১. অনাহারী শিশুর হামাগুড়ি দিয়ে খাবারের খোঁজ করা (১৯৯৪)
ফটোগ্রাফারঃ কেভিন কার্টার
ছবিটি ১৯৯৪ সালে সুদানের দুর্ভিক্ষের সময় তোলা। একটি মেয়ে শিশু খাবারের খোঁজে ১ কি.মি. দূরে অবস্থিত জাতিসংঘের ক্যাম্পের দিকে হামাগুড়ি দিয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাটি এতই দূর্বল ছিল যে হেঁটে যাওয়া তো দূরে থাক দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও তার ছিল না। পিছনে একটি শকুন বাচ্চাটির মৃত্যুর অপেক্ষা করছিল। যাতে বাচ্চাটি মারা যাওয়ার সাথে সাথেই শকুনটি নিজের খাবারের চাহিদা মেটাতে পারে।
খাবার সংগ্রহের এই যুদ্ধে কে জয়ী হয়েছিল, শকুন না মানবসন্তান তা জানা যায়নি। কারণ ফটোগ্রাফার ছবিটি তোলার পর পরই স্থানটি ত্যাগ করেন।
ছবিটি তোলার তিন মাস পর কেভিন কার্টার চরম হতাশায় ভুগে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
২. জ্বলন্ত বুদ্ধ ভিক্ষু (১৯৬৩)
ফটোগ্রাফারঃ ম্যালকম ব্রাউনি
১১ই জুন, ১৯৬৩। দক্ষিন ভিয়েতনামের ক্যাথলিকপন্থী সরকারের নিপীড়নের প্রতিবাদ স্বরূপ ব্যস্ত সড়কের মাঝখানে গায়ে আগুন দিয়ে বুদ্ধ ভিক্ষু থিচ কোয়াং ডাক আত্নোৎসর্গ করেন। ভিক্ষু শাসকগোষ্ঠীদের বলেছিলেন ঐতিহ্যবাহী বুদ্ধ পতাকা উত্তোলনের উপর নিষেধাজ্ঞা যাতে তুলে নেয়া হয় এবং খ্রিস্ট ক্যাথলিক ধর্মের মত বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারেও যাতে কোন বাধা দেয়া না হয়।
ভিক্ষু থিচ কোয়াং যখন আগুনে জ্বলছিলেন তখন তিনি একবারের জন্যও হাত-পা ছোঁড়াছুঁড়ি করেননি।
৩. পৃথিবী উদয়, মহাশূন্য থেকে তোলা পৃথিবীর প্রথম ছবি (১৯৬৮)
ফটোগ্রাফারঃ অ্যাপোলো-৮এর ক্রু
পৃথিবীর কবিরা সূর্যোদয়ের রূপ-সৌন্দর্য নিয়ে অনেক কবিতা লিখেছেন। কিন্তু পৃথিবীর বাইরে যদি কোন কবি থাকে তাহলে তাকে অবশ্যই অন্ধকার ফুঁড়ে পৃথিবী উদিত হবার রূপ নিয়ে কবিতা লিখতে হবে।
১৯৬৮ সালের বড়দিন। মহাকাশ যান অ্যাপোলো-৮ তখন চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৫০ মাইল দূরে এবং পৃথিবী থেকে ২,৪০,০০০ মাইল দূরে অবস্থান করছিল। মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর এই অপার সৌন্দর্য দেখে অ্যাপোলো-৮’র ক্রুরা সেটা ফিল্মবন্দী করতে ভুল করেননি।
নাসার মতে এই ছবিটিই মহাশূন্য থেকে তোলা পৃথিবীর প্রথম ছবি।
৪. জ্বলন্ত মেয়েশিশু, যুদ্ধের বীভৎসতা (১৯৭২)
ফটোগ্রাফারঃ নিক আট
১৯৭২ সালের ৮ই জুন। ৯ বছরের মেয়ে ফ্যান থি কিম ফুকের গ্রামে নাপাম বোমা ফেলা হয়। মারা যায় কিমের কয়েকজন খেলার সাথী। আগুন ধরে যায় কিমের শরীরে। কাপড় খুলে ফেলে দিলেও ততোক্ষণে তার চুলে ও পিঠে আগুন ধরে গেছে। সে অবস্থাতেই কাঁদতে কাঁদতে দৌড়াতে থাকে কিম।
১৪ মাস হাসপাতালে থাকার সময় তার শরীরে ১৭টি অস্ত্রোপচার করা হয়।
৫. বিপ্লবী বীর চে গুয়েভারা (১৯৬০)
ফটোগ্রাফারঃ আলবার্ট করদা
বিখ্যাত এই ছবিটি তোলা হয়েছে ৫ই মার্চ, ১৯৬০ সালে কিউবার হাভানায়। আমরা বর্তমানে চে’র যে ছবিটি টি শার্টসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখি সেটি এই ছবি থেকেই ক্রপ করে করা। ছবিটিতে চে’র দৃঢ়চেতা মনোভাব অসাধারণ ভাবে ফুটে উঠেছে যা বিপ্লবের আইকন হিসেবে এখন ব্যবহৃত হয়।
ছবিটি তোলার সময় চে’র বয়স ছিল ৩১ বছর।
শুরু করেছিলাম দুর্ভিক্ষ দিয়ে, শেষ করলাম বিপ্লব দিয়ে।