somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ আনন্দ কুড়ানো

১৭ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘ঈদের আর মাত্র চাইর দিন বাকি। এবারের ঈদেও আমার নতুন জামা কেনন হইব না।’ জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকতে থাকে বাবুল।

রেল স্টেশনের পাশের বস্তির ছোট্ট একটি ঝুপড়ি। চটের দরজা, পলিথিনে ছাওয়া চাল। বাইরে চিৎকার-চেঁচামেচি, হৈ-হুল্লোড়। ভেতরে মা এবং বাবুল মিলে ছোট্ট সংসার।

ঈদের বাকি আছে আর দুই দিন। গত পাঁচ দিন ধরে বাবুলের গায়ে প্রচন্ড জ্বর। বাবুল জ্বরের ঘোরে শুধু একটা কথাই বলছে। ‘ঈদের আর মাত্র চাইর দিন বাকি। এবারের ঈদেও আমার নতুন জামা কেনন হইব না।’

বাবুলের বয়স আট বছর। রেল স্টেশনের আশেপাশের রাস্তায় পড়ে থাকা প্লাস্টিকের বোতল কুড়ায় সে। দিন শেষে মতিন মিয়ার ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করে। দিনে বিশ-ত্রিশ টাকা আয় হয়। বাবুলের মা একটি বাসায় বুয়ার কাজ করে। সকালে যায় সন্ধ্যায় আসে। বাবুলের বাবা ওদের সাথে থাকেনা। বাবার কথা জিজ্ঞেস করলে মা রাগ করে তাই বাবুলও আর বাবার কথা জিজ্ঞেস করে না।

বিকেলের দিকে বাবুলের জ্বর কিছুটা কমে আসে। বাবুলকে দেখতে আসে ওর তিন বন্ধু সোহেল, তোফায়েল ও সাব্বির। ওরা একসাথে প্লাস্টিকের বোতল কুড়ায়। গত পাঁচ দিন বাবুল ওদের সাথে যেতে পারেনি।
‘কিরে বাবুল, তোর জ্বর তো দেখি কইমা গেছে।’ বাবুলের কপালে হাত রেখে বলল সোহেল।
‘হ, অহন একটু ভালা লাগতাছে।’ বলল বাবুল। টানা জ্বরে তার গলার স্বরে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। ‘তা তোরা ঈদের লাইগ্যা নতুন জামা কাপড় কিছু কিনছস?’
‘নাহ! এই বছর আর কেনন যাইব না।’ মাথা নাড়াল সাব্বির।
‘টেকা কিছু জমাইছিলাম কিন্তু এত কম টেকা দিয়া শার্ট-প্যান্ট পাওন যাইব না।’ বলল তোফায়েল।
‘আমি এই চাইর দিন বোতল টোকাইতে যাইতে পারলে ঠিকই টেকা যোগাড় করতে পারতাম কিন্তু জ্বর আইয়া তো সবকিছু ডিশমিশ কইরা দিল।’ বাবুলের কন্ঠে হতাশার সুর। ‘অহন আম্মায় শেষ ভরসা। আম্মায় যদি টেকা দেয় তাইলে স্টেশনের সামনের ফুটপাতের ঐ দোকানটাতে যে লাল ফুলয়ালা একটা শার্ট দেখছিলাম আর ছয়টা পকেটয়ালা যে একটা প্যান্ট দেখছিলাম হেইটা কিনতাম।’ বলতে বলতে বাবুলের ছোট্ট মনটা চলে যায় ফুটপাতের সেই দোকানে।
‘শার্ট ঐ টার দাম তো কইছিল ১২০ টেকা। আর এক টেকাও কমাইবো না।’ সোহেলের কথায় বাস্তবে ফিরে আসে বাবুল।
‘আর প্যান্টের দাম তো কইছিল ১৫০ টেকা। আমার অহনও মনে আছে।’ মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল তোফায়েল।
‘তোর মায়ে কি একলগে অত টেকা যোগাড় করতে পারব?’ প্রশ্ন করলো সাব্বির।
‘দেহি আম্মায় কি কয়।’ বাবুলের মনে তবুও ক্ষীণ একটি আশা।
‘আইচ্ছা, আমরা তাইলে যাই। কাইলকা আবার আমুনে।’ বলেই উঠে পড়ল বাবুলের তিন বন্ধু।

ঈদের দিন, সকালবেলা। রেল স্টেশনের পাশের বস্তির জন্য দিনটা বিশেষ কোন গুরুত্ব বহন করে না। তবে এই দিনে বস্তির শিশুদের আনন্দ উচ্ছলতা অন্যান্য দিন থেকে একটু বেশিই চোখে পড়ে। বস্তির অনেকের ঘরে এই দিন সেমাই রান্না করা হয়। বাবুলদের ঘরেও সেমাই রান্না করা হয়েছে। বস্তির কেউ কেউ নতুন জামা পড়ে ঈদগাতে যাচ্ছে। বাবুল একটু পর পর তার ছেঁড়া শার্ট ও প্যান্টের দিকে তাকাচ্ছে। তার মা একটি ছোট বাটিতে কিছু সেমাই তাকে খেতে দিয়েছে। বাবুল শুধু চামচ দিয়ে বাটির সেমাইগুলো নাড়াচাড়া করতে থাকে কিন্তু মুখে তুলতে ভুলে যায়।

এমন সময় হুড়মুড় করে সোহেল, সাব্বির ও তোফায়েল বাবুলদের ঝুপড়ির ভেতর ঢোকে। তাদের হাতে একটি কাগজের শপিং ব্যাগ তাতে লেখা ‘ঈদ মোবারক’। সোহেল ব্যাগ থেকে একটি লাল ফুলওয়ালা শার্ট ও ছয় পকেটওয়ালা একটি প্যান্ট বের করে বাবুলের হাতে দেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় বাবুল কথা বলতে ভুলে যায়। তার মনে হয়, তার এই বন্ধুরা যাদের সাথে ও প্লাস্টিকের বোতল কুড়াতো আজ ওরা তার জন্য ঈদের আনন্দ কুড়িয়ে নিয়ে এসেছে।
‘আমাগো তিনজনের প্রত্যেকেরই জমানো কিছু টেকা আছিল কিন্তু ঐ টেকা দিয়া তিন জনের জামা কেনন যাইত না। কিন্তু সব টেকা এক জায়গায় করলে এক জনের নতুন শার্ট-প্যান্ট কেনন যায়। হের লাইগ্যা আমরা সবে মিল্লা সবের জমানো টেকা দিয়া তোর পছন্দের শার্ট আর প্যান্ট কিনছি।’ বাবুলের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলল সোহেল।
‘তুই নতুন শার্ট-প্যান্ট পইড়া নে। আমরা একলগে ঈদগাত যামু নামাজ পড়তে।’ সাব্বিরের চোখেও আনন্দ চিকচিক করছে।

রেল স্টেশনের পাশের বস্তির ছোট্ট একটি ঝুপড়ি। চটের দরজা, পলিথিনে ছাওয়া চাল। বাইরে চিৎকার-চেঁচামেচি, হৈ-হুল্লোড়। ভেতরে মা এবং বাবুল মিলে ছোট্ট সংসার। ঈদের আনন্দ এসেছে তাদের সংসারেও।
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×