"বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির পিতা: ত্যাগ তিতিক্ষা ও মরণে যিনি ছিলেন তাঁহার সঙ্গিনী, কেন তিনি নন জাতির জননী?"/ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
এক বন্ধূ সেদিন উপরের শ্লোগানটির (দাবির?) কথা জানালো। চলতে ফিরতে এমন কত হাস্যরসের জোগান দেয় বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো- ফলে সবাই মিলে অনেক হাসলাম। কাউকে কোন টিপ্পনী কাটতে বা স্ল্যাং ইউজ করতে হলো না- শুধু ছাত্রলীগের এই দাবিটূই যথেস্ট প্রাণখুলে হাসার জন্য। হাসলাম।
আরো দু এক জায়গায় এ দাবির কথা জানাতে দেখি তারাও হেসে উঠে, এবারের নির্বাচনে নৌকায় সিল মারা ভদ্রলোকরে জানাতে- তিনিও কিছুটা দীর্ঘশ্বাস নিঃসৃত হাসি দিয়ে জানালেন- জানিতো - জানতাম এরা এরকমই। কিন্তু বিএনপি-জামাত? তাদের কিভাবে ভোট দেই- ওরা তো আরো খারাপ!
আরো খারাপ!
বিএনপি। আওয়ামিলীগ।
আওয়ামিলীগ, বিএনপি। কে বেশী খারাপ? অথবা, এটলিস্ট- ও তো এর চেয়ে একটু ভালো! বিএনপি, না আওয়ামিলীগ? হাসিনা, না খালেদা? কে বেশী ভালো? কে বেশী খারাপ?
ক্যালকুলেশনটা এখানেই সবার সীমাবদ্ধ। (কাউরে কাউরে আজকাল এরশাদ চাচার নাম নিতেও দেখি!!)
আওয়ামিলীগ এই ক্ষতি করেছে- ঐ সমস্যা করেছে? ওহ বুঝেছি- আপনি বিএনপি।
বিএনপি'র এই সমস্যা, ঐ সমস্যা- হ্যা হ্যা আপনি তো একটা আস্তই আওয়ামিলীগার।
ঘুরে ফিরে আওয়ামিলীগ আর বিএনপি- বিএনপি আর আওয়ামিলীগ! এরকম একটা বাস্তবতা মাথায় রেখেই এই রাজনৈতিক পোস্ট লেখার খায়েশ হল। আওয়ামিলীগের প্রথম বছরটা আর দুটা মাস পরেই শেষ হবে। এই প্রথম বছরটা কেমন কাটলো? আওয়ামিলীগের? জনগণের?
আওয়ামিলীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। মেলা মেলা ভোট পেয়েছে। বিএনপি’র মুখে চুনকালি পড়েছে এবারের নির্বাচনে। আওয়ামিলীগ এসেছিল দিন বদলের শ্লোগান নিয়ে। ক্ষমতায় এসেই আমরা কেমন দিন বদল দেখছি? বিস্তারিত কিছু বলবো না- যতখানি সংক্ষেপে আলোচনা শেষ করা যায়- সেই চেস্টাই করবো (লম্বা হয়ে গেলেও দোষ দিয়েন না)।
শুরুর চমক ছিল মন্ত্রীসভা, নতুনদের সমন্বয়ে এবং বিএনপি’র আমলের তুলনায় অনেক ছোট আকারের জন্য আসলেই একটা চমক ছিল। কিন্তু এই দশমাসে আশা করি- মন্ত্রীসভার বিভিন্ন মন্ত্রী একের পর এক চমক দেখাতে দেখাতে শুরুর চমকটা মলিন হয়ে গিয়েছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজের পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া, তার পদত্যাগ না ছুটি এনিয়ে নাটক সবমিলিয়ে তো দারুন সব চমক দেখেছে। তবে সবচেয়ে মজার উক্তি ছিল- সাজেদা চৌধুরির- সাংবাদিকদের জানান: "ও তো বাচ্চা একটা ছেলে- কি বলেছে না বলেছে.."। হুম, আমরা জানলাম- সে বাচ্চা ছেলে- তারও ব্যাপক অভিমান হয়- অভিমান করে সবকিছু ছেড়ে ফেলে এভাবে চলে যাওয়াটা তো এক বাচ্চারই কাজ। আমরা অবশ্য প্রশ্ন করিনি যে, এমন একটা বাচ্চাকে দিয়ে মন্ত্রীসভা তৈরি করা জায়েজ কি না? যাক, তাজ বাচ্চা ছেলে- বাকিরা তো আর বাচ্চা নয়! ফলে- বাকি যারা বাচ্চা নয়- মানে বড়, তারা তাদের বড়েমি দেখাতে বেশিদিন নেননি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ঝাঁজ আমরা কিছুদিনের মধ্যে টের পেয়েছি। ছাত্রলীগের দখলদারি, সন্ত্রাস, চাদাবাজি এগুলো নিয়ে যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলো- তখন তিনি প্রায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন: “বিগত আমলে বিএনপি জোট সরকার কি করেছে? ক্ষমতায় গিয়েই তারা আমাদের ছেলেদের কিভাবে নির্যাতন করেছে!