somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বোকার গল্প

২১ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বোকার গল্প
নাসরিন সুলতানা

[আমার এই গল্পটা অমর একুশে গ্রন্থমেলা- ২০১৩- তে শিশু সাহিত্য হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশ করেছে সিঁড়ি প্রকাশণ। গল্পটা নেওয়ার সময় প্রকাশক হাশিম মিলন বলেছেন, আমার ছাপা-খরচ উঠে গেলে আপনর আর একটা বই ছাপব। কিছু দিন আগে বললেন, খরচ উঠে গিয়েছে, নতুন পান্ডুলিপি দিন। দিলাম। তারও কয়েক দিন পরে বললেন, সব বই বিক্রি হয়ে গিয়েছে, আপনাকে রয়্যালটি দেব এবং নতুন বইটার সাথে বোকার গল্পের দ্বিতীয় মুদ্রণও ২০১৫-র মেলায় থাকবে ইন শা আল্লাহ।
আমার আরো তিনটে বই আছে। কোনো প্রকাশক বই বিক্রির কথা স্বীকার করেননি। হাশিম মিলনের জন্য অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। ]

কাহিনী সংক্ষেপ

আপেল বোকা। তার বিয়ে হয়েছে অভিজাত পরিবারের ভালো একটা মেয়ের সাথে। আপেলের ছোট ভাই ডালিম আর তার ছোট বোন কমলা। এদের দুজনের বিয়ে হয়েছে এমন মানুষের সাথে যারা নিজেকে চালাক মনে করে আসলে বোকা, বড়লোকী দেখায় অথচ গরিব। অনিচ্ছাসত্ত্বেও এই বিয়েগুলো টিকে যায়। এর মধ্যে আছে নানা ধরনের বোকামী, আছে ধৈর্য ও অন্যান্য শিক্ষণীয় বিষয়।


আপেলদের গ্রামের নাম কাঁঠালতলা। সে কাঁঠালতলা প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক এসেছেন তাদের বাড়িতে। তিনি চেয়ারে বসেছেন। আপেলের বাবা আতাউল্লাহ্ ও মা বেদানা বসেছেন চৌকিতে।
প্রধান শিক্ষক : আপেলের জন্মের সময় আপনাদের দুজনের বয়স এতই কম ছিল যে আপনাদের জ্ঞান-বুদ্ধিতে মোটেই পরিপক্কতা আসেনি। সে জন্যই আপেল এত কম বোঝে। বয়সের সাথে সাথে বাচ্চার বুদ্ধি না বাড়লে চিকিৎসা করাতে হয়। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভালো একজন ডাক্তার আছে। আমি তার কার্ড দেব, আপনারা আপেলকে নিয়ে তার কাছে যাবেন। যাওয়ার আগে আমাকে জানিয়ে যাবেন। আমি ফোন করে দেব। ভালো করে দেখবে। টাকা-পয়সা নেবে না।
আতাউল্লাহ্ : যাব, ম্যাডাম, যাব।
বেদানা : আগে তো কেউ এই কথা বলেনায়।
প্রধান শিক্ষক : সবাই তো সব কিছু খেয়াল করে না।
বেদানা : না, আপা, আপনি খুব ভালো। এই কথা বলার জন্য আপনি এই গরিবের বাড়ি আসছেন।
প্রধান শিক্ষক : শিক্ষকের কাছে সব ছাত্রই সমান। ধনী-গরিব বলতে কিছু নেই।
আতাউল্লাহ্ : কাঁঠাল তলা স্কুলের ভাগ্য ভালো যে আপনার মতো একজন হেড মাস্টার এই স্কুলে আসছে।

২.১
ছোট দোকান যেখানে পান, সিগারেট, চা ইত্যাদি পাওয়া যায় সে রকম একটা দোকানের সামনে রাখা টুলে বসে একটা লোক কাচের গ্লাসে করে চা খাচ্ছে। আপেলকে নিয়ে আতাউল্লাহ্ দোকানের সামনে দাঁড়ালেন।
আতাউল্লাহ্ (দোকানিকে) : একটা পান দ্যাও।
দোকানি পান সাজাচ্ছে। টুলের লোকটা কী খাচ্ছে আপেল বুঝতে পারছে না।
আপেল (তার বাবাকে) : আব্বা, উনি কী খায় ?
আতাউল্লাহ্ : চা।
আপেল : আমি চাইতে পারব না, আপনি চান।
আতাউল্লাহ্ দোকানির হাত থেকে পান নিলেন। তিনি ছাড়া অপর দুজন আপেলের দিকে তাকাল। টুলের লোকটা চায়ের দাম দিয়ে চলে গেল।
আতাউল্লাহ্ (দোকানিকে) : অরে এক কাপ চা দ্যাও।
আতাউল্লাহ্ ( আপেলকে) : বস। (টুল দেখিয়ে দিলেন।)
আপেল বসল। আতাউল্লাহ্ দোকানির হাত থেকে চায়ের গ্লাস নিয়ে আর একটা বাড়তি গ্লাসের সাহায্যে চা কিছুটা ঠান্ডা করে আপেলের হাতে দিলেন।

২.২
রিক্শায় আতাউল্লাহ্ আর আপেল ।
আপেল : আব্বা, এটা কী রকম শরবত ?
আতাউল্লাহ্ : শরবত না, বাবা, এটার নাম চা। শহরের লোকেরা খায়। গ্রামের লোকেরা বেশি খায় না।
আপেল : বেশি মজা তো লাগে না। খায় ক্যান ?
আতাউল্লাহ্ : খাইলে শরীর হালকা লাগে, মাথা হালকা লাগে। শহরের মানুষ খুব ব্যস্ত। তাদের অনেক চিন্তা। খাবার-দাবারে ভেজাল। গাড়ির শব্দ, ধোঁয়া, সব কিছু মিলাইয়া তাদের মাথা ভারী হইয়া যায়। চা খাইলে ভালো লাগে।


পুঁটির মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছেন তার মা তপসী।
পুঁটি : স্যার আজকে আমারে বকছে।
তপসী : বকবে না ? কিছুই শিখতে পার না। ক্যামনে যে বিয়া দেব ! বোকা মানুষ যদি ঠান্ডা হয় তার জন্য সবার মায়া লাগে। তুই সারা দিন প্যাচাল পাড় । সবাই রাগ করে । কেউ তোরে পছন্দ করে না।

৪.১
পুঁটির গ্রামের নাম ইলিশপুর। সে ইলিশপুর প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রী। শ্রেণিকক্ষে প্রধান শিক্ষকের চোখ পড়ল তার দিকে। সে একটা কান ভাঁজ করে স্কচ টেপ পেচিয়ে বন্ধ করে রেখেছে।
প্রধান শিক্ষক (পুঁটিকে) : কী ব্যাপার, পুঁটি ? কান বেঁধে রেখেছ কেন ?
পুঁটি (দাঁড়িয়ে) : অংকের স্যার কালকে বলছিলেন, তোমার পড়া এক কান দিয়া ঢোকে, অন্য কান দিয়া বাইর হইয়া যায়। তাই আমি এক কান বন্ধ কইরা রাখছি। এখন আর পড়া বাইর হইয়া যাইতে পারবে না।
প্রধান শিক্ষক : তুমি তার কথা বুঝতে পারনি। সে বলেছে যে তুমি পড়ানোর সময় মন দিয়ে শোন না। তাই মনে রাখতে পার না। অংক করানোর সময় খুব ভালো করে খেয়াল করতে হয়। তা না হলে অংকের নিয়ম শেখা যায় না। অংক তো মুখ¯থ করা যায় না ; মন দিয়ে বুঝতে হয়। ভাসা ভাসা শুনলে মনে থাকে না। এই ভাসা ভাসা ব্যাপারটাকেই সে বলেছে, এক কান দিয়ে ঢোকে, অন্য কান দিয়ে বের হয়ে যায়। বুঝলে ?
পুঁটি : জি, ম্যাডাম।

