somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাকরাইল ও শান্তিনগরে আমার দেখা একটি ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।

০২ রা জুলাই, ২০১১ দুপুর ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনাটা আজকে থেকে বেশ কিছুদিন আগের। বিশেষ কাজে মতিঝিল গিয়েছিলাম। কাজ শেষে আমি গুলিস্তান থেকে বাসায় আসবো সে জন্য অনেকক্ষন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকেও সিএনজি পেলামনা। অগ্যতা একটি লোকাল মিনি বাসে উঠতে হলো। এই গাড়ীর রুট হচ্ছে জিপিও থেকে গুলশান, (মৌচাক-রামপুরা-বাড্ডা হয়ে)-নাম বন্ধু পরিবহন সংক্ষেপে গ্রামীন।

জিপিও থেকে গাড়ীর রুট শেষ-আবার ঘুড়িয়ে নতুন করে প্যাসেঞ্জার উঠায়। আমি যখন গাড়ীতে উঠলাম তখন ঐ গাড়ীতে আর কোনো প্যাসেঞ্জার ছিলো না। নতুন করে গুলশানের উদ্দেশ্যে যাত্রী নিবে সে জন্য হেলপার ডাকাডাকি করছিলো। আমি গাড়ীতে উঠেই সামনের সারির একটা সিটে বসলাম।

গাড়ীতে ড্রাইভারের সিটের পাশে একটা ফুট্ফুটে সুন্দর কিশোরী ২০/২২ বছর হবে, ড্রাইভারের সাথে মিষ্টি আলাপ করছিলো। মেয়েটি আলতা-শাড়ী পড়া ছিলো। মাথায় লেইস-ফিতা বাধা। দুইজনকেই খুব সুখী মনে হচ্ছিলো। ড্রাইভার ছেলেটি পকেট থেকে ১০০ টাকা বের করে দিয়ে তার বান্ধবীকে বললো –“এই নাও এইডা দিয়া বিরানী খাইবা, আমি গাড়ী নিয়া মালিকের জমা দিয়া বিকালেই তোমার কাছে চইল্লা আমু। আইজকা তুমারে নিয়া বিকালে ঘুরুম। “ মেয়েটি ১০০ টাকা নিয়ে খুশী মনে গাড়ী থেকে নেমে গেলো। গরীবের প্রেম দেখে ভালোই লাগলো।

ধীরে ধীরে গাড়ী মানুষে ভরে গেলো। পেছন থেকে কয়েকজন গালী দিচ্ছিলো- ঐ হাউয়ার পোলা গাড়ী টানস না কেন? মানুষ কি তর কান্ধের উপ্রে নিবি? ড্রাইভার ছেলেটি নিশ্চুপ থেকে গাড়ী টানা শুরু করলো। গাড়ী কিছুক্ষনের জন্য ব্রেক করলেই পাব্লিকের গালী শুরু হয়ে যায়। ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই বিজয়নগর-কাকরাইল সংযোগ সড়কে চলে আসলো। বিশাল জ্যাম দেখা যাচ্ছে। তবে বামের লেন দিয়ে জ্যাম নেই, কারন বামের লেন দিয়ে গাড়ী সোজা শাহবাগের দিকে যাবে-আর ডাইন সাইডে যারা আছে তারা মালিবাগের দিকে যাবে। ড্রাইভার সময় আর জ্যাম এড়ানোর জন্য বামের লেন দিয়ে সোজা মোরে সিগনালের সামনে চলে এলো, এর পরে সিগন্যাল ছাড়লে ডাইনে মোর কাটাতে যাবে –তখনই ট্রাফিক পুলিশের বাধা। ঐ রঙ সাইডে আইছস ক্যান? যা এই বার সোজা ৩ মাইল যাইয়া গাড়ী ঘুরাবি। ড্রাইভার ছেলেটি চতুরতার সাথে অনেকটুকু গাড়ী ডাইনে চাপিয়ে দিলো, শেষে ট্রাফিক দেখলো উপায় নেই ছেড়ে দিলো ।

