মূল পোস্ট : এবারের বিজয়ের প্রকাশ হোক ওয়েব দুনিয়ায়
জাতি হিসেবে আমাদের কাছে ডিসেম্বর মাসের অর্থই অন্য রকম। এ মাসেই যে আমাদের বিজয়ের দিন! অত্যাচার-নিপীড়ন, হত্যা, সাম্রাজ্যবাদী চোখ রাঙানী- সবকিছুকে উপেক্ষা করে আজ হতে চার দশক আগে ডিসেম্বর ১৬, ১৯৭১ জন্ম নেয় এক নবীন শিশু। বাংলাদেশ তার নাম।
‘বিজয়ী হয়ে ফিরব, নইলে ফিরবই না’- এই অনন্য প্রতিজ্ঞায় ভর দিয়ে যে দেশের লাখো তরুণ অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে, বিজয়তিলক সেদেশের ললাটলিখন হিসেবে অবধারিত হয়ে পড়ে। বিশ শতকের বিশ্ব রাজনীতির বিস্ময় বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
কেমন ছিলেন এই তরুণেরা, জাতি সম্মানভরে যাঁদের নাম দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা? রাত জেগে বই পড়ে, ঠিক সময়ে খাওয়া-গোসল না করে, সন্ধ্যার অনেক পরে বাসায় ফিরে মায়ের বকুনি খাওয়া এক একটা আটপৌরে সাদাসিধে ঘরের ছেলে। অথচ, চোখের নিমিষে কেমন করে বদলে গেল তারা! বুকের ভেতরে জ্বলে উঠল অসীম সাহসের আগুন। মুরগি জবাই দেখতে পারতো না যে ছেলে, সেই দীর্ঘ ন’মাস ধরে রক্তের নদীতে সাঁতার কেটেছে! তারা লড়েছেন সেদিন ‘সময়ের প্রয়োজনে’।
হ্যাঁ, এঁরা এঁদের সাধ্যের বাইরে গিয়ে দেশের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন। আর সেটি করতে পেরেছেন বলেই ১৬ই ডিসেম্বর দিনটা সারা দুনিয়াতে শুধুই আমাদের। আমরা এর নাম দিয়েছি ‘বিজয় দিবস’। তাহলে কি এটাই দাঁড়ায় না যে, দেশের জন্য, মায়ের জন্য সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু করাটাই ছিল এক একজন মুক্তিযোদ্ধার চেতনা।
আজ আর অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ নেই। তাই বলে, যে চেতনায় সওয়ার হয়ে আমরা রক্তপিচ্ছিল বিজয়ের পথ ধরে এগিয়ে গিয়েছিলাম, সে চেতনা মরে যায় নি। একুশ শতকের এক দশক শেষে আমরা এখন নতুন যুদ্ধের মুখোমুখি। না, বাইরের কোন আগ্রাসন আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে না। আমরা নিঃসন্দেহে মাথা উঁচু করে চলা একটি সার্বভৌম জাতি। কিন্তু, অশিক্ষা, দারিদ্র, দূর্নীতি, বিশ্বের কাছে নিজেকে চিনিয়ে দেবার অপারগতা মিলিয়ে সৃষ্ট এক দুঃসহ বেড়াজাল আজ আমাদের সামনের দিকে এগুনোর সুযোগই দিচ্ছে না।
এই জগদ্দল পাথরটিকে অবিলম্বে সরিয়ে দেয়া না গেলে উন্নত জীবনের দিকে আমাদের অনিঃশেষ পদযাত্রা ব্যাহত হবেই। এ রকম পরিস্থিতিতে, মুক্তিযোদ্ধারা আবার আমাদের সামনে এসে দাঁড়ান। তাঁরা সেই রক্তঝরা সময়ে দেশের সেবায় সেই কাজটিই করেছিলেন, যা ছিল ঐ মূহুর্তে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং তাঁরা তা করেছেন স্বেচ্ছায়-নিজেদের জীবন বাজি রেখে। ফলে, আমাদের সময়ে ঐ সেবামূলক কাজগুলো করতে হবে যা এই মূহুর্তে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং সেটি করতে হবে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়েই, যদি সত্যিই আমরা আমাদের সেইসব মহান যোদ্ধাদেরকে আমাদের চেতনায় স্থান দিই! তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এর চেয়ে প্রকৃত কোন পন্থা আর কি হতে পারে ?
