somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি বীরাঙ্গনা, চাই স্বীকৃতি, চাই মর্যাদা

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বাধীন দেশে মানুষ তাকে `পাঞ্জাবীর বউ` বলে কটাক্ষ করে, ছেলেকে ডাকে জারজ সন্তান। পেটের দায়ে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে পণ্য সামগ্রী বিক্রি করে স্বাধীন দেশে প্রতিনিয়ত তিনি এই লাঞ্ছনার মুখোমুখি হচ্ছেন।

তিনি প্রভা রাণী মালাকার। খুব বেশি কিছু আশা নেই তার। নিজের সর্বস্ব বিকিয়ে দিয়ে স্বাধীনতার পথে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখা অসাধারণ সাহসী নারী প্রভা রাণী।

তাই হয়তো এর বদলে সম্মান জোটেনি। জুটেছে লাঞ্ছনা আর টিটকারি। এজন্যই তিনি দৃপ্তকণ্ঠে বলে ওঠেন আমি বীরাঙ্গনা, চাই স্বীকৃতি, চাই সামাজিক মর্যাদা।

তিনি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের মির্জানগর গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় প্রভাবশালীরা স্বামীর রেখে যাওয়া শেষ সম্বল জমির অধিকাংশ দখল করেছে। এখন অবশিষ্ট অংশটুকুও দখলের পাঁয়তারা করছে।

প্রভা রাণী মালাকার যুদ্ধকালীন নির্যাতনের স্মৃতি হাতড়ে বাংলানিউজকে জানান, সঠিক দিন তারিখ মনে নেই তবে বৈশাখ মাসে তার বিয়ে হয় আর শ্রাবণ মাসে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধ শুরু হলে স্বামী কামিনী রাম মালাকার তাকে রেখে চলে যান ভারতে। প্রভা নিরাপত্তার অভাবে চলে যান বাবার বাড়ি পাশ্ববর্তী গ্রাম বিক্রমকলসে।

তার দেড় মাস পর বিক্রমকলস গ্রামের রাজাকার নজির মিয়া ও জহুর মিয়া একদিন সন্ধ্যায় প্রভা রানীকে তার মায়ের কাছ থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী বাদল মাস্টারের বাড়ি।

ওই রাতে বাদল মাস্টারের বাড়িতে অবস্থান নেয়া সকল পাক সেনা কেড়ে নেয় তার সম্ভ্রম। পরদিন সকালে পাকিস্তানি আর্মিরা তাকে ছেড়ে দিলে তিনি আশ্রয় নেন তার বোনের বাড়ি জাঙ্গালহাটি গ্রামে।

কিন্তু সেখানে ২০/২৫ দিন পর রাজাকার কাদির, রইছ, ইন্তাজ, জহুর পুনরায় পেয়ে যায় প্রভার সন্ধান। একদিন রাজাকারেরা তার বোনের বাড়িতে হানা দেয়। নিজেকে রক্ষার জন্য প্রভা ধানের বীজতলার আলের নিচে আশ্রয় নেন। কিন্তু রাজাকাররা প্রভাকে টেনে-হিঁচড়ে বীজতলা থেকে সোনারার দিঘির পাড় পর্যন্ত নিয়ে যায়।

এক সময় রাজাকারেরা প্রভা রাণীকে শমশেরনগর ডাক বাংলোর সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে সারারাত পাকিস্তানি সেনারা পর্যায়ক্রমে পাশবিক নির্যাতন করে তাকে। ভোর রাতে পাক সেনাদের ক্যাম্প থেকে আবারও পালিয়ে বোনের বাড়ি ফিরে আসেন।

প্রভা রাণী জানান, যুদ্ধ শেষে তার স্বামী ভারত থেকে এসে তাকে গ্রহণ করেন। স্বামীর কাছে সবকিছু খুলে বলার পর স্বামী বলেন, তোমার মতো দুই লক্ষ নারী ইজ্জত দিয়েছে দেশের জন্য। তুমিও তাদের একজন। আমার কোন দুঃখ নেই।

