পূর্বের লিখাঃ
ভালো সিভি কিভাবে লিখবেন
কিভাবে ভালো রিজুমি লিখবেন:
অনেকেই রিজুমি এবং সিভি এক করে ফেলেন। বিভিন্ন অর্গানাইজেশনে চাকুরী বা উচ্চশিক্ষার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সাথে রিজুমি জমা দিতে হয়। আপনার পরিচয়, দক্ষ্যতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রাপ্তি ইত্যাদির সংক্ষিপ্ত একটি রূপ হচ্ছে রিজুমি। সিভিতে উক্ত বিষয়গুলো বিশদভাবে বর্ণনা করা থাকে কিন্তু রিজুমি তে খুবই সংক্ষিপ্ত রুপে থাকে। রিজুমি এবং সিভি সবসময়ই আপডেট করতে হবে।
রিজুমি লিখতে হয় একটা উদ্দেশ্য কে লক্ষ রেখে আর তাই ভিন্ন ভিন্ন উদ্যেশের জন্য লিখিত রিজুমি ভিন্ন ভিন্ন হবে।
সিভি এবং রিজুমি এর মধ্যে পার্থক্যঃ
রিজুমি এবং সিভির মধ্যে পার্থক্যগুলো জেনে নিলেই সিভি এবং রিজুমি সঠিক ভাবে লিখতে পারবেন। সিভি কিভাবে লিখতে হয় তা আমার আগের লেখায় আপনারা জেনেছেন। রিজুমি এবং সিভিতে যা উল্লেখ করতে হয় তা মোটামুটি একই। তবে সিভির যেমন একাধিক পৃষ্ঠা হতে পারে। মুলত ৩-৪ পৃষ্ঠা হলে ভালো হয়। কিন্তু রিজুমি ১ পৃষ্ঠার মধ্যে হতে হবে আর খুবই অভিজ্ঞ বা পারদর্শী হলে সেক্ষেত্রে ২ পৃষ্ঠা সর্বোচ্চ হতে পারে। তবে ফ্রেশ গ্রাজুয়েট / চাকুরীক্ষেত্রের অনেক অভিজ্ঞ না হলে রিজুমি ১ পৃষ্ঠার মধ্যেই লেখা শ্রেয়। অর্থাৎ সিভি এবং রিজুমি এর প্রধান পার্থক্য হচ্ছে “আকার” বা সীমাবদ্বতার। রিজুমি যেহেতু আকারে ছোট এবং একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে আপনি তৈরি করছেন মানে নির্দিষ্ট চাকুরীর উদ্দ্যেশে বা নির্দিষ্ট কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য রিজুমি তৈরি করছেন সুতরাং রিজুমিতে প্রাসঙ্গিক এবং মৌলিক বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হবে। অপ্রাসঙ্গিক এবং অপ্রয়োজনীয় সব কিছু রিজুমিতে বাদ দিতে হবে। আপনার হয়তো অনেক কাজের অভিজ্ঞতা আছে কিংবা দক্ষতা আছে কিন্তু আপনি যে উদ্দেশ্যের জন্য রিজুমি টি তৈরি করছেন তার সাথে ঐ কাজের অভিজ্ঞতা বা দক্ষতার সামাঞ্জস্যতা নেই তাহলে ঐ বিষয়গুলো রিজুমিতে না আনাই ভালো কারণ রিজুমি তে আকারের সীমাবদ্বতা আছে। সুতরাং সিভি এবং রিজুমির মধ্যে প্রধান পার্থক্য আকার এবং প্রাসঙ্গিকতার।
রিজুমিতে কি কি অংশ থাকবেঃ
১) Personal Information:
আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, আপনার নাম, আপনার ঠিকানা, [মানে যে ঠিকানায় আপনাকে পাওয়াযাবে বা মেইলিং এড্রেস বলে], আপনার ফোন নম্বর, আপনার ই-মেইল আইডি। এই বিষয়গুলো উল্লেখ করতে হবে পৃষ্ঠার উপরের দিকে। একটি বিষয় উল্লেখ করা ভালো ই-মেইল আইডির ঠিকানা অবশ্যই ফর্মাল হওয়া প্রয়োজন।
