somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউঃ “π”

০১ লা মে, ২০১৪ সকাল ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ড্যারেন অ্যারনফস্কি - নামটা শুনলে আমার “Requiem for a dream” এর কথা মনে পড়ে যায়। যেখানে এক অসম্ভব স্বপ্নের পেছনে সবকিছু ত্যাগ করে নিশিগ্রস্থের মতো ছুটে চলা কিছু মোহগ্রস্থ মানুষের স্বপ্নভঙ্গের এক করূণ গল্প বর্ণিত হয়েছে অবিশ্বাস্য ভিন্নতায়। ড্যারেন অ্যারনফস্কি সেখানে কেবল চলচ্চিত্র তৈরী করেন নি। তৈরী করেছেন এক অদ্ভুত আবহ। যার স্পর্ষে দর্শক যে কেবল বিমোহিত হয় তাই নয় বরং এক গভীর আবেগের বশীভূত হয়। আমরাও যেন চলে যাই এক মাদকতাময় ঘোরের মধ্যে। এই ঘোর যেন কাটতেই চায় না।
Black Swan এও একই অবস্থা। সেই সহজ স্বাভাবিক গল্পের মাঝেও যেন অদ্ভুত এক ঘোরের অস্তিত্ব। আমার প্রিয় অভিনেত্রী নাটালী পোর্টম্যানের এর চরিত্র নিনা-র সাথে আমরাও সঙ্গী হই Black Swan হওয়ার সিজোফ্রেনিক কল্পনার সাথে। ড্যারেন অ্যারনফস্কির চিত্রায়িত সিনেমার দৃশ্যগুলো জেন একেকটা ভয়ংকর পরাবাস্তব দুঃস্বপ্ন।
মাঝে মাঝে আমার নিজেরও এমনই লাগে। আমি আমার চারপাশে প্রতিনিয়ত যে বাস্তবতার নির্মম চিত্র দেখতে পাই - তাতে হঠাৎ হঠাৎ মনে হয় আমি কি সত্যিই জেগে আছি, না ভয়াবহ কোন দুঃস্বপ্ন দেখছি? আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। সব কিচু ছেড়ে পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু না। আমার কোথাও যাওয়া হয় না। মমতার অদৃশ্য বাধনে আটকা পড়েছি এই রূঢ় নাগরিক বাস্তবতায়। হায়!

"কিছু বিষাদগ্রস্থ দিন
ছিলো প্রেমিকার চোখে জমা -
আলো নেই, রোদ নেই,
কিছু বিপন্ন বিষ্ময়
ক্ষমাহীণ প্রান্তর জুড়ে
আমাদের বেঁচে থাকা।"


আহ! এই আমার এক সমস্যা। এক কথার মাঝে আরেক কথা চলে আসে। কথা হচ্ছিল মুভি রিভিউ নিয়ে, অথচ যে সিনেমাটা নিয়ে কথা বলবো তার নামই এখনো বলিনি। Requiem for a dream আর Black Swan দেখার পর আমার হাতে এসে পড়লো ড্যারেন অ্যারনফস্কির স্যুরিয়ালিস্টিক মুভি “π”।




হ্যাঁ, সিনেমার নাম “π”। গণিতের পরিভাষায় যাকে একটি বৃত্তের পরিসীমা আর ব্যাসের অনুপাত হিসেবে ধরা হয়। এই “π”-এর মান অসীম পর্যন্ত বের করা যায়। এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই মানের কোন প্যাটার্ণ নাই।



কিন্তু নেই বললে তো হবে না। প্যাটার্ণ ছাড়া কোন কিছু কিভাবে থাকতে পারে? নিশ্চয়ই এর মধ্যে এমন একটা কিছু আছে যা এখনো কেউ বের করতে পারেনি।
ম্যাক্স কোহেন নামে এক অসাধারণ প্রতিভাবান গণিতবিদ উঠে পড়ে লাগলেন এই রহস্যের সমাধান করতে।





কারন সে মনে করে পাই-এর এই অসীম সংখ্যার মধ্যেই লুকিয়ে আছে একটা প্যাটার্ন যা, তাকে স্টক মার্কেটের শেয়ারের দামের ওঠা-নামার সম্পর্কে গুরূত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারবে। এদিকে স্টক মার্কেটের শেয়ারের দামদর কত হতে পারে সে সম্পর্কে আগেই ধারনা নেয়ার জন্য ম্যাক্স তার ইউক্লিড কম্পিউটারের সাহায্য নেয়। তার কম্পিউটার এই জটিল গানিতিক হিসেব কষতে গিয়ে বিগড়ে যায়। তবে শেষ মুহুর্তে কম্পিউটারের হিসেবের ২১৬ সংখ্যার একটি প্রিন্ট আউট বের হয়ে আসে। কিন্তু ইউক্লিড নষ্ট হওয়ার শোকে ম্যাক্স সেই কাগজটিকে নষ্ট করে ফেলে।
পরদিন শেয়ার মার্কেটে গিয়ে সে জানতে পারে, ইউক্লিডের ভবিষ্যতবাণী আশ্চর্য্যজনকভাবে একদম সঠিক ছিল।