৪.২
ইলিশপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক তার কক্ষে বসে আছেন। তার সামনের চেয়ারে আছেন তার এক সহকারী শিক্ষক যিনি পুঁটিকে বকেছিলেন।
প্রধান শিক্ষক : আপনি পুঁটিকে বলেছেন, তোমার পড়া এক কান দিয়ে ঢোকে, অন্য কান দিয়ে বের হয়ে যায়। কোনো বাচ্চাকে এই ধরনের কথা বলা ঠিক না।
শিক্ষক : কিচ্ছু পারে না, ম্যাডাম।
প্রধান শিক্ষক : না পারুক। এক বছর শিশু মনোবিজ্ঞান পড়েছেন না ? চাকরির কিছু নিয়ম-কানুন আছে না ? শিশুকে কখনোই নিরুৎসাহিত করা যাবে না। ওরা তো আপনার কাছে শিখতে এসেছে। আপনার যত কষ্টই হোক ওদেরকে শিখতে সাহায্য করবেন। সবার মেধা এক রকম হয় না। ধৈর্য না থাকলে শিশুদের সাথে কাজ করা যায় না। আমাদের যে নিয়ম আছে বাচ্চাদের মারা যাবে না, ধমক দেওয়া যাবে না, কোনোভাবে কষ্ট দেওয়া যাবে না আপনি কি মনে করেন এগুলো ভুল ? যারা এই কথাগুলো বলছেন তাদের চেয়ে আপনি-আমি বেশি বুঝি ?
শিক্ষক : না, ম্যাডাম।
প্রধান শিক্ষক : শিক্ষকতা কোনো চাকরি নয় ; পেশা। পেশা মানে তো জানেন। পেশাজীবীদের কিছু দায়-দায়িত্ব থাকে। মানুষের সেবায় তারা নিবেদিত। বেতন হিসেবে তারা যে টাকাটা নিয়ে থাকে সেটা তাদের দেওয়া সেবার তুলনায় কিছুই না।


কাঁঠাল তলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক তার কক্ষে বসে আছেন। তার সামনের চেয়ারে বসেছেন আপেলের বাবা আতাউল্লাহ্।
আতাউল্লাহ্ : ম্যাডাম, আপেলের বয়সী ছেলেরা কলেজে পড়ে। ওর ছোট ভাই ডালিম ক্লাস টেনে, ছোট বোন কমলা সেভেনে পড়ে। আপেল আর প্রাইমারিতে পড়তে চায় না। সে বলে যে এবার যদি তারে হাই স্কুলে ভর্তি করান না হয় তাহলে সে আর স্কুলে আসবে না। আপনি ওরে একটা পাসের কাগজ দেন।
প্রধান শিক্ষক : এখন আর সেই আগের দিন নেই। স্কুল থেকে সার্টিফিকেট দেওয়া যায় না। সার্টিফিকেট আসে অফিস থেকে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আর হাই স্কুলের হেড স্যারের সাথে ওর বিষয়টা নিয়ে আমি কথা বলব। দেখি, ওকে হাই স্কুলে পড়ান যায় কিনা।
আতাউল্লাহ্ : কী করব, ম্যাডাম ? কত দিন ডাক্তার দেখাইলাম, কোনো কাজ হইল না।
প্রধান শিক্ষক : বুঝতে পারছি না ডাক্তারের কথা ঠিকমতো মানা হয়েছিল কিনা। আপনাকে আমি বলেছিলাম, এইসব বাচ্চাদের জন্য আলাদা স্কুল আছে। সেখানে তো দিলেন না। প্রতি দিনই ওকে পড়া জিজ্ঞেস করা হত। পড়া ধরার একটা নিয়ম আছে। শিক্ষক সবার উদ্দেশে প্রশ্ন করবেন। প্রশ্নের জবাব যে দিতে পারবে সে হাত তুলবে। আপেল সঠিক জবাব দিতে না পারলেও হাত তোলে। আমরা তাতে বিরক্ত হইনি বরং ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছি। ছোট ছোট সহপাঠীরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে। আপেল যেদিন আসে না সেদিন আমরা ওদেরকে উপদেশ দিই। আপেলকে নিয়ে হাসলে ওর মনে কষ্ট লাগবে, ও তোমাদের সাথে মিশবে না, তোমাদেরকে ভালোবাসবে না, স্কুলে আসার উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারে, পড়া দেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে, হিং¯্র স্বভাবের হয়ে যেতে পারে ইত্যাদি।
আতাউল্লাহ্ : আপনারা অনেক চেষ্টা করচেন, ম্যাডাম, তা আমি সব সময় বলি।


হাই স্কুলের শ্রেনিকক্ষ। আপেল স্কচ টেপ দিয়ে একটা চোখ বন্ধ করে রেখেছে। শিক্ষক সেটা দেখলেন।
শিক্ষক : আপেল, তোমার চোখ বন্ধ করে রেখেছ কেন ?
আপেল : কালকে হেড স্যার বলছিলেন ধনী-গরিব সবাইকে এক চোখে দেখতে।
শিক্ষক : এক চোখে দেখার অর্থ তুমি যা বুঝেছ তা নয়। মানুষ হিসেবে ধনী-গরীব সবাই সমান। ধনীকে সম্মান করবে, গরীবকে অসম্মান করবে এটা ঠিক না। এক চোখে দেখা মানে সবাইকে সমানভাবে সম্মান করা। বুঝতে পেরেছ ?
আপেল : জি, ম্যাডাম।
শিক্ষক : হ্যাঁ, তোমার দেখাটা যেন এক রকম হয়।


হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তার কক্ষে বসে আছেন। তার সামনের চেয়ারে আপেলের বাবা আতাউল্লাহ্।
প্রধান শিক্ষক : সিক্সের ফাইনাল পরীক্ষায় পর পর তিন বছর ফেল করল আপেল। এই ছেলে আর স্কুলে রাখা সম্ভবপর নয়। ক্লাসের ছেলে-মেয়েরা ওকে নিয়ে হাসি-তামাসা করে। এতে দুষ্ট ছেলেদের প্রভাবে ভালো ছেলেরাও দুষ্ট হয়ে যায়। এ অব¯থা আমরা চাই না। এ ধরনের ছেলে-মেয়েদের জন্য আলাদা স্কুল আছে। সেখানে তাদের দিকে বিশেষ নজর রাখা হয়। আপনি চেষ্টা করে দেখুন সেখানে দিতে পারেন কিনা।
আতাউল্লাহ্ : আমি গরিব মানুষ। আমি আর কিছুই পারব না।
প্রধান শিক্ষক : প্রথম থেকেই আপেলের প্রতি আমাদের বাড়তি নজর ছিল। এই ছেলেটা কম বোঝে। পড়াশোনায় সে যাতে পিছিয়ে না পড়ে সে দিকে লক্ষ রাখা আমাদের দায়িত্ব।
আতাউল্লাহ্ : আমি আপনাদের দোষ দিই না, স্যার।