২) Objective / আপনার উদ্দেশ্য:
যে উদ্দেশ্যে আপনি রিজুমিটি তৈরি করছেন তা খুবই স্পষ্ট আকারে ১-২ বাক্যের মধ্যে লিখবেন। যে প্রতিষ্ঠান চাকুরীর জন্য আপনি এই রিজুমিটি তৈরি করছেন তাদের বিজ্ঞাপনে বা ওয়েব সাইটে তাদের উদ্দেশ্য, ভিশন, অবজেকটিভ দেখে আপনি আপনার মত করে গুছিয়ে লিখে ফেলুন। অনেকেই অবজেকটিভ কপি পেস্ট করেন বা অন্যের টা চোথা মারেন এটা উচিত নয়।
* ব্যাক্তিত্ব বা যোগ্যতার বিবরণ / Summary of Qualification: অনেকেই এই অংশটা লিখেন। এইটা অংশটা সদ্য গ্রাজুয়েট যারা তারা লিখেন।
৩) Educational Qualification / শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
এই পয়েন্ট টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এইখানে একটা ক্রোনোলজিক্যাল অর্ডার অনুসরন করবেন। অর্থাৎ শেষ ডিগ্রী / মাস্টার্স ডিগ্রী থেকে শুরু করবেন এবং সর্বপ্রথম ডিগ্রী সবার শেষে লিখবেন।
যেমনঃ
Masters of Science in Major:
University Name, City, Country, Month year.
মাস্টার্সে আপনার স্পেশালাইজেশন উল্লেখ করুন এক বা দুই বাক্যে
রিসার্স প্রজেক্ট / থিসিসের শিরোনাম উল্লেখ করুন।
আপনার প্রাপ্ত খুব outstanding না হলে উল্লেখ করার কোনও দরকার নেই।
একই ভাবে ব্যাচেলর ডিগ্রী লিখবেন।
আমাদের দেশে অনেক সময় মাধ্যমিক / উচ্চমাধ্যমিক এর ডিগ্রীগুলো লিখে থাকি। প্রযোজ্যক্ষেত্র ছাড়া এইগুলো উল্লেখ করার কোনও দরকার নেই। আপনি খোজ-খবর নিন যে উদ্দেশ্যে এই রিজুমিটি তৈরি করছেন সেখানে এই বিষয়টির প্রয়োজন আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে উল্লেখ করবেন অন্যথায় উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই।
৪) Relevant Job Experience / প্রাসঙ্গিক কাজের অভিজ্ঞতাঃ
অনেকেই এটা ভুল করে থাকেন। ভাবেন কাজের ইতিহাস বা Job history লিখতে বলেছেন। অনেকেই এই পয়েন্টে তার জীবনে এযাবত কালে যে সকল কাজ করেছেন সবই উল্লেখ করেন। মনে রাখতে হবে প্রাসঙ্গিক কাজ বা এই রিজুমিটি যে উদ্দেশ্যে তৈরি হচ্ছে সেই সামাঞ্জস্যপূর্ণ কাজের অভিজ্ঞতাই উল্লেখ করতে হবে
৫) Technical Skill:
যে উদ্দ্যেশ্যের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ টেকনিকাল স্কিল যেমন কম্পিউটার স্কিল, কোনও সফটওয়ার স্কিল কিংবা কোনও সার্টিফিকেশন স্কিল থাকলে তা উল্লেখ করবেন।
৬) Internship:
ইন্টার্নশীপ যদি থাকে তাহলে উল্লেখ করবেন। সদ্য গ্রাজুয়েট করেছেন যারা তাদের জন্য এইটা কার্যকরী বেশি। কোন প্রতিষ্ঠানে করেছেন কতদিন করেছেন তা উল্লেখ করবেন; সেই প্রতিষ্ঠানের লোকেশন, ঠিকানা সংক্ষিপ্ত আকারে লিখবেন। বিশেষ কোনো ট্রেনিং থাকলে তা উল্লেখ করুন