তাহলে কি সে যা ভাবছিল তার সবই সত্যি? নাকি এসবি তার মনের ভ্রান্ত ধারণা?
আদৌ ম্যাক্স সেই রহস্যের সমাধান করতে পেরেছিলেন কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর আমি আমার কাছেই রেখে দিলাম। সিনেমাটা দেখলেই এর জবাব পাওয়া যাবে। সিনেমাটি আমাকে ব্যাপক নাড়া দিয়ে যায়। আমি আবারো সেই বাস্তব আর অবাস্তবের মাঝামাঝি এক ঘোরের জালে জড়িয়ে গিয়েছিলাম কিছুদিনের জন্য।
“পাই” সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ম্যাক্স কোহেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শ্যন গালেট। অসাধারণ অভিনয় করেছেন এই লোক।




IMDB তে 7.5 আর Rotten Tomatoes অর্থাৎ কিনা পঁচা টমেটোতে 87% রেটিং থেকে বোঝা যায়, অন্য যারাই এই সিনেমা দেখেছেন তাদের মাথাও ঠিক ছিল না এই সিনেমা দেখার পর। আসলে স্যুরিয়ালিস্টিক মুভির বৈশিষ্ট্যই কিন্তু এরকম। হঠাৎ করে দৃশ্যপটের পরিবর্তন কিংবা পিলে চমকানো কোন ছবি, সাথে রক্তহীম করা গগনবিদারী ব্যাকগ্রাঊন্ড মিউজিক। - সব মিলিয়ে দর্শককে স্তম্ভিত করে দেয়ার এক অনর্থক চেষ্টা। অনেকেই হয়তো এই প্রচেষ্টায় বিরক্ত হবেন।





সিনেমার আসল বিষয়টা ধরতে পারবেন না। তবে এই সিনেমাটা আমার একটা বিশাল উপকার করেছে। কিছুদিন ধরে নানান মানসিক যন্ত্রনায় ছিলাম। একটা জিনিষ নিয়ে অনেক মাথা খাটানোর পরও কিছু বের করে উঠতে পারছিলাম না। এই সিনেমাটা আমাকে এমনভাবে ধাক্কা দিয়ে গেল যে আমার বুদ্ধির যে অংশে মরিচা ধরে গিয়েছিল সেটা ধুয়ে মুছে পরিস্কার হয়ে গেল।
মাত্র ৬০,০০০ ডলারের স্বল্প বাজেটের মুভিটি সম্ভবত অ্যারনফস্কির একটি এক্সপেরিমেন্টাল প্রডাক্ট। কারণ স্বল্প দৈর্ঘ্যের (৮৪ মিনিট) পুরো সিনেমাটিই সাদা কালো। এটি অবশ্য ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। 1998 সালে Sundance Film Festival চাড়াও Independent Spirit Award for Best First screen play এবং Gotham Open Palm Award পান অ্যারনফস্কি এই সিনেমার জন্য। তাছাড়া মোট ৩,২২১,১৫২$ অর্জন করে বক্স অফিসেও এটি বিশাল সাফল্য অর্জন করে।
কোন সিনেমা ভালো লাগলে আমি বরাবরই সেই চলচিত্রের পরিচালকদের জীবন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেয়ার চেষ্টা করি। কেন করি সেটা একটা প্রশ্ন। আসলে আমার মনে একটা প্রশ্ন জেগেছে। প্রশ্নটি হল, একজন চলচিত্র পরিচালক কি জন্ম নেন না গড়ে ওঠেন? বোঝাতে পারলাম না বোধহয়। আসলে আমি জানতে চাই একজন চলচিত্র পরিচালক কি ফিল্ম লাইনে পড়তে পড়তে এই রকম সিনেমার জন্ম দেন নাকি তারা আসলেই প্রতিভাবান?

পুরো নামঃ ড্যারেন অ্যারনফস্কি
জন্মঃ ১২ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ (বয়স –মাত্র ৪৫), ব্রুকলিন, নিউ ইয়র্ক।

সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ

ছোটবেলা থেকেই অ্যারনফস্কি শিল্পমনা ছিলেন। ভালবাসতেন ক্লাসিক চলচিত্র। হাইস্কুলের ( Edward R. Murrow High School ) পর অ্যারনফস্কি হার্ভার্ড ইউনিভারসিটিতে যান চলচিত্র বিষয়ে পড়ালেখা করতে। তার থিসিস ফিল্ম "Supermarket Sweep", তাঁকে বেশ কিছু পুরস্কার এনে দেয়, এমনকি এটি National Student Academy Award এর ফাইনালিস্ট ছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে "Supermarket Sweep"-শ্যন গালেটও অভিনয় করেছেন। এরপর দীর্ঘ পাঁচ বছর অ্যারনফস্কি আর কোন পূর্ণ দৈর্ঘ চলচিত্র বানাননি। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি এই “π” সিনেমার জন্য একটি কনসেপ্ট তৈরি করা শুরু করেন। স্ক্রিপ্টটি বন্ধুদের কাছে যথেষ্ট প্রশংসা পাবার পর তিনি এটা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর সাফল্যের ধারায় আসে “Requiem for a dream”।
ড্যারেন অ্যারনফস্কির একটা কথা আমার খুব মনে ধরেছেঃ

“I think it's important to keep trying new things.”

Learn more from IBDB

Learn more from wikipedia

Learn more from rottentomatoes

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৪ সকাল ১১:০৫
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×