আপেলদের পরিবারের সবাই এক জায়গায় বসে আছেন।
আতাউল্লাহ্ (আপেলকে) : আর স্কুলে যাওয়ার দরকার নাই। একটা বই তিন বছর পইড়াও পাস করতে পারিস নাই। মনে করবি পড়াশোনা তোর ভাগ্যে নাই। সবার ভাগ্যে সব কিছু থাকে না।
আপেল : আমিও আর স্কুলে যাইতে চাই না। আমি ওদের বড় ভাই এটা বলতে আমি ওদের নিষেধ করছিলাম কিন্তু ওরা আমার কথা রাখে নাই।
কমলা (আপেলকে) : (রেগে) বল কী তুমি ? আমরা বলতে যাব কেন ? এই গ্রামের ছেলে-মেয়েরা তোমারে চেনে না ? সব ক্লাসেই তোমার ক্লাসমেট আছে। নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপাইতে চাও ক্যান ?
ডালিম : অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর ব্যাপারডা সবাই বোজে।
বেদানা : (ডালিম আর কমলাকে) : (ধমক দিয়ে) চুপ কর ! আপেল যে তোদের বড় ভাই সেটা কি তোরা ভুলে গেলি ? আমি বাইচা থাকতে সেডা হইতে পারবে না। তোদের আপন ভাই, তারে কষ্ট দিতে তোদের একটুও খারাপ লাগে না ?
ওরা চুপ হয়ে গেল।

৯.১
আতাউল্লাহ্ তার ঘরের সামনের বারান্দায় বসে পাশের গ্রামের চান মিয়ার সাথে কথা বলছেন। পেশায় চান মিয়া ঘটক। পান একটু বেশি খান।
আতাউল্লাহ্ : ডালিম আইএ পাস করছে। অনেক ধনী ঘরের ছেলে-মেয়েরাও পাস করতে পারেনায়। কোনো দিন একটা প্রাইভেটও পড়েনায়। পেট ভইরা খাইতে পারেনায়। কত অভাব। তবুও পাস করল কিন্তু সমস্যা হইছে এখন। ভর্তি করার টাকা নাই।

৯.২
ঘরের ভেতর থেকে সামনের বারান্দায় আসল ডালিম, তার বাবা আর চান মিয়ার কাছে।
ডালিম : আব্বা, আমার ভর্তির জন্য কারো কাছে হাত পাতবেন না। আমি আর পড়াশোনা করব না।
আতাউল্লাহ্ : তাহলে কী করবি ?
ডালিম : ঢাকায় গিয়া চাকরি করব।
আতাউল্লাহ্ : চাকরি ? কে দেবে তোরে চাকরি ?
ডালিম : ছোট-খাটো চাকরির জন্য মানুষ লাগে না। নিজেই যোগাড় কইরা নেওয়া যায়।
ডালিম চলে গেল। তারা আবার কথা শুরু করলেন।
চান মিয়া : আমার খোঁজে একটা ভালো মেয়ে আছে। ডালিমের জন্য আনো। পড়াশোনার খরচ তারাই দিবে।
আতাউল্লাহ্ : আমি গরিব হইতে পারি কিন্তু আমার কিছু নীতি আছে।
চান মিয়া : আমি খারাপ কইলাম কী ?
আতাউল্লাহ্ : এক নাম্বার কথা হচ্ছে, পড়াশুনার জন্য ছেলে বিক্রি করব অন্যের কাছে সে ছেলে কোনো দিন মাথা উচা কইরা কথা বলতে পারবে না। দুই নাম্বার কথা হচ্ছে, ঘরে বড় মেয়ে থাকতে ছেলের বিয়া হইবে না। তিন নাম্বার কথা হচ্ছে, বড় ছেলের আগে ছোট ছেলেকে বিয়া করাব না। চার নাম্বার কথা হচ্ছে, এতটুকু ছেলে আমি বিয়া করাব না।
চান মিয়া : আমি বলছি পড়াশুনার খরচের জন্য।
আতাউল্লাহ্ : আমার পড়াশুনার দরকার নাই। আমি গরিব মানুষ। আমার সংসারে একজন কামাই করার মানুষ দরকার। আমার মা-বাবা আমারে অল্প বয়সে বিয়া করাইয়া ভুল করছে। সেই ভুল আমি করব না।

১০
কমলাকে বরপক্ষ দেখতে এসেছেন। আতাউল্লাহ্, চান মিয়া, আপেল, ডালিম আরো তিন জন বয়স্ক লোক বসে আছেন। কমলা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।
প্রথম লোক : মা, একটু ঠিকানাটা লেখ তো।
কমলা লিখল।
দ্বিতীয় লোক : একটু কোরান শরীফ পইরা শুনাবা ?
কমলা : জি।
তৃতীয় লোক : যাও, ভেতর থেকে কোরান শরীফ নিয়া আস।
আতাউল্লাহ্ (ডালিমকে) : তুই যা।
ডালিম উঠল।
তৃতীয় লোক : না, না, মেয়ে নিজেই যাইবে।
কমলা গেল।

১১.১
আপেল নদীর পাড়ে মন খারাপ করে বসে আছে। পানির ¯্রােত আর কচুরিপানার বয়ে চলার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুই ভালো লাগে না তার।

১১.২
বেদানা : আপেলের কোনো কাম নাই। সে সারা দিন মন খারাপ কইরা এখানে সেখানে বইসা থাকে। আমার ভালো লাগে না। কখন কী কইরা বসে তার কোনো ঠিক আছে ? ওরে কোনো চাকরি-বাকরি দেওয়া যায় না ?
আতাউল্লাহ্ : একটা হোটেলে দিতে পারি। মালিকের সাথে কথাও কইছি। দেখি, ও রাজি হয় কিনা।
বেদানা : ও রাজি হইবে। খুশিই হইবে। ডালিম মাসে মাসে টাকা পাডায়। মাজে মাজে বাড়ি আসে সবার সাথে দেখা করার জন্য। তখন অনেক আনন্দ হয়। এগুলা ও বোজে না ?

১২
কমলা নতুন বউ সেজে বসে আছে। ঘরটা ফুলের ঝালর দিয়ে সাজানো। তার স্বামী গোলাপ এসে ঢুকল।
গোলাপ : (মূর্খদের মতো টেনে টেনে) আচ্ছালা-মালাইকোম।
কমলা গোলাপের দিকে তাকাল। তার মুখে শিক্ষিত মানুষের কোনো চেহারা নেই। কমলার চোখের পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল।

১৩
আপেলদের সামনের রুমে চান মিয়া বসে আছেন। আপেল তার সম্মুখ থেকে যাচ্ছিল।
চান মিয়া : আপেল, তোমার জন্য একটা বিয়ার প্রস্তাব আনছি।
আপেল : আপনে আব্বার সাথে কথা বলেন।
চান মিয়া : বলছি। সে রাজি হইছে।
আপেল : আমার কোনো আপত্তি নাই। আব্বা যা বলবে তাই হইবে।
চান মিয়া (মনে মনে) : বিয়ায় রাজি থাকলে কী কইতে হয় তাও দেখছি তুমি জানো।

১৪
আপেল বিয়ে করতে যাচ্ছে। বেদানা আর কমলা বর যাত্রী বিদায় দিচ্ছেন।
বেদানা (আপেলকে) : কথা খুব কম বলবি। কোনোভাবে যেন বুঝতে না পারে যে তোর বুদ্ধি একটু কম।

