WiMax নিয়ে আমার লেখার ইচ্ছা জাগে তখনি যখন দেখলাম বাংলাদেশে WiMax এর লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। তবে অনেকদিন ধরে লেখার ইচ্ছা থাকলেও সাহস করে উঠতে পারছিলাম না। লেখালেখি ব্যাপারটা আমার একবারেই হয়না। তবে আপনাদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি লেখার গুনগত মানের স্বল্পতাকে ছাপিয়ে যাবে এই আশায় লেখা শুরু করলাম।
বেশকিছু দিন যাবৎ আফ্রিকাতে একটা মোবাইল কম্পানীতে WiMax প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে আমার যে উপলব্ধি তা আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করতেই আমার এই পোস্টের অবতারনা। WiMax নিয়ে এই ব্লগে কয়েকজন কিছু পোস্ট দিয়েছেন দেখলাম যেখানে এর ট্যেকনিক্যাল খুটিনাটি গুরুত্ত্ব পেয়েছে। আমি ট্যেকনিক্যাল ব্যাপারটার দিকে তেমন যেতে চাচ্ছিনা বরং আমাদের দেশের WiMax এর ভবিষ্যত নিয়ে আমার ব্যাক্তিগত চিন্তাভাবনা যার বেশিরভাগ হতাশাব্যাঞ্জক, সেগুলই আপনাদের জানাব। সাথে সাথে ৩ জি সম্মন্ধেও কিছুকিছু ধারনা দেবার চেষ্টা করব কারন আমি মনেকরি WiMax এর যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তা 3G দিয়েই ভালভাবে পুরন করা সম্বভ।
আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই WiMax এবং 3G ব্যাপারটাকি।
ওয়াইম্যাক্স (WiMAX), হচ্ছে ওয়ার্লডওয়াইড ইন্টারঅপারেবিলিটি ফর মাইক্রোওয়েভ অ্যাকসেস এর সংক্ষিপ্তরুপ। এটি একটি টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি, যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট বা পয়েন্ট-টু-মাল্টিপয়েন্ট যোগাযোগের মাধ্যমে ডাটা আদান প্রদান করা। মূলত আইইইই ৮০২.১৬ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী এটি প্রণীত হচ্ছে, যার অপর নাম ওয়ারলেসম্যান। যারা ইতিমধ্যে WiFi প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন তারা ব্যাপারটা আরো ভাল বুঝতে পারবেন। এটাকে একটা বড় পরিসরের WiFi বলা যেতেপারে। ওয়াইম্যাক্স নামটি দিয়েছে ওয়াইম্যাক্স ফোরাম। ২০০১ সালে স্টান্ডার্ড অনুযায়ী প্রযুক্তিটির বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে ওয়াইম্যাক্স ফোরাম প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলা লায়ন কমিউনিকেশন্স, ব্র্যাক বিডিমেইল নেটওয়ার্ক লিমিটেড ও আগুরি ওয়ারলেস এ তিন প্রতিষ্ঠান ব্রডব্যান্ড ওয়াইম্যাক্স/ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস অ্যাকসেস (BBW) লাইসেন্স পেয়েছে।
অন্যদিকে 3G ব্যাপারটা মোটামুটি আমদের অনেকটাই পরিচিত বলাযায় কারন 2.5G, 2.75G (GPRS/ EDGE) তে আমরা কমবেশি সবাই অভ্যস্ত। প্রযুক্তিগত পার্থক্য বাদ দিলে, মুলত অধিক গতিসম্পন্ন ডাটা আদান প্রদান করাই 2.5, 2.5G থেকে এর প্রধান পার্থক্য। আর ডাটা আদান-প্রদান করার ক্ষ্মমতা বেশি থাকায় 3G নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রাহকদের অন্য অনেক আধুনিক সেবা প্রদান করা সম্ভব। ২০০১ সালে জাপানে, NTT DoCoMo (বর্তমানে AKTEL এর উল্লেখযোগ্য অংশের মালিকানা তাদের দখলে)নামে সেদেশের অন্যতম প্রধান সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে এর যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশে যে ৬টা মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আসে তাদের কারো আপাতত 3G লাইসেন্স নেই। আশাকরা যায় ২০০৯ সালের মধ্যে অনেকেই 3G তে তাদের অপারেশন শুরু করবে ।
প্রযুক্তিগত দিক থেকে আলচ্য দুটি প্রযুক্তির মধ্যে যত পার্থক্যই থাকুকনা কেন উদ্দেশ্য কিন্তু মোটামুটি কাছাকাছি। গ্রাহকদেরকে উচ্চগতি সম্পন্ন ডাটা প্রদান করা। ব্যক্তিগত ভাবে আমি WiMax নিয়ে অনেক বেশি আশবাদি ছিলাম কিন্তু যখন এটা নিয়ে কাজ করা শুরু করলাম তখন বুঝলাম একে অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হবে।