…” ইত্যাদি। হুম, সবাই জানি- ২০০১ এ বিএনপি জামাত কি তান্ডবটাই না চালিয়েছিল। বুঝাই যায়- সাহারা খাতুনদের রাগ থাকাটা স্বাভাবিক। আইনমন্ত্রীকে একই বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি স্বভাবসুলভ ডিপ্লোমেটিক ওয়েতে জানান: “যে-ই অপরাধ করুক না কেন তার শাস্তি হবে। কিন্তু এটাও দেখতে হবে যে অভিযোগ উঠছে- তা কতখানি সত্য”।- যথার্থই একজন আইনজ্ঞ ব্যক্তি ব্যরিস্টার শফিক আহমেদ, ফলে তিনি খুবই যৌক্তিক প্রসঙ্গেরই অবতারণা করেছেন বটে। টকেটিভ বাণিজ্যমন্ত্রীর কথা বলার কিছু নেই। কথা পাগল এই মন্ত্রী যে সবদিক দিয়েই ব্যর্থ (কথা ছাড়া) সেটা তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যকলাপে তো মনে হয়- তিনি আমেরিকা ও ভারতের আমলার পিয়ন পর্যন্ত আসলেও তার সাথে মর্যাদা নিয়ে কথা বলতে পারবেন না। বলবেন কি করে- এরা তো যথাক্রমে বিশ্বের ও দক্ষিণ এশিয়ার মোড়ল দেশ। যাহোক- এই ফিরিস্তি অহেতুক না বাড়িয়ে অন্যদিকে দৃষ্টি দেয়া যাক.....
সরকারে বসার পর পরেই সবচেয়ে কঠিন সময় পার করে আওয়ামিলীগ সরাকার বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায়। অনেকেই বলেন- আওয়ামিলীগ দারুন সামাল দিয়েছে। আওয়ামিলীগ আসলেই একটা কঠিন ও জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি দাড়িয়ে ছিল। নির্বাচনের এত অল্প সময়ের মধ্যে না হয়ে ঘটনাটা দুই/তিনবছর পরে ঘটলে বা নির্বাচনে এত বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে কিংবা আওয়ামিলীগের মত অভিজ্ঞ দল না হলে (মানে বিএনপি’র মত দল থাকলে)- নাকি পরিস্থিতিটাই অন্যরকম হয়ে যেত- সরকারই উচ্ছেদ হয়ে যেত! আমিও একই রকম মনে করি- আসলেই দারুন সামলেছে। সেনাকুঞ্জে সেনা অফিসারদের সাথে শেখ হাসিনার মধুর আলাপ- চারিতা শুনে না বলার কোন উপায়ই নাই- অবশ্যই শেখ হাসিনা সমস্ত বিষয়টা দারুনভাবে ট্যাকেল দিয়েছেন। তরুন অফিসারদের গালমন্দ হজম করেছেন তো কি হয়েছে- তাদের তেল দিতে হয়েছে তো কি হয়েছে- প্রধানমন্ত্রী হয়েও জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর করতে হয়েছে তো কি হয়েছে? পরিস্থিতি সামাল দেয়াটাই বড় কথা। তাতে তিনি সম্পূর্ণ সফল। এমনকি- পুরো বিডিআরের বেয়াদব ও খুনী জওয়ানদের সেনা তত্তাবধানে ছেড়ে দিয়েছেন তো কি হয়েছে, সেনা অত্যাচারে একে একে ৪৬ জন বিডিআর খুনী মারা গেছে তো কি হয়েছে, হাজার হাজার বিডিআর নির্যাতনে পঙ্গু হলেও বা কি হয়েছে- পরিবার পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন যোগাযোগহীন বন্দী জীবন যাপন করলেই বা কি হয়েছে। আসল কথা হচ্ছে- পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক কি না? কোন বিদ্রোহ আছে কি না? সরকারের গদি এখন নিরাপদ কি না? তাহলেই হলো। অবশ্যই শেখ হাসিনা দারুন সামলেছেন। এটা নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। অন্য কথায় যাওয়া যাক….