১৫
আপেলের বউ এসেছে বাড়িতে। গ্রামের মহিলারা তাকে দেখতে এসেছেন। নতুন বউ ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। তার সামনে বেদানা আর গ্রামের মহিলারা।
বেদানা : আমার বৌমার মা’র নাম দোয়েল। বাংলাদেশের জাতীয় পাখি। পাখির মতো মেয়ে।
সবাই হাসল।

১৬.১
দোয়েলদের বাড়িতে-
দোয়েল : তুমি কথা বল না কেন ? কোনো কারণে কি তোমার মন খারাপ ?
আপেল : না।
দোয়েল : তাহলে তুমি এ রকম চুপ কইরা থাক কেন ? পুকুর পাড়ে আব্বা একা বইসা আছে। যাও, তার সাথে গিয়া কথা-বার্তা বল।
আপেল : না।
দোয়েল : সারা দিন ঘরের কোনায় বইসা থাক, লজ্জা লাগে না ?
আপেল : না।
দোয়েল : কী না না করছ ? আমার তো লজ্জা লাগে। তার একটা ছেলে নাই। তুমি তার একমাত্র জামাই। তুমি যদি তার সাথে কথা না বল তার দুঃখ লাগে না ?
আপেল : আচ্ছা, যাই।

১৬.২
পুকুর পাড়। শান বাঁধানো ঘাটে দোয়েলের বাবা ময়ূর আলি বসে আছেন। মাছ খাবার খাচ্ছে। তিনি মুগ্ধ হয়ে মাছের উল্লাস দেখছেন। আপেল তার পেছনে বসা।
আপেল : আব্বা!
ময়ূর আলি : (খুব খুশি হয়ে আপেলের দিকে তাকালেন) বল, বাবা।
আপেল : আপনে বিয়া করচেন ?
ময়ূর আলির মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেল। তিনি মুখটা ফিরিয়ে নিলেন।
ময়ূর আলি : (মনে মনে) কেমন ছেলের কাছে মেয়ের বিয়া দিলাম ?
আপেল : এত বড় পুকুর কাটলেন, মাটি করলেন কী ?
ময়ূর আলি : খাইচি।
আপেল : এত মাটি ! কেমনে খাইলেন ?
ময়ূর আলি : অর্ধেক তোমার বাবায় খাইচে তোমারে জন্ম দিয়া, অর্ধেক আমি খাইচি তোমার কাছে মেয়ের বিয়া দিয়া।
আপেল : আমার আব্বারে আপনি আগেই চিনতেন ?
ময়ূর আলি কোনো কিছু না বলে উঠে গেলেন।

১৬.৩
দোয়েলের বাবা ময়ূর আলি ও দোয়েলের মা ময়না তাদের ঘরে বসে কথা বলছেন-
ময়ূর আলি : এ ছেলের কাছে আমি মেয়ে দেব না।
ময়না : মেয়ে দেওয়া কি বাকি আছে নাকি ?
ময়ূর আলি : ঐ পর্যন্তই শেষ। আর না। আমার একটা মেয়ে। আমি ভালো জাগায় দেব।
ময়না : ভালো জাগায় আগে দেননায় ক্যান ? বিয়া দেওয়া মেয়ে ভালো জাগায় দেওয়া যায় ?
ময়ূর আলি : আমি এখানে দেব না।
ময়না : আমি দেব। মেয়ে আপনার একার না। আপনে আগে দিছেন। এখন আমি দেব।
ময়ূর আলি : আমি তো ভুল করচি।
ময়না : একটা ভুল সারতে গিয়া আর একটা ভুল আমি করতে চাই না। ছেলের স্বভাব-চরিত্র তো ভালো। বুঝ-ব্যব¯থা একটু কম। আল্লার ইচ্ছায় আমাদের দোয়েল সব কিছু ঠিক রাখতে পারবে। আমাদের সব কিছুই তো অর। আর তো কেউ নাই। সমস্যা বেশি হইলে দোয়েল নিজেই বলত।
ময়ূর আলি : ও আর কী বলবে ? স্বামীর দোষ কারো চোখে পড়ে ?
ময়না : এই তো আসল কথা। বউর দোষ সবার চোখে পড়ে।
ময়ূর আলি : কী কও তুমি ?
ময়না : এত অল্পতেই মাথা গরম কইরেন না। বিয়ার আগে তো বলতেন আমাদের কিচ্ছু দরকার নাই। দরকার একটা ভদ্র ছেলে, একটা চরিত্রবান ছেলে। তা তো পাইছেন। এখন আর কোনো কথা নাই।

১৬.৪
পাশের কক্ষ থেকে দোয়েল তার মা-বাবার সব কথা শুনে ফেলল। বালিশে মুখ লুকিয়ে সে কাঁদতে লাগল।

১৭
পুঁটিকে দেখতে এসেছেন আতাউল্লাহ্, ময়ূর আলি ও চান মিয়া। পুঁটি মাথায় শাড়ি দিয়ে বসে আছে। তার পক্ষ থেকে আরো দুজন লোক আছেন। তারা দুজন পুঁটির দুপাশের চেয়ারে বসেছেন আর মেহমান তিনজন তাদের বিপরীত দিকের চেয়ারে।
ময়ূর আলি : তোমার নাম কী, মা ?
পুঁটি : পুটি।
আতাউল্লাহ্ : (হেসে) এক বৌর নাম দোয়েল, এক বৌর নাম পুটি।
চান মিয়া (আতাউল্লাহকে) : তোমরা তো সবাই ফল। তোমার নাম আতাউল্লাহ্, তোমার কবিলার নাম বেদানা, ছেলে-মেয়েদের নাম আপেল, ডালিম, কমলা।
আতাউল্লাহ্ : তা তো আমার এই বেয়াইর ঘরেও আচে।
চান মিয়া : বেয়াইর নাম তো ময়ূর আলি, বেয়াইনের নাম কী ?
ময়ূর আলি : ময়না।
চান মিয়া : এই ঘরের সবাই মাছ নাকি ? (পুঁটিকে) তোমার মা’র নাম কী, মা ?
পুঁটি : তপসী বেগম।
পুঁটি ছাড়া সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। পুঁটি মাথা নিচু করে নিঃশব্দে হাসল।

১৮
পুঁটি শ্বশুর বাড়ি যাবার আগে-
পুঁটির মা (পুঁটিকে) : কারো লগে চটাং পটাং কথা কবি না। কথা কবি একদম কোকিল কণ্ঠে। শরম-শরম করবি। এমনভাবে চলবি যেন মনে হয় তুই খুব ধনীর মেয়ে। উঁচু জাগায় বসবি।

১৯
ডালিম মশারির মধ্যে বসে তোষকের নিচে মশারি ঢুকিয়ে দিল। পুঁটি কক্ষে ঢুকল।
ডালিম (পুঁটিকে) : আসো।
পুঁটি : কোথায় ?
ডালিম : বিছানায়।
পুঁটি খাটের চার পাশ ঘুরে আসল।
পুঁটি : দরজা কই ?
ডালিম : কিসের দরজা ?
পুঁটি : বিছানায় ওঠার দরজা ?
ডালিম : (মশারি উঁচু করে ধরে) দুষ্ট মেয়ে ! এই ন্যাও তোমার দরজা।
পুঁটি চৌকিতে উঠল। ডালিম বুঝতে পারল না যে পুঁটি মোটেই দুষ্টুমি করেনি।

