বর্তমান সময় নানারকম নামে বাজারে থ্রিলার আসে। আর সেই থ্রিলার পড়তে পড়তে এমন বদঅভ্যাস হয়ে গ্যাছে যে জীবনমুখী উপন্যাস আর পড়াই হয় না। তবে অনেক দিন পর মনে গেথে যাওয়ার মত একটি উপন্যাস পাঠ করলাম। ছোটগল্পে বনফুলের মুন্সিয়ানার বিষয়ে আংগুল তুলবে এমন মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম বলে আমার ধারণা। বনফুলের অনেক ছোটগল্প পড়লেও তার উপন্যাস পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিলো না। থাকি মফঃস্বল শহরে,স্থানীয় লাইব্রেরিতে হুমায়ূন আর জাফর ইকবাল ছাড়া অন্য কোন বই পাওয়া দুষ্কর। আর জেলা গণ গ্রন্থাগারের অবস্থাও শোচনীয়,বইয়ের সুবিশাল সংগ্রহশালা থাকলে সেখানে বই খুজতে যাওয়া আর ছোটবেলায় ঝোপের মধ্যে টেনিস বল খুজতে যাওয়া দুটোই সমান। এইসব কারণেই বনফুলের উপন্যাস পড়ার ইচ্ছা থাকলেও,পড়া হয়ে ওঠেনি। এইবার উপন্যাস সম্পর্কে আসি।
বনফুলের লেখার মধ্যে দেখা যায় অল্প কথায় পাঠকের মনের জানালা খুলের দেবার একটা প্রবণতা। নির্মোক ও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে জীবনধর্মীতে একটু বেশী বিস্তারিত হলেও তা বিরক্তির উদ্রেক করে না। বরং পড়ার আগ্রহ দ্বিগুণ হয়ে যায়। নির্মোক পড়ার ক্ষেত্রে আমার এমন অনুভূতি হয়েছে। লেখক আশেপাশের প্রকৃতি বর্ণনায় অযথা বাক্য ব্যয় না করে প্রধান চরিত্রের উপর বেশী আলোকপাত করেছেন। লেখকের সময়ের জীবনধারা ক্যামোন ছিল,মানুষের মনোভাব ক্যামোন ছিল ,চারপাশে রাজনীতির কুটিলতার প্রভাব কতটা ছিল উপন্যাসে এসব জিনিস বেশ প্রাধান্য পেয়েছে। উপন্যাসের সেই শুরু থেকেই লেখক যে ডাক্তার তার প্রমাণ পাওয়া যায়। ডাক্তারীবিদ্যার ষোলআনা ফায়দা তুলেছেন বনফুল এই উপন্যাসটিতে। একজন ডাক্তারের মোটামুটি আত্মজীবনী বলা চলা চলে উপন্যাসটিকে। সেই আত্মজীবনী্তে চড়াই উতরাই,আত্মগ্লানি সব কিছু ঠাই পেয়েছে। জীবনের ছোট ছোট সুখ লেখকের চোখে বড় হয়ে ধরা পড়েছে। দুঃখকে তুলনামূলক কম প্রাধান্য দিয়েছেন।
আমি খুব বেশী তৃপ্ত এই উপন্যাস পাঠ করে। কারণ মানুষের এই সুবিশাল জীবনের এত সুন্দর বর্ণনা,ছোট ছোট সুখ,মায়া-মমতাবোধ অপরাধবোধ লেখক এত সুনিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে তা সত্যিই মনে গেথে থাকার মতো।
হ্যাপী রিডিং।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৩৪