somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাতদিনঃ বছর শেষের একটি কল্প কাহিনী!

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম দিনঃ
এই মুহুর্তে আমার রাগ লাগছে। প্রচন্ড রাগ লাগছে। নতুন বাসায় এসে প্রথম দিনই যদি দেখি পানি নেই তবে রাগ লাগারই কথা! তাছাড়া আমি এখন বাথরুমে আছি বেকায়দা অবস্থায়! ওদিকে মা চিৎকার করছেন , কেন আমি সোফাটা জায়গামত বসাতে তাকে সাহায্য করছি না! যাই হোক, বাথরুমে পানির ব্যবস্থা করে এবং বাসার আরো কিছু কাজ শেষ করে যখন বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম ততক্ষনে মধ্য দুপুর! বাহ, বারান্দাটা বেশ সুন্দর! খোলামেলা। সামনে একটা বাড়ি আছে, তবে আলো -বাতাস আসছে ভালোই! ওপাশের বাড়িটার ছাদ ছাড়িয়ে আকাশ কতখানি দেখা যাবে সেটা হিসাব করতে যখন আমি ব্যস্ত তখনই টের পেলাম এক জোড়া কঠিন চোখ আমার দিকেই তাকিয়ে আছে!

দ্বিতীয় দিনঃ

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আরাম করে বারান্দায় বসে চা খাওয়া আর সেই সাথে নবাবী স্টাইলে পেপার পড়া, এই হচ্ছে আমার গত কিছুদিনের রুটিন। আসলে পরীক্ষা শেষে ভার্সিটি বন্ধ থাকায় এই অবস্থ! যাই হোক, মায়ের এক গাদা উপদেশ শুনে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে যখন বারান্দায় আসলাম তখনই খেয়াল হল, আজ তো পেপার আসবে না! এই এলাকায় এখনো হকারকে বলা হয় নি! সামনে তাকাতেই চোখে পড়ল ওপাশের বারান্দায় একটা মেলে ধরা পেপার। তবে মালিক আছেন চোখের আড়ালে! মাইনাস পাওয়ারের চোশমাটাকে আরো ভালোভাবে চোখে বসিয়ে নিয়ে যখন আমি পেপারের হেডিংটা বোঝা যায় কিনা এই ছেলেমানুষীতে ব্যস্ত, তখনই এক ঝটকায় সরে গেল পেপারটা! আর সেই সাথে দেখা গেল গতকালের চোখ দুটো , তবে আজ কঠিন না , অবাক! আর এদিকে আমি লজ্জায় হতবাক!

তৃতীয় দিনঃ

এক হাতে সব্জি ভর্তি বাজারের ব্যাগ আর অন্য হাতে মাছের ব্যাগ, এই দুটো দুই হাতে নিয়ে কিছুটা টা্লমাটাল হয়েই হেঁটে আসছি আমি! আর মনে মনে গাল দিচ্ছি ভাগ্যকে! ভার্সিটি বন্ধ হলে সবার কত মজা হয় আর আমার দায়িত্ব পড়ে বাজার করার। বাসার সামনে আসতেই দেখা গেল আকাশি রঙ্ এর শাড়ী। বোধ হয় রিকশা খুঁজছে। আচ্ছা, আমার কি রিকশা ডেকে দেয়া উচিৎ? ধুর, আমারে চেনে নাকি? আর আমিই বা এমন ছ্যাবলামো কেন করব?? এসব ভাবতে ভাবতেই উষ্টা খেলাম গেটের সাথে। মাছ গুলো বোধ হয় রাস্তায় সাঁতার কাটতে গেল। আমি পড়লাম বাচ্চাদের হামাগুড়ি দেয়ার ভঙ্গিতে! আর কানে আসল হঠাৎ বের হয়ে যাওয়া কিন্তু চেপে রাখতে চাওয়া নারী কণ্ঠের হাসি! মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম!

চতুর্থ দিনঃ

"শুভ একটু বাইরে যা। কিছু নাস্তা নিয়ে আয়। সামনের বাসার ভাবীরা এসেছেন"। সন্ধ্যা বেলা যখন আমি গভীর ব্যস্ত ফিফা -১২ নিয়ে তখন মার এমন আবদার নিতান্ত অযাচিত মনে হল আমার কাছে। "কোথাকার কে এসেছে, এজন্য এখন আমাকে মোড়ের ওই মাথা পর্যন্ত যেতে হবে নাস্তা আনতে?"। রাগে কিছুক্ষন গর গর করে টি শার্টটা গায়ে চড়িয়ে বের হলাম। যাওয়ার সময় ড্রয়িং রুমে বসা দেখলাম সেই চোখ অথবা আকাশি শাড়ীকে! মনে পড়ে গেল হাসির কথা। চোখ মুখ শক্ত করে বের হয়ে গেলাম! কিছুক্ষন পরেই ফিরে এসে মায়ের হাতে যখন ব্যাগটা ধরিয়ে দিলাম, তখন শুনতে পেলাম মা বলছেন, " আমার এই ছেলেটা এত আনড়ি! কিচ্ছু করতে চায় না! গতকালই বাজার থেকে আসার সময় সব মাছ রাস্তায় ফেলে দিয়ে এসেছে! " " আমি দেখেছি! ", বোধ হয় আকাশী শাড়ি কথা বলল! আর কিছুক্ষন পর হাসির হুল্লোড়। নিশ্চই আমার পড়ে যাওয়া নিয়ে হাসাহাসি হচ্ছে। "মা তোমাকে আমি যদি আর বাজার করে দেই", রাগে মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হল!

