somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম অবশ্যই স্বাধীন! তবে...

০৪ ঠা মে, ২০১৬ দুপুর ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রেস ফ্রিডম ডে নামে একটা দিবস বাংলাদেশে উদযাপিত হলো- ভালো লাগলো শুনে। মুক্ত গণমাধ্যম নিয়েও কথা হয়েছে। হচ্ছে। হবে। মাশাআল্লাহ, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি!

বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ কতটা, তার সম্পর্কে আমার স্পষ্ট ধারণা নেই! কারণ এখনো আমি কোনো অনলাইন, অফলাইনের সম্পাদক হতে পারি নাই। কিম্বা কর্তা সাইজে যেতে পারি নাই। যাওয়ার কোনো 'আশঙ্কাও' নেই!

তবে এটা তো জানি সেলফ সেন্সরশিপ এখানে বহু আগে থেকে প্রচলিত। এখানে সম্বাদিকরা স্বেচ্ছায়, স্ব-উদ্যোগে অন্যের পারপাস সার্ভ করতে খুবই পছন্দ করেন! যদি ক্ষমতাবানদের 'নেক' নজর মিলে! এই একটাই আশা!

আমার ব্যক্তিগত পর্যব্ক্ষেণ---বাংলাদেশের সবচেয়ে নিগৃহিত দু'টি প্রাণি আছে! একটি সম্বাদিক! আরেকটি বাসা বাড়ির কাজের লোক! এদের বশে আনা কঠিন কিন্তু পেটে এদের ক্ষুধা। অনিরাপদ জীবন, এক দিক থেকে ইসলামিক জীবনও বলা চলে। ইসলাম ধর্ম অনুসারে আজকে নিয়ে ভাবো, ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য, পয়সা মজুদ করে অন্যকে কষ্ট দিও না! এর দু'প্রাণিকুল এটা মানতে বাধ্য! কারণ তার তো দিনে আনা দিনে খাওয়া!। অবশ্য কিছূ পেটি বুর্জোয়া সম্বাদিক এখন সমাজে আছেন। তাদের কথা না বলি। আম সম্বাদিকের কথাই ধরে এ পর্যবেক্ষণটা দিলাম!

সে যাই হোক, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও রেডিও'র স্বায়ত্ত্বশাসনের জন্য একটা কমিশন হয়েছিল, আসাফ উদ দৌলা এ কমিশনের প্রধান ছিলেন। সম্ভবত ১৯৯৬ কিম্বা ৯৭ সালের দিকের ঘটনা, এ কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলছিলেন, তিনি যে প্রতিবেদন বানিয়েছেন, সেটি অবশিষ্ট নাই। তার স্বপ্রজাতির আমলার এটাকে কাটছাঁট করে স্বায়ত্ত্বশাসনের বদলে 'আয়ত্ত্বশাসন' এর এন্তেজাম করেছে।

' আয়ত্ত্বশাসন' শব্দটা খুব মনে ধরেছে আমার। অসাধারণ। বঙ্গীয় শব্দ ভাণ্ডারে এক অনন্য এবং তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন। ভাবলে আজো চমৎকৃত হই। এবং আরো ভালো লাগে পরে আসাফ উদ দৌলার সাথে কথা বলেছিলাম, তার কথাটা খুব পরিষ্কার, এখানে প্রেস ফ্রিডম বলে কিছু নেই।

যার বিপক্ষে যাবে, সে বয়কট করবে! নিশ্চিতভাবে অনেকেরই জানা আছে আম্লীগ সভানেত্রী বিম্পির ২০০১ থেকে ২০০৬ এর আমলে লাইসেন্স দেওয়া টিভি চ্যানেলকে তার অনুষ্ঠান কভার করতে দিতেন না। সে সময় ওই সব টিভি চ্যানেলৈর সম্বাদকর্মীরা প্যান্ডেলের বাইরে মাইকের সামনে তাদের ' বুম' রেখে সাউন্ড বাইট সংগ্রহ করতেন!

এটাকেও অত্যন্ত সম্মান করি, আমি। কারণ আম্লীগ এটা শেষ পর্যন্ত টেনে নিতে পেরেছে, যে শক্তি বিম্পির নেই। বিম্পি- জমাতের লোকজন সব সময় একটা অপরাধী ভাব নিয়ে থাকে। মনে হচ্ছে, আহা রে কি বললেম জনাব অসন্তুষ্ট হবে। তাই সন্তুষ্ট করার একটা ভাবনা। কোনো অবস্থানে কঠোরভাবে থাকতে পারে না।

বলছিলাম, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা। গণমাধ্যম স্বাধীন এ কথা সরকারের মন্ত্রী, তথ্য মন্ত্রী সবাই বলেন এবং সেটা এখন বললে, অনেকটা কৌতুকের সৃষ্টি করে। কারণ বিপরীত মতের পত্রিকা সংগ্রাম, নয়া দিগন্ত, দিনকাল তো বন্ধ হয়নি, এ দাবি তো সরকার করছে! এবং এ দাবি মিথ্যাও নয়। তাহলে আমরা প্রেস ফ্রিডম আছে, এটা আপতত চোখে মেনে নিতে পারি!

