somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর ইতিহাসের কিছু পরাক্রমশালী যোদ্ধাদের কথা ( ২য় পর্ব)

২২ শে জুলাই, ২০১২ রাত ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম পর্ব


এর আগের পর্বে কিছু ঐতিহাসিক যোদ্ধাদের(যেমন: নিনজা ,সামুরাই, নাইট , স্পার্টান ,ভাইকিংস ) সাথে সংক্ষিপ্ত পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেস্টা করেছিলাম , এই পর্বে আরও কিছু ঐতিহাসিক যোদ্ধাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেস্টা করবো ।


মঙ্গোলীয়ান



এই পৃথিবীর বুকে সর্বাপেক্ষা বৃহৎ সাম্রাজ্যের গড়ে তুলেছিল এই মঙ্গোলীয়ানরা , ইউরোপ থেকে এশিয়া সর্বত্রই এদের বিচরণ ছিলো , জাতি হিসেবে মঙ্গলরা ভবঘুরে ছিলো এবং তারা এত পরাক্রমশালীও ছিলোনা , যতদিন না চেঙ্গিস খান তাদের নেতৃত্বে এসেছিলো ।



এই চেঙ্গিস খানের অসাধারণ নেতৃত্ব এবং সাহসের জন্যই মঙ্গোলরা তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে পেরেছিলো ।


মঙ্গোলরাই সর্বপ্রথম দলে বিভক্ত হয়ে যুদ্ধ করেছিলো , তাদের প্রতিটি দলে ১০-১০০ জন সৈন্য থাকতো ,আবার এইরকম আরও ছোট ছোট গ্রুপ নিয়ে হতো আরেকটি বড় গ্রুপ ,প্রতিটি দলের একজন করে দলপতি থাকতো ।
মঙ্গল যোদ্ধাদের সাফল্যের অন্যতম কারন ছিলো তাদের যুদ্ধ কৌশল , তারা অস্ত্র হিসেবে ঢাল ,তলোয়ার এবং তীর ব্যবহার করতো । মঙ্গোল তীরন্দাজরা ছিলো অত্যন্ত দক্ষ ,তাদের নিশানা ছিলো নির্ভুল । যেকোন যুদ্ধের সময় তাদের তীরন্দাজরা বিপক্ষদলের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করতে সমর্থ ছিলো , অনেক দূর থেকে একসাথে অনেক তীরের মাধ্যমে তারা বিপক্ষ দলকে বিশৃঙ্খল করে দিতে ।
মঙ্গল যোদ্ধাদের ঘোড়া গুলো সাধারণত ছোট প্রকৃতির হতো , ছোটা ঘোড়ার সুবিধা হিসেবে যোদ্ধারা খুব সহজেই তাদের ঘোড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো ।
মঙ্গোল যোদ্ধারাও বর্ম ব্যবহার করতো , তবে তাদের সেই বর্মগুলো নাইটদের মত এত ভারী ছিলোনা , এবং তাদের বর্ম শুধু বুক এবং পিঠকে রক্ষা করতেই ব্যবহার হতো ।