আওয়ামিলীগ স্বপ্ন দেখিয়েছিলো- তারা ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। বিচার? কই শুরুতো হয় না! হবে। হবে। ধৈর্য ধরো বৎস্য - ধীরে ধীরে। সবুরে মেওয়া ফলে। মাঝখানে কিছু তোড়জোর অবশ্য শোনা গিয়েছিল। আইনমন্ত্রী অনেক কথা বলেছেন। জাতিসংঘের সহযোগিতাও নাকি চাওয়া হয়েছে। কেবল বিচারটা শুরু হয়নি। নিন্দুকে অবশ্য বলা শুরু করেছে: “আওয়ামিলীগ কোনদিনই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে না- করতে পারে না। এত সুন্দর ইস্যুকে মরে যেতে দেয়ার মতো বোকা বা অনভিজ্ঞ দল আওয়ামিলীগ নয়”। নিন্দুকের কথায় কান দেয়ার কোন দরকার নেই। দৈর্য ধারণ করাই শ্রেয়- কেননা সবুরে মেওয়া ফলে। আরে, ৩৮ বছর ধৈর্য ধরতে পারলে আরো ২০-৩০ টা বছর কেন পারবো না? সবে তো একটা বছরও গেল না- আরো চারটি বছর পড়েই আছে। বিচার নিশ্চয়ই করবে আওয়ামিলীগ। এবার না হলে এর পরে যখন আওয়ামিলীগ ক্ষমতায় আসবে সেবার নিশ্চয়ই করবে- তা না হলে- তার পরের বার, বা তারও পরের বার., যুদ্ধপারাধের বিচার আওয়ামিলীগই করবে- করবেই, সবাই বলুন ইনশাল্লাহ।
এসব বিচার-টিচার বাদ দেন, এবার দেশের কি অবস্থা সেদিকে দৃষ্টি দেই:
ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের এবার দারুন পারফর্মেন্স। দখলদারিত্ব, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি সবকিছুতেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। শেখ হাসিনা পর্যন্ত সমালোচনামুখর হয়েছিলেন। এই তো মেলা- কত উদার প্রধানমন্ত্রী! উদার না হলে কি আর কেউ নিজেদের সোনার ছেলেদের বিরুদ্ধে বলে! ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামিলীগ-আরো নানা লীগ আর বঙ্গবন্ধু অমুক/তমুক পরিষদ- সবাই উঠে পড়ে লেগেছে- দখলদারিত্ব- সন্ত্রাস- টেণ্ডারবাজি-চাঁদাবাজিতে। সাংসদ, সাংসদ পুত্র, মেয়র- মন্ত্রী, সবাই। ক্যাম্পাস-হল, খেলার মাঠ থেকে শুরু করে শিপ ইয়ার্ড এমনকি পাবলিক টয়লেট পর্যন্ত দখলের নাম থেকে মুক্ত নয়। মেয়র পর্যন্ত টেন্ডারবাজিতে জড়িত। গাছ কেটে সাবাড় করা হয়েছে। অবশ্য আরেকটা খবরও প্রচারিত হয়েছে- সেটা হলো এই সরকার এসে শুরুতেই দখলের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে, অবশ্য নিন্দুকেরা বলে দখল মুক্ত না করলে লীগের সোনার ছেলেরা দখল করবে কি করে? যাক, এসব আর নতুন কি? সবসময়ই হয়, বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলেও ছাত্রদল-যুবদল-শিবিরেরা করেছে, তার আগেও এসব হয়েছে- তার আগেও হয়েছে। ফলে- এসব হবে- এটাই স্বাভাবিক। এসব নিয়ে বলার তেমন কিছু নেই।