৭) Publication / প্রকাশনা:
পাবলিকেশন একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ আপনার উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে রিজুমি তৈরি করার ক্ষেত্রে। মনে রাখবেন শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক এবং মৌলিক বিষয়ের পাবলিকেশনগুলো উল্লেখ করতে হবে। আপনার একাধিক পাবলিকেশন থাকতে পারে। প্রাসঙ্গিক না থাকলে সবগুলো উল্লেখ করার দরকার নেই। আবার যদি চান সংক্ষিপ্ত ভাষায় বলতে পারেন যে আপনার মোট এতটা ইন্টারন্যাশলান জার্নালে পাবলিকেশন / কনফারেন্স পেপার আছে। এতে করে আপনি সংক্ষেপে বলে দিলেন।
৮) Scholarship / Award (বৃত্তি বা পুরষ্কার):
যদি ভালো ভালো কোনও বৃত্তি/ স্কলারশীপ বা পুরষ্কার পেয়ে থাকেন তা উল্লেখ করা উচিত। এটা আপনার যোগ্যতা দক্ষতাকে ফুটিয়ে তোলে। আপনার রিকোগনিশন এটা।আপনি প্রতিযোগী বা প্রতিযোগীতাপূর্ন পরিবেশে ভালো করেছেন তাই বোঝায়। অনেক অনেক প্রার্থীর মধ্যে থেকে আপনাকে আলাদা করতে সাহায্য করবে এই অংশটি। বৃত্তি কবে পেয়েছিলেন, কি অবদানের জন্য পেয়েছিলেন তা উল্লেখ করবেন।
৯) Language Proficiency /ভাষার দক্ষতাঃ
কোন কোন ভাষায় দক্ষতা বা কোন কোন স্তরে সেই দক্ষতা তা উল্লেখ করুন।
১০) Professional Membership পেশাদারী সদস্যপদঃ
পেশাদারী সদস্যপদ যদি থাকে তাহলে তা উল্লেখ করুন।
রিজুমি এর জন্য কিছু প্রয়োজনীয় টিপ্সঃ
১) আপনার জন্মস্থান, অবস্থান, ধর্মীয় বিশ্বাস, বৈবাহিক অবস্থা, রক্তের গ্রুপ, ইত্যাদি নিতান্ত ব্যক্তিগত তথ্য রিজুমির অংশ হতে পারে না। এইগুলো রিজুমিতে লেখবেন না।
২) অহেতু কারণে অপ্রাঙ্গিক তথ্য দিয়ে চাকুরীদাতার ধৈর্য্য পরীক্ষা না করাই উত্তম
৩) নিজে এবং অন্যকাউকে দিয়ে বার বার রিজুমি প্রুফ দেখুন
৪) ফন্ট Times New Roman / Arial হবে এবং ফন্টের আকার 12 হবে
৫) মিথ্যা বা ভুল তথ্য দিবেন না
৬) বক্স / টেবিল / কলাম দিবেন না
৭) রিজুমি লেখা আর রচনা লেখা এক নয়
৮) রিজুমি তে ছবি লাগাবেন না
৯) অহেতুক সাজ-সজ্জা বা বর্ণিল / বর্ডার ডিজাইন করবেন না
১০) রিজুমিতে রেফারেন্স এর প্রয়োজন নেই। সিভিতে এই অংশটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। [যা কিভাবে সিভি লিখতে হয় তাতে উল্লেখ আছে]
১১) কারোর টেমপ্লেট নকল/কপি করবেন না। নিজের রিজুমি নিজেই বানিয়ে ফেলুন।
আগামীতে কাভার লেটার কিভাবে লিখতে হয় সেই বিষয়ে লিখা থাকবে।
সবাইকে ধন্যবাদ।
Find / Follow me on facebook:
https://www.facebook.com/neelchy