ছোটবেলায় আমি পরিচিত-অর্ধপরিচিত যাকেই দেখতাম আমার একটাই আবদার, গল্প বলতে হবে। গল্প বলার জন্য এত্ত বেশী ঘ্যানর ঘ্যানর করতাম, সবাই কিছুটা বিরক্ত হতো কিন্তু ছোট দেখে কিছু বলতোনা। আর একটা গল্প শুনে আমি কোনদিনই সন্তুষ্ট ছিলাম না। মিনিমাম ৫-৬টা গল্প বলতে হবেই, নইলে আমার চিল্লাচিল্লি দেখে কে!

জীবনের ঘটনাগুলো নাকি ঘুরে ঘুরে ফিরে আসে। আমার এই স্বভাবটা আমার ভাগ্নীর মধ্যে ষোল আনার উপরে দুই আনা, আঠারো আনাই আছে। আজকে আমি এই রাজকন্যাটার গল্পই করবো।

আমার ক্লাস ফোরে পড়া ভাগ্নীটার সাথে দেখা হওয়ার ১০ মিনিটের মাথায় সে বলতে শুরু করবে, "খালামণি, 'গল্প' বলো"।
আমিও তো কম পাজী না। বলি, "গল্প"

-"খালামণি, 'একটা গল্প' বলো"
-"একটা গল্প"
-"ধ্যাৎ,



-"এটা হলো গুরুমারা বিদ্যা"

এইবার সে চুপ করে যায়। কারণ তার যখন ৩ বছর বয়স, তখন তাকে বলেছিলাম, "কলেমা বলো"। সে বলে, "কলেমা"। আমি হেসে বললাম, "সবটা বলো খালামণি"। তার উত্তর, "সবটা"।

রাজকন্যার ভোঁতা মুখ দেখে বলি, "আচ্ছা বলছি"। সাথে সাথে তার মুখে হাসির ঝিলিক।

তবে গল্পগুলো বেশীরভাগ এরকম হয়, "একটা ছিলো রাজা, রাজাটা একদিন মারা গেলো"
-"তারপর?"
-"তারপর আর কি! মরে গেলো, এরপরে ইন্নালিল্লাহ।"
-"শুরুতেই মেরে ফেললে কেন?"
-"আমি মেরেছি নাকি? ব্যাটার হায়াৎ শেষ, আমি কি করবো?"

কিংবা এরকম, "এক ছিলো এক রাজা, রাজাটা একদিন বের হলো অনেকদূরের দেশে তার বোন থাকে তাকে দেখতে। রাজাটা যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। তিন মাস পরে গিয়ে পৌঁছবে।"
-"তারপর?"
-"তিন মাস হোক আগে, নইলে পরের কাহিনী বলবো কিভাবে?"

-"তাহলে কিভাবে গেলো সেটা বলো।"
- "আমি কিভাবে বলবো! আমি কি রাজার সাথে গিয়েছি নাকি?


এইবার ওর রাগটা হয় দেখার মতো! ( আমি হলে অবশ্য আরো আগেই চিল্লাচিল্লি শুরু করতাম)।

ছোটদের রাগ ভুলানো অনেক সোজা। বলি, "কি করবো আমার তো কোন গল্পই মনে থাকেনা! কালকে তোকে একটা গল্পের বই কিনে দিবো"
সাথে সাথে সব রাগ পানি হয়ে যায়।

-"কিন্তু শর্ত হলো এরপরের ৫দিন আমার কাছে কোন গল্প শুনতে চাইবিনা"।
- "ওকে, খালামণি"

পরেরদিন একটা গল্পের বই এনে রাজকন্যার হাতে দেয়ার আগেই ছোঁ মেরে বই ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তারপরের ৪-৫ঘন্টা তার দেখা নেই। সন্ধ্যা হয়ে গেলেও ঘরে লাইট না জ্বালিয়ে প্রায় অন্ধকার ঘরে বই পড়ে যাচ্ছে একটানা। তিনবার না বললে কোন কথা কানে যায়না।
বইটা শেষ করার পরের এক ঘন্টার মধ্যে এসে বলবে," খালামণি, গল্প বলো"!
আমার অবস্থা তখন ( হাল ছেড়ে দেয়ার ইমো)

( এরপরের ঘটনা শুনতে চাইলে তৃতীয় প্যারা থেকে আবার পড়তে পারেন)