তারচেয়ে চলুন দেখি- আওয়ামিলীগ কেমন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জেহাদে নেমেছে। আওয়ামিলীগের স্বপ্ন - সন্ত্রাসমুক্ত বাংলা গড়া। আর, সে স্বপ্ন পূরণে র্যাবের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দুর্ধর্ষ সব সন্ত্রাসীদের নির্মূল করার জন্য র্যাব বাহিনী দারুন এ্যাকটিভ। র্যাপিড একশন ব্যাটিলিয়ন। নামেই পরিচয়। যতসব জঘন্য অপরাধের হোতা, মূর্তিমান আতংক ও বিভীষিকা, অসংখ্য মামলার আসামি- এসব সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে পারলেই তো দেশে শান্তির বন্যা বইবে, দেশ উন্নতির পথে দশধাপ এগুবে। এরা তো দেশের দুষ্ট ক্ষত- এগুলোকে কেটে ফেলে দেয়া দরকার। ফলে- ফেল মেরে। “ক্রসফায়ার”। “বন্দুকযুদ্ধ”, “এনকাউন্টার”। এদেরকে ধরার পরে- বা গ্রেফতারের পরে এরা কিভাবে ক্রসফায়ারে নিহত হয়- এ প্রশ্নের জবাব পাচ্ছেন না? আরে বোকা, উত্তরটা তো খুবই সোজা। র্যাব তো একটা সন্ত্রাসী পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে পারে না- সে চায় সন্ত্রাসের রুটটাই উৎপাটন করতে। ফলে- যাকে ধরে তাকে নিয়ে বের হয় তার সহযোগিদের ধরতে- এমন সময়ই তো সন্ত্রাসী ব্যাটা র্যাবের হাত থেকে পালাতে গিয়ে ক্রসফায়ারে অথবা, পালিয়ে গিয়ে র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে মারা যায়। সোজা হিসাব। আর, সবচেয়ে বড় কথা- এদের তো মরাই উচিৎ। আওয়ামি মন্ত্রী, আওয়ামি সাংসদ তো যথার্থই বলেছেন- ক্রসফায়ারের দরকার আছে- এসব সন্ত্রাসীদের প্রচলিত পদ্ধতিতে বিচার সম্ভব নয়, কেউ সাক্ষী পর্যন্ত দিতে চায় না। বোকার মত আবার প্রশ্ন করে বসেন না যে, সাক্ষী দিতে না চাওয়ার মতো ভয়ের পরিবেশ কেন বিরাজ করছে। কেননা, সকলেই জানে- এই ভয়ের পরিবেশ কাটানোর জন্যই তো ক্রসফায়ার প্রয়োজন। আর, ভুলক্রমে দুএকজন নিরীহ লোকের ক্রসফায়ারে প্রাণ দেয়ার ঘটনার জন্য র্যাব এবং সরকার উভয়ই আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ভুল হয়ে গেলে আর কিই বা করার আছে!
জ্বালানি নিরাপত্তা দরকার। বিদ্যুৎ ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়, ঘন ঘন লোডশেডিং এ জনজীবন বিপর্যস্ত। ফলে উৎপাদন বাড়াতে হবে। সেজন্য দরকার গ্যাস। শিল্প-কারখানার জন্য দরকার গ্যাস। সারের জন্য দরকার গ্যাস। গ্যাসের অভাবে সারকারখানা বন্ধ হয়ে আছে। চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। সুতরাং আওয়ামিলীগ সরকার এ বিষয়ে খুব সচেস্ট। বিগত মিলিটারি তত্তাবধায়ক সরকারের আমলেই মডেল পিএসসি ২০০৮ করা হয়েছিল- দরপত্র আহবান করা হয়েছিল। সে আলোকে সরকার অফশোর গ্যাসব্লক ৫, ১০, ১১ টাল্লো ও কনোকো ফিলিপসের হাতে তুলে দেয়ার আয়োজন সম্পূর্ণ করে ফেলেছে।
:গ্যাস সংকটের কথা বলে আবার রপ্তানীর অপশন কেন রাখা?