২০.১
ডালিম পুঁটিকে খুঁজছে। কোথাও পাচ্ছে না।
ডালিম : (ডাক দিল) পুটি !
পুঁটি : (কোকিল যেভাবে ডাকে ঠিক সেভাবেই সাড়া দিল) কু-উ-উ !
পুঁটি আলমারির ওপর বসে আছে। ডালিম তাকিয়ে দেখল।
ডালিম : (অবাক চোখে) এ কী ? ওখানে উঠছ ক্যান ?
পুঁটি মিট মিট করে হাসছে।
ডালিম : নামো।
পুঁটি জানালার গ্রিলে পা দিয়ে নামল।
ডালিম : ব্যাপারটা কী ? বল তো !
পুঁটি : মা আমারে উঁচা জাগায় বসতে বলছে।
ডালিমের চোখে পানি এসে গেল। ঠিক সেই সময়ই তাদের সামনের রুমে সেই চান মিয়ার কণ্ঠস্বর শোনা গেল যিনি তার বাবার বন্ধু এবং তাদের সবার বিয়ের ঘটক।

২০.২
আতাউল্লাহ্ তার সামনের বারান্দায় বসে চান মিয়ার সাথে কথা বলছেন। ডালিম রাগী চেহারায় সেখানে গেল। চান মিয়া তার মুখ দেখেই ব্যাপারটা বুঝে ফেললেন।
চান মিয়া : কী ব্যাপার, ডালিম ? কোনো সমস্যা ? বউ কেমন ?
ডালিম : আপনে আজকেই তালাকের ব্যব¯থা করবেন নাইলে আপনাকে আমি খুন করব।
চান মিয়া : (হাসিমুখে) তুমি আমারে খুন করবা ? আমি থানায় জানাইয়া আসছি। তালাক দিতে পার। মহারানার টাকা আচে তো ?
আতাউল্লাহ্ : (অবাক হয়ে) কী ব্যাপার, চান মিয়া ? থানায় জানাইয়া আইছ তার মানে কী ? তুমি জানতা যে ডালিম তোমারে খুন করতে চাইবে ?
চান মিয়া : (আঙুলের চুন দাঁতে নিয়ে) পুটি মেয়েডা বেশি সহজ-সরল। এ যুগের ছেলেরা তো এ ধরনের মেয়ে পছন্দ করে না। তারা চায় ছেলেদের মতো মেয়ে। প্যান্ট-গেঞ্জি পরবে। চুল থাকবে ঘাড়ের উপর। সাইকেল-মটর সাইকেল চালাইবে। কথা-বার্তা, চাইল-চলনে একটা বেপরোয়া ভাব থাকবে।
আতাউল্লাহ্ : চুপ কর তুমি। আমার ছেলে কখনোই এই ধরনের মেয়ে চায়নায়।
ডালিম আর কোনো কথা বলল না। সে ওখান থেকে চলে গেল।

২০.৩
ডালিম তার কক্ষে শুয়ে আছে।
ডালিম : (মনে মনে) চান মিয়া চাচা তো ঠিকই কইছে। ঐ রকম একটা দস্যি মেয়ে যদি জুটত ! কী অব¯থা হইত ? মহারানার টাকা ইচ্ছা করলে যোগার করা যায়। কিন্তু পুটির অব¯থা কী হইবে ? এই বোকা, আরও যদি হয় ছাড়াছাড়ি। তার চাইয়া থাক। ভাগ্যে এ-ই ছিল।

২১
শ্বশুর বাড়িতে কমলা। তার কক্ষে একা শুয়ে আছে।
কমলা : (একাকী) চান মিয়া চাচা বলছিল গোলাপ আইএ পাস কিন্তু আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। মানুষ দেউখাই বোজা যায় কেডা শিক্ষিত, কেডা অশিক্ষিত। উনি সব কয়ডা ঘটকালি করচে মিথ্যা কইয়া।
গোলাপ কমলার কাছে আসলো। কমলা উঠে বসল।
কমলা : তোমার সার্টিফিকেট দুইটা কোথায় ?
গোলাপ : কোথায় আবার ? কলেজে !
কমলা : কলেজে কেন ?
গোলাপ : ও, তুমি তো জানো না, মেট্টিকের কাগজপত্র জমা দিয়া আইএ ভর্তি হইতে হয়। আইএরটা জমা দিয়া বিএ ভর্তি হইতে হয়। বিএরটা জমা দিয়া...
কমলা : তুমি চুপ কর।
কমলা কাঁদতে লাগল।

২২.১
আপেলদের বাড়িতে বসে দোয়েল আর আপেল কথা বলছে।
আপেল : তোমাদের বাড়ি থেকে যে রেডিওটা দিছে সেটায় ভালো গান দেয় না। আমার পুরানটায় ভালো গান দেয়। এখন থেকে সেইটা নিয়া আমি হোটেলে যাব।
দোয়েল কোনো কথা বলল না। সে কাপড় ভাঁজ করছে।

২২.২
আপেল হোটেলের টেবিল মুছছে। রেডিওতে তার পছন্দের একটা গান বেজে উঠল। সে রেডিও বন্ধ করে রাখল।

২২.৩
আপেল আর দোয়েলের কক্ষে বসে ওরা দুজন কথা বলছে।
আপেল : বলছিলাম না, এই রেডিওটায় ভালো গান দেয় ? একটা ভালো গান দিছে। আমি রেডিও বন্ধ কইরা রাখছি। এখন তোমারে শোনাব। আর নতুনটা আনছি বাড়ি রাইখা যাওয়ার জন্য।
আপেল রেডিও বাজাল। খবর হচ্ছে। সবগুলো সেন্টার ঘুরাল। সব জায়গায় খবর।
আপেল : গান গেল কোথায় ?
দোয়েল : গান তো শেষ হইয়া গ্যাছে।
আপেল : কিন্তু গান যে আমি বন্ধ কইরা রাখলাম !
দোয়েল : বন্ধ কইরা রাখলেই তো থাকবে না। সময়ের সাথে সাথে রেডিও অনুষ্ঠান চলতে থাকে। তোমার রেডিও বন্ধ ছিল কিন্তু রেডিও সেন্টার তো বন্ধ ছিল না।
আপেল : তোমাদের বাড়িতে যেটা আছে সেটা বন্ধ কইরা রাখলে দুই দিন পরেও সেই গান শোনা যায়।
দোয়েল : ওটা তো ক্যাসেট প্লেয়ার। আমরা যে কোনো গান যে কোনো সময় শুনতে পারি। রেডিওতে যে গান হবে তা-ই শুনতে হবে। আমরা ইচ্ছামতো শুনতে পারব না। খুলনা সেন্টারে যদি গান হয় তাহলে সব রেডিওতে খুলনা সেন্টারে ঐ একই গান হইবে। রাজশাহী সেন্টারে যদি নাটক হয় তাহলে ঐ সময় সব রেডিওতে রাজশাহী সেন্টারে ঐ একই নাটক হইবে।
আপেলের মনটা খারাপ হয়ে গেল।
দোয়েল : তুমি যদি অনুমতি দ্যাও তাহলে ক্যাসেট প্লেয়ারটা আমি আনব।
আপেল : আনো। আমি তো তখন বুঝতে পারিনায়। এখন আনতে চাইলে শ্বশুর আব্বা আবার রাগ করবে নাকি ?
দোয়েল : রাগ করবে কেন ? সে তো ওটা তোমার জন্যই কিনছিল। তুমি আনোনায়।
আপেল : আমি তো ভাবছি এইটা ছোট আছে। এইটা নিয়া বাজারে যাওয়া যাইবে।
দোয়েল : যাই। ভাত দি।
দোয়েল চলে গেল।
আপেল : (মনে মনে) একটা জিনিস খটকা লাগতাছে। রেডিওর গান মানুষ ইচ্ছামতো বাজাইতে পারে না। তাহলে বাজায় কেডা ?
আপেল রেডিও খুলল।
আপেল : (খোলা রেডিওর দিকে তাকিয়ে মনে মনে) ভেতরে অনেক কিছু। এরা কেউ গান গায়, কেউ খবর পড়ে, কেউ আজান দেয়, কায়দা তো ! কিন্তু এদের গায়ে অনেক ময়লা। এই জন্যই এখন আর ভালো গান কয় না।

