"লাইফ অফ পাই" বেঁচে থাকার লড়াইয়ে লিপ্ত এক কিশোরের জীবনের গল্প । যেখানে একদিকে নিজের বেঁচে থাকার লড়াই গভীর সমুদ্রে, অন্যদিকে হিংস্রপ্রাণী বাঘ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার এক প্রাণান্তকর চেষ্টা । এ যেন দুই বিপরীত মেরুতে অবস্থান করা দুই প্রাণী মানুষ এবং বাঘের বেঁচে থাকার এক ভ্রমণ গল্প ।
জীবন খুব অদ্ভুত । মানুষ যেখানে ভাবে তার জীবনের সমাপ্তি হয়ত এখানেই , ঠিক সেখানেই হয়ত নতুন করে শুরু হয় বেঁচে থাকার গল্প । পৃথিবীর নিয়মের এক অদ্ভুত কারণে মানুষ সবকিছু হারিয়েও বেঁচে থাকার সংগ্রামে নতুন করে লিপ্ত হয় । পাই এর পরিবার পশুর ব্যবসা করে । যেখানে মানুষ বেঁচে থাকার জন্যে কিংবা জীবিকার জন্যে বিভিন্ন পেশায় লিপ্ত । সেখানে জীবিকার জন্যে হিংস্রপ্রাণীদের সাথেই পাই এর পরিবারের বেঁচে থাকা এবং জীবন । সেলুলয়েডের পাতায় যেন এ অদ্ভুত মেলবন্ধন প্রাণীদের সাথে মানুষের আবার ঠিক তেমনি এক সাদৃশ্যময় পার্থক্য । আর তা হয়ত মানুষ বলেই সম্ভব হয়েছে ।
একটা সমুদ্রের ঝড় যেখানে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে একটা পরিবারকে , যেখানে বিচ্ছিন্ন কিশোর পাই তার পরিবার থেকে । সেখানেই প্রিয়জনদের হারিয়ে সমুদ্রে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার এক প্রাণান্তকর চেষ্টা । জীবনের প্রতিটা ক্ষণ মৃত্যুর হাতছানি তবু বেঁচে থাকার এক আকুল চেষ্টা । জনমানবহীন সমুদ্রে তার চিৎকার পৌঁছায়না কোন মানুষের কাছে । কোথায় কেউ নেই একটা মানুষ কথা বলার । সেখানেই নৌকায় আশ্রয় নেয়া পাই এর জীবনটা আরও বিভীষিকাময় হয়ে উঠে যখন সেই নৌকাতেই আশ্রয় নেই হিংস্র বাঘ ।একদিকে হিংস্র বাঘ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা , অন্যদিকে সেই হিংস্রপ্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখার এক প্রাণান্তকর চেষ্টা। এ যেন সেলুলয়েডের পাতায় এক অদ্ভুত মেলবন্ধন মানুষ এবং হিংস্রপ্রাণী বাঘের । একটা বাঘের সাথে কিভাবে খাদ্য ভাগাভাগি করে খাওয়া পাই এর সাথে চলতে থাকে ,আবার সেই বাঘের কাছ থেকেই নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা । একাধারে নিজের ভেতর মানবিকতা ও নিজের বেঁচে থাকার জন্যে এক সাহসী চেষ্টা ।
মানুষ ও হিংস্রপ্রাণীর বেঁচে থাকার চেষ্টার এ যেন এক বহিঃপ্রকাশ সেলুলয়েডের পাতায় । অসাধারণ স্ক্রিনপ্লে , অসাধারণ গল্পের উপস্থাপনার সাথে অভিনয়ের মেলবন্ধন । একদিকে স্বজন হারানোর কষ্ট অপরদিকে একজন কিশোরের বেঁচে থাকার লড়াই এবং মানবিকতা । ইয়াং মারটেলের গল্প অবলম্বনে ডেভিড মেগ এর স্ক্রিনপ্লেতে পরিচালক এংলি যেন বাস্তবতায় থেকেও মানবিকতার সংস্পর্শ দেয়ার চেষ্টায় ছিলেন লাইফ অফ পাই ছবিতে । অসাধারণ গ্রফিক্সের কাজ , সমুদের ওপর মাছেদের ঝড় যেন ১২৭ মিনিটের ছবিটিকে আরও প্রাণবন্ত ও ছবিকে যেন আরও বেশি অর্থবহ করে তুলেছে । যেখানে বিপর্যয়ের পর বিপর্যয় , সেখানেই মাছেদের ঝড় সে বিপর্যয়টা কিভাবে একটা কিশোর পাই কিংবা হিংস্র রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্যে যে কি রকম আশীর্বাদ বহে এনেছে তার এক অসাধারণ শৈল্পিক ব্যবহার দেখিয়েছেন পরিচালক এংলি ।
অভিনয় দিয়ে যেন ছাপ রেখে গেছে কিশোর পাই দর্শকের চোখে মানবিকতা এবং বেঁচে থাকার থাকার সংগ্রামের । গল্পকে আরও শক্ত অবস্থানে নিয়ে গেছে যেন পাই এর অভিনয় । ছবির বিভিন্ন দৃশ্যায়নে অভিনয় করেছে সুরজ শর্মা , ইরফান খান , আদিল হোসেনসহ আরও অনেক । পোশাক থেকে শুরু মেকআপ , দৃশ্যায়ন , সংলাপ যেন একই সুতোয় বেঁধেছেন পরিচালক অ্যাং লি ।
এক একটি দৃশ্য যেন মানুষের মনে জাগিয়ে তুলবে কিছু প্রশ্ন । বেঁচে থাকা আসলে কাকে বলে ? মানবিকতা কিংবা পশুত্ব । এ এক অদ্ভুত , তবু যেন মানুষের ভেতর আরেকটা সুন্দর মনের মানুষকে জাগিয়ে তোলার এক প্রচেষ্টা ,আর তার যেন এক সার্থক প্রয়াস লাইফ অফ পাই । চোখ জুড়িয়ে যাবে, কিছু প্রশ্ন জাগবে মনেএবং জীবনের অর্থ কি তার জিজ্ঞাসা জাগবে ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ভ্রমণ বিষয়ক জীবনের গল্প লাইফ অফ পাই ছবির ফ্রেমের মাধ্যমে ।