গাড়ী ব্যালেন্স করে মালিবাগের দিকে ঘুরিয়ে একটু সামনে যাওয়া মাত্রই অপজিট সাইড থেকে র‌্যাবের হোন্ডা আসছিলো। র‌্যাবের হোন্ডাও রঙ সাইড দিয়ে আসছিলো। কিন্তু এবার ড্রাইভার ছেলেটি ব্যালেন্স পুরোপুরি রাখতে পারলো না, র‌্যাবের হোন্ডার সাথে ঘষা লেগে গেলো। হোন্ডা কিছুদুর গিয়ে ব্রেক করে থামলো। হোন্ডায় র‌্যাবের দুইজন সদস্য ছিলো। পিছনের জন অগ্নীমুর্তি ধারন করে ড্রাইভার কে গালীদিয়ে থামতে বললো। ড্রাইভার ভয় পেয়ে বুঝতে পারলো ব্যাপার সুবিধার না-কপালে খারাপী আছে। সে না থামিয়ে গাড়ী টানা শুরু করলো। পেছন থেকে ওই র‌্যাব সদস্য দৌড়ানো শুরু করলো।

আমার গাড়ীর ড্রাইভারটির কপাল খারাপ- কারন সামনে আবারো জ্যাম। ওই র‌্যাব সদস্য গাড়ীতে উঠে গেলো।উঠেই ছেলেটিকে কিল ঘুষি মারা শুরু করলো। কুত্তার বাচ্চা গাড়ী সাইড কর। এর পরে আবারো মারা শুরু করলো। হাতে পায়ে মুখে যেখানে পারছে আঘাত করছে। মারতে মারতে ছেলেটিকে রাস্তায় ফেললো। ছেলেটি পায়ে ধরে মাপ চাচ্ছিলো-স্যার ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করে দেন। ততক্ষনে হোন্ডার চালক আরেক র‌্যাব সদস্য উপস্থিত হয়ে গেছে-মাটিতে পড়ে থাকা ছেলেটির উপরে উঠে লাফাতে লাগলো। আমার কাছে মনে হচ্ছিলো আর একটু এই রকম করলেই ছেলেটির বুকের খাচা ভেঙ্গে যাবে। আর অন্য সদস্য ভারী বুট দিয়ে, গায়ের শক্তি দিয়ে লাত্থি মেরে যাচ্ছিলো। হালকা পাতলা গড়নের ছেলেটির দেহকে যেন ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলবে।

আমি আর থাকতে পারলামনা, আমার যা হবার হবে কিন্তু এই ছেলেটিকে এই ভাবে মরতে দিতে পারি না। আমি এগিয়ে গিয়ে প্রচন্ড মারের ভিতরেই ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে ফুটপাতের উপরে তুললাম। আমার দেখা দেখি আরো ৪/৫ জন যাত্রী সাহস করে এগিয়ে এলো। বললো র‌্যাব সদস্যদের উদ্দেশ্যে-“ভাই বহুত হইছে !! অনেক মারছেন, আর না মাইরা আপনে কেস দেন”।
বয়স্ক ভুড়ীওয়ালা র‌্যাব সদস্য যেটি দৌড়ে গাড়ী ধরেছিলো, সে পুরোপুরি মাইরের খায়েস মিটাতে না পেরে যেন আমার উপরে রেগে বসলো। আমাকে বললো।

র‌্যাবঃ ধুর !! আপনের মতন লোক গুলাই এই সব ড্রাইভার গুলারে লাই দিয়া মাথার উপরে উঠাইছে। ওগো কিছু কইতে গেলেই আপনার মতন পাব্লিক বাধা দেয়। আপনি জানেন সড়ক দুর্ঘটনা কি? ওই যে ফার্ম গেটে আমার সামনে এক মহিলারে বড় বাস একটা ডলা দিয়া গেছে। লাশ পুরা রাস্তার সাথে লেপ্টায় আছিলো। আমার যদি এই রকম হইতো? এই শুয়োরের বাচ্চা তো আমারে শেষ কইরা দিছিলো। এই বলেই আবারো ছেলেটির দিকে মারার জন্য তেরে যাচ্ছিলো।

