আধুনিক সভ্যতার সবচেয়ে বড় অভিশাপগুলোর একটা স্মার্টফোন। এর বিস্তৃত ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক দিকটি এর প্রধান সুবিধা এবং প্রধান সমস্যা। তবুও সবদিক বিবেচনায় আমরা অল্প-বিস্তর স্মার্টফোন ব্যবহারে বাধ্য। স্মার্টফোনের প্রয়োজনীয় দিক বিবেচনায় নিয়ে ঠিক কত বছর বয়সে স্মার্টফোন ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া যাবে তার কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। যেহেতু এটি সবসময় ক্ষতিকর, তাই বিবেচনায় নেয়া যায়, এটি কতটুকু প্রয়োজন।
স্মার্টফোনের ব্যবহার নিয়ে যায়েয-নাযায়েযের প্রশ্ন থাকলেও, পরীক্ষার হলে যে তার কোন নৈতিক প্রয়োজন নেই, তা তর্কাতীত বিষয়। একজন শিক্ষার্থী থেকে এমন আচরণ যেমন কাম্য নয়, তেমনই এমন আচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সে শাস্তি কতটা হবে বা শাস্তির মাত্রায় আত্মহত্যা যৌক্তিক হয়ে যায় কি না, তা নিয়ে আবার অনেকে তর্ক জড়াবেন। সে তর্ককে একপাশে রেখে বরং এ ক্ষোভের উৎস কোথায় তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।
সন্তানকে তথাকথিত ভাল ইস্কুলে পড়ানোর মত সামর্থ্য খুব কম বাবা-মায়েরই থাকে। তথাকথিত অধিকাংশ বেসরকারি ভাল ইস্কুলে পড়ার মত মেধা বা আর্থিক সামর্থ্য নেই অধিকাংশ শিক্ষার্থীর। স্বীকার করি বা না করি, একটা গোপন আক্ষেপ বা ক্ষোভ আমাদের কিন্তু থেকে যায়। আবার একজন সরকারি কলেজের ছাত্র যে অর্থে দুবার উচ্চ মাধ্যমিক পড়া শেষ করতে পারে, অনেক বেসরকারি কলেজে তা একমাসের বেতন। তাই পড়ছে বা পড়ে এসেছে এমন অনেক ছাত্রও নিজের বিদ্যালয় বা মহাবিদ্যালয়ের প্রতি একটা ক্ষোভ পুষে রাখে।
আবার বেসরকারি এ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) কাজ করে শিল্প কারখানার মত, যেখানে মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানের মান রক্ষার লক্ষ্যে মান ধরে রাখতে না পারা কাঁচামাল সরিয়ে ফেলা হয়। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কারণে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেয়া এদের নিত্যকর্ম হয়ে উঠেছে। এসব অনৈতিক বা অন্যায় আচরণ ক্ষুদ্ধ করে বাকী অংশকে।
বিশাল একটা অংশের তাই নানাকারণে, নানাভাবে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষোভ এ অভিযোগ প্রকাশের একটা সুযোগ হয়েছে সাম্প্রতিক এ ঘটনাটির পর। যেখানে অরিত্রির আত্মহত্যা বা তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডেও আমরা মৌন সমর্থন দিচ্ছি প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্য অনৈতিক আচরনের প্রতিবাদ হিসেবে। সবচেয়ে বড় বিষয়, এটি একটি ইশ্যুতে পরিণত হয়েছে, যার পক্ষে বা বিপক্ষে দুদিকেই মতামত আসছে। মতামত যাই আসুক, প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিও আমার সমর্থন নেই, সমর্থন নেই অরিত্রির প্রতিও। তবে আমার মতে এমন ঘটনায় শিক্ষিকাদের এভাবে অভিযুক্ত করাও অনৈতিক। আমি আমার দৃষ্টি দিয়ে দেখলাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৭