২২.৪
ঘরের মেঝেতে পাটি বিছানো। আপেল পাটিতে বসে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে রেডিও আটকাতে শুরু করল। এমন সময় দোয়েল এসে পড়ল।
দোয়েল : কী করছ ?
আপেল : রেডিওতে ময়লা জমছিল। সাবান দিয়া ধুইলাম।
দোয়েল : কীভাবে ?
আপেল : পুরান একটা ব্রাশে সাবান মাইখা ঘষলাম। টিউবলের নিচে ধইরা সুন্দর কইরা সাবান ধুইয়া ফেললাম। রেডিও পরিষ্কার হইয়া গেল।
দোয়েল : রেডিও ভিজাইলে নষ্ট হইয়া যায়, তুমি জানো না ?
আপেল : নষ্ট হইবে ক্যান ?
দোয়েল : লোহায় পানি লাগলে মরিচা পড়ে না ?
আপেল : কিন্তু এগুলা তো স্টিল।
দোয়েল : স্টিলটাও লোহা। যে সব জিনিস বিদ্যুতের সাহায্যে চলে সেগুলার মেশিনে পানি লাগলে নষ্ট হইয়া যায়।
আপেল : আমি তো ব্যাটারি দিয়া চালাই।
দোয়েল : ব্যাটারির মধ্যে বিদ্যুৎ থাকে।
আপেল : তুমি এত কিছু জানো কেমন কইরা ? তুমি তো মেট্টিক পাস করনাই।
দোয়েল : আমি এইট থেকে নাইনে উঠছিলাম। স্কুলে যাওয়ার সঙ্গী ছিল না বইলা পড়াশুনা হয়নায়। তবে ঘরে বইসা আমি বই পড়ি, পত্র-পত্রিকা পড়ি। আমি যা যা জানি সব তোমারে শিখাব।
আপেল : আচ্ছা, আমি শিখব।

২৩.১
গোলাপের মা ডালিয়া বড় দুটো বেগুন কমলার হাতে দিলেন।
ডালিয়া (কমলাকে) : বেগুন দুইডা ভর্তা করবা, বৌমা। গোলাপ বেগুন ভর্তা পছন্দ করে।
কমলা : ঠিক আছে, আম্মা।
ডালিয়া চলে গেলেন।
কমলা : (মনে মনে) বেগুন তো কোনো দিন ভর্তা করিনায়। কিভাবে করতে হয় তাও জানি না। এই কথা কইলে আমার শাশুড়ী এক ঘর শুনাইয়া দেবে। কী করা যায় ?

২৩.২
কমলা পাশের বাড়ির এক জায়ের কাছে গেল।
জা : বস।
কমলা : বসব না, বুজি। একটু দেখা করতে আসলাম। আপনি অনেক দিন যান না।
জা : আসছ ভালো করছ। বস। যাইয়া করবা কী ?
কমলা : বেগুন ভর্তা করব।
জা : বেগুন ভর্তা এমন কোনো কঠিন কাজ না যে একটু বসলে অনেক সমস্যা হইয়া যাইবে। সেদ্ধ দিছ ?
কমলা : না।
জা : বস তুমি।
কমলা বসল। জাও বসল। দুজনই পিঁড়িতে।
কমলা : বসলাম তো, বেগুন ভর্তা করতে বলছে আমার শাশুড়ী। তার ছেলে নাকি বেগুন ভর্তা পছন্দ করে। একটু এধার-ওধার হইলে রাগ করবে।
জা : বেগুন ভর্তা কেমনে বানাও ? পেয়াজ-মরিচ দিয়া সিদ্ধ বেগুন চটকাও না ?
কমলা : হিঁম।
জা : লবন আর তেল দিতে হয় পরিমানমতো। একটু কম-বেশি হইলে আর ভালো লাগে না। ঠিক না ?
কমলা : ঠিকই তো।
জা : আমি শুকনা মরিচ টালা দিয়াও বানাই, পোড়া দিয়াও বানাই। কাচা মরিচ দিয়া বানাইলে তেল-পেয়াজের সাথে ভাজি কইরাও বানাই আবার ভাজি না কইরাও বানাই। এক এক সময় এক এক রকম বানাই। কোনো মসলা তো আর দেওয়া লাগে না। এর মধ্যেই মজা। মাজে-মধ্যে আচারের তেলও দি।
কমলা তো মহাখুশি। সে বেগুন ভর্তা করা শিখে ফেলেছে।

২৩.৩
দুই বাড়ির মধ্যে একটা নালা। তার ওপর চিকন একটা সাঁকো। কমলা সাঁকো পার হচ্ছে। এর মধ্যে অপর পাড়ে তার চোখ পড়ল। এক প্রতিবেশী মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। কমলা পা পিছলে নালার মধ্যে পড়ে গেল। কমলাকে সে হাত ধরে টেনে তুলল। কমলা এত ভয় পেয়েছে যে বেগুন ভর্তা করার নিয়ম ভুলে গিয়েছে।
কমলা : (কপালে হাত দিয়ে বসে পড়ল) আরে আমার বেগুন ভর্তা।
প্রতিবেশী : বেগুন ভর্তা পইরা গ্যাছে ? কী হইছে তাতে ? বেগুন আর নাই ?
কমলা : আছে, বুজি, কিন্তু সমায় নাই।
প্রতিবেশী : আ, কয় কী ? বেগুন সিদ্ধ দিয়া গোসল করতে যাবা। আইয়া পিয়াজ-মরিচ কুচাবা। এর মধ্যে বেগুন সিদ্ধ হইয়া যাইবে। তেল-লবনের সাথে মাখতে আর কতক্ষন ?
কমলা আবার বেগুন ভর্তা করা শিখে ফেলল। তার মুখে আনন্দের হাসি ফুটে উঠল।

২৪.১
আপেলদের বাড়িতে রাতের ভাত খাচ্ছে আপেল আর গোলাপ। তারা পাটিতে, দোয়েল পিঁড়িতে আর কমলা একটু দূরে চৌকিতে বসা।
গোলাপ : (মনে মনে) শ্বশুর বাড়ি বেড়াইতে আইছি মিষ্টি দই লইয়া। দুপুরে দিল না, বিকালে বা সন্ধ্যার পরেও না। আমি তো সকালে চইলা যাব। দই কি খাব না ? এডা কেমন কথা ? নিজের টাকা দিয়া দই আনলাম।
গোলাপ (দোয়েলকে) : ভাবী, আসার পথে একটা সাপ দেখলাম অনেক বড়। লম্বা হইবে এইখান থেকে ঐ দইর হাড়ি পর্যন্ত।
দোয়েল দধির হাঁড়ির দিকে তাকাল।
দোয়েল : হায়, আল্লাহ্ ! ভুলেই গেছিলাম, দধির হাড়ি তো এখন পর্যন্ত খোলাই হয়নায়। বসেন, দুলাভাই, দই খান।
কমলার চোখে পানি এল। সে উঠে গেল।
গোলাপ : (মনে মনে) দই তো খাব কিন্তু শ্বশুর যে বাজার থেকে পাঙ্গাস মাছ আনল, তার কী হইল ?