:সহজ জবাব, রপ্তানি তো করা তো থার্ড অপশন- প্রথমত পেট্রোবাংলাই তো গ্যাস কেনার জন্য প্রথম দাবিদার, ফলে পেট্রোবাংলাই সব গ্যাস কিনতে পারবে।
:পেট্রোবাংলাই যদি সব গ্যাস পায়ই- তবে রপ্তানির অপশন কেন রাখা?
:রপ্তানির কথা না থাকলে বিদেশি কোম্পানি এখানে গ্যাস তুলতে আসতো না।
:তেমনই যদি হয়- তবে কি বলা যায় না এরা রপ্তানির জন্যই আসছে। সুতরাং গ্যাস রপ্তানি হবেই। বাংলাদেশের চাহিদার বেশি গ্যাস তুললেই সেক্ষেত্রে গ্যাস রপ্তানি করতে পারবে না কি?
নিন্দুকেরা নানা বিভ্রান্তি ছড়ায়। এরা নানা কথা বলে। এরা গ্যাস উত্তোলন চায় না বলেই এরা বাধা দিচ্ছে- এসব প্রশ্ন করছে, এরা আসলে দেশের উন্নয়ন চায় না। সুতরাং- এদের সবকথার জবাব দেয়ার দরকার নেই, গুরুত্ব দেয়ার দরকার নেই- সরাকারের কাজ সরকার করবেই। সেকারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে জানিয়ে দিয়েছেন: যেকোন মূল্যেই গ্যাস তুলবোই। জয়তু শেখ হাসিনা। এই না হলে বাপ কা বেটি!
আরো কত কি আছে! ভারত হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধে এমন সহযোগিতাটা করলো। ভারতের মতো বন্ধু রাষ্ট্র না থাকলে- মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আওয়ামিলীগের এত এত গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কোথায় গিয়ে কাটাতো? কি করতো? ফলে- আমাদের এর প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ না থাকলে কি হয়? খালি খালি লোকে টিপাইমুখ ড্যাম নিয়ে চিল্লাফাল্লা করছে! আরে, ভারতের এই হাইড্রো প্রজেক্টের মাধ্যমে কত কত বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে- সেখান থেকে বন্ধু ভারত বাংলাদেশকেও কিছু দিতে পারে- আর, বাংলাদেশের কিছু লোকজন গাড়লের মত এসবের বিরোধিতা করছে! বাংলাদেশের নানা ক্ষতির ফিরিস্তি আনছে- আরে কি ক্ষতি হবে? ফারাক্কা আর এটা কি এক হলো? সবচেয়ে বড় কথা- ভারত কি এমন কাজ করতে পারে- যাতে বাংলাদেশের কোন ক্ষতি হয়! ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিজে এসে এ কথা বলে গেছেন। আর, শেষ পর্যন্ত যদি ক্ষতি হয়েই যায়- তখন তো আওয়ামিলীগ সরকার আছেই। আলোচনার মাধ্যমে সমস্ত মুশকিল আশান করে দিবে। ফারাক্কার পানি চুক্তি করতে পারলে- নিশ্চয়ই টিপাইমুখ নিয়েও ভবিষ্যতে এমন দশটা চুক্তি করতে পারবে ইনশাল্লাহ। কেবল তার জন্য দরকার- ভারত বিদ্বেষী বিএনপির বদলে আওয়ামিলীগকে বেশী বেশী করে ভোট দেয়া।
এরপরে আসুন টিফা চুক্তিতে। গোটা দুনিয়ার মোড়ল আমেরিকার সাথে বানিজ্য সম্পর্কের উদ্দেশ্যে টিফা চুক্তি করতে পারা বিশেষ সৌভাগ্যের বিষয়ই বটে। সেই ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্র টিফা চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেয়, ২০০৪ সালে বিএনপি-জামাত জোট সরকার স্বাক্ষরের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঐকমত্যে উপনীতও হয়, বেশ কয়েকদফা মার্কিন কর্তাব্যক্তিদের আলোচনাও হয়, ২০০৫ সালে জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র কয়েকটি বিষয় যুক্ত টিফার আরেকটি খসড়া বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে, ফেব্রূয়ারিতে দুদেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনার মাধ্যমে