
মেয়েটা গর্ভিণী হয়েছে তখন বেশি দিন হয়নি। যে সময়ের কথা বলছি, তখনও মেয়েটাকে কেউ পোয়াতী বলে ডাকা শুরু করেনি। মেয়েটার মুখে লাজুক মা-মা তখনও ফুটে ওঠেনি।মেয়েটা রাত করে বাইরে যেতে পারত, চুল খুলে হাঁটতে পারত ভর-সন্ধ্যায়। রাত্রিবেলা ঘর থেকে বের হবার সময় মেয়েটার নানী মেয়েটার হাতে ধরিয়ে দিত না ম্যাচ বা ম্যাচের কাঠি...... আমি সেই সময়ের কথা বলছি....
মাত্র কদিন হল মেয়েটা জানতে পেরেছে তার ভেতর বেড়ে উঠছে একটা ছোট্ট মাংসপিন্ড, পৃথিবীর আলোর মুখ দেখার অপেক্ষায় থাকা একটি ছোট্ট মানুষ.... একটি ছোট্ট ভ্রূণ....
মেয়েটার আম খেতে ইচ্ছে হল একদিন। আমের মৌসুম শেষ, তাই বলে তো মা আর মেয়ের আব্দার ফেলতে পারেন না!! তাই ডিপ ফ্রিজ থেকে বেরিয়ে এল জমানো আম। পানিতে ডুবিয়ে নরম করা আমের খানিকটা মা জুস বানিয়ে দিলেন। আর আঁটিটা খেতে দিলেন মেয়েকে; তাঁর গর্ভজাত কন্যাকে, তাঁর গর্ভিণী মেয়েকে.....
মেয়েটার ভাই হঠাৎ মেয়েটাকে বলল, "কী খেয়েছ? দাঁতে কালো এটা কী?"
"কই, আমি তো শুধুই আম খেয়েছি"
"যাহ্!! আম কখনো কালো হয় বুঝি???"
হঠাৎ বোন কিছু একটা বুঝতে পারে যেন। কে যেন তাকে ধাক্কা মারে ভেতর থেকে; সে বলে ওঠে, "" নিশ্চয়ই! নিশ্চয়ই আমটার জার্মিনেশন (অঙ্কুরোদগম) হয়েছিল!!! তাই তার আঁশ হয়েছিল কালো!! আমটার ভেতরে গড়ে উঠেছিল একটা ভ্রূণ....."" পাগলের মত চেঁচিয়ে ওঠে মেয়েটা.....
ছোট বোনের হাত ধরে বলে "কী হবে বল তো, বল তো তুই??? কী হবে??" ছোট বোনের জিজ্ঞাসু দৃষ্টিকে ছাপিয়ে সে বলে, " আমি প্রকৃতির একটা ভ্রূণ নষ্ট করলাম... প্রকৃতি যদি আমার ওপর প্রতিশোধ নেয়?? আমার ভ্রূণটাকে......." আর বলতে পারে না মেয়েটা.... নির্বাক বোনের কাঁধে মাথা রেখে আকুল হয়ে কাঁদতে থাকে....... কাঁদতেই থাকে.....
পরম করুণাময়, মেয়েটার পরিবার ও তার অনাগত সন্তানের প্রতি সহায় হোন।