২৪.২
গোলাপের ঘুম আসছে না। তবুও সে বিছানায় ঘুমের মতো পড়ে রইল।
গোলাপ : (নাক ডাকার মতো শব্দ করে) ইঁ...ম পাঙ্গাস ! ইঁ...ম পাঙ্গাস !
কমলা : (নাক ডাকার মতো শব্দ করে) ইঁম্ম্ম্ অন্যের। ইঁম্ম্ম্ অন্যের।

২৪.৩
হেরিকেনেরে নিভু আলোতে শুয়ে আছেন আতাউল্লাহ্ ও বেদানা। গোলাপ আর কমলার নাক ডাকা তারা শুনলেন কিন্তু কিছু বললেন না। একে অন্যের দিকে একবার তাকালেন।

২৪.৪
ফজরের আজান শুরু হল। গোলাপ ঘুমুচ্ছে কিন্তু কমলার ঘুম আসল না। সে মন খারাপ করে তাকিয়ে আছে।

২৪.৫
পুকুর পাড়। ভোরের পাখিরা ডাকছে। কমলা ঘাসের ওপর বসে আছে। তার মা বেদানা আসলেন। তিনি গিয়ে কমলার সামনে দাঁড়ালেন।
কমলা (কেঁদে) : আমি অর সাথে যাব না, মা।
বেদানা : কেমন কথা ? এত দিন পরে নিতে আসছে।
কমলা : আমি আর কোনো দিন যাব না।
বেদানা : মাইয়াগো বিয়া জীবনে একবারই অয়।
কমলা : এমন কতা কোরান-হাদীসে নাই।
বেদানা : কিন্তু সমাজ বলতে একটা জিনিস আছে।
কমলা : আমি আর বিয়া বসব না।
বেদানা : দশ জনে দশ রকম কথা কইবে।
কমলা : কউক। তাদের কাছে তো ভাত চাব না। কইলে কী হইবে ?
বেদানা : তোরে যে ঘরে বসাইয়া খাওয়াব সে সাধ্যও আমার নাই আর নতুন কইরা বিয়া দেব সে সাধ্যও আমার নাই।
কমলা : আমি কাম কইরা খামু।
বেদানা : কাম কইরা শুধু খাওয়াই যায় ; একা তো বাঁচা যায় না। মাইয়া মানুষের মান-ইজ্জতের কথা চিন্তা করতে হয়।
কমলা : মান-ইজ্জতের জন্যে সারা জীবন কষ্ট করব ? চান মিয়া চাচা কইছিল যে গোলাপের আর্থিক অব¯থা খুবই ভালো। এই রকম মিথ্যা কথা কয় মানুষে ? এক বেলাও পেট ভইরা খাইতে পারি না। সকালে রুটি বানাইয়া রান্না ঘরে বইসাই দুই একটা খাইতাম। তারপর হিসাব মতো সবার সাথে খাইতাম। ডালিয়া যেন ক্যামনে এইডা বুজতে পারছে।
বেদানা : ডালিয়া কেডা ?
কমলা : গোলাপের মা, আমার শাশুড়ি আম্মা। রুটি বানাইতে গ্যালে আটার গোল্লা বানান পর্যন্ত বইসা থাকে। গোল্লা গুইনা রাইখা যায়। আমি প্রত্যেক গোল্লা থেইকা আটা নিয়া রুটি বানাইয়া খাই। এত কষ্ট মানুষে করতে পারে ?
বেদানা : তুই বেশির ভাগ সময় আমার কাছে আইসা থাকবি।
কমলা : এইডা কোনো সমাধান হইল ?
বেদানা : করবি কী ? তালাক দেওয়া কি ভালো ? আল্লার আরশ কাইপা যায়।
কমলা : আল্লা কি মানুষের মতোন বোকা ? সে সমস্যা দ্যাহে না ? আমি যদি বিনা কারণে তালাক দিতাম তাইলে আরশ কাপত। আল্লার আরশ কি আল্গা যে সব কিচুতে কাপ্পে ?
কমলা : ভালো-মন্দ বুজি না। আমি অরে তালাক দেব।
বেদানা : ওরে, তুই থাম। মানুষে শোনবে।
কমলা : শুনুক মানুষে। আমি অর সাথে যাব না। যদি জোর কইরা দ্যাও তাইলে গলায় দড়ি দেব। বিয়ার আগে যা কইচে সব মিথ্যা। ও লেখা-পড়া কিচ্চু করেনায়।
বেদানা : কও কী ? হাচা ?
কমলা : হ্যা।
বেদানা : না করে, থাক। লেখা-পড়া দিয়া কী অইবে ?
কমলা : তোমারে তো যেডা কই হেডাই উরাইয়া দ্যাও।
বেদানা : করব কী ? তোর বাপের অবস্তাডা দেকপি না ?
কাঁদতে লাগল কমলা।

২৫
কমলা আর ডালিয়া ঘরে। আর কেউ নেই। কমলা একটা বাটিতে কিছু ভাত-তরকারি নিল লুকিয়ে খাওয়ার জন্য। দরজার আড়ালে গিয়ে খাবে। দরজা সরানোর পরে দেখা গেল ওখানে দাঁড়িয়ে ডালিয়া খাচ্ছেন।
কমলা : আম্মা, নেন।
ডালিয়া : দ্যাও, মা। খুব খিদা লাগছে।
কমলা : আটা আর কম দিবেন ?
ডালিয়া : না।
কমলা : চাল আর কম দিবেন ?
ডালিয়া : না, মা।
কমলা তার সামনে থেকে সরে সুখের হাসি হাসল।

২৬.১
বেদানা রান্না করছেন। পুঁটি সেখানে গেল। তার মায়ের কথা মনে পড়ল। তার মা তাকে বলেছিলেন, শাশুড়ির হাতের কাম টাইনা নিয়া করবি। তাইলে তোরে ভালোবাসপে।

২৬.২
পুঁটি বেদানার কাছে এগিয়ে গেল (ঘরের বাইরে রান্না করার জন্য যে অ¯থায়ী জায়গা বানান হয় সেখানে)।
পুঁটি : আম্মা, আমি আপনার কাজে সাহায্য করতে চাই।
বেদানা : (হেসে) তাই ? বস। আমার একটু ওঠতে হইবে। চুলার জ্বালটা একটু দেখ।
বেদানা চলে গেলেন। কিছুক্ষন পরে-
পুঁটি : (ডাক দিল) আম্মা, আগুন নিভা যাচ্ছে।
বেদানা : (দূর থেকে) মুখে তুষ দ্যাও। ভাত উঠাইয়া বেগুন বসাইও।

২৬.৩
উঠানে ধান শুকানো হচ্ছে। বেদানা একটা খেজুর পাতা নিয়ে বসে আছেন। সেটা দিয়ে মুরগি তাড়াচ্ছেন।

