নৈঃশব্দের ভাষ্যকার: শঙ্খ ঘোষ
নিঃশব্দ, নীরবতা, শূন্যতা প্রতিতী গুলোর জন্ম সৃষ্টির বহু আগেই। কোলাহলপূর্ণ পৃথিবীতেও মানুষ এই নিঃশরেব্দর জগতে ডুব দেয়, কেউবা সেখান থেকেই তুলে আনে বিচিত্র বর্ণের শব্দজাল।‘নতুন শব্দের সৃষ্টি নয়, শব্দের নতুন সৃষ্টিই কবির অভিপ্রায়’- বলে কবিতার জগতে নব্য দ্বার উন্মুক্ত করে গেছেন কবি শঙ্খ ঘোষ। তাঁর কবিতায় নৈঃশব্দের অনন্য রূপায়ণ বিমোহিত করে চিত্ত, তিনি হয়ে ওঠেন নৈঃশব্দের ভাষ্যকার।
শঙ্খের উপলব্ধি অসাধারণ। পুরো পৃথিবীকে, সমগ্র মানুষের ব্যর্থতা আর জীবনের গ্লানির ভারকে যেন তিনি একাই বহন করতে চেয়েছেন।নিজেকে ব্যাপ্ত করেছেন ত্রিকালে, যুগ যুগ ধরে তিনি রয়েছেন পৃথিবীতে।বদলাননি শুধু তিনি-
‘এক শতাব্দীর পরে আরেক শতাব্দী আরো এক
আমি যদি নাও থাকি তবুও আমিই পড়ে থাকি।’
(গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ)
তিনি মনে করতেন ‘আমি’ ও ‘না আমি’ এর মধ্যে যে সহজাত সম্পর্ক তা নতুন নয় বরং অনাদি কাল ধরে প্রকৃতির মধ্যেই ছিলো তার বিস্তৃত প্রকাশ।যে সম্পর্কের প্রকৃত রূপ নীরবতায়। শব্দের অতিচারে, ভাষার বহুল ব্যবহারে এই নীরবতা ক্ষয় প্রাপ্ত হয়েছে, জীর্ণ হয়ে উঠেছে। অপূর্ব এই আদি নীরবতার কাছে তাই তিনি বার বার ফিরে গেছেন।শব্দ তাঁর কাছে জীবন্ত, শব্দকে তিনি বাঁচতে দেখেছেন, মরতে দেখেছেন, শব্দের গতিকে করতে পেরেছেন উপলব্ধি।যখন তিনি শোনেন নিরবিচ্ছিন্ন সেই ধ্বনি-‘আমি আছি, আমি আছি’ যা তার প্রশ্বাসের আবর্তে ধ্বনিত হতে থাকে সবর্ক্ষণ, কেবল তখনই দল বাঁধা শব্দেরা ধীর গতিতে চলে যেতে চায় নীরবতার সীমান্তে। কারণ নীরবতার চেয়ে আশ্চর্য, অদ্ভুত, অর্থবহ কোন ভাষা হতে পারে না। যিনি নৈঃশব্দকে আত্মীকৃত করতে পেরেছেন তিনিই একমাত্র বলতে পেরেছেন-
‘এভাবে নিথর এসে দাঁড়ানো তোমার সামনে
সেই এক বলা।
কেননা নীরব এই শরীরের চেয়ে আরো বড়
কোন ভাষা নেই।’
(শূণ্যের ভিতরে ঢেউ)
শঙ্খ ঘোষ নীরবতার অপূর্ব, অসাধারণ একজন রূপকার।এত সরল অথচ গভীর নিখাদ ভাষ্য অন্য কোথাও পাওয়া দুষ্কর।যথার্থই তিনি নৈঃশব্দের কবি।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৫ রাত ১১:২২