টিফা চুক্তির খসড়া (১৯ টি প্রস্তাবনা ও ৭টি অনুচ্ছেদ সম্বলিত) চুড়ান্ত হয়। কিন্তু জনগণ-বাম প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর আন্দোলন ও ব্যপক প্রতিক্রিয়া, এমনকি ব্যবসায়ি নেতৃবৃন্দরও বিরোধিতায় বিগত সরকার আর সাহস পায়নি অগ্রসর হতে। কিন্তু আওয়ামিলীগ সরকার তো আর বিএনপি’র মতো নড়বড়ে না যে মুক্তাঙ্গন-শহীদ মিনারে দুটো মিছিল হলেই ভয় পাবে, ভয় পেয়ে মার্কিন ওস্তাদদের মনে দুঃখ দিবে। ফলে- এবার ক্ষমতায় এসেই তড়িঘড়ি করে টিফা চুক্তি করার সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলেছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টির সাথে বানিজ্য মন্ত্রী ও সচিবের সফল বৈঠক, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিচার্ড বাউচারের বাংলাদেশ সফর এবং সর্বশেষ গত ১৯ অক্টোবর মার্কিন সহকারী বানিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল জে ডিলানির বাংলাদেশ সফর- সবকিছুর মূলে এই টিফা চুক্তি; যে চুক্তি সম্পাদনের অগ্রগতি সম্পর্কে মরিয়ার্টির বক্তব্য: সবকিছুই সম্পন্ন- কেবল মন্ত্রীসভার অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে- আমাদের বানিজ্য সচিবের বক্তব্য: এটা নিয়ে এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে, আর বানিজ্য মন্ত্রী তারো (পরীক্ষা-নিরীক্ষারও) আগে এই চুক্তির স্বপক্ষে তার ও সরকারের জোরালো অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন। এই না হলে আবার বানিজ্য মন্ত্রী! আর, শুরু থেকেই চুক্তির ব্যাপারে আওয়ামিলীগ খুবই সফলতার সাথে গোপনীয়তা বজায় রাখতে পেরেছে। এবারের চুক্তিতে কি কি থাকছে- যুক্তরাষ্ট্র আর কি কি চাপিয়েছে- তার জানার কোন উপায় নেই। উপায় নেই তো কি হয়েছে- যারা জানার তারা তো জানেই, বাকিদের জানার দরকারই বা কি? আমেরিকার সাথে আমাদের বানিজ্য চুক্তি হতে যাচ্ছে এতেই আমাদের গর্বিত হওয়া উচিৎ। আমরা গর্বিত, আমরা আনন্দিত।
আরো আছে রে ভাই। দিন বদলের গল্প এতো তাড়াতাড়ি কি শেষ হয়? আনন্দের অনেক আছে বাকি। এশিয়ান হাইওয়ের কথাটা শুনেন এবারে। বাংলাদেশ এবারে এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হতে যাচ্ছে। কি মজা, কি মজা। এশিয়ান হাইওয়ের মাধ্যমে এশিয়াজুড়ে ভ্রমণ করা যাবে- বানিজ্যের পথও অবাধ হবে, পরিবহন খরচ অনেক কমে যাবে। বাহ বাহ- কি সুন্দর। কে বলে এটা ভারতের করিডোর, কে বলে এর মাধ্যমে কেবল ভারতকে ট্রানজিট তুলে দেয়া হচ্ছে? ভাইসব- যারা এগুলো বলে তারা তো ভারত বিদ্বেষী, তারা দেশের উন্নয়ন চায় না, তারা দেশের শত্রু। হু হু, তারা দেশের শত্রু। সরাসরি মায়ানমারের রুটটি প্রস্তাবনায় না থাকলেই বা কি হয়েছে- ভারতের সেভেন সিস্টারস হয়ে ঘুরে ঠিকই মায়ানমার যাওয়া যাবে- সব জায়গায় যাওয়া যাবে। ভারত তো আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র - ফলে চিন্তা কি? আমাদের এখানে বড় বড় রাস্তা হবে- ঘাট হবে, ব্রিজ-কালভার্ট হবে, অনেক উন্নয়ন হবে, দেশ বিদেশের পণ্য এখানে আসবে- বাইরে যাবে; আহা! কতই না উন্নয়ন হবে! আমাদের রপ্তানি বানিজ্য না বাড়ুক- আমদানি বানিজ্যতো নিশ্চিত অনেক বাড়বেই। মেলা উন্নয়ন হবে। আরে, বাচ্চালোক- তালিয়া বাজাও- জোরসে তালিয়া বাজও!