কিন্তু বাস্তবতা কি তাই! আমরা সম্বাদিকরাও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চাই। আমি চোখ বন্ধ করে বল্লাম, চাই না। একই সাথে দায়িত্বশীল সম্বাদিকতাও চাই না। কসম করে বলছি , চাই না! যদি চাইতাম তাহলে এ দেশে একের পর এক লুট, আর খুনের বিষয়ে আমরা কেউ-ই এতটা নিশ্চুপ আর ডে ইভেন্ট হিসাবে কভার করে চুপ থাকতাম না! এর ফলো আপ রিপোর্ট হতো, কারা এর পেছনে জড়ি এবং তাদের বিচারে সরকারকে গণমাধ্যম বাধ্য করতে পারতো!

আমার দেশ পত্রিকার উপর খগড় নেমে আসার পর আমাদের দেশের 'প্রগতিশীল' সম্বাদিক গোষ্ঠী তো হাত তালি দিয়েছে! দেন নি! দিয়েছেন। দিগন্ত টিভি বন্ধ হওয়ার পর সবাই বলেছেন, বাপু ঠ্যালা বোঝ! ইসলামিক টিভির মত নিরীহ টিভি চ্যানেল বন্ধ করার পরও গণমাধ্যমের কর্মীদের একাংশ উল্লাস প্রকাশ করেছেন। ইটিভির চ্যায়ারম্যানকে গ্রেপ্তারের পরও আমরা বহুলোককে দেখেছি উল্লাস করতে!

বাকি গুলো কবে বন্ধ হবে? সে জন্যও অপেক্ষা করেছেন দিনের পর দিন। আর বিপরীত মতের এখনো তেলা পোকার মত টিকে থাকা গণমাধ্যমগুলোকে কতটা কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে, এবং এ সব কাগজে চাকুরী করা কিছু সরকারপন্থী কীভাবে ফায়দা লুটছে, সেটাও আমরা কম বেশি জানি! সেই যাই হোক, দুনিয়া কা মজা লোটটো দুনিয়া তোমারি হ্যায় এর বিশ্বাসী লোকের তো ভাব হবে না, এটা জানা কথা!

তবে গণমাধ্যম চাপের বাইরেও স্বউদ্যোগে বহু খবর 'টুইস্ট' করে থাকে। এটা জেনেই করে। সরকারের নজরে পড়ার জন্য। যেমনটা একটা ইসু বাংলাদেশে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, সেটি হলো ড. ইউনূস। লোকটাকে তুলো ধুনো করতে পারলে কিছু সম্বাদিক এতটা আন্দ পান, যেটি হয় তিনি তার প্রেমিকার সাথে প্রথম সাক্ষাতেও লাভ করেন নি।

মজার ব্যাপার হলো এরা আবার আপনাকে নৈতিক সম্বাদিকার সবকও দিবনে। কিন্তু অসত্য, বিকৃত খবর ছাপানোর পর তার প্রতিবাদ ছাপতে পারবে না। কারণ তআহলে আবার না ক্ষমতাবানদের 'বদ' নজরে পড়ে যান।

অনেকে বলবেন,, ড. ইউনূসকে লাত্থি মেরে বের করে দেওয়ার পর গ্রামীণ ব্যাংক ভালো চলছে! দ্বিমত করছি না। কিন্তু কার সেট আপে চলছে?
গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তন ও সরকারের করায়ত্বে আনার জন্য বহু ফন্দি ফিকির তো হলো, কিন্তু পর্ষদ নির্বাচন আজ পর্যন্ত করতে পারেননি!

অনেক সম্বাদিক মনে করেন, ইউনূস দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন। কিন্তু এটা মনে করা পর্যন্ত তার স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।

আর এ দেশের গণমাধ্যমে সবার সমান অধিকার একটা স্বাপ্নিক ঘটনা। এখানে বিদেশে টাকা পাচারের প্রমাণিত রিপোর্টকে লেখা হয়' কথিত'। আর শোনা যাওয়ার রিপোর্টকে বলা হয়, 'অভিযোগ' । কথিত ও অভিযুক্ত শব্দ দুটোর তফাৎ নিশ্চিতভাবেই আছে। এদেশে ক্ষমতাবানের সন্তান হলে সাচ্চা লোক, ক্ষমতাহীনের ছেলে-মেয়ে হলে অসম্ভব নিম্ন মানের লোক।

বাংলাদেশের সংবাদ; মাধ্যমের স্বাধীনতা, অধীনতা কিম্বা আয়ত্বে থাকাটা অনেকটা স্বেচ্ছায়। জবরদস্তিমূলক এটা বলা যাবে না। কারণ সরকার জবরদস্তি করে না, শুধু ফিতা ধরে টান দেয়, মাহফুজ আনাম, মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান হওয়ার চেয়ে বউ পোলাপাইন নিয়ে টিকে থাকাই শ্রেয়।

ফাঁকে ডিজিটাল স্বাধীনতা, সেলফি তোলেন, জ্ঞান বিতরণ করেন এবং সরকারি প্রতিপক্ষের গুষ্টি উদ্ধার করেন, আপনার চে আর প্রগতিশীল কে হতে পারে! জনাব ভালো থাকেন, প্রেস ফ্রিডম ডে'র শুভেচ্ছা!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১৬ দুপুর ২:০২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×