অথচ, দুঃখজনক হচ্ছে, বছরের পর বছর ধরে এই সম্মান জানানোর প্রথাটি বন্দী হয়ে আছে কেবলমাত্র কিছু শূন্যগর্ভ বক্তব্য-বিবৃতি, কর্পোরেট বিজ্ঞাপন, ভোজ কিংবা গান আর আবৃত্তির ঘেরাটোপে। এই বন্দীদশা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদেরকেই।
এই বিজয়ের মাসে আসুন না স্বাধীনতার যোদ্ধাদের বীরত্ব আর আত্মত্যাগকে স্মরণ করি কিছু স্বেচ্ছাসেবা মূলক কাজের মাধ্যমে- অন্ততঃ একটি হলেও সেবামূলক কাজ করি কমিউনিটির জন্য। হোক ছোট, তবু দেশের বিভিন্ন অর্গানাইজেশন, কর্পোরেশন, স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, হাসপাতাল, শপ, মিডিয়া আউটলেট থেকে অল্প কিছু সেবা বাংলাদেশকে নতুন আরেকটি মুক্তি আন্দোলনের পথে এগিয়ে দিতে পারে অনেকদূর।
সেই লক্ষ্যেই বিগত বিজয় দিবসে কমিউনিটিঅ্যাকশন ও ওয়ান ডিগ্রি ইনিশিয়েটিভ একসাথে ‘সেবার মাধ্যমে বিজয়ের প্রকাশ’ - এই চেতনায় কাজ করার উদ্দ্যোগ নেয়। এর সাথে একাত্মতা ঘোষনা করে আরো ৪২টি দেশী-বিদেশী সংস্থা। প্রত্যেকেই নিজের সাধ্য ও কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী কাজ করেন। শীতবস্ত্র বিতরণ, রক্তদান কর্মসূচী, মাদক বিরোধী শোভাযাত্রা, বয়স্কশিক্ষা থেকে শুরু করে অর্থ সংগ্রহ পর্যন্ত যার পক্ষে যা সম্ভব তাই করেন। যেমন- একদল রিকশাওয়ালা নিজেদের রিকশা করে ঔষধ বিতরন করে দেন। বিজ্ঞাপনমূলক ফিরিস্তী না দিয়ে শুধু ইউটিউব আর ব্লগস্পটের লিংক দেয়া হলো।
ইউটিউব ভিডিও
ব্লগস্পট লিংক
গত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও ‘সেবার মাধ্যমে বিজয়ের প্রকাশ’- এই শ্লোগানে উদ্বুদ্ধ হয়ে কমিউনিটিঅ্যাকশন (CA)
এবং ওয়ান ডিগ্রি ইনিশিয়েটিভ (1di) কাজে নেমে পড়েছে। সাথে প্রথম বারের মত যোগ দিচ্ছে Bangladesh Youth Environmental Initiative (BYEI)
আপনি যদি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকেন এবং কোন সংগঠনের সদস্য হোন, তাহলে আপনি আপনার সংগঠনকে যুক্ত করতে পারেন ‘সেবার মাধ্যমে বিজয়ের প্রকাশ’ এ। আপনাদের অংশগ্রহনের কথা নিশ্চিত করে আমাদের ই-মেইল করুন, [email protected]- এই ঠিকানায়।
প্রবাসী বাংলাদেশীরা এর সাথে যোগ দিতে পারেন যে কোন ধরণের চ্যারিটি তাদের স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটি তে আয়োজন করে।
তবে বিজয় দিবসেই, বা ডিসেম্বরেই করতে হবে কিছু, এমন নয়। আপনি কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন এখন, কাজ করলেন পরে সময় করে -- বিস্তারিত পাবেন এখানে : www.facebook.com/cvtv71
এবার আসি আসল কথায়।
বাস্তব দুনিয়ায় সেবামূলক কাজের সাথে সাথে এখন সময় এসেছে ভার্চুয়াল জগতের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়ার। বিজয়ের প্রকাশ এবার অনলাইনেও শুরু হোক। রাষ্ট্র ও জাতি হিসেবে আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও নৃতাত্ত্বিক ঐশ্বর্য্য, উন্নত সংস্কৃতি, অসামান্য শৌর্য্য-বীর্য্য, দূর্যোগ হতে ঘুরে দাঁড়াবার প্রতিজ্ঞা, সাম্প্রতিক অর্জন- এসবের কোনকিছু সম্পর্কেই বিশ্ববাসী জ্ঞাত নয়। অন্যদের কথা বাদ- আমরা নিজেরাও এ সম্পর্কে সচেতন নই।
তাই, ওয়েব দুনিয়ায় বাংলাদেশকে তুলে ধরবার এখনই সময়। আপনি যদি প্রতিদিন একটি ঘন্টা ওয়েব দুনিয়ায় ঘোরাঘুরি করেন তবে সেখান থেকে অন্ততঃ দশটি মিনিট আপনার দেশকে দিন। আপনার সাধ্য এবং আগ্রহের ক্ষেত্র অনুযায়ী আপনি নিজেই সিদ্ধান্ত নিন কিভাবে এ সময়কে ব্যয় করবেন।