সাওয়ালীন সন্ন্যাসী



সাওয়ালীন সন্ন্যাসীদের ইতিহাস অনেক পুরানো ,তারাই এই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মার্শাল আর্টের প্রচলন করে । আনুমানিক ৫৪০ খ্রিস্টাব্দে ভারত বর্ষ থেকে এক বৌদ্ধ ষণ্মাসই চায়নাতে যায় ,রাজার সাথে দেখা করার জন্য ,চীনা ভাষায় সেই সন্ন্যাসীর নাম ছিলো ট্যামো । সেইসময় চীনে একটা মন্দিরে (পরবর্তীতে সাওয়ালীন মন্দির) সরাসরি রাজার তত্ত্বাবধানে বৌদ্ধ ধর্মের বানীগুলো সংস্কৃত থেকে চাইনিজ ভাষায় অনুবাদ করার কাজ চলছিলো । একটা সময় চাইনিজ রাজার সাথে ,ট্যামোর বিরোধ হয় । রাজার ধারনা ছিলো অন্যের কাজের মাধ্যমে যদি তার উদ্দেশ্য সফল হয় তবেই তিনি বোধি লাভ করতে পারবেন , ট্যামো এর বিরোধিতা করে , ট্যামোর মতে বোধি লাভের জন্য সবসময় নিজেকেই কাজ করতে হবে । এই বিরোধিতার জন্য ট্যামো রাজদরবার থেকে চলে যান , এবং মন্দিরে গিয়ে তার এই মতবাদ বোঝানোর চেস্টা করেন , কিন্তু অন্যান্য সন্ন্যাসীরা তার এই মতবাদ প্রত্যাখ্যান করেন , তখন ট্যামো একটি গুহায় ধ্যান শুরু করেন , কথিত আছে এই ধ্যানের মাধ্যমেই তিনি অলৌকিক কিছু দেখাতে পারেন এবং যার ফলস্বরূপ অন্যান্য সন্ন্যাসীরা তার মতবাদ মেনে নেয় ।
ট্যামো একসময় লক্ষ্য করলেন , মন্দিরের অধিকাংশ সন্ন্যাসীরাই খুব রুগ্ন । তারা বৌদ্ধের প্রচারিত যোগাসন করতে সমর্থ নন ।সন্ন্যাসীদের শক্তি এবং সাহস বৃদ্ধির জন্য এক বিশেষ ধরনের শরীর চর্চা কৌশল উদ্ভাবন করেন যেটা কিনা কিছু প্রাণীর চাল চলন অনুকরণে করা হয়েছিলো ।
বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের সেই মন্দির ছিলো জংগলের ভিতরে যার ফলে তারা প্রায়ই বন্য পশু এবং ডাকাতদের হামলার শিকার হতো । ধীরে ধীরে ট্যামোর প্রচলিত শরীর চর্চার কৌশলগুলো তারা নিজেদের আত্মরক্ষার্থে ব্যবহার করা শুরু করলো ।
এভাবেই মূলত মার্শাল আর্টের উদ্ভব হয়েছিলো , প্রথম দিকে তারা কোন অস্ত্র ব্যবহার করতোনা , কিন্তু কালের পরিক্রমায় তারা বেশ কিছু অস্ত্রের ব্যবহারও শুরু করে যেমনঃ লাঠি , বর্ষা ,চেইন স্টিক ইত্যাদি । সাওয়ালীন সন্ন্যাসীদের কৌশল যেমন উন্নত তেমনি তাদের শারীরিক গঠন । শুধু অস্ত্র বা মারামারির কৌশল শেখা নয় , যোগ ব্যায়াম তাদের প্রশিক্ষণের অন্যতম অংশ ।



সাওয়ালীন সন্ন্যাসীদের প্রশিক্ষন

হুন



এশিয়া এবং ইউরোপের বেশীরভাগ জায়গায় এদের বিচরন ছিলো , বলতে পারেন ত্রাস । হুন নেতা আতিলার নেতৃত্বে তারা তাদের সাম্রাজ্য ইউরোপ থেকে চীন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিলো । হুনদের অন্যতম ভয়ংকর অস্ত্র ছিলো তাদের তৈরী তীর যেটা হিউনিক তীর নামে পরিচিত।


হুনদের তীর

এই তীরই তাদের দীর্ঘদিন যুদ্ধক্ষেত্রে অপরাজিত রেখেছিলো । এই তীর সাধারণত একাধিক পদার্থের সংমিশ্রনে তৈরী হতো এবং খুব হালকা ছিলো । যার ফলে একে অনেক বেশী বাঁকানো যেত লংরেঞ্জ বা শর্ট রেঞ্জ এই দুই ক্ষেত্রেই এই তীর ছিলো অত্যন্ত ভয়ানক । বেশীরভাগ হুন যোদ্ধাই চলন্ত ঘোড়ার উপরে বসে তীর ছুড়তে পারতেন ,যেকারনে তারা ছিলো অত্যন্ত ভয়ানক । তীর ছাড়াও এরা ঢাল এবং তরবারি ব্যবহৃত করতো ।

রাজপূত



এদের অবস্থান ছিলো উত্তর ভারতের রাজস্থানে , এদের নীতি ছিলো কিছুটা নাৎসিদের মত অর্থাৎ কখনো আত্মসমর্পন নয় , মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। বেশীরভাগ যুদ্ধেই এরা অপরাজিত। তাদেরকে ইংল্যান্ডের নাইট বা জাপানের সামুরাইদের সাথে তুলনা করা হয় । রাজপূতরা শুধু অস্ত্র চালনাই দক্ষ ছিলোনা ,পাশাপাশি তারা খালি হাতেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারতো । তাদের প্রধান অস্ত্র ছিলো খান্দা নামের একধরনের তলোয়ার , চক্রম নামের উড়ন্ত চাক্তি এবং এক ধরনের ছুরী যেটার নাম ছিলো অ্যারা।


রাজপূতদের অস্ত্র

অনেকেই হয়তো ভাবছেন রাজপূতরা শুধু যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী , তারা সংগীতেও পারদর্শী ছিলেন । সম্রাট আকবরের নবরত্নের একজন ইতিহাসের বিখ্যাত কন্ঠশিল্পী তান সেন একজন রাজপূত ছিলো , কথিত আছে তান সেন গান গেয়ে বৃস্টি নামাতে পারতেন । এবং এই তান সেনের জন্যই সম্রাট আকবরের সাথে রাজপূতদের যুদ্ধের উপক্রম হয়েছিলো ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৪:০০
৪৯টি মন্তব্য ৪৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×