করেন।
এর স্বর্নযুগে এতে প্রায় ১০,০০০ শিক্ষার্থী শিক্ষালাভ করতো যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসতো চীন, পারস্য, কোরিয়া, জাপান, তিব্বত, ইন্দোনেশিয়া এমনকি গ্রীস থেকেও। মধ্যযুগে যেমন জ্ঞান চর্চার তীর্থস্থান হিসেবে বাগদাদের নাম শুনা যায়, তেমনি নবম শতাব্দীতে এটাও ছিল জ্ঞান অর্জনের কেন্দ্রস্থল। মূলত এটা বৌদ্ধ ধর্মভিত্তিক হলেও এখানে হিন্দু ধর্ম, বেদ, যুক্তিবিদ্যা, ভাষাতত্ব ও ব্যকরণ, চিকিৎসাবিদ্যা, জোতিবিদ্যা ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করা হত।
নালন্দা বেশ কয়েকবার আক্রান্ত হয় বহিরাগতদের দ্বারা।
সর্বপ্রথম ৪৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে হানদের দ্বারা।
আবার ৬০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে রাজা শশাঙ্কের দ্বারা।
সর্বশেষ ১১৯৩ সালে তুর্কি সৈনিক বখতিয়ার খিলজী দ্বারা। এর পরে ধীরে ধীরে পতন ঘটে ভারতবর্ষের এক গর্ব “নালন্দা”র।
যুগে যুগে যত যুদ্ধ হয়েছে তাতে মানবজাতির জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর ও দুঃখজনক যেটা হয়েছে তা হলো জ্ঞানের ধ্বংস। প্রতিবার আক্রমনেই নালন্দার অনেক ছাত্র শিক্ষককে হত্যা করা হয়, ধ্বংস করা হয় অনেক স্থাপনা। চিন্তা করেন, সেই সময়েই তিনটি নয়তলা লাইব্রেরি ছিল যাতে ছিল হাজার হাজার বই। বখতিয়ার খিলজির সৈনিকেরা সেগুলো পুড়িয়ে ফেলে। সেই বই গুলো পুড়তে সময় লেগেছিল কয়েক মাস। এর পরে নালন্দার কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে। পনেরশো শতকের দিকে এটা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নালন্দার কিছু কিছু স্থান এখনো টিকে আছে। প্রায় ১৫,০০০ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে খনন করা হচ্ছে।
মজার ব্যাপার হলো, প্রায় ৭০০ বছর পরে এটা আবার চালু হয়েছে ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে। পাঁচ ছাত্রী সহ মোট পনেরজন শিক্ষার্থীকে বাছাই করা হয়েছে এক হাজার জন শিক্ষার্থী থেকে। আর রয়েছেন পনেরজন শিক্ষক।
আয়না ভাঙলে জোড়া হয়তোবা লাগানো যায়, কিন্তু তার আগের রূপ ফিরে পাওয়া যায়না। নালন্দা তার আগের রূপ ফিরে পাবে কি না তাই এখন দেখার বিষয়।
শুরু করেছিলাম বিজনেস ম্যাথ দিয়ে। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে স্যারের কাছ থেকে জানা অজানা অনেক কিছু মাথায় ঢুকালেও ম্যাথ মাথায় ঢুকেনি কিছুই। তাই পরিক্ষা শেষ হলেও এই সাবজেক্টটা নিয়ে বিশেষ চিন্তিত আছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:৩৯