কর্ণফুলী নদীর ঐতিহ্যবাহী সাম্পান করে দল বেঁধে নদীতে ঘুরে আসা, নদী তীরে ফেলে রাখা তীর রক্ষার কংক্রিটের কিউবে বসে হাওয়া খাওয়া, গোধূলী উপভোগ, রাতে কর্নফুলী নদীতে নোঙর করা অসংখ্য ছোট-বড় জাহাজের বর্ণিল আলোর ঝিলিমিলি, বন্দর ছেড়ে যাওয়া জাহাজের শব্দ শোনা ছাড়াও নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের উপাদান এখন এখানে খুঁজে পাওয়া যায়। হকার-ফেরিওয়ালারা নানা ধরনের পণ্যের সমাহার ঘটিয়ে সাজিয়ে গড়ে তুলেছে নদীপাড়ের দৃষ্টিনন্দন মেলা। কর্ণফুলী নদীর এই অভয়মিত্র ঘাট স্থানীয়দের কাছে নেভাল টু নামেও পরিচিত । পতেঙ্গা নেভাল এলাকার আবহ থাকায় স্থানীয়রা এর নাম দিয়েছেন “নেভাল টু” ।
চট্রগ্রামের কর্নফুলীতে কয়েকশ বছরের পুরনো অভয়মিত্র সাম্পানঘাট দর্শনার্থী ও পর্যটকের জন্য বর্তমানে দারুন এক বিনোদন পার্কে পরিণত হয়েছে।প্রতিদিন নিত্যনতুন আমেজে হাজার হাজার ছেলে বুড়ো তরুন মানুষের মিলনমেলা বসে ঘাটে। যেনো কপোত কপোতীর নান্দনিক ভাবে যুগল ফ্রেমে বন্দি । নয়নাভিরাম কর্ণফূলী সেতুর ঠিক দক্ষিণে ফিরিঙ্গিবাজারের ৩৩নং সিটি ওয়ার্ডের পাশ দিয়ে গড়ে ওঠছে অভয়মিত্র ঘাট। তৈরি হচ্ছে সাগরের নিচ দিয়ে কর্নফুলী টানেল, টানেলের পাশে নির্মিত হচ্ছে হাতিরঝিলের মতো সাদা কয়েকটি উড়াল সেতু ।
বিকালে প্রায় প্রতিদিন ২/৩ হাজার বিনোদন উৎসুক ও ভ্রমন পিপাসু মানুষের উপস্থিতিতে উপচেপড়া ভিড় তৈরি হয়। ঘাট থাকা পাথরের ব্লকে বসে সরাসরি জাহাজ ও সমুদ্রের ঢেউ দেখা যায় বলে বিকেলে মানুষের ঢল নামে অভয়মিত্র ঘাটে। শিশু, কিশোর-কিশোরী থেকে বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ ঘাটে এসে আনন্দে মেতেছেন। বিকালে দেখা যায় কোন কোন প্রেমিক প্রেমিকা হারিয়ে যাচ্ছে তাদের স্বপ্নের রঙিন দুনিয়ায়। চট্রগ্রামের কর্নফুলী নদী তীরে অস্থায়ী সময়ের জন্য হলেও এখন ভ্রমন পিপাসু কিছু মানুষেরা আনন্দ পাচ্ছে এখানে ঘুরতে এসে। অভয়মিত্র ঘাট বর্তমানে বিনোদন পার্কে পরিনত হয়েছে। যদিও বেশিদিন এই ঘাট উন্মুক্ত থাকবেনা কারন বন্দরের প্রয়োজনে পাল্টে যাবে বর্তমানের দৃশ্যচিত্র। এলাকাটি তখন হয়তো হয়ে পড়বে সংরক্ষিত।
অভয়মিত্র ঘাট নগরীর কোনো পরিকল্পিত বা অনুমোদিত পর্যটন স্পট নয়। সাধারণ মানুষই বেছে নিয়েছে এই স্থানটি। শীঘ্রই এটিকে সংরক্ষিত এলাকায় পরিণত করা হবে। এখানে একটি লাইটারেজ জেটি নির্মাণ করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ফলে এখানে সাধারণ মানুষের আনাগোনা নিষিদ্ধ হতে পারে ।
