somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নতুন নকিব
আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

দান সদকার গুরুত্ব, পেশাদার ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেয়া, মসজিদে টাকা কালেকশন এবং মাযারে ওরসের নামে দানের প্রসঙ্গে ইসলাম কি বলে?

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশের হাজারও সুসজ্জিত মাযারগুলোর একটি। কিন্তু কথা হচ্ছে, এই যে মাযার বা কবর এবং এর পরিপার্শ্বের সন্নিহিত দৃষ্টিনন্দন ঝকঝকে তকতকে চত্বর - এই পাকাকরণ, সৌন্দর্য্যবর্ধন ইত্যাদিতে ব্যয় করা অর্থের প্রকৃত হকদার তো ছিলেন এই সমাজের নিতান্ত অভাবী, দরিদ্র এবং অসহায় মানুষগুলো। আশ্চর্য্যের বিষয় হচ্ছে, জীবিত অভাবীদের জন্য আমাদের যেন কোনো দায় নেই, দরদ নেই, কর্তব্য নেই। কিছু মানুষ অভাবের কারণে ঠিকমত দু'বেলা দু'মুঠো খেতেও পায় না, দিবাবসানে বাস্তুহীন মানুষের মাথা গোজার ঠাঁই হয় রাস্তার পাশের ফুটপাত; আর এসবের বিপরীতে কবরে মৃত ব্যক্তিকে খুশি করার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। হায় হায়! কি অদ্ভূতুরে এবং উদ্ভট আমাদের চরিত্র! ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

দান সদকার গুরুত্ব, পেশাদার ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেয়া, মসজিদে টাকা কালেকশন এবং মাযারে ওরসের নামে দানের প্রসঙ্গে ইসলাম কি বলে?

দরিদ্র, অসহায় এবং অভাবী ব্যক্তিকে দান করা নিশ্চিতভাবে মহৎ কাজ। দানের বিষয়ে কুরআন হাদিসে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ফরজ ইবাদত হিসেবে সাহেবে নিসাবগণকে যাকাত আদায়ের পাশাপাশি নফল দান সদকার প্রতিও অধিক পরিমানে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এটি মূলতঃ ইসলামের সৌন্দর্য্য। দান সদকার মাধ্যমে সমাজে গরিব ধনী তথা উঁচু নিচুর ভেতরে সৌহার্দ্য সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি হয়। গরিব, অসহায় এবং নিঃস্বদের অভাব অনটন লাঘব হয়। তাদের কষ্টের জীবনে কিছুটা হলেও আনন্দ হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআন ও সুন্নতে রাসূলে অনেক উৎসাহবেঞ্জক বাণী এসেছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:

(مَّن ذَا ٱلَّذِي يُقۡرِضُ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا فَيُضَٰعِفَهُۥ لَهُۥٓ أَضۡعَافٗا كَثِيرَةٗۚ ) [البقرة:245]

কে আছে, যে আল্লহকে উত্তম ঋণ দেবে, ফলে তিনি তার জন্য বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেন। -সূরা আল বাকারা:২৪৫

আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদকা করে - আর আল্লাহ হালাল ব্যতীত অন্য কিছু গ্রহণ করেন না - আল্লাহ তাআলা তা তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করেন এরপর তিনি তা লালন করেন, যেমন তোমাদের কেউ তার ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন করে, এমনকি একসময় সে সদকা পাহাড়তুল্য হয়ে যায়।’ -বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম

যে ব্যক্তি গোপনে সদকা দেয় তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওই সাত জনের মধ্যে গণ্য করেছেন যাদেরকে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের কঠিন দিনে তাঁর আরশের নিচে ছায়া দিবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতিত অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘....এবং এমন ব্যক্তি যে সদকা করল, অতঃপর তা গোপন করল, এমনকি তার বাম হাত জানলো না, তার ডান হাত কি দান করেছে।’ -বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম

কাআব ইবনে উজরা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সদকা পাপ নিভিয়ে দেয় যেভাবে পানি আগুন নেভায়।’ -বর্ণনায় তিরমিযী

নফল সদকার উপকারিতাঃ

নফল সদকা প্রদানের মাধ্যমে নানাবিধ উপকারিতার বিষয়টি প্রমানিত। এর দ্বারা ব্যক্তিগত এবং সামাজিক উভয়বিধ ফায়দা অর্জিত হয়ে থাকে। প্রথমত: ব্যক্তিগত যে উপকারিতাগুলো লাভ হয় তার মধ্যে রয়েছে-

এক. আত্মার পরিশুদ্ধি

পবিত্র কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:

(خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيهِم ) [التوبة:301]

তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করুন। এর মাধ্যমে তাদেরকে আপনি পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবেন। -সূরা তাওবা:১০৩

দুই. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণঃ

সদকা প্রদান নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অভ্যাস তথা জীবনাচারের বিশুদ্ধ অনুসরণ। কেননা তাঁর জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য গুণ ছিল দান-খয়রাত করা। আর তিনি এমনভাবে দান করতেন যারপর আর দারিদ্র্যের ভয় থাকতো না। তিনি বিলাল রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুকে বলেছেন, ‘হে বিলাল, তুমি সদকা করো, আরশের মালিক তোমার সম্পদ কমিয়ে দেবেন এ আশঙ্কা করো না। -বর্ণনায় বাযযার

তিন. সদকার বিনিময়ে রিযকঃ

ব্যক্তি যা ব্যয় করবে আল্লাহ তাআ'লা তাকে এর পরিবর্তে রিযক দেবেন। আর সদকা দ্বারা মানুষের আত্মোন্নতি ঘটে। আল্লাহ তাআলা বলেন :

(وَمَآ أَنفَقۡتُم مِّن شَيۡءٖ فَهُوَ يُخۡلِفُهُۥۖ وَهُوَ خَيۡرُ ٱلرَّٰزِقِينَ ٣٩ )[سبأ:93]

আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দিবেন এবং তিনিই উত্তম রিয্কদাতা। -সূরা সাবা:৩৯

চার. বেচা-কেনার ভুল থেকে সম্পদকে পবিত্র করাঃ

কায়েস ইবনে আবি গারাযা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে আমাদেরকে দালাল বলা হতো। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের পাশ দিয়ে গেলেন এবং এর থেকেও উত্তম নামে আমাদেরকে সম্বোধন করলেন। তিনি বললেন, ‘হে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, নিশ্চয় ব্যবসায় অহেতুক কথা ও কসম এসে যায়, অতঃপর তোমরা তা সদকা দ্বারা মিশ্রিত করো [অর্থাৎ তার কাফফরা প্রদান করো]’। -বর্ণনায় আবু দাউদ

পাঁচ. সদকা সাওয়াব অর্জন ও গুনাহের কাফফারাঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদকা করে - আর আল্লাহ তাআ'লা হালাল ব্যতিত অন্য কিছু গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তাআলা তা তাঁর ডান হাতে গ্রহণ করেন এরপর তিনি তা লালন করেন, যেমন তোমাদের কেউ তার ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন করে, এমনকি একসময় সে সদকা পাহাড়তুল্য হয়ে যায়।’ -বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম

ছয়. সদকায়ে জারিয়ার ফায়দা লাভ হয় মৃত্যুর পরেওঃ

আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন মানুষ মরে যায় তখন তার আমাল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিন প্রকার ব্যতিত। যথা: ১. সদকায়ে জারিয়া অথবা ২. এমন ইলম যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় অথবা ৩. সৎ সন্তান যে তার জন্য দুআ করে।’ -বর্ণনায় মুসলিম

দ্বিতীয়ত: সামাজিক উপকার

এক. যাকাত একটি ফরজ ইবাদত। এই ফরজ বিধানটি যথাযথভাবে আদায় করার ক্ষেত্রে ছোটখাট ত্রুটিবিচ্যুতি হয়ে থাকা স্বাভাবিক। সদকা মূলতঃ যাকাতের সেইসব ত্রুটিবিচ্যুতির ঘাটতি হিসেবে কাজ করতে পারে। অধিক পরিমানে নফল সদকা যাকাতের সামাজিক উন্নয়নের অভিপ্রায়কে পরিপূর্ণতা দান করতে সাহায্য করে।

দুই. সমাজে পারস্পারিক সহায়তা, সহযোগিতা, স্থিতিশীলতা ও মিল-মহব্বত কায়েম করে। ধনী দরিদ্র্যের বৈষম্য নিরসনেও এর কমবেশি ভূমিকা রয়েছে।

ভিক্ষাবৃত্তিকে তাদের পেশা হিসেবে গ্রহণ

আমরা উপরের সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অবগত হলাম যে, সাধারণভাবে নফল দান সদকার অনেক ফজিলত রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে দেখা যায়, বাজার-ঘাটে কিছু লোক ভিক্ষা করে বেড়ান, তারা ভিক্ষাবৃত্তিকে তাদের পেশা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছেন। ইসলাম এই ধরণের ভিক্ষা করার অনুমতি প্রদান করে কি? এছাড়া কিছু লোককে দেখা যায়, মসজিদে নিয়মিত চাঁদা কালেকশন করে থাকেন, এমনটা করা কি বৈধ আছে?