১৯৭২ সালের শেষদিকে ছেলে কাজল মালাকারের জন্ম হয়। ছেলেটি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। সে রিক্সা চালায়। ছেলেকে মানুষ ডাকে `জারজ` আর প্রভাকে ডাকে `পাঞ্জাবির বউ` বলে। শুধু তাই নয়, বাড়ির আশেপাশের নিজ ধর্ম ও বর্ণের লোকজন অশ্লীল ভাষায় মা-ছেলেকে কটুক্তি করে।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রভার উপর পাশবিক নির্যাতনকারী নজির, ইন্তাজ, ইদ্রিছ ও রইছ রাজাকার জেল খেটেছে। তবে কারাগার থেকে বের হয়ে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরের মৃত ইদ্রিছ রাজাকার প্রভার স্বামীর উপর মিথ্যা মামলা দিয়ে তার স্বামীকে কারাগারে পাঠিয়েছিল। তার কয়েক বছর পর প্রভার স্বামী মারা যায়।

স্বামী মারা যাওয়ার পর দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খাওয়ার জন্য প্রভা রাণী বেছে নেন ফেরি করার কাজ। নিজের মাথার উপর টুকরি (ঝাঁপি) রেখে গ্রামে গ্রামে তিনি বিক্রি করেন বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী।

বর্তমানে নয় সদস্য বিশিষ্ট পরিবারে একবার খেলে আরেকবার না খেয়ে থাকতে হয় তাদের। পাশাপাশি বসত বাড়ির জায়গা জমি নিয়ে মানিক মালাকার, করুন মালাকার, কৃপেশ মালাকার ও নিতাই মালাকারের সঙ্গে চলছে দ্বন্দ্ব। টাকা পয়সা না থাকায় ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে শংকা তার।

সাংবাদিকদের কাছে তিনি প্রশ্ন করেন, দেশের জন্য সম্ভ্রম দিলাম, রাজাকারদের মামলায় জড়িয়ে কারাভোগ করে স্বামী মারা গেলেন। তবে আমি কেন বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পাবনা, পাব না সামাজিক মর্যাদা?

Click This Link
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সংস্কার না করেই ডক্টর ইউনুসকে বিদায় নিতে হবে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:৫৯



সংস্কার, বিচার ও নির্বাচনের জন্য ডক্টর ইউনুসের সরকার জুন’২৬ পর্যন্ত সময় চেয়েছেন। সেনাপ্রধান ও বিএনপি তাঁদেরকে ডিসেম্বর’২৫ এর বেশী সময় দিতে সম্মত নয়। আওয়ামী বিরোধী আন্দোলনে বিএনপি আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের দরীদ্র সমাজ এখনো ফুটপাতে ঘুমাচ্ছেন

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২৪ শে মে, ২০২৫ রাত ১:৪৪

বেরিয়েছিলাম উত্তরা যাওয়ার উদ্দেশ্যে। মানিক মানিক মিয়া এভিনিউ পার হওয়ার সময়ে, খামারবাড়ির সামনে গোল চত্বরে হঠাৎ চোখ গেলো। চত্বর ঘিরে সারি সারি মানুষ শুয়ে আছেন। গত সরকারের আমলে আমার এলাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসের ক্ষমতার ভারসাম্য এবং পিনাকী গং-এর সংঘবদ্ধ মিথ্যাচার ও সামাজিক প্রতারণা

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৪ শে মে, ২০২৫ ভোর ৫:৪৬


এই পোস্টটি মূলত ঢাবিয়ানের পোস্ট "বিএনপি - জুলাই বিপ্লবের বিশ্বাসঘাতক" এবং জুল ভার্নের পোস্ট "আব তেরা ক্যায়া হোগা কালিয়া!"-এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে লেখা।

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংস্কারের দাবির বিষয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বর্তমান রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার প্রেক্ষাপট এবং প্রত্যাশা......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৪ শে মে, ২০২৫ সকাল ৭:১১

বর্তমান রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার প্রেক্ষাপট এবং প্রত্যাশা......

বিএনপি নেতারা ডক্টর ইউনূসের দেখা করতে সময় চেয়ে এক সপ্তাহ ধরে ঘুরতেছেন। কিন্তু ইনটেরিম প্রধানের শিডিউল- ই পাচ্ছেনা। আর ওদিকে নাহিদ শুনলেন, ডক্টর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওগো ভিনগেরামের নারী, তোরে সোনাল ফুলের বাজু দেবো চুড়ি বেলোয়ারি......

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২৪ শে মে, ২০২৫ সকাল ১১:২৯


সেই ছোটবেলায় আমার বাড়ির কাছেই একটা বুনো ঝোপঝাড়ে ঠাসা জায়গা ছিলো। একটি দুটি পুরনো কবর থাকায় জঙ্গলে ছাওয়া এলাকাটায় দিনে দুপুরে যেতেই গা ছমছম করতো। সেখানে বাস করতো এলাকার শেষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×