আমরা সমগ্র মানব জাতি অসম্ভব এক সংকটময় মুহূর্ত পাড় করছি। কোভিড-১৯ নামক এক ভাইরাস জীবানু মানব জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছে। এই শয়তান প্রাণঘাতী জীবানু ভাইরাস তাদের অতি সুক্ষ্ণ প্রোটিন স্পাইক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের ফুসফুস সংক্রমিত করে দম বন্ধ করে না ফেরার দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
গতকাল পরযন্ত সারা পৃথিবীতে এই ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষ এবং মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় ১ লক্ষ ৩৪ হাজার মানুষ। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ছোবলে আমার সোনার দেশের মানুষও আক্রান্ত হয়েছে। এই মরনঘাতি ভাইরাস দ্বারা গতকাল পরযন্ত বাংলাদেশে সংক্রমিত হয়েছেন ১০০০ এর উপর অধিক মানুষ এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৬ জন।
মার্চের মাঝামাঝি থেকে দেশে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি অবনতির সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে ২৬ মার্চ থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য গণপরিবহন বন্ধ করে দেশব্যাপী লকডাউন অবস্থা শুরু হয়।
করোনা পরিস্থিতি যতই অবনতি হচ্ছে লকডাউনের সময়সীমা ততই বর্ধিত হচ্ছে। এছাড়া সরকারের অন্য কোন উপায়ও নেই। এমন পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতি হুমকির মুখে, বিশ্ব জুড়ে খাদ্য সংকট তৈরি হওয়ার সমূহ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। লকডাউন অবস্থা অব্যাহত থাকলেও বেঁচে থাকার জন্য আমাদের সবাইকে খাবার খেতে হবে এবং অন্য সবাইকে খাবার দিতে হবে। গতকাল ঘটে যাওয়া জামালপুরে ত্রানের খাদ্য ছিনতাইয়ের ঘটনা আমাদের জন্য অসনি সংকেত। দেশ আরও খারাপ পরযায়ে যাওয়ার আগেই আমাদের আরও সাবধান ও কৃচ্ছতা সাধনে মনোযোগী হতে হবে।
ভাত-ই আমাদের দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। সেজন্য এ মুহূর্তে আমাদের প্রচুর পরিমানে ধান এবং ধান থেকে চাল তৈরি করতে হবে। খাদ্য সংকট হলে নিশ্চিত বাহির থেকে খাবার এনে আমাদের এ বিপুল জনগোষ্ঠীকে খাওয়ানো সম্ভব নয় এবং খাবার পাওয়া যাবে না। পৃথিবীতে যত মহামারি হয়েছে এবং তাতে যত লোক মারা গেছে তারচেয়ে বেশি লোক মারা গেছে মহামারি উত্তর দুর্ভিক্ষে। মহামারি উত্তর দুর্ভিক্ষ মোকাবেলার জন্য আমাদের এখন থেকেই খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি ইঞ্চি জায়গা আমাদের উৎপাদনের আওতায় আনতে হবে। সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে খাবার উৎপাদনে মনোযোগী হতে হবে।
এই মুহুর্তে এ দেশের ১৭ কোটি মানুষকে প্রতিটি পা ফেলতে হবে বিপক্ষ দলের যোদ্ধা করোনা ভাইরাসের কথা মাথায় রেখে। কোনভাবেই বিপক্ষ দলকে সুযোগ দেওয়া যাবে না। কোনভাবেই করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার হারকে বৃদ্ধি পেতে দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি আগামী কয়েকমাস ঘরে থেকে যুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য মজুদ করতে হবে। সেজন্য আবাদকৃত বোরো ধানের প্রত্যেকটি শস্যদানা আগামী এক মাসের মধ্যে ঘরে তোলার প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে সারাদেশে এবছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ০২ (দুই) কোটি ০৪ (চার) লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। এ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২০ ভাগের যোগান দেয় হাওরাঞ্চলের বোরো ধান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে এবার হাওরের সাত জেলায় (কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ায়) বোরো আবাদ হয়েছে ০৯ (নয়) লাখ ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে এবং শুধু হাওরে ৪ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে। হাওরাঞ্চলে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন।