এ প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, যে ব্যক্তির কাছে একদিন চলা যায় এইটুকু পরিমান খাদ্যের ব্যবস্থা রয়েছে, তাকে ইসলাম ভিক্ষাবৃত্তি থেকে নিষেধ করে।

হজরত সাহল ইবনুল হানজালিয়া রা. থেকে বর্ণিত আছে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তির কাছে একদিনের সকাল-সন্ধ্যার খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে, তারপরেও যদি সে ভিক্ষাবৃত্তি করে, তাহলে সে যেন জাহান্নামের আগুন একত্রিত করছে।

ইমাম আজম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ বলেন; এমন ব্যক্তির জন্য ভিক্ষাবৃত্তি করা বৈধ নয়। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে; যে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভিক্ষাবৃত্তি করে, যেমন সে জাহান্নামের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ একত্রিত করছে। এখন তার ইচ্ছা; বেশি একত্রিত করুক বা স্বল্প করুক। -মিশকাতুল মাসাবিহ

অন্যদিকে ইসলাম সম্পদশালী ব্যক্তিদেরকে নির্দেশ প্রদান করেছে, তারা যেন অভাবগ্রস্ত লোকদের অবস্থার খোঁজ খবর রাখেন এবং তাদের প্রয়োজন পূরণের চিন্তা করেন।

অতএব, রাস্তাঘাট এবং হাটে-বাজারে যেসব লোক পেশাদারী হিসাবে ভিক্ষাবৃত্তি করে থাকে, ভিক্ষাবৃত্তিকে তারা পেশা বানিয়েছে, তাদেরকে ভিক্ষা না দিলে কোন পাপ হবে না। তবে যদি আলামত এবং নিদর্শন দ্বারা বুঝা যায় যে, সে সত্যিই অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি, ভিক্ষা একান্ত নিরুপায় হয়েই করছে, এ ছাড়া অন্য কোনো কাজ করার মনোদৈহিক সক্ষমতা তার নেই- তাহলে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী এমন অসহায় অভাবীকে সাহায্য করা উচিত।

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে আদম সন্তান! তুমি ব্যয় করো, আমি তোমার উপর ব্যয় করবো। কুরআনে কারিমের আয়াতেও আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ভিক্ষুককে তাড়িয়ে দিও না। আর যদি কিছু দেয়ার তাওফিক না থাকে, তাহলে নম্রতার সাথে ওজর পেশ করো।

মসজিদে টাকা কালেকশনঃ

মসজিদের নিজের জন্য ভিক্ষা করা বৈধ নয়, অবশ্য কোনো কল্যাণের কাজে চাঁদা উত্তোলনের লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধকরণ হিসেবে ঘোষণা করে দেয়া অথবা নেহায়েত অভাবগ্রস্ত ব্যক্তির জন্য অন্য ব্যক্তি মানুষকে অবহিত করলে এর বৈধতা রয়েছে। কিন্তু মসজিদে এমন চাঁদা উঠানো, যাতে মানুষের ঘাড়ের উপর দিয়ে যেতে হয় এবং নামাজি এবং তেলাওয়াতকারীদের ইবাদতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় অথবা নামাজির সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করতে হয়, এগুলো বৈধ নয়। এই ধরণের প্রয়োজনগুলোতে অর্থ কালেকশন বরং মসজিদের দরজায় করার অবকাশ রয়েছে।

আল্লাহ তাআলা-ই ভালো জানেন। ফতোয়া প্রণয়ন ও গ্রন্থনায় দারুল উলুম দেওবন্দ এর ইফতা বিভাগ কর্তৃক ৩০ এপ্রিল ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ প্রকাশিত মূল ফতোয়ার সহযোগিতা নেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গ মাযার

'মাযার' আরবি শব্দ। এর বাংলা অর্থ- যিয়ারত বা দর্শনীয় স্থান। যে স্থানকে যিয়ারত করা হয়, তার নামই মাযার। মুসলমানের কবর যিয়ারত করা জায়েজ। রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

عن ابن بريدة عن أبيه قال قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- « نهيتكم عن زيارة القبور فزوروها فإن فى زيارتها تذكرة

হযরত ইবনে বুরাইদা রাঃ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- আমি (ইতোপূর্বে) তোমাদের কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন যিয়ারত কর। কেননা, কবর যিয়ারত মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৭০০, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৩০৫, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৫৭১, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৬৯