২৬.৪
চুলোর কাছে পুঁটি বসে আছে। তার কাছে বেদানা আসলেন। বিশাল একটা পাতিলে এক পাতিল পানি। বেগুন ভাসছে।
বেদানা : (অবাক হয়ে) এ কী, বৌমা ?
পুঁটি কথা বলতে পারছে না। হাত দিয়ে ইশারা করছে আর মুখ দিয়ে হিম হিম করে কী যেন বোঝাতে চাচ্ছে।
বেদানা : তোমার মুখে কী ?
পুঁটি হা করল। তার মুখ ভর্তি তুষ।
বেদানা : মুখে তুষ কেন ?
পুঁটি আবার হিম হিম করছে।
বেদানা : তুষ ফালাও, বৌমা। মুখ ধোও।
পুঁটি মুখ ধুয়ে আসলো।
পুঁটি : তুষ তো আপনেই দিতে বললেন।
আতাউল্লাহ্ এসে পড়লেন।
আতাউল্লাহ্ : কী হইছে ?
বেদানা কথা বললেন না।
আতাউল্লাহ্ : তুষ নিয়া বৌমারে কিছু বলছ নাকি ?
বেদানা : বৌমারে বলছিলাম চুলার মুখে তুষ দিতে। সে নিজের মুখে তুষ দিয়া বইসা রইছে। ভাত উঠাইতে কইচি, উঠাইচে, ফ্যান গালেনায়।
আতাউল্লাহ্ : এত বড় পাতিলে বেগুন, ঘটনা কী ?
পুঁটি : ছোট পাতিলে দিছিলাম। অল্প পানিতে ডোবে না তাই বড় পাতিলে দিছি।
আতাউল্লাহ্ : বৌমা, তুমি ভালো ঘরের মেয়ে। কী কইতাছ এইসব ?
পুঁটি : আব্বা, আম্মা আমারে ভাতের ফ্যান ফালাইতে বলেনায়।
আতাউল্লাহ্ : ঠিক আছে, বৌমা। তুমি তোমার কাজে যাও।
বেদানা : আপনে কালকেই বড় বৌমারে আনবেন। এখন ধানের কাম। রান্নার কাছে কেউ থাকলে আমার উপকার হয়।
আতাউল্লাহ্ : ঠিক আছে।

২৭.১
ভাত খেয়েছে আপেল, ডালিম আর গোলাপ। দিয়েছে দোয়েল। তাকে সাহায্য করছিল কমলা। ওদের খাওয়া হয়ে গিয়েছে। গোলাপের হয়নি। সে বার বার ভাত নিচ্ছে।
দোয়েল : (মনে মনে) পাতিলে তো আর তরকারি নাই। এখন কী করি ?
গোলাপ আবার ভাত নিল।
দোয়েল (গোলাপকে) : দুলাভাই, দুধ দিয়া খাইবেন ?
গোলাপ : খাবই তো দুধ দিয়া। তরকারি দিয়া তো বেশি খাইতে পারলাম না। শরীলটা ভালো নাই।
দোয়েল : আচ্ছা, আপনি আস্তে আস্তে খান।
কমলার চোখে পানি আসলো। দেখে ফেলল ডালিম। কমলা বাইরে চলে গেল।
দোয়েল : ফিরনি কখন খাইবেন ?
গোলাপ : বিকালে। বাড়ি যাওয়ার আগে।
দোয়েল : (ডাক দিল) পুটি !
পুঁটি আসলো। দোয়েল এক বাটি ফিরনি দিল পুঁটিকে।
পুঁটি : ফিরনি আমি খাব না। ও আমাদের বাড়িতে প্রায়ই রান্না হয়। বার বার এক জিনিস খাইতে ভালো লাগে না।
দোয়েল : আরে খাও, কী হইবে খাইলে ?
পুঁটি : ইচ্ছা করে না।

২৭.২
পুকুর পাড়ে গিয়ে কাঁদতে শুরু করল কমলা। ডালিম গিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।
ডালিম : মন খারাপ করিস না। সব ঠিক হইয়া যাইবে।
কমলা : কিচ্চু ঠিক হইবে না, ছোট্ট বাই। তোমার মনে আছে বড় বাই বেশি বাত খাইলে আমি কী রকম হাসতাম ? সেই জন্যই আমার বাগ্যের এই অব¯থা। আমি আর অর সাথে যাব না। এই কথা তোমারে বলার জন্যই আমি আইছি।
ডালিম : এ কথা বলা তো ঠিক না। স্বামী হয়ত বদলান যায় কিন্তু ভাগ্য তো বদলান যায় না। ভাগ্যে যদি সুখ না থাকে কেউ তা চেষ্টা কইরা পায় না।
কমলা : তুমি জানো না, ছোট্ট বাই, অনেক সমস্যা আছে।
ডালিম : মাথা ঠান্ডা কর। দেখি, কী করা যায়।

২৮.১
সবাই ঘুমিয়ে পড়ল কিন্তু পুঁটি ঘুমাল না। চুপে চুপে সে ফিরনির পাতিলের কাছে গেল। ফিরনি নেই। পাতিলে যা লেগে আছে আঙুল দিয়ে তা এনে মুখে দিল। খুব মজা।

২৮.২
ডালিমের ঘুম ভাঙল। বিছানায় পুঁটি নেই।
ডালিম : (মনে মনে) পুঁটি গেল কোথায় ? সে তো রাইতে একলা বাইরে যাইতে পারে না। ভয় পায়।
ডালিম উঠে আলো জ্বালল। ঘরের সবগুলো দরজা বন্ধ।
বেদানা (ডালিমকে) : কী খুজছিস ?
ডালিম : পুঁটি কোথায়, মা ?
বেদানা : দরজা খোলার শব্দ পাইলাম। ভাবলাম কেউ বাইরে গ্যাছে। দরজা আটকানোর কোনো শব্দ পাইলাম না। অনেক সময় অপেক্ষা করলাম। মনে করলাম ভুলে আটকায়নায়। একটু আগে আমি দরজা দিলাম।
ঘরের সবাই জেগে গেল। কোথাও পুঁটি নেই।

২৯
কমলা : কালকে বিকালে আমি যখন গ্যালাম তখনও হাসি-খুশি মানুষটা। হঠাৎ কী হইল ?
বেদানা : জানি না। আমার মাথায় কিছু খ্যালে না।
দোয়েল : আমার মাথায়ও না।
কমলা : সে কি শেষ পর্যন্ত ফিরনি খাইছিল ?
দোয়েল : না।
কাউকে কিছু না বলে কমলা রান্না ঘরে গেল। তারপর বাড়ির পেছনের দিকে হাঁটতে লাগল। ডালিম তার পেছনে পেছনে গেল। কমলা ঝোপের মধ্যে ঢুকল।
কমলা (ডালিমকে) : ঐ যে।
ডালিম তাকাল। পুঁটি ঝোপের মধ্যে বসে আছে, মাথায় পাতিল। কমলা পুঁটির দিকে এগিয়ে গেল। পাতিলের মধ্য থেকে মাথা বের করল।
ডালিম (কমলাকে) : ঘটনা কী ?
কমলা : পাতিলের মধ্যে মুখ দিয়া ফিরনি খাইতে চাইছিল।
ডালিম : হায়, আল্লাহ্ ! সবাই এত বলল ! কী দরকার ছিল এই নাটকের ? যাও, ঘরে যাও। আমার ভাগ্যে যা ছিল তা হইছে। আরো কত কী আছে আল্লাহ্ জানে।
পুঁটি ঘরে গেল। ডালিম মন খারাপ করে পুকুর পাড়ে বসে রইল। কমলাও তার কাছে বসল।
কমলা : ঘরে চল, ছোট্ট বাই।
ডালিম : কমলা, তোর দুঃখ কি আমার চাইতে বেশি ?
কমলা : না, ছোট্ট বাই।
ডালিম : সব কিছুই মানুষের ভাগ্য।


সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:১৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×