আমিঃ হইছে ভাই, অনেক মাইর খাইছে। আপনে আইনগত ব্যাবস্থা নেন।

উপস্তিত অন্য লোকেরাও সমস্বরে একই কথা বলছিলো। পুলিশ সার্জেন্ট হাজির হলো কয়েক মিনিটের মধ্যে। প্রচন্ড ভীড় জমে গেছে। সার্জেন্ট জনতার উদ্দেশ্যে বললো-আপনারা যান সবাই, যান! আমাকে আমার কাজ করতে দিন। গাড়ীর যাত্রীরা যার যার মতন চলে যেতে লাগলো। আমি নিশ্চিত হলাম ছেলেটিকে ওরা আর মারছে না। গাড়ীর কাগজ পত্র দেখছিলো। আমি সরে এসে বাসায় যাওয়ার জন্য রিকশা নিলাম।

রিকশায় মনে মনে ভাবছিলাম- একটু আগে যেই ছেলেটি খুশী মনে অনেক আশা নিয়ে তার বান্ধবীর সাথে দেখা করার আশা করেছিলো। একটু পরেই সে আমাদের আইনরক্ষাকারী বাহিনীর রোষানলে পড়ে মারাক্তক আহত হলো। হয়তো মেয়েটি আজকে সারা বিকাল তার অপেক্ষায় বসে থাকবে। ছেলেটি তখন হয়তো থানায় বা হসপিটালে থাকবে- বহুদিন পর্যন্ত তাকে শারিরীক যন্ত্রনা ভোগ করতে হবে। মেয়েটিতো কিছুই জানেনা সে হয়তো ছেলেটির দেয়া ১০০ টাকা দিয়ে বিরানী খাচ্ছে।


আমার অনেক বন্ধু-আত্নীয় পরিচিতজন আমেরিকা-ইউরোপে থাকে। তাদের কাছে শুনি কেউ যদি ওই দেশের রাস্তায় মাতাল হয়ে পড়ে থাকে তাহলে-পুলিশ তাদেরকে নিরাপদে রাস্তা থেকে সরিয়ে নেয় যাতে সে দুর্ঘটনায় না পড়ে-বাড়ীও পৌছে দেয়। হারিয়ে গেলে পথ চিনিয়ে দেয়। ইভেন নিজের বাড়ীর ভিতরেও কোনো বিপদে পড়লে আইনরক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে গিয়ে সাহায্য করে। আর আমাদের দেশের শৃংখলা রক্ষাকারী সদস্যরা নিজের শক্তি জাহির করার জন্য প্রকাশ্য দিবালোকে জনগনের সামনেই শ্রমজীবি মানুষকে পিটিয়ে ত্রাসের রাজত্ত্ব কায়েম করে। যেই জনগনের টাকায় তাদের বেতন পোষাক আর অস্ত্রকেনা হয় সেই জনগনকেই ভয় দেখানো- সত্যই বিচিত্র।

আজকে যদি এই গরীব ছেলেটির চালানো গাড়ীর যায়গায় বাংলাদেশের প্রতাপশালী ব্যাবসায়ী সালমান এফ রহমানের গাড়ীর সাথে র‍্যাবের হোন্ডার ঘষা খেতো তাহলে ওই আইন রক্ষাকারী সদস্যদের অবস্থান হতো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সাথে বেতন বোনাস পদন্নোতি হয়তো বহুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যেতো।

মাঝে মাঝে ভাবি, এই দেশে কাদের অধিকার বেশী- কোনো বিজনেস এলিটদের? অস্ত্রধারী রাষ্ট্রীয় বাহিনীর? নাকি সাধারন জনগনের? এখনো কি জনগন স্বাধীনতার পুর্ন সুবিধা পেয়েছে?


সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১১ দুপুর ১:৩২
২১টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×