তুমুল বৃষ্টিতে ভেসে গেছে কাটাপাহাড়, ঝুপড়ির ভাঙা চোরা দোকান । লাইব্রেরীর এক কোনে অবহেলায় গজিয়ে ওটা সাদাজবা গাছের সব ফুল । কলা ভবনের বারান্দা মৃত পড়ে আছে কতোদিন! যে পথটায় হাটতাম আমরা , সে পথে এখন মরে যাওয়া স্মৃতিরা উড়ে বেড়ায়, যেমন ওড়ে শুকিয়ে যাওয়া বেওয়ারিশ পাতা । প্রথম বর্ষায়, খুব সাধ নিয়ে এক কিশোর ভেজা কদম গাছে উঠতে গিয়ে পড়ে মরে গেছে আজ । তার মাথার নীচে জমে থাকা রক্ত ভেসে যায় বর্ষায় । ছেলেটার মরে পরে থাকাটা আমার কাছে ভেজা কদম ফুলের মতোই সুন্দর মনে হয় ।
আমার বন্ধু সকাল সন্ধ্যা একটা করে কাঠাল কেনে । কাঠাল তার প্রিয় ফল । কাঠাল খেতে খেতে তার দিন পেরিয়ে যাচ্ছে ! আমার তার মতো সুখি হতে খুব সাধ জাগে ! কিন্তু আমি তো আমি, সে তো সে ! আমরা কেউ কারো মতো হতে পারি না । সুইসাইড করে খুন হয়ে যাওয়া প্রিয় শিক্ষকের কথা আমার মনে পরে । মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তার লেকচার টোকা ডায়েরী, ক্লাসে প্রেসিডেন্ট বুশের কথা বলতে বলতে মুখ থেকে ছিটকে আসা থুথু, তার মৃত দেহ থেকে বিচ্ছুরিত প্রতিরোধ আর না-পারার অক্ষমতা ভালো লাগতে থাকে আমার।
সুদিন আনবে বলে যে মেয়েটা বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজতে গিয়েছিলো রেফারেন্স সেকশনে, গলায় রশি বেঁধে জীবনের ভারসাম্য করতে হলো তাকে ! বর্তমান সময়ে জিতে যাওয়া ভালো; না হারতে হারতে শেষমেষ মরে যাওয়া ? আমি মেয়েটার মতো মরে যাওয়ার পক্ষে বাজি ধরতে রাজি আছি ! টোনাটুনির মতো সারাদিন ক্যাম্পাসের এপাশ ওপাশ ঘুরে বেড়ানো আমার বন্ধু ও তার প্রেমিকা । ওদের এক সময় দেখতে আমার ভালো লাগতো । এখন ওরা কেমন মলিন হয়ে যাচ্ছে । ওদের মলিন হয়ে যাওয়া তাকিয়ে দেখতে আমার ভালো লাগে । খারাপ লাগে!
আমাদের রাজীব দত্ত । সারাদিন ঝুপড়ির টেবিলে অনড় হয়ে বসে থাকে ! মাঝে মাঝে ওকে আমার ঐ টেবিলটার মতো বস্তু মনে হয় ! ওকে অনেক দিন ঝুপড়ির ঐ টেবিলটায় বসতে দেখি না । ওকে আমার দেখতে ইচ্ছা করে । কিন্তু ওকে দেখলে আমার খারাপ লাগে ! হাসতে হাসতে যে মেয়েটা ঝুপড়ির আড়াল ছেড়ে কোথায়, কই হারিয়ে গেছে; ওর হারিয়ে যাওয়াটা আমার কাছে খারাপ লাগে !