হাওরের মাঠে মাঠে এখন সোনালী ধানের সমারোহ। শুরু হয়েছে আগাম ধান কাটার মওসুম। কিন্তু ক্ষেতের পাকা ধান দেখেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। বরং করোনা পরিস্থিতিতে অজানা আশংকায় পড়েছে কৃষকরা। এ সময়টাতে হাওরে চোখে পড়ার কথা হাজার হাজার কৃষক ও কৃষিশ্রমিকের ব্যস্ততা। কিন্তু হাওরে বাম্পার ফলনেও খুশি হতে পারছেনা বোরো চাষিরা।
সাধারণত এই সময়ে বাইরের কৃষিশ্রমিকরা প্রতিবছর বোরো মওসুমে হাওরে এসে ধান কেটে দিয়ে যান। করোনা ভাইরাসের ভয়ে লকডাউন থাকায় জমির ধান কাটা, মাড়াই ও পরিবহনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। হাওর অঞ্চলের কৃষকরা আশঙ্কা করছেন বর্তমান পরিস্থিতির অবনতির সাথে সাথে লকডাউন সময় বর্ধিত হতে পারে। এতে বোরো ধানের কর্তন দীর্ঘায়িত হতে পারে, শ্রমিক সংকট দেখা দিতে পারে এবং কর্তনকালীন ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ারও সম্ভাবনা আছে। কারণ যে কোন সময় আগাম বন্যায় প্লাবিত হতে পারে হাওর অঞ্চল। তাছাড়া ঝড়, শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনাতো আছেই।
উল্লেখ্য যে, হাওর অঞ্চলে সাত জেলায় বোরো ধান কাটার উপযোগী অবস্থায় রয়েছে এবং বৈশাখের প্রথমার্ধে পুরোদমে ধান কর্তন শুরু হবে। এই অঞ্চলের সাত জেলায় চলতি মওসুমে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ১০১ হেক্টর জমির ধান কর্তন সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে সরকার ইতোমধ্যে বিশেষ উদ্যাগ গ্রহণ করেছে। কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জরুরি ভিত্তিতে ধানের কর্তনযন্ত্র বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এসব জেলার জন্য নতুন ১৮০টি কম্বাইন হারভেস্টর ও ১৩৭টি রিপার দ্রুত সরবরাহের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
অন্যদিকে পুরোনো ২২০টি কম্বাইন হারভেস্টর ও ৪৮৭টি রিপার অতিদ্রুত মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকা যেমন মেহেরপুর, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, জামালপুর, ময়মনসিংহসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় হাওরে শ্রমিক নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রশাসনিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে ।
হাওর অঞ্চলের মোট জমির মধ্যে হাওর অধ্যুষিত ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার জমির ধান কর্তনের জন্য যে পরিমাণ (৮৪ লক্ষ) কৃষিশ্রমিক প্রয়োজন তার ১৮ শতাংশ (১৫ লক্ষ ১২ হাজার) ঘাটতি রয়েছে। ধরা হচ্ছে এ এলাকায় ধান কাটতে ২৫ দিনের মতো সময় প্রয়োজন হবে। তাই শ্রমিক ঘাটতি পূরণে দৈনিক গড়ে প্রায় ৬৭ হাজার কৃষিশ্রমিক অন্য জেলাগুলো থেকে সরবরাহ করতে হবে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বোরো ধান কর্তন মে মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে জুন অবধি চলবে। এ সময়ে আশা করা যায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমে আসবে। বিস্তৃত প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু করলে এই সকল অঞ্চলে চলতি বোরো ধানের কর্তনকালীন ক্ষতি ও বাজারজাতকরণের ঝুঁকিও অনেক কমবে।