কিন্তু আমাদের ভালোভাবে বুঝতে হবে যে, উপরোক্ত হাদিসে প্রদত্ত অনুমতি সাপেক্ষে কবর যিয়ারত করা ছাড়া কবর তথা মাযারকে ঘিরে আরও আরও যত কাজ করা হয়, তার সবগুলোই বিদআত। কবরে মোমবাতি, আগরবাতি ইত্যাদি জ্বালানো, মাযারে মান্নত মানা, কবরে গিলাফ পড়ানো, কবরকে গোসল করানো, কবরকে সিজদা করা, কবরকে ঘিরে উরসের আয়োজন করা, মাযারে গিয়ে কবরবাসীর কাছে নিজের কল্যানের জন্য দুআ করা, মৃত ব্যক্তির কাছে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করে দেয়ার আবেদন করা ইত্যাদি কোনোটিরই শরিয়তে সামান্যতম বৈধতা নেই। এসব কাজ করা কোনো অবস্থায় জায়েজ নেই। এছাড়া মাযারে শিন্নি পাকানো, মাযারকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানাদি পালন ইত্যাদি সকল কাজই বিদআত ও শরিয়ত গর্হিত গুনাহের কাজ। এসব কাজের আদৌ কোন ভিত্তি ইসলামে নেই।

মাযার এবং কবরকে ঘিরে উরস করা

স্বীয় কবরকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান করাকে নিষিদ্ধ করে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

عن أبى هريرة قال قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم- « لا تجعلوا بيوتكم قبورا ولا تجعلوا قبرى عيدا وصلوا على فإن صلاتكم تبلغنى حيث كنتم (سنن ابى داود-كتاب المناسك، باب زيارة القبور، رقم الحديث-2044

তোমরা স্বীয় ঘরকে কবর বানিয়ো না। অর্থাৎ, কবরের ন্যায় ইবাদত-নামায, তিলাওয়াত ও যিকির ইত্যাদি বিহীন করো না এবং আমার কবরে উৎসব করো না। অর্থাৎ বার্ষিক, মাসিক বা সাপ্তাহিক কোন আসরের আয়োজন করো না। তবে হ্যাঁ, আমার উপর দরূদ পাঠ কর। নিশ্চয় তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তোমাদের দরূদ (আল্লাহ তায়ালার ফেরেশতাদের দ্বারা) আমার নিকট পৌঁছে দেয়া হয়ে থাকে। -সুনানে আবু দাউদ: হাদিস নং-২০৪৪/৪০

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে- রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ রওযা মুবারকে উৎসব (উরস) পালন করতে বারণ করেছেন। তাহলে অন্য কে আর এমন আছে যার কবরে তা বৈধ হতে পারে?

হাদিসের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা মুনাভী রহঃ এই হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন-

قال المناوي ويؤخذ منه أن اجتماع العامة في بعض أضرحة الأولياء في يوم أو شهر مخصوص من السنة ويقولون هذا يوم مولد الشيخ ويأكلون ويشربون وربما يرقصون فيه منهي عنه شرعا وعلى ولي الشرع ردعهم على ذلك وإنكاره عليهم وإبطاله (عون المعبود-كتاب المناسك باب زيارة القبور-6/23)

এ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, সাধারণ মানুষ যারা বছরের কোন নির্দিষ্ট মাসে বা দিনে উরস ইত্যাদির নামে ওলীদের মাযারে একত্রিত হয় এবং বলে- আজ পীর সাহেবের জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী, সেখানে তারা পানাহারেরও আয়োজন করে, আবার নাচ গানেরও ব্যবস্থা করে থাকে, এ সবগুলিই শরীয়ত পরিপন্থী ও গর্হিত কাজ। এসব কাজ প্রশাসনের প্রতিরোধ করা জরুরী। -আউনুল মা’বুদ-৬/২৩

মাযার ঘিরে বাতি প্রজ্বলন হারাম

عن ابن عباس قال : لعن رسول الله صلى الله عليه و سلم زائرات القبور والمتخذين عليها المساجد والسرج (سنن الترمذى- أبواب الصلاة عن رسول الله صلى الله عليه و سلم ، باب ما جاء في كراهية أن يتخذ على القبر مسجدا-2/136)

“হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত যে, রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশম্পাত করেছেন (বেপর্দা) কবর যিয়ারতকারীনী মহিলাদের উপর, এবং সেসব লোকদের উপর যারা কবরকে মসজিদ বানায় (কবরকে সেজদা করে) এবং সেখানে বাতি প্রজ্জ্বলিত করে। -জামি তিরমীযী-২/১৩৬

উক্ত হাদিসে সুষ্পষ্ট কবরে বাতি প্রজ্জ্বলনকারীর উপর আল্লাহ তায়ালার অভিশম্পাত করেছেন আল্লাহর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

আরেক হাদিসে এসেছে,

عن عائشة رضي الله عنه أن رسول الله صلي الله عليه و سلم قال في مرضه الذي لم يقم منه، لعن الله اليهود والنصارى، اتخذوا قبور أنبيائهم مساجد.

হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগশয্যায়্তযে রোগশয্যা হতে তিনি আর উঠে দাঁড়াননি, এরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলা ইহুদি ও নাসারাদের লা’নত দিয়েছেন্ততারা তাদের নবীর কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে। -বুখারি ও মুসলিম

মাযারে মান্নত করা হারাম

আল্লাহ ছাড়া কারো নামে মান্নত বা কুরবানী করা যায় না। কারণ, মান্নত ও কুরবানী হচ্ছে ইবাদত। আর ইবাদত আল্লাহ তাআ'লা ব্যতিত অন্য কারো উদ্দেশ্যে করা জায়েজ নয়। অধিকন্তু জ্ঞাত থাকা প্রয়োজন যে, মান্নত জায়েজ হলেও এ বিষয়টির প্রতি ইসলামি শরিয়া কাউকে উৎসাহ প্রদান করে না। কিন্তু কেউ যদি কোনো ব্যাপারে মান্নত করে বসে তখন তার উপরে তা আদায় করা ওয়াজিব। মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-

قُلْ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (162) لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ (163) (سورة الأنعام-162-163)

আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কুরবানী এবং আমার জীবন ও আমার মরণ বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ তাআ'লার জন্যই। তাঁর কোন অংশিদার নেই। আমি তা-ই করতে আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল। -সূরা আনআম-১৬২-১৬৩

সূরা কাউসারে মহান রাব্বুর আলামীন বলেন-

فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ

অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী করুন। -সূরা কাউসার-২

প্রার্থনাঃ

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের জন্য দ্বীনের প্রতিটি বিষয়ে সহিহ এবং পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান অর্জন করার তাওফিক দান করুন এবং দ্বীনকে সুন্নাহর আলোকে ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে পালন করা সহজ করে দিন।

সময় নিয়ে লেখাটি পাঠ করার জন্য কৃতজ্ঞতা।

শান্তি বারতা, প্রারম্ভে এবং পরিশেষে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:০৬
১৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভাষা দিবস নিয়ে জেন-জির ভাবনা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ২:৪৬


আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস! বাঙালি তার মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য পাকিস্তান আর্মির অস্ত্রের সামনে দাঁড়িয়েছিল যা অন্যান্য দেশের মানুষের চোখে বিস্ময়কর মনে হতে পারে। আমরা বাঙালিরা সবসময় নিজের মা, মাটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

Good morning friends.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৮:০৫

গুড মর্নিং ফ্রেন্ডস!

আজ মহান 21st February (মুখটা কিঞ্চিৎ ব্যাকা করে)। Never mind bro, আমি আবার 21st February English language use করতে চাই না। Actually উচিৎও না। But আমার অনেক friends... ...বাকিটুকু পড়ুন

শুভ জন্মদিন – ব্লগার মনিরা সুলতানা আপু

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৩৩

আজকে ২১ ফেব্রুয়ারী দিনটা জাতীয় পর্যায়ে যেমন গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন, আবার সামু ব্লগারদের জন্যও এই দিনটি আনন্দের একটি দিন। কারণ এই দিনটি আমাদের অতি প্রিয়, সমাজ সচেতন, চিন্তাশীল, হৃদয়বান... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টমাস্টার গল্পের পোস্টমর্টেম

লিখেছেন রাজীব নুর, ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৩৪



রতন নামের ১২/১৩ বছরের এক মেয়ে হাসতে হাসতে ঘরে প্রবেশ করে। তারপর বলে, দাদাবাবু আমাকে ডেকেছিলে?
রতন, কালই আমি যাচ্ছি।
কোথায় যাচ্ছো দাদাবাবু।
বাড়ি যাচ্ছি।
আবার কবে আসবে?
আর আসবো না।


রবীন্দ্রনাথের জন্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:০৩




একুশে ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে পাশের বাড়ির ফুলের বাগান উজাড় করে দলবেঁধে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়ার সেই দিন ফিরে আর আসবে কি কখনও.....

ভাষা শহীদের প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×