মসজিদুল আকসা, জেরুজালেম । মুসলমানদের প্রথম কিবলা ।
শুভসকাল ।
সুরা বনী ইসরাইলের প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলেন-
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাজি আস্রা বিআবদিহি লাইলাম মিনাল মাসিজদিল হারামী ইলাল মাসিজদিল আকসা ।
"পবিত্র সেই মহান সত্তা, যিনি তাঁর এক বান্দা (মুহাম্মদ সঃ) কে মসজিদে হারাম (কাবাঘর) থেকে মসজিদে আকসা (বাইতুল মোকাদ্দাস) পর্যন্ত পরিভ্রমণ করিয়েছেন। এর মধ্যে তাঁর জন্য ছিল অসংখ্য নিদের্শনাবলী ।"
মিরাজের রাত্রিতে রাসুল সঃ কাবাঘর থেকে মসজিদুল আকসাতে যান । সেখানে নবীদের নামাজের ইমামতি করেন । এবং বোরাক নামের বিশেষ বাহনে আসিন হয়ে উর্ধ্বাকাশে গমন করেন । সিদরাতুল মুনতাহায় আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেন ।
আমরা এবং আমাদের মিডিয়া যখন আরো অনেক কিছু নিয়েই ব্যস্ত, ট্রাম্প তখন জেরুজালেমকে ইসরাঈলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। ইউএস এম্বাসি জেরুজালেমে সরিয়ে নেবার ঘোষণা দিয়েছে । অন্য দেশগুলোর এম্বাসিকেও জেরুজালেম যাবার আবেদন করেছে । জেনে রাখা ভালো, পৃথিবীর সবচে' ক্ষমতাধর দেশের সবচে' বিকারগ্রস্থ লোকটির ঘোষণার আগে অন্য কোন দেশ জেরুজালেমকে ইসরাঈলের রাজধানী হিসেবে স্বীকার করেনি । জাতিসংঘও না । ক্ষমতাধর বিকারগ্রস্থের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে, আসুন আমরা এক ঝলক জেরুজালেমের ইতিহাস দেখে নেই ।
জেরুজালেম মুসলমান , খ্রিষ্টান এবং ইহুদি তিন ধর্মের লোকদের কাছেই অত্যন্ত পবিত্র স্থান । দীর্ঘ ইতিহাসে, শহরটি কমপক্ষে দুইবার ধ্বংস হয়েছে, ২৩ বার অবরোধ হয়েছে, ৫২বার আক্রমণ হয়েছে এবং ৪৪বার দখল এবং পুনর্দখল হয়েছে ।
মসজিদুল আকসা বা বায়তুল মোকাদ্দাস মুসলমানদের প্রথম কিবলা ।
ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ বলা হয় এটিকে । হিজরতের পর বারবার রাসুল (সঃ) এর মনোবাসনা হয়, যদি কাবাঘরের দিকে কিবলা করে নামাজ পড়তে পারতেন । তখন একদিন রাসুল (সঃ) (মতান্তরে) কোন সাহাবির ঘরে নামাজ পড়ছিলেন । আল্লাহ নির্দেশ করেন কাবাঘরের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিতে । রাসুল (সঃ) কাবাঘরের দিকে মুখ ফিরান । সেই খবর দ্রুত এক সাহাবি কিবলাতাইনে নামাজরত সাহাবিদের কাছে পৌঁছে দিলে, নামাজরত অবস্থাতেই তাঁরা কিবলা পরিবর্তন করেন । তখন থেকেই কাবাঘর মুসলমানদের কিবলায় পরিণত হয় । আল্লাহ তাঁর হাবীব এর মনোবাসনা এভাবেই পূর্ণ করেন ।
জেরুজালেম প্রশ্নে বিশ্বরাজনীতি আবারও ভয়াবহ সংঘর্ষের মুখোমুখি । জেরুজালেম ফিলিস্তিনের আদি রাজধানী । যাকে নতুন করে ইজরাইলের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা হচ্ছে ।
বর্তমান প্রেক্ষাপটের জন্য সুরা বনী ইসরাইলের চতুর্থ আয়াতটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ-
وَقَضَيْنَا إِلَى بَنِي إِسْرَائِيلَ فِي الْكِتَابِ لَتُفْسِدُنَّ فِي الأَرْضِ مَرَّتَيْنِ وَلَتَعْلُنَّ عُلُوًّا كَبِيرًا
আমি বনী ইসরাঈলকে কিতাবে পরিষ্কার বলে দিয়েছি, তোমরা পৃথিবীর বুকে দু'বার অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং অত্যন্ত বড় ধরনের অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে।
.....