"সাইবার সেবার" কিছু উদাহরণ দেয়া যাক।
১. ওয়েব দুনিয়ায় এখন তথ্য সংগ্রহের সবচাইতে জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে উইকিপিডিয়া। ইংরেজী সহ বিশ্বের প্রথম সারির সবগুলো ভাষাতেই মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই বিশ্বকোষটি দিন কে দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে। কিন্তু, ভাষাভাষীর দিক থেকে বিশ্বে অস্টম ভাষা বাংলায় উইকিপিডিয়ার কী করুণ দশা! ইংরেজীতে যেখানে ৩৫ লক্ষের কাছাকাছি নিবন্ধ রয়েছে, সেখানে আমাদের রয়েছে মাত্র ২১,৯৩৬টি। প্রয়োজনীয় টপিকগুলোর জন্য এখনো ইংরেজী ভার্শনের উপরেই নির্ভর করতে হয়।অথচ, আপনি খুব সহজেই এখানে অবদান রাখতে পারেন। উইকিপিডিয়াকে সমৃদ্ধ করুন। দেশের কথা দেশের ভাষাতেই তুলে ধরুন। ব্লগিঙকালে দেশ নিয়ে যা ভাবেন কিংবা বলেন তাই একটু সাজিয়ে গুছিয়ে নতুন নতুন টপিকের অধীনে লিখে ফেলুন উইকিপিডিয়ায়। স্থাপত্যে বাংলাদেশী এফ আর খানের অবদান নিয়ে লিখুন। ভার্চুয়াল শিক্ষা সম্প্রসারনের অগ্রদূত সালমান খানকে নিয়ে লিখুন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে নিয়ে লিখুন। বাংলায় লিখুন। ইংরেজীতে লিখুন। কোন বাধা নেই। বিশ্ব চিনুক বাংলাদেশকে।
উইকিপিডিয়ান ও সনামধন্য ব্লগার রাগিব হাসান এ ব্যাপারে সাহায্যের হাত বাড়িয়েই রেখেছেন। বিশেষ করে আসুন, গড়ে তুলি জ্ঞানের ভান্ডার আপনাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করবে। এছাড়া সাদাচোখের সাহায্যও নিতে পারেন।
২. আপনি যদি ফটোগ্রাফার হোন, তাহলে দেশকে নিয়ে আপনার ছবি শেয়ার করুন। বাংলাদেশকে নিয়ে যেখানেই টপিক পাবেন, সেখানেই প্রাসঙ্গিক ছবি সম্ভব হলে স্বত্ত্বারোপ না করেই দান করুন। বিশ্ব দেখুক এক নতুন বাংলাদেশ। বিস্তারিত
৩. একই কাজ আপনি গুগল ম্যাপে গিয়েও করতে পারেন। ঐ ম্যাপে আপনি আপনার এলাকার দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক স্থানসমূহ চিহ্নিত করে দিন। সম্ভব হলে ছবি লাগিয়ে দিন।
৪. উপরের কোন কিছুই আপনার পক্ষে করা সম্ভব নয়? আপনি কি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং নিয়ে বেশি ব্যস্ত? ব্লগিং সময় দিয়ে অন্য কিছু ভাবতে পারেন না। সমস্যা নেই। এই অবস্থানে দাঁড়িয়েও আপনি দেশের কাজে আসতে পারেন। দেশের ছোট-বড় সব রকমের পজেটিভ ঘটনা শেয়ার করতে থাকুন। জানিয়ে দিন যে, আমরা এখন আর জাহাজ ভাঙার কারিগর নই। আমরা জাহাজও বানাই। দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমরাই বিশ্বের শীর্ষে। আপনার প্রবাসী-বিদেশী বন্ধুদের বাংলাদেশ সম্পর্কে জানান। দূর্যোগ কবলিত দরিদ্র বাংলাদেশের স্থানে সাহসী ও প্রত্যয়ী বাংলাদেশকে তুলে আনুন।
এভাবে আরও অনেকভাবেই আপনি আপনার প্রানের দেশকে তুলে ধরতে পারেন অনলাইনে। আপনার ইচ্ছেশক্তিটাই হচ্ছে আসল কথা। এ ব্যাপারে আপনার কোন পরামর্শ থাকলে তাও এখানে জানিয়ে দিন। সাদরে গৃহীত হবে।
সাধ্যের মধ্যে একটু সময় দিন। সবার ছোট্ট-ছোট্ট প্রচেষ্টা মিলেই একদিন আমরা দাঁড়িয়ে যাব শক্ত ভীতের উপর। হতদরিদ্র বলে কেউই তখন আর নাক সিঁটকাবে না। আমরা সবাই সেদিনের অপেক্ষায় আছি।আসুন, ভার্চুয়াল দুনিয়ায় একত্রিত হই। শুরু হোক "Cyber সেবা" আর এবারের বিজয়ের প্রকাশ হোক অনলাইনে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশকে তুলে ধরার অবিরাম প্রচেষ্টার ভেতর দিয়ে।
ধন্যবাদ।