অন্ধকূপ হত্যা একটি বহুল প্রচারিত সেনা হত্যাকাণ্ড যা ব্রিটিশ আমলে সংঘটিত হয়েছিল বলে বর্ণিত। বর্ণিত হয়েছে যে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নির্মিত ফোর্ট উইলিয়াম দূর্গের অভ্যন্তরে জানালাবিহীন ক্ষুদ্রাকৃতির একটি কামরায় ১৭৫৬ সালের ২০শে জুন তারিখে ১৪৬ ইংরেজকে কারারূদ্ধ করা হয়েছিল। সেখানে অমানবিক পরিবেশের সৃষ্টি হওয়ায় এক রাতের মধ্যে ১২৩ জনের মৃত্যু ঘটে। এই কাহিনীটি বর্ণনা করেছিলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কর্মচারী। পরবর্তীতে সেনাপতি জন যেফানিয়াহ হলওয়েল তার লিখিত ইন্ডিয়া ফ্যাক্টসনামক গ্রন্থে। হলওয়েল নিজেকে বেঁচে যাওয়া বন্দীদের একজন জন বলে দাবী করেন এবং পরবর্তীতে নিহতদের স্মরণে দূর্গের পূর্ব্বদ্বারের সম্মুখভাগে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে যা লর্ড হেস্টিংস ১৮১৮ সালে ভেঙ্গে ফেলেন।
কিন্তু দৈর্ঘ্যে ২৪ ফুট এবং প্রস্তে ১৮ ফুট একটি কামরায় ১৪৬জন মানুষকে আটক রাখা একটি অবাস্তব বিষয় বিধায় এই কাহিনী সত্যতা নিযে প্রশ্ন ওঠে। বাংলার নবাব নবাব সিরাজদ্দৌলাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্য নিয়েই সম্ভবত এই কাহিনী রচিত ও প্রচারিত হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। সমসাময়িক ইতিহাসে এই ঘটনার অন্য কোন উল্লেখ দেখা যায় নি। পরবর্তীতে ব্রিটিশ ঐতিহাসিকদের অনেকেই নবাব সিরাজদ্দৌলাকে নির্দয়, উদ্ধত, স্বেচ্ছাচারী প্রতিপন্ন করতে যাচাই না-করেই হলওয়েল বর্ণিত কাহিনীটি গ্রহণ করেছেন।
অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় ১৮৯৮ সালে প্রকাশিত তার সিরাজদ্দৌলা নামীয় গবেষণামূলক গ্রন্থে যুক্তি-প্রমাণ সহকারে এই কাহিনীর অসত্যতা ও অবাস্তবতা সম্পর্কে আলোচনা করেন। ১৯১৬ সালের ২৪শে মার্চ এশিয়াটিক সোসাইটিতে এক সভায় অন্ধকূপ হত্যা অলীক এবং ইংরেজ শাসকগোষ্ঠীর মিথ্যা প্রচার বলে প্রমাণ করেন। পরবর্তী কালে হলওয়েল বিবৃত অন্ধকূপ কাহিনীর অসত্যতা সার্বজনীনভাবে প্রতিপন্ন হয়েছে।
তথ্যসূত্র ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:১৭