দিন বদলের গান তো শেষ হবার নয়। আরো আরো আছে। অনেক আছে, আরে এগুলো তো মোটে শুরু। সোনার বাংলা হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ। কত বলবো? ভারতের সাথে বিপা চুক্তির কথা শুনবেন? হ্যা- এটা একটা বানিজ্য চুক্তি। রাশিয়ার সাথে নিউক্লিয়ার পাওয়ার নিয়ে চুক্তির কথা? হ্যা হ্যা- নিউক্লিয়ার চুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট বসবে- বিদ্যুৎ সমস্যা আর থাকবে না- বিদ্যুতের উপর বাংলাদেশ ভাসতে থাকবে, বাংলাদেশও একদিন পরাশক্তি হয়ে যাবে, ডিজিটাল এটম বোমও তৈরি করে ফেলতে পারে! দুর্ঘটনার ঝুকি? বর্জ্যের সমস্যা? প্ল্যান্ট বসানোর হিউজ খরচ? এগুলো কোন ব্যাপারই না। ডিজিটাল আওয়ামিলীগ সরকার আছে না! ডিজিটালি সব মুশকিল আশান করে ফেলবে।
আরে ভাই, আরো আছে। স্বাস্থ্যনীতি-শিক্ষানীতি হচ্ছে। মজুরি কমিশন না হলেও পে কমিশন হয়েছে। খসড়া নীতিগুলো জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে, শুধু তাই নয়- জনগণের মতামত আহবান করা হয়েছে। এই না হলে গণতন্ত্র! আরে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপধাটিটা কি ভুলে গিয়েছেন? গণতন্ত্রের মানসকন্যা। শিক্ষানীতির খসড়ায় শিক্ষার আর্থিক দায়িত্ব সরকারের বদলে ছাত্রছাত্রীদের ও তাদের পরিবারের ঘাড়ে চাপানোর কথা আছে, অভিভাবকদের স্বচ্ছলতার মাধ্যমে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে, বেসরকারী বিদ্যালয় স্থাপনকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তো কি হয়েছে? অভিভাবকদের টাকা থাকলে সেটা ব্যয় করবে না? গরীবদের ব্যাপারে তো সরকার দেখবেই। সমস্ত ধারার (কিন্ডারগার্টেন- মাদ্রাসা-বাংলা মিডিয়াম- ইংলিশ মিডিয়াম- সরকারী- বেসরাকারী… ইত্যাদি) শিক্ষাব্যবস্থাকে অক্ষুন্ন রাখা হলেও চিন্তা নেই- সায়েন্স-আর্টস-কমার্স এসব ভাগ তুলে দিয়ে শিক্ষাকে একমুখী করা হবে। বাহ বাহ সাধু সাধু। একমুখী করাটাই বড় কথা, তা সে যেভাবেই হোক। শিক্ষাব্যবস্থা হবে সেক্যুলার। কেমন সেক্যুলার? “মসজিদ, মন্দির ও প্যাগোডায় ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত সকল ধর্মের শিশুদেরকে ধর্মীয়জ্ঞান, অক্ষরজ্ঞানসহ আধুনিক শিক্ষা ও নৈতিকতা শিক্ষা প্রদানের কর্মসূচি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অংশ হিসাবে গণ্য করা হবে”। প্রাথমিক পর্যায়েরও আগে- শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা- নৈতিক শিক্ষা? মসজিদ-মন্দির-প্যাগোডায়? উপাসানলয়ে? এর নাম সেক্যুলার শিক্ষা? এমন যারা প্রশ্ন করছেন- বা অবাক হচ্ছেন- তাদের জ্ঞাতার্থে বলতেই হচ্ছে- ভাই খালি খালি বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। জানেন- এই খসড়াটা কারা প্রণয়ন করেছেন? জাফর ইকবাল স্যারের নাম শুনেছেন? কবীর চৌধুরীকে চেনেন? ধর্মান্ধ জামাতেরা তো এখনই এই শিক্ষানীতি বাতিলের দাবি করেছে কেন জানেন? তারা বলছে- নাস্তিকদের শিক্ষানীতি মানি না। আর, আপনারা বলছেন- এটা সেক্যুলার না! আলবত এটা সেক্যুলার। এটা সম্পূর্ণটাই ইহজাগতিক। কেননা- এই ইহজগতেই তো জামাতেরা- ধর্মান্ধরা বসবাস করে। তাদের কথাও তো ভাবতে হবে, মাদ্রাসা শিক্ষার কথা- ধর্মীয় শিক্ষার কথা তো তাই রাখতে হবে।
আর কত বলবো? দিন বদলের তো কেবল শুরু। মাত্র আট মাসের তালিকাই দেখুন কত বড় (তদুপরি এটা একটা আংশিক/অসম্পূর্ণ তালিকা মাত্র), বছর পেরুলে- এবারের মেয়াদ পেরুলে- ২০২০ সাল পর্যন্ত লক্ষমাত্রার মেয়াদ পেরুলে- এই বাংলাদেশের কেমন চেহারা হবে একটু কল্পনা করুন! আজ অনেক হয়েছে- সামনে তো অনেক সময় আছেই- আবার না আরেকদিন আরো অনেক গান শোনানো যাবে- দিন বদলের গান। আজ এ পর্যন্তই থাক। শেষ করার আগে- যারা এত কথা পড়তে পড়তে বোর হয়েছেন- তাদের জন্য আরেকটি কমেডি শুনিয়ে শেষ করছি।
ঘোষক আর জনক নিয়ে কত যে চায়ের টেবিল গরম হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। এটা আওয়ামিলীগের ভালোই জানা। তো এবার ক্ষমতায় এসেই ভাবলো, জনকের পাল্টা ওরা ঘোষক বলবে- এটা তো হতে দেয়া যায় না! সুতরাং- আদালতের রায়: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই স্বাধীনতার ঘোষক। জাতির জনকের, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান নেতার স্বাধীনতার ঘোষক হওয়ার কি দরকার সেটা বোধগম্য না হওয়ায় একটু একটু হাসি পাচ্ছিলো। কিন্তু এক বন্ধু তার এক ভাগনের গল্প শোনাতে সবকিছুর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ধরতে পেরে প্রাণ খুলে হেসেছিলাম।
ভাগ্নেটি তখন কথা শিখছে, দুই/তিন শব্দে বাক্যও তৈরি করতে পারে। বন্ধুর বোনটি মানে ভাগ্নের মা- বাচ্চাটিকে আদর করে করে- অনেক কিছু বাচ্চাটিকে বলতো, বাচ্চাটিও তাতে রেসপন্স করতো: যেমন মা বলতো তুমি রাজকুমার, বাচ্চা: আমি রাজকুমার? মা: হ্যা। মা: তুমি আমার মানিক সোনা, বাচ্চা: আমি মানিক সোনা? মা: হ্যা। মা: তুমি …ইত্যাদি। তো, বন্ধুটি একদিন বাচ্চার সামনেই কাজের ছেলেটিকে বকা দিয়েছিল: তুই একটা ফাজিল। সাথে সাথে বাচ্চার প্রশ্ন: আমি ফাজিল? মামা: না মামা, তুমি না- এ হচ্ছে ফাজিল। কিন্তু ভাগ্নেটি কোনমতেই রাজী হয় না- তার একটা দাবি: না, আমি ফাজিল। যতই মামা বলে তুমি না- ততই ভাগ্নের জেদ বাড়ে। শেষে জোরে জোরে কান্না শুনে আদালত অর্থাৎ মাকে রায় দিতেই হয়: হ্যা বাবা- তুমিই ফাজিল।
সবাইকে ধন্যবাদ।