লকডাউন অবস্থা চলমান এবং সকল গণপরিবহন বন্ধ থাকলে শ্রমিক উদ্বৃত্তের অঞ্চল থেকে কৃষিশ্রমিকদের হাওর অঞ্চলসহ অন্যান্য শ্রমিক সংকট অঞ্চলে যাতায়াত সম্ভব হবে না। এতে হাওর অঞ্চলে বোরো ধান কর্তন চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে শুরু হলে কৃষকগণ শ্রমিক সংকটের সম্মুখীন হবে। হাওর অঞ্চলের জন্য সরকারিভাবে কর্তনযন্ত্র সরবরাহের ঘোষণা আসায় উক্ত এলাকার কৃষকগণ কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছে। করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে গণপরিবহন বন্ধ এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনায় আগাম কর্তনকৃত ধান বাজারজাত বিষয়ে কৃষকগণ বিপাকে পড়তে পারে। সুতরাং হাওর অঞ্চলসহ অন্যান্য আগাম কর্তনকৃত অঞ্চলের জন্য সরকারের ধান ক্রয় এবং আঞ্চলিক বাজারগুলোতে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ধানের বাজারমূল্য নিয়ে আশঙ্কা থাকায় সঠিক বাজারমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের ভূমিকা অত্যাবশ্যক।
বর্তমানে শ্রমিক না থাকায় মাঠের ধান কাটা নিয়ে কৃষক যাতে বিপাকে না পড়েন সেজন্য এ অবস্থায় কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে পারেন বিভিন্ন শ্রমজীবীসহ অন্যান্য সমবায় সমিতির সদস্যরা, বিভিন্ন ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র ও যুব সংগঠন গুলো। সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের এমপি জনাব রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে তিনি মাঠে ধান কেটে দিচ্ছেন। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরাও।
এটা একটা মহৎ উদ্যোগ। রাষ্ট্রপতির ছেলে, যিনি নিজেও একজন এমপি- তিনি কাঁচি নিয়ে ধান কাটছেন! এতে করে এলাকার মানুষ মানবিক কাজে আরও উদ্বুদ্ধ হবে।
করোনার প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে দেশের প্রধান খাদ্যশস্যের সরবরাহ এবং চাহিদা নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারলে খাদ্য ঘাটতির মতো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বোরো ধানের পরিপক্বতার ওপর ভিত্তি করে সকল পর্যায় থেকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কর্তন নির্বিঘ্নে করতে পারলে বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর ওয়েব সাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, অন্য সব কিছু ঠিক থাকলে আমনের উৎপাদন এ বছর বাড়তে পারে (২.০০-২.৫০ লক্ষ টন) এতে মোট উৎপাদন হবে ১৫৫.০০ লক্ষ টন। সেক্ষেত্রে দেশের মোট চালের উৎপাদন দাঁড়াবে ৩৯৬.৪৭ লক্ষ টন।
এমতাবস্থায় দেশের মোট ১৬ কোটি ৫৬ লক্ষ জনগোষ্ঠির জন্য মাথাপিছু গড় বার্ষিক ১৩৪ কেজি চাল হারে এবং মুড়ি, চিড়া, খই, পিঠা এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীসহ মোট চালের প্রয়োজন হবে প্রায় ২৫০ লক্ষ টন। মানবখাদ্যের পাশাপাশি আরও বহুবিধভাবে চাল ব্যবহৃত হয় যেমন বীজ, গবাদিপশুর খাদ্য এবং শিল্পকারখানায় উপাদান হিসেবে (২৬%)। আশা করা যায় উদ্বৃত্ত থাকতে পারে ৪৩.৯২ লক্ষ টন ।
বিগত বছরগুলোতে ধানকাটা মওসুমে কৃষিশ্রমিকের সংকট পরিলক্ষিত হয়েছে। চলতি মওসুমে করোনার প্রার্দুভাবের দরুণ গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তাদের চলাচল বিঘ্নিত হবে এতে শ্রমিক সংকট আরও তীব্র হতে স্বচ্ছন্দে চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও কৃষিশ্রমিকের স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষ পদপক্ষেপ নেয়ার জন্য সঠিক নির্দেশনা থাকতে হবে।