মসজিদ কিবলাতাইন, মদিনা মনাওয়ারা
সৌদিআরবসহ মুসলিমবিশ্বের তীব্র প্রতিক্রিয়ার কথা আমাদের সংবাদপত্রে কদ্দুর এসেছে বা আসবে জানা নেই । যদিও, সৌদি আরবের অনেক ভুল খবর, এবং অনেক খবর ভুলভাবে উপস্থাপন হতে আমরা দেখেছি ।
একদিন আগেই ট্রাম্পের ফোনালাপে সৌদি বাদশাহ সালমান বন্ধুকে সাবধান বাণী শুনিয়েছেন এভাবে-
"বিশ্ব_মুসলিমের অনুভূতিতে আঘাত হানবে আপনার প্রস্তাব। জেরুজালেমকে ইজরাঈলের রাজধানী ঘোষণা করার চিন্তা মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনার ক্ষেত্র বিপদজনকভাবে নষ্ট করবে । সৌদি আরব ফিলিস্তিনি মানুষের ঐতিহাসিক অধিকার সমর্থন করে ।
ট্রাম্পের ফোনালাপে বাদশাহ সালমান আরো বলেন,-জেরুজালেম এবং মসজিদুল আকসা মুসলমানদের প্রথম কিবলা, আপনার ঘোষণা বিশ্বমুসলিম অনুভূতিতে আঘাত হানবে এবং উত্তেজনা তৈরি করবে ।
বন্ধু সালমানের পরামর্শ উপেক্ষা করে পরদিনই ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাঈলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দিলেন । এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বরাজনীতিতে নতুন বাঁকবদল এবং মেরুকরণ হচ্ছে বলে বিশ্লেষকদের মতামত । এইক্ষণে, প্রতিক্রিয়াগুলো তোলা থাক, সবার জানা থাক । ভবিষ্যতের জন্য আজকের এই কথাগুলো খুবই জরুরি হবে !
ফিলিস্তিনের রাস্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস বলেছেন : ট্রাম্পের এই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেবারই নামান্তর ! ট্রাম্পের দাবি প্রত্যাখান করে তিনি বলেন, জেরুজালেম ফিলিস্তিনের আদি রাজধানী ।
বাদশাহ্ সালমান এবং এরদোগানের মধ্যে জরুরি ফোনালাপ হয়েছে । তুর্কি তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ।
জর্দান : জেরুজালেম ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্গনের জন্য ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করেছে জর্দান ।
পাকিস্তান : এই ইস্যুতে জরুরি আলোচনার জন্য ওআইসির জরুরি মিটিং এর ডাক দিয়েছে পাকিস্তান ।
ইজিপ্ট (মিশর) : ইউএস এম্বাসি জেরুজালেমে সরানোর দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে মিশর ।
বুধবার আরব লীগের এক জরুরি বৈঠকে ওআইসির জরুরি মিটিং এর জন্য একাত্মতা প্রকাশ করেছে ।
ইরান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলেও, প্রয়োজনের সময় ইরান সবার আগে এগিয়ে আসবে বলেই মধ্যপ্রাচ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত ।
এটি হয়তো পৃথিবীতে নতুন যুদ্ধের সুচনাকাল ! নতুন সংঘর্ষ এবং মেরুকরণের কাল । আমরা কেউ-ই তা চাই না । বিকারগ্রস্থহীণ নিরাপদ পৃথিবী চাই আমরা।
ছবি ১ : মসজিদুল আকসা, জেরুজালেম
ছবি ২ : মসজিদ কিবলাতাইন, মদিনা মনওয়ারা ।