বেশ কিছুদিন আগে হঠাৎ সামুতে বেশ কয়েকটা রুপকথার গল্প দেখলাম। ভাবলাম, এই গুলো একসাথে করে আমার ভাগ্নীটাকে পড়তে দিব, খুব খুশী হবে। তাই নিচে গল্পগুলোর লিঙ্ক দিয়ে দিলাম।
সাত ভাই চম্পা - চাঁপাবাজ
গল্প-চাঁপাবাজ
অপগল্পঃগাঁদা-সায়েম মুন
রাম্পেলস্টিল্টস্কিন-তারার হাসি
ছোট সোনা গোল্ডলিক্স আর ভালুকের গল্প-মেঘ বলেছে যাবো যাবো
খাঁটি সব আষাড়ে গল্প-দীপান্বিতা
অ্যারনের চুল-আকাশ অম্বর
তিথিমণির বনরাজ্যে মোদের নিমন্ত্রণ-মতিউর রহমান সাগর
টুনটুনি আর রাজার কথা-লবঙ্গলতিকা
কাঁকণমালা, কাঞ্চনমালা (১)-লবঙ্গলতিকা
কাঁকণমালা, কাঞ্চনমালা (২)-লবঙ্গলতিকা
সাত ভুতের গপ্পো-লবঙ্গলতিকা
টুনটুনি আর মোটা বিড়াল-লবংগলতিকা
বজ্জাত দানব ও আগুন দেবতা- লবঙ্গলতিকা
টোনাটুনির পিঠে খাওয়া(১)-দুপুরমণি
টোনাটুনির পিঠে খাওয়া-(২)-দুপুরমণি
ছোটবেলায় মায়ের কাছে শোনা গল্প-রেজওয়ানা
পিদিম ভুতের গল্প(১)-ইমন জুবায়ের
পিদিম ভুতের গল্প(২)-ইমন জুবায়ের
পিদিম ভুতের গল্প(৩)-ইমন জুবায়ের
পিদিম ভুতের গল্প(৪)-ইমন জুবায়ের
পিদিম ভুতের গল্প(৫)-ইমন জুবায়ের
পিদিম ভুতের গল্প(৬)-ইমন জুবায়ের
পিদিম ভুতের গল্প(৭)-ইমন জুবায়ের
পিদিম ভুতের গল্প(৮)-ইমন জুবায়ের
পিদিম ভুতের গল্প(৯)-ইমন জুবায়ের
পিদিম ভুতের গল্প(১০)-ইমন জুবায়ের
পিদিম ভুতের গল্প(১১)-ইমন জুবায়ের
টিপু-টুশির গল্প-উশৃংখল ঝড়কন্যা
রূপকথাঃগুরুতের নীলগিরি অভিযান-মাসুদুল হক
হাবার গল্প-মাহী ফ্লোরা
হরিণ ছানা ও ইলিশ মাছ-বাবুনি সুপ্তি
টুনটুনি ও রাজার গল্প-সুরঞ্জনা
জমিদারের সাথে কাঙ্গালের ভোজ-রাতমজুর
অ-জানি দেশের না-জানি কি (১) -রাতমজুর
অ-জানি দেশের না-জানি কি (২)-রাতমজুর
অ-জানি দেশের না-জানি কী (৩)-রাতমজুর
হলদে ঝুটি মোরগটি-রাতমজুর
ঘোড়ার ডিমের বাচ্চা-হানী
আমার ভাগ্নীকে নিয়ে লেখা রুপকথাঃ পিকু( ছোট বাচ্চাদের গল্প)-জিকসেস
: ঠাকুরমার ঝুলিঃ নীলকমল আর লালকমল-সীমানা পেরিয়ে
ঠাকুরমার ঝুলিঃ কিরণমালা //দক্ষিণারঞ্জন মিত্র মজুমদার-সীমানা পেরিয়ে
রূপকথা: অহরুর অলসতা-মাসুদুল হক
ছানা আর পিচ্চির গল্প-ছানাপোনা
এক রূপকথার রাজকন্যার গল্প-নীল ভোমরা!
বুড়ো টেডির স্বপ্ন- লেডী বার্ড
মুন্নীর পুতুল- বড় বিলাই
রূপকথা - পান সুপারি আর চুন! : বাবুনি সুপ্তি
আধুনিক রুপকথা- জেলে আর সাত এলিয়েন-টিনটিন
( কারো কাছে রুপকথার গল্প থাকলে লিঙ্ক দিলে খুব খুশী হবো)

যারা যারা লিঙ্ক দিয়েছেন এবং যারা যারা গল্প লিখেছেন তাদের সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০১১ সকাল ১০:৩৪