১৯৭৯ সনের ষোলই ডিসেম্বর। বাংলাদেশের বিজয় দিবস। একটি আনন্দের দিন, নতুন করে শপথ নেবার দিন। সব বাংলাদেশী নিজেদের বিভেদ ভুলে গিয়ে রক্তে দিয়ে জেতা স্বাধিনতার জন্য উতসব করছে। চারিদিকে "আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি"। সবাই খুশী, দৈনন্দিন জীবনের কষ্ট সবাই ভুলে গেছে এ বিশেষ দিনে।
৬ বছররের একটি শিশুর মনে বেজায় আনন্দ। আজ সন্ধ্যা হলে সে তার বাবার সাথে আলোক শয্যা দেখতে যাবে। কিন্তু আনন্দে বিষাদ আচে, তার মা যেতে পারবেন না। ছোট ভাইটির অসুখ, এ জ্বরে বার হওয়া ঠিক হবেনা।, ডাক্তারের আদেশ। শিশুটি কখনও আহলাদে হাটখানা হচ্ছে আর কখনও মন খারাপ করছে, মা ছাড়া কেমন করে সে উপভোগ করবে সে আনন্দ। সারা সকাল একবার মা আর বাবা করছে, ঠিক করতে পারছেনা কি করবে। শেষ-মেষ মা'র কাছে কি শিশুটি বলল, আম্মু তুমি মন খারাপ করনা, আমি তোমার জন্য একটা ব্যাগে করে আলোক শয্যা নিয়ে আসব। আমার ছোট স্কুলের ব্যাগ নিয়ে যাবো আর ভর্তি করে নিয়ে আসব তোমার জন্য স্বাধিনতার আলোক শয্যা।
বিজয় দিবসে অনেকের কাছে এ দিবসের মুল্য একেক রকম। কোন মা এখনও বসে থাকেন তার ছেলে আসবে বলে। কোন বাবা তার কন্যার খোজ করেন। কোন মুক্তিযু্দ্ধা তার সাথীদের খোজেন। আমার কাছে বিজয় দিবস মানে ছিল মার জন্য আলো নিয়ে আসা। আমার মাকে আমি খুব ভালোবাসি, মা'র জন্য নিয়ে এসেছিলাম ব্যাগ ভর্তি আলোক শয্যা। আমার মা ভাগ্যবতি ছেলে বিজয়ের আলোক নিয়ে ফিরে এসেচে।
স্বাধিনতা মানে আমার কাছে মার জন্য আলোক শয্যা নিয়ে যাওয়া। আমার ছোট ভাইটি কোলে নেবার চেষ্টা করে তাকে জয় বাংলা শোনানো কিংবা বাবার কোলে বসে শোনা স্বাধিনতার সংগ্রাম।
স্বাধিনতার সংগ্রামে অনেক অন্ধকার হটে গিয়েছে। আমরা পেয়েছি নিজের দেশ। অনেক রক্তের বিনিময়ে লাল সবুজের পতাকা। কবি স্বাধিনতার মানে অনেক কিছু বলেছেন। আমার জন্য স্বাধিনতা শুধু আলোক শয্যার আলোক ছটা, অন্ধকার হটে যাবার স্বপ্ন। আলোক শয্যার বিজয় দিবস আমাকে দিয়েছে নিজের মত করে বেচে থাকার অধিকার আর বিজয় দিবসের সে আলোক ছটায় আলোকিত হয়েছিল আমার শিশু মন।
আমার দেশ বাংলাদেশ
বড় ভালবাসি এ দেশকে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ৩:৪৬