আগুণ, পানি, ভূমিকম্প, ভবন ধ্বস, সড়ক দুর্ঘটনা, যানজট এসব থেকে মুক্তির একমাত্র পথ, অজুহাত। অজুহাত দিয়েই দায়মুক্তি। আমাদের অজুহাত কি? জনসংখ্যা বেড়ে গেছে, ইনফ্রাস্ট্রাকচার গড়ে উঠেছে - এখন তা ভেঙ্গে নতুন শহর করা সম্ভব না, যখন সময় ছিল তখন পরিকল্পনামত শহর গড়ে তোলা হয় নাই ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন নানাবিধ অজুহাত।
অতীতের ঘাড়ে দোষ দিতে দিতে কত বর্তমানকে যে অতীত করে দিয়েছি তার হিসেব নাই। ২০ বছর আগে যে কথা বলে এসেছি, ২০ বছর পরে এসেও বলব, ঈশ যদি ২০ বছর আগে ওই প্ল্যান টা করা যেত!
বর্তমান এখনই বর্তমান। অতীতে না হয় পরিকল্পনাকারীদের অভাব ছিল, এখন কি বিজ্ঞ পরিকল্পনাকারী আছে? উত্তর হল, না, মোটেও নাই। থাকলেও পরিকল্পিত নগর বা দেশ গড়ার সদিচ্ছা কারো নাই।
কেন্দ্রীয় ঢাকাকে পরিকল্পনামাফিক গড়ে তোলা যায় নাই। যায় নাই যায় নাই। কিন্তু ঢাকা তো বর্ধিত হচ্ছে ক্রমাগত। ঢাকার উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিমে বহু আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা গড়ে উঠেছে গত ২০ বছরের ব্যবধানে। যা সম্পূর্ণ অগোছালো ও অপরিকল্পিতভাবে। সরকার চাইলে আরো ভালোভাবে গড়তে পারত। এখন বলবে ২০ বছর আগে হইলে হয়ত সম্ভব হইত।
যাক, ঢাকার পারিপার্শ্বিক এলাকাগুলা তো শেষ, এতে আর হাত দেয়ার জো নেই। ঢাকা এখন বর্ধিত হয়ে সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত পরিব্যপ্ত হবার পথে। পরিকল্পিত শহর গড়তে মূল ঢাকার বাহিরে ওইসব শহর বা ঢাকা থেকে ওই শহর পর্যন্ত জায়গাগুলোকে ব্যবহার করতে, সরকার কি কোন পদক্ষেপ নিয়েছে? উত্তর হল, না, মোটেও নেয় নি।
কয়মাস আগে সোনারগাঁ তে যাওয়া হয়েছিল। ওইখানে একটা আবাসিক এলাকায় ছিলাম ২ দিন এর মত। ঢাকা চট্রগ্রাম প্রধান সড়ক থেকে ১৫-২০ মিনিট দূরত্বে। ওই এলাকায় রিকশা ছাড়া কোনো গাড়ি ঢুকে না। কারণ রাস্তা বলতে কিছুই নাই, অথচ সারি সারি বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে। এখন ওই এলাকায় আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস ঢুকবে না, এ্যাম্বুলেন্স যাবে না, পুলিশের গাড়ি যাবে না, বাসা পরিবর্তন করলে বড় গাড়ি ঢুকবে না। যার জায়গায় যে তার মত করে বাড়ি করে রেখেছে, কারণ প্রশাসন অ্যালাউ করতেছে ওইগুলা করতে, অথবা প্রশাসন নির্বিকার।
আর বড় বড় খালি জায়গা দখল করে আছে বড় বড় হাউজিং এজেন্সি নামধারী ভূমি ধস্যুরা। যেখানে একসময় গড়ে উঠবে গতানুগতিকের মত ইট পাথরের জঞ্জাল। খালি মাঠ, নদী, কিছুই আর থাকবে না আজকের ঢাকার মত।
অথচ ওইসব এলাকাগুলাকে নতুন করে পরিকল্পিত করে সাজানো যেতো। কিন্তু সরকার এ ক্ষেত্রেও উদাসীন। আজ থেকে ২০ - ৫০ বছর পরে ওইগুলাও অজুহাত হিসেবেই চালিয়ে দেয়া হবে।
এই দিকে আমাদের দেশ গড়ার কাজে যারা নিয়োজিত তারা এসব দিকে নজর না দিয়ে, অজুহাত দিয়েই দায়মুক্ত হচ্ছে। কারণ সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাতে তাদের লাভ নেই। তাদের চিন্তা হল, যাতে তাদের লাভ নাই তা করে কি হবে? ১০০ বছর ৫০০ বছর এর পরিকল্পনা করে কি লাভ, তারা তো আর থাকবে না। ওমর খৈয়াম একদা বলেছিল; ‘’নগদে যা পাও হাত পেতে নাও, বাকির খাতা শুন্যই থাক’’। তাই যে কাজে নগদ প্রাপ্তির সম্ভাবনা সে কাজ করেই তারা ক্ষান্ত যাচ্ছে। কতিপয় লোক নাম, ধাম, অর্থ কামিয়ে নিয়ে দেশের বারোটা বাজিয়ে যাচ্ছে আর কি।
অপরিকল্পিত নগরায়নের মাশুল এখন জনগণ দিচ্ছে। ভবিষ্যতে এর অবস্থা হবে আরো ভয়াবহ। এ নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। মাথা থাকলে তো মাথা ব্যাথা!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৬