ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।
রুশোর জীবনী পাঠ করছি আরেকবার! আর ভাবছি একটা মানুষের ভেতর কত রকমরে বৈপরিত্য থাকে। ১৬ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় পাস করার জন্য একবার পড়েছিলাম। তখন মনে হতো রুশোর জীবন রসময়! এখন ভিন্ন উপলব্ধি হচ্ছে।
ভাবছি ভিন্ন কথা। যাপিত জীবনে কত রকমের বৈপরিত্যের ভেতর দিয়ে আমরা যাই। তার হদিস মেলানো কঠিন। রুশো অকপটে বলেছেন তার চরিত্রের ভেতরকার বৈপরিত্যের কথা। কাম এবং একই সঙ্গে শ্রদ্ধার কথা। কাম হাসিল করার জন্য দার্শনিকের নতুন ফন্দির কথা। কত রকমেই তো আমরা কত কি হাসিল করি।
আমরা আজকাল ধর্ম কর্মে বলতে মোসলমানদের সমালোচনা করতে পছন্দ করি। এটা করলে নিজেদের একটু জাতে ওঠা মনে হয়। রুশোর সেই বয়ানে আমরা খ্রিস্টানদের ভেতরকার যে চিত্র দেখি সেটি কেবল ভয়ঙ্করই না মহামারীর মত। রুশোর সময়কার ইতালী, ফ্রান্স বা ইউরোপের অন্য দেশগুলোর ধর্ম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চার্চ বা অন্যসব স্থানে সমকামিতা, ধর্ষণ নিত্যকার ঘটনায় রূপান্তরিত হয়েছিল।
এ কথা অবশ্য সত্য এখন তারা যে জাল ছিঁড়ে কিছুটা হলেও বের হয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। যেটি আমাদের মত দেশগুলোর মানুষেরা পারেনি। তবে চেষ্টা আমাদের করতে হবে। অন্যে দোষ করে বলে আমরাও করলে সমস্যা কি টাইপ চিন্তা থেকে বার হতে হবে।
রুশো যার কাছে বার বার ফিরে আসেন, তার 'মামা' । সেই 'মামা'র সাথে সঙ্গমের জন্য দর্শন পড়াতে আসা পাদ্রী কীভাবে তার জীবন দর্শন বদলেছেন সে গল্পও রুশো বলেছেন। দর্শন পড়াতে আসা পাদ্রী নির্ভেজালভাবেই তার ছাত্রী বা রুশোর ভাষায় তারা 'মামা'র সাথে যৌনকাজে লিপ্ত হয়েছিলেন। এটি তিনি করেছিলেন তার দর্শন বিদ্যা কাজে লাগিয়ে!
মানুষের ভেতরে কেউ বুদ্ধিভিত্তিকভাবে বদলায়। কেউ ধর্ম চাপিয়ে বদলায়। কেউ টাকা দিয়ে বদলায়। কেউ ক্ষমতা দিয়ে বদলায়। আবার কেউ চাপ প্রয়োগ করে। বল প্রয়োগ করে নারী সঙ্গ উপভোগ করে। আবার কাউকে সঙ্গ উপভোগের পর অপরাধ প্রবণতা চেপে ধরে। যেমনটা রুশোকে ধরেছিল। তার বহুদিনের আকাঙ্খা পূর্ণ হয়েছির তার 'মামা'র সাথে যৌনসঙ্গ উপভোগের পর। কিন্তু মিলন শেষে তার মনে হয়েছিল- তিনি তার মাতৃসম কারো সাথে কাজটি করেছেন। যার জন্য তার অনুশোচনাও হয়েছিল।
বিষয়টি এখনো প্রাসঙ্গিক। কেবল আমাদের অনুশোচনা নেই। কষ্ট নেই। আমরা কেবল বল প্রয়োগে যৌন সংসর্গ উপভোগ করতে ব্যস্ত রই! আমাদের মনো জগতে একটা বড় পরিবর্তন দরকার। সেটি সত্য ও সঠিক। সুন্দর ও নৈতিকতার। এই যে ধর্ষণ, এই বল প্রয়োগ। এই যে হঠাৎ প্রেম! হঠাৎ রুম ডেট! হঠাৎ ভ্রমণ-- তারপর ধর্ষণ। ধর্ষণ অভিযোগ। সব থেকে হবার জন্য আমাদের নিজেদের ভেতরে পরিবর্তন দরকার।
আমাদের জীবনধারাটা একটা নৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে হবে। ভালো-মন্দ বিবেচনা করতে হবে। সে বিবেচনা বোধ তৈরি করতে হবে সবার ভেতর। সব ধর্মের মানুষের ভেতর। ধর্ষণ কমে আসবে, নিশ্চিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৫