পঞ্চম দিনঃ

"ভালো আছেন?", কথাটা শুনে চমকে তা্কালাম। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। আকাশি রং এর শাড়ী নেই আজ, নীল রঙ এর সালোয়ার কামিজ। " আপনি...."কোনমতে বললাম আমি। "হ্যাঁ, গতকালই তো আপনাদের বাসায় গেলাম! চিনতে পারেন নি? আরে ওই যে আপনি সেদিন পড়ে গেলেন আমার সামনে....."। "জ্বি, জ্বি বুঝতে পেরেছি।" তাড়াতাড়ি বলে উঠি আমি। আর কিছু না বলে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলাম! "আরে আমি পড়ে গেছি এটা কি মাইকে করে বলতে হবে বাকি?", নিজের মনে গজ গজ করতে করতে যখন সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছিলাম, তখন আমার খেয়াল হল, আরে মেয়েটাকে তো বলাই হয় নি আমি কেমন আছি! তাকেও জিজ্ঞাসা করা হয় নি! নিশ্চই পিছনে দুটো অবাক চোখ তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি যে কত্ত বড় গাধা! ইচ্ছে হল, নিজেকে নিজে লাথি মারি।

ষষ্ঠ দিনঃ

মেয়েটার নাম ও জানি না! মাকে জিজ্ঞেস করতে লজ্জা লাগছে! সকালে মা নিজে এসেই বলতে চাইল ওদের কথা, তখন আমিই ভাব দেখিয়ে শুনলাম না! আর এখন ........ বিছানায় শুয়ে কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই ফোনটা বেজে উঠল। "কিরে কি করিস? কালকে আসবি নাকি টি এস সি?", ও পাশ থেকে রাহেল বলে। "কালকে কি ? টি এস সি আসব কেন?", আমি বিস্ময় নিয়েই জিজ্ঞেস করি। "আরে গাধা , কাল বছরের প্রথম দিন না? পহেলা জানুয়ারী। প্রোগ্রাম আছে। সারাদিন বাসায় বসে খাইলে আর ঘুমাইলে তো অবস্থা এমনই হবে!বাহির হ বাসা থিকা।" আরো কিছুক্ষন কথা বলে ফোনটা কেটে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। আজ বছরের শেষ দিন! কি করা হল এই বছরে, এই দার্শনিক ভাবনায় যখন মগ্ন আমি তখন দৃষ্টি সীমায় আসল কালো চুল! চোখাচোখি হতেই হাসলাম আমি! হায়, উত্তরে কঠিন এক দৃষ্টি এবং কালো চুলের প্রস্থান! আমি বিরাট গাধা নাকি চোখ দুটো ছলনাময়ী তা ভাবার চেষ্টা করলাম এবার!

সপ্তম দিনঃ

সকাল নয়টার সময় আমি দাঁড়িয়ে আছি বন্ধ একটা দরজার সামনে। আজ বছরের প্রথম দিন, আর মা কিনা আমাকে এরকম একটা অপমানের ভেতর ফেলল! "সামনের বাসার ওদের ওখানে একটু যা। আজ দুপুরে ওরা খাবে আমাদের এখানে, আমি ফোনে বলেছি। তুই গিয়ে আবার একটু বলে আয় শুভ। " আমি যখন তীব্র আপত্তি জানালাম, তখন আরো তীব্র ধমক দিয়ে মা আমাকে পাঠিয়ে দিলেন! গতকাল সন্ধ্যার কথা মনে পড়ছে! ইচ্ছে হচ্ছে বেলে চাপ না দিয়ে একটা দৌঁড় দিই, যেমন দৌঁড় দিতাম ছোটবেলা স্কুল পালানোর সময়! এমন সময়ই হঠাৎ খুলে গেল দরজা। আমি কিছু বলার আগেই শুনতে পেলা্ম, "দরজার সামনে এসে এরকম দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ভেতরে আসুন"। সোফায় বসলাম প্রচন্ড অস্বস্তি নিয়েই। " আজ তো নতুন বছর । হ্যাপি নিউ ইয়ার ও তো বললেন না। বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাসতে পারেন কিন্তু সামনাসামনি কথা বলতে পারেন না? আচ্ছা আপনি এরকম ক্যাবলা কেন বলুন তো!"। এর সাথে মুখ চাপা হাসি! আমি ঘেমে যাচ্ছি রীতিমত! আর কোনমতে বললাম , "হ্যাপি নিউ ইয়ার"!

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১২ ভোর ৬:৫৬
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×