এক
-আপনিই তাহসিন আলম ?
-জ্বি স্যার।
-আমাকে স্যার বলার দরকার নেই। যাকে স্যার বললে কাজ হতে পারে তার কাছে নিয়ে যাচ্ছি। পান্ডুলিপিটাতো আপনারই তাই না?
-জ্বি।
-ঠিক আছে চলুন।
দুই
-স্যার আসব?
-হুমম .... আসো।
-স্যার উনার কথাই আপনাকে বলেছিলাম। উনার "আততায়ীর সাথে কথপোকথন" এর পান্ডুলিপিটা স্যার আমি পড়েছি। চমৎকার লিখেছেন।
-শুনো মাসুদ, ভাল লিখে কি খারাপ লিখে এটা দিয়েতো ব্যবসা হয়না। ব্যবসা হয় পরিচিতি দিয়ে। পাঠক চিনে এ ছেলেকে? কিনবে এর বই? কত কপি চলবে? আমিতো
সাহিত্য সেবা করতে বসিনি। আমার দরকার ব্যবসা।
-তাতো ঠিকই স্যার।
-যা বলেছিলাম বলেছো ওকে।
- না স্যার, বলিনি। আপনি যদি বুঝিয়ে বলতেন।
- তুমি যা করো না। শোন ছেলে কি যেন নাম তোমার? তুমি করে বললাম বলে কিছু মনে করো না আবার।
- না স্যার, ঠিকাছে। আমি তাহসিন আলম।
-শোন আলম, আমাদের ৮/৯ ফর্মার একটা বই ছাপাতে ছাপা বাধাই সব মিলিয়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। তার উপর বিজ্ঞাপন বাবদ আরো বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকার ধাক্কা। অর্থাৎ প্রতি বইতে আমাদের ষাট সত্তর হাজার টাকাতো যায়ই। এখন তুমি বলো তোমার মতো অপরিচিত একটা লেখকের লেখা ছাপিয়ে এতগুলো
টাকা জলে ঢালতে পারি?
-স্যার আপনি যদি পান্ডুলিপিটা একটু দেখতেন।
-ওসব পান্ডুলিপি-টিপি আমি বুঝিনা। আমি বুঝি পাবলিক তোমার বই খাবে কিনা? আমি যা বলি শুনো। ষাট-সত্তর হাজার টাকার মধ্যে তুমি যদি ৫০ হাজার দিতে পারো তবে আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি।
- স্যার আমি এখনো ভার্সিটিতে পড়ি, এত টাকা কোথায় পাবো বলুন।
-তাহলে তো ভাই আমি নাই। তুমি অন্য কোথাও দেখো। দুয়েকটা বইটই বের করো। লোকে চেনুক-জানুক তারপর না হয় এসো আমার কাছে।
তিন
-আপনি তাহসিন আলম?
-জ্বি স্যার।
-অন্য কোথাও চেষ্টা করেননি এটা প্রকাশের।
-সত্যি বলতে স্যার করেছিলাম কিন্তু পারিনি।
-শুনেন আপনার পান্ডুলিপিটা আমি পড়েছি। বেশ লেগেছে আমার কাছে।
-অনেক ধন্যবাদ স্যার।
-তবে একটা সমস্যা হলো আপনারতো কোন পরিচিতি নেই। এক্ষেত্রে যা হয় পরিচিতির অভাবে অনেক ভাল লেখাও মার খেয়ে যায়। আপনি হয়তো জানেন আমরা কেবলমাত্র প্রতিষ্ঠিত লেখকদের বই প্রকাশ করি। দেশের শীর্ষস্থানীয় লেখকদের বই বের হয় আমাদের "অন্যধারা" থেকে। এখন আপনার মতো অপরিচিত লেখকদের বই বের করে এটা
বাজারে কাটতি না হলে এর দায়তো আমাদের প্রকাশনীর উপরও বর্তায়। মিজান কি আপনাকে কিছু বলেছে?
- জ্বি স্যার বলেছে। কিন্তু আমার পক্ষেতো অতটাকা দেয়া সম্ভব না। আমি টিউশনি করে আমার পড়ার খরচ চালাই।
-আর কিছু বলেনি?
- না স্যার।
-শুনেন আমি যা বলবো আপনার ভালোর জন্যই বলবো। আগেইতো বলেছি আমাদের এখান থেকে দেশের শীর্ষস্থানীয় লেখকদের বই বের হয়। যেমন ধরেন আহমেদ ইকবাল হক। উনার নামেই বই চলে। যাই লিখেন মেলাইতেই ৭ম-৮ম মুদ্রণ ছাপাতে হয়। কিন্তু ইদানিং উনি বিভিন্ন কাজে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন লেখালেখির সময়ও পান না ঠিকমতো। ফলে দেখা যায় মেলায় আমরা উনার ৩/৪টার বেশী বই বের করতে পারিনা। অথচ উনার ১০/২০টা বই বের হলেও পাঠক কিনবে লাইন দিয়ে।
-জ্বি স্যার আমি নিজেও পড়ি উনার লেখা।
- ভালো, এখন আমরা উদ্যোগ নিয়েছি আপনার মত তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল লেখকের লেখা কিছুটা ঘষা মাজা করে উনার নামে প্রকাশ করবো। এতে আমাদের তিন পক্ষেরই লাভ।
- এটা কি বলেন স্যার?
-চমকে উঠলেন কেন? চমকে উঠার মতো কি কিছু বলেছি? গত মেলায় উনার যে ছয়টি বই বের হয়েছে এর মধ্যে কেবলমাত্র দুইটি বই উনার নিজের লেখা। বাকী চারটি অন্যের লেখা কেবল প্রকাশিত হয়েছে উনার নামে। কৈ কেউ কি ধরতে পেরেছে কোনটা উনার নিজের কোনটা অন্যের। আপনি নিজে ধরতে পারবেন? শুনেন এখনকার পাঠক বই এর ভিতরে কি আছে এটা জানতে চায় না তারা জানতে চায় প্রচ্ছদে কার নাম আছে?
- স্যার এটা কি করে সম্ভব? আমার প্রথম রচনা। আমি অনেক কষ্ট করে বইটি লিখেছি। এখন এটা যদি অন্যের নামে প্রকাশিত হয় তাহলে কেমন লাগবে বলুন?
- বেচেঁ থাকলে বহু বই লিখার সুযোগ পাবেন। এখন রাজী থাকলে বলুন। আপনি পাবেন ৫০ হাজার। রাজী থাকলে পান্ডুলিপি রেখে মিজানের কাছ থেকে চেক নিয়ে যান আর এটা যে আপনি লিখেছিলেন এটা ভুলে যান।
চার
- ভাই, আহমেদ ইকবাল হক স্যারের নতুন কি বই এসেছে এবার?
- আততয়ীর সাথে কথপোকথন এবার মেলার বেস্ট সেলার। স্যার স্টলে আছেন অটোগ্রাফসহ দিয়ে দিই।
-দিন অটোগ্রাফসহই দিন।
- কি নাম লিখবেন?
- তাহসিন আলম।