পবিত্র শা’বান মাস উনার রোযা রাখার খাছ সুন্নতটি আদায় করতে হলে উত্তম হলো ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ দিনগুলিতে রোযা রাখা।
কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বিশুদ্ধ কিতাব ‘নাসায়ী শরীফ’ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত উসামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম তিনি বলেন, আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পবিত্র শা’বান মাসে আপনাকে যতবেশি রোযা রাখতে দেখি অন্য কোনো মাসে ততবেশি দেখি না, এর কী কারণ? তিনি বললেন, এ মাসটি রজব ও রমযান মাসের মধ্যবর্তী অতীব ফযীলতপূর্ণ মাস, অথচ লোকেরা এ মাসটির ব্যাপারে উদাসীন। এ মাসে বান্দার আমলসমূহ রব্বুল আলামীন উনার দরবারে পেশ করা হয়। আমার আমলসমূহ পেশ করা কালে আমি রোযাদার অবস্থায় থাকা পছন্দ করি।” সুবহানাল্লাহ!
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘যখন শা’বান মাস উনার মধ্য তারিখের রাত উপস্থিত হবে, তখন তোমরা উক্ত রাতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে।’ (ইবনে মাযাহ, মাছাবীহুস্ সুন্নাহ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা সাব্যস্ত হলো যে, পবিত্র শবে বরাত বা শা’বান মাস উনার মধ্য তারিখের রাতে সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দেগী করা এবং দিনের বেলা রোযা রাখা খাছ সুন্নত।
বস্তুত পবিত্র শা’বান মাস উনার ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটিই হচ্ছে সেই বরকতপূর্ণ রাত যেই রাতটিতে বান্দার আমলনামা মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে পেশ করাসহ বান্দার রুযী-রোযগার, হায়াত-মউত প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়। সুবহানাল্লাহ! উক্ত রাতে ইবাদত করা এবং পরের দিন রোযা রাখার জন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নির্দেশ করা হয়েছে। এছাড়া নাসায়ী শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারককৃত ‘আমার আমলসমূহ পেশ করাকালে আমি রোযাদার অবস্থায় থাকা পছন্দ করি’ এ দ্বারা ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ দিনে রোযা রাখার বিষয়টি প্রতিভাত হয়।
‘নুযহাতুল মাজালিস’ নামক বিশ্ববিখ্যাত কিতাবে উল্লেখ আছে, “নিশ্চয়ই জ্বিন, পশু-পাখি এবং এমনকি সমুদ্রের মাছরাও শা’বান মাস উনার মধ্য তারিখে তথা ১৫ শা’বানের দিন রোযা রাখে।” সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুল বরকত)
তাফসীরে ‘রূহুল মায়ানী’ উনার মধ্যে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়, যে ব্যক্তি শবে বরাত উনার রাতে ইবাদত-বন্দেগী করবে এবং দিনে রোযা রাখবে মহান আল্লাহ পাক তিনি ২০টি কবুল হজ্জের ছওয়াব এবং ২০ বছর রোযা রাখার ছওয়াব তার আমলনামায় লিখে দিবেন।
‘নুযহাতুল মাজালিস’ কিতাবে রোযার ফযীলত সম্পর্কে আরো উল্লেখ আছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি পবিত্র শা’বান মাস উনার (অর্থাৎ শবে বরাত) মাত্র একটি রোযা রাখবে তার শরীরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি দোযখের আগুনের জন্য হারাম করে দিবেন এবং বেহেশতের মাঝে সে ব্যক্তি হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গী হিসেবে থাকবেন এবং তৎসঙ্গে হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালাম উনার ও হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনার ন্যায় ছওয়াব দান করবেন। অতঃপর কোনো ব্যক্তি যদি পূর্ণ শা’বান মাসই রোযা রাখে তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার উপর মৃত্যূর তাকলীফ সহজ করে দিবেন এবং কবরের অন্ধকার দূর করে দিবেন। অতঃপর মুনকার নাকীরের প্রশ্নের ভয়াবহ অবস্থা দূর করে দিবেন এবং ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক তিনি তার লজ্জাস্থান আবৃত রাখবেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি পবিত্র শা’বান মাস উনার মধ্যে তিনটি রোযা রাখবে; মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাতী উটে করে পুলছিরাত পার করাবেন।” (ইবনু নুবাতা)