এক সময় অভয়মিত্র ঘাট বলতে এখানকার মহাশ্মশানকেই বোঝাতো। প্রাচীন কাঠের ট্রলারগুলোর অনেকগুলো পার্বত্য অঞ্চল থেকে ফলমূল, শাকসবজি এবং সমুদ্র থেকে মাছ শিকার করে ফিরিঙ্গী বাজারে ও আড়তে জোগান দিতে এ ঘাটেই ভিড়তো। কালক্রমে অদূরে ব্রিজঘাট ব্যস্ত হয়ে উঠলে অভয়মিত্র ঘাট গুরুত্ব হারাতে থাকে। তীরে পলি জমে নদী দূরে সরে যাওয়ায় ঘাটটি হারায় পুরনো গৌরব। শুধু থাকে কয়েকটি চায়ের দোকান, কাঠের পাইকারি গুদাম, সারদা অয়েল মিলের স্বল্পতম ব্যস্ততা আর দুয়েকজন মানুষের ব্রিজে বসে হাওয়া খাওয়া। নগরীর মাস্টার প্লানের অংশ হিসেবে তীর ঘেঁষে পাকা রাস্তাটি হয়ে ওঠার পর হঠাত্ যেন জেগে উঠে ঘুমন্ত অভয়মিত্র ঘাট।
অভয়মিত্র ঘাট নামকরণ হয় কয়েকশত বছরের পুর্বের বয়োবৃদ্ধ প্রয়াত হিন্দু ব্যবসায়ী জনৈক অভয়মিত্রের নাম অনুসারে। সৃষ্টিকালে এই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকটি ছোট টং দোকান করে তাবু গড়েছিলেন খালের পাশে।যদিও সময়স্রোত আর কালের আর্বতে বেচে নেই আর তিনি।তবে লোকজন আসা যাওয়া করতে করতে আজ পরিচিত হলো তার নামে অভয়মিত্র ঘাট।
ঘাট থেকে প্রতিদিন কয়েকশত যাত্রীবাহী সাম্পান নৌকা ভেসে চলে লোকালয়ে খোয়াজনগর,কালুরঘাট,বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা ঘাটে।অভয়মিত্র ঘাটে চার লেনের সড়ক করার জন্য জমিয়ে রাখা পাথরের ব্লক, পাশে নির্মিত মাটির নিচের টানেল,কর্নফুলী নদীর বহমান জল ধারা,ভাসমান দেশি বিদেশী রং বেরংয়ের জাহাজ,দারুন জমিয়ে তুলেছে অভয়মিত্র ঘাট।প্রতিদিন এখন অভয়মিত্র ঘাট দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ে কোলাহলময় নগরীতে পরিণত হয়েছে প্রাচ্যের চট্রলা রানী কর্নফুলী চত্বর।
আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সব মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে নগরীর এই অভয়মিত্র ঘাট যেনো নতুন এক বিনোদন স্পট। আর দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে হরেক রকমের দোকানের পশরা।তাবু স্টাইলে খোলে বসেছে চা কপি চটপটি, ফুসকা,ছুলা বাতাম,কাকড়া সহ বিভিন্ন ভাঁজা বুজার অস্থায়ী দোখান ।
● যে ভাবে যাবেন-- চট্টগ্রাম → কোতোয়ালি - ফিরিঙ্গি বাজার→ অভয়মিত্র ঘাট
অভয়মিত্র ঘাটের ভিডিও দেখতে ক্লিক করুনঃ
Ovoy Mirto Ghat
Ovoy Mirto Ghat - Night view
রাতের দৃশ্যচিত্রঃ
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:৪১