তাত্ত্বিক ভাবে একটা ওয়িমাক্স বেসস্টেশনের কভারেজ(>40km) অনেক হলেও আসলে তা নির্ভর করে Frequency কত তার উপরে। সাধারন ভাবে Frequency যত কম হবে তার তরঙ্গদৈর্ঘ তত বেশি হবে এবং সেই Signal ততবেশি দূরে যাবে। তারমানে অল্প বেসস্ট্যাশন দিয়ে বেশি জায়গা কভ্যার করা যাবে। আবার বেশি জায়গা কভ্যার করলেও ঝামেলা আছে, সেক্ষেত্রে পার ইউসার এর প্রাপ্ত ব্যান্ডউডথ কমে যাবে। মানে আমরা যাকে বলি ধীরগতির সংযোগ।
সাধারনত WiMax এর জন্য যে সব ব্যান্ডের frequency তে অপারেট করা হয় সেগুল হল, 2.3 থেকে 2.5 GHz এবং 3.5GHz। কিছুকিছু ভেন্ডর 450 MHz এ তাদের প্রডাক্ট তৈরী করতে পারলেও এইব্যান্ড অধিকাংশ দেশে খালি থাকেনা।দেখাযায় অন্যকনো স্যার্ভিসের জন্য এই ব্যান্ড আগেথেকেই ব্যবহার করা হচ্ছে। WiMax প্রযুক্তি যেহেতু জি এস এম এর পরে এসেছে তাই তার কপালে ভাল frequency জোটেনি। আর এখানেই আমার মতে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়েছে WiMax।
অন্যদিকে 3G এর frequency হল 1900 মেগাহার্জ এবং 2100 মেগাহার্জ। যদিও এর কভারেজ এটা জি এসএম 900 থেকে কিছু কম কিন্তু WiMax এর 2.5 GHz থেকে ঢের বেশি। তাই সমপরিমানে কভারেজের জন্য WiMax এ যে পরিমানে বেসস্টেশন লাগবে তারচেয়ে 3G তে কিছু কম লাগবে।
বাংলাদেশে 2.5 এবং 2.5 গিগাহার্য এ 35 MHz করে frequency বরাদ্দ করা হয়েছে। এই দুই ব্যান্ড দিয়ে সারাদেশে কভারেজ দিতে গেলে যে পরিমান বেসস্টেশন লাগবে তার সংখ্যা কনোমতেই ২০০০০ এর কম না। লাইসেন্সের শর্ত হিসাবে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে ২ বছরের মধ্যে ৪০% উপজেলা এবং ২০% গ্রামে কভারেজ দিতে হবে।তাছাড়া স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল সহ সরকারি বেসরকারি অনেক গুরুত্ত্বপুর্ন স্থানেও WiMax এর সেবা পৌছে দিতে হবে। এতে যে পরিমানে বিনিয়োগ করতে হবে তা যোগাড় করা নতুন কম্পানীগুলোর পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠবেনা। আর যদিও তারা বিনিয়োগ করে কিন্তু রির্টান অন ইনভেস্টমেন্ট কি হবে সে ব্যাপারে আমার যথেস্ট সন্দেহ আছে। এই কম্পানিগুলোর আরো একটা বড় সমস্যা হল এদের নিজেদের কোন আবকাঠাম নেই, যেটা তাদের নতুন করে তৈরী করতে হবে। তাছাড়া এদের নিজেস্ব কোন Transmission backbone নেই, যেটা তাদের নিজেদের পক্ষে করা রিতিমত অসম্বভ। তাদেরকে অন্যকারো কাছ থেকে লিঙ্ক ভাড়া নিয়ে চালাতে হবে। এরফলে অপেক্স অনেক বেড়ে যাবে।
এত খরচ করে একটা কম্পানি অপারেশনে এসে কিভাবে বি টি আর সির অল্পখরচে সারাদেশে ইন্টারনেটের ব্যাবস্থা করবে সেটা আমার মাথায় ঢুকছেনা।
এতোগেল অপারাটরের কথা। গ্রাহকদের কি কি করতে হবে সেদিকে এবার একটু নজর দেয়াযাক। WiMax এর ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে আপনাকে একটা CPE (customer premises equipment) ব্যবহার করতে হবে।অনেক ধরনের CPE এখন বাজারে পাওয়া যায় যেমনঃ
১। অউটডোর
২। ইনডোর
৩। পি, সি, এম, সি, আই, এ ইত্যাদি।
আপনার এলাকায় ওয়িমাক্স সিগনালের তীব্রতার উপর নির্ভর করছে আপনি কি রকম CPE ব্যবহার করতে পারবেন। ব্রান্ডের উপরে দামের তারতম্য থাকলেও বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে একটা CPE এর দাম নিতান্ত্যই কম হবেনা। এদিক থেকে বিচার করলে দেখা যাবে কোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান যদি নামমাত্র মুল্যে ইন্টারনেট প্রদান করেও তবুও কতজন গ্রাহক পাওয়া যাবে সেটাও একটা প্রশ্ন।
(চলবে...............)
শেষ পর্ব Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৪:৪৮