তবে আশার কথা হচ্ছে অনেক অকৃষিশ্রমিক (রিকশা/ভ্যানচালক, ক্ষুদ্র দোকানি, নির্মাণ ও অন্যান্য শ্রমিক) করোনার সংকট কাটাতে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর অঞ্চল থেকে নিজ এলাকায় ফিরে গেছেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ সাপেক্ষে আপদকালে তাদের উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে ধান কর্তন কাজে নিয়োজিত করে আয়ের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি অঞ্চলভিত্তিক কৃষিশ্রমিক সংকট নিরসন করা যাবে। এছাড়াও, এলাকা উপযোগী বরাদ্দকৃত কম্বাইন হারবেস্টার ও রিপার সময়মতো কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হবে। সম্ভব হলে কম্বাইন হারভেস্টার ও রিপার এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে পরিবহনের মাধ্যমে কর্তন কার্যক্রম গতিশীলতা আনয়ন করতে হবে।
হাওর অধ্যুষিত মৌলভীবাজার এবং সিলেট অঞ্চলের চা বাগানের শ্রমিকদের সাময়িকভাবে নিকটবর্তী এলাকায় বোরো ধান কর্তনে নিয়োজিত করে সেসব এলাকায় কৃষিশ্রমিক সংকট মোকাবিলা করা যেতে পারে।
হাওর অঞ্চলে যে সকল ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবায় নিয়োজিত নয় তাদেরকে নিয়ে বোরো ধান কর্তনকালীন কৃষিশ্রমিদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য নিযোজিত করা যেতে পারে।
রাষ্ট্রপতির ছেলে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের এমপি জনাব রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এর মতো আমিও স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে এই আপদকালীন সময়ে কৃষকের ধান কাটা থেকে চাল তৈরি পরযন্ত বিভিন্ন কাজে স্বেচ্ছা শ্রমিক হিসেবে অংশগ্রহণ করতে চাই। আমি জানি আমার মতো আরও অনেক তরুণ, যুবক এই কাজটি করতে আগ্রহী হবেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতিতে এই সমগ্র প্রক্রিয়াটি যেমন...
১) সারাদেশব্যাপী বিভিন্ন আগ্রহী স্বেচ্ছাশ্রমিক/পেইড শ্রমিকের তালিকা প্রস্তুত করা,
২) যে সকল এলাকার বোরো ধান জরুরী ভিত্তিতে কাটতে হবে সেসকল এলাকা চিহ্নিতকরণ এবং ঐ এলাকার কৃষক/বোরো চাষী মালিকদের সাথে যোগাযোগ করে বোরো ধান কাঁটার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা,
৩) স্বেচ্ছাশ্রমিক/পেইড শ্রমিকদের সামজিক দূরত্ব বজায় রেখে করোনা সংক্রমন যাতে না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিশেষ ট্রেন, বাস কিংবা ট্রাকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বোরো ধান কাটার এলাকায় পৌছানোর বিষয়টি নিশ্চিতকরা,
৪) স্বেচ্ছাশ্রমিক/পেইড শ্রমিকের খাবারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা,
৫) বোরো ধান কাঁটার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি যেমন কাস্তে, দড়িসহ অন্যান্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করা।
৬) স্বেচ্ছাশ্রমিক/পেইড শ্রমিকের রাত্রীযাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করা,
৭) স্বেচ্ছাশ্রমিক/পেইড শ্রমিকের সার্বিক স্বাস্থ্যর বিষয়টি নিশ্চিত করা ...
ইত্যাদি কিভাবে কত সুষ্ঠু, সুন্দরভাবে করা যায়, সেজন্য বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণ, নেতৃত্বদানের জন্য অনুরোধ করছি।
সবার সম্মিলিত প্রয়াসে আমরা কৃষকদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ফলনকৃত প্রত্যেকটি বোরো ধানের শস্যদানা দ্রুত কৃষকের ঘরে তুলে দিতে চাই। অন্যথায় হাওড় এলাকার আগাম বন্যা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুরযোগের বোরো ধানের চরম ক্ষতি হতে পারে এবং দেশে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। এই মুহূর্তে বোরো ধানের একটি শস্যদানাও কোনভাবে নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৪