‘হাতের লেখার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে, এর উন্নতি করতে হবে; কিন্তু কীভাবে?’ নিজের লেখার মর্মোদ্ধারে ব্যর্থতার হতাশায় পুড়তে থাকা এক যৌবনে পদার্পণ করতে থাকা তরুণকে হঠাৎ এই ভীতিপ্রসবিনী চিন্তায় পেয়ে বসে। এই ভয়ানক ভীতিকর প্রায় সমাধান-অসম্ভব দুশ্চিন্তার কোন প্রতিকার সাধনে সে সঙ্গত কারণেই সমর্থ হলো না, কেবল হতাশার জোট শক্তিশালী হলো আর তার মধ্যে হতাশাজনিত পূর্ব-হতেই-উপস্থিত উপসর্গগুলোর মাত্রা বৃদ্ধি পেল। একটা সময় ছিলো, তার ভুলে-ভরা চিঠিগুলোও মেয়েদের চিত্তে দুলকিচালে নরম দোলা দিতো, ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেতো তাদের কোমল হৃদয়, হৃদয় ছুঁতে গিয়ে অবশ্য স্তনের স্তরও উপেক্ষা করতো না, কেবল তার ভয়ানক সুন্দর হাতের লেখার গুণে। এমনি করে সে কম করে হলেও খান পঞ্চাশেক মেয়েকে তার প্রতি আসক্তও করেছিলো। কিন্তু সে সুসময় এখন মহাকালের অতল গর্ভে নির্বাণপ্রাপ্ত; মোবাইল আর ল্যাপটপে চলতে চলতে তার হাত আজ কলম চালাতে ভুলে গেছে, যেমনভিাবে তার পূর্বপুরুষের হাত কলম চালাতে চালাতে একদা ভুলে গিয়েছিল লাঙল চালাতে। তবে এতে তার তেমন কোন ক্ষতি হয়নি, সত্যি করে বলতে গেলে, তার কোন ক্ষতিই হয়নি; কারণ মেয়েরা প্রেম করার জন্য কিংবা পাশে বসার জন্য কিংবা প্রেমের নামের আড়ালে শোয়ার জন্য হাতের লেখা দেখে না; আসলে তারা যে কী দেখে প্রেম করে বা পাশে বসে কিংবা প্রেমের নামের আড়ালে শোয়, তা এক রহস্যই বটে! এ এক রহস্য কারণ তা অজানা- এ জন্য নয়, বরং এটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না এজন্য; তবে তা ভাষায় প্রকাশ করা না গেলেও অনেক ছেলেরই তা নখদর্পণে, আর যাদের তা নখদর্পণে নেই, তাদের অনেকেরই তা মোটামুটি রকমের করায়ত্ত; বাদবাকিরা মেয়েদের পিছে ঘুরে, টাকা থাকলে পকেট উজাড় করে, না থাকলে তাও উজাড় করে হা-হুতাশ আর ঈর্ষাবোধ করে; তাদের আর কী-ই বা করার আছে! অবশ্য তারা আরেকটা কাজ করতে পারে, এবং করেও- স্মৃতি হাতড়িয়ে হস্তমৈথুন!
যাহোক, সেই ভয়ানক চিন্তায় আমস্তিষ্ক নিমজ্জিত যৌবনে পদার্পণ করতে থাকা তরুণ চিন্তায় চিন্তায় যখন নেশায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত হতে চলেছে, আচমকা উদ্ধারের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনায় পূর্ণ সম্ভাবনার কথা সে তার ভাবনা হতে উদ্ঘাটন করলো; তার প্রেম কিংবা প্রেমের নামের আড়ালে শোয়ার সম্পর্কে আবদ্ধ মেয়েদের কোন একজনের সাথে গাড়িতে করে যেতে যেতে প্রেম কিংবা প্রেমের নামের আড়ালে শারীরিক উপাসনা কিংবা নষ্টামির ফাঁকে সাইন্সল্যাব কি ফার্মগেটের মোড়ে দেখা এক চিকার কথা তার মনে পড়ে- ‘এখানে সুন্দর হাতের লেখার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়’। সে তার আকস্মিক আবিষ্কারের উত্তেজনায় কিংবা চিন্তার ভয়াবহতা থেকে যথাশীঘ্র মুক্তির আকাঙক্ষায় তখনই, রাত দেড়টায়, বোতল-পোটলা-ল্যাজ-ট্যাবলেটসহ যাবতীয় নেশার সামগ্রী ফেলে অর্ধনগ্ন অবস্থায় ছুটে গেল সাইন্সল্যাবের মোড়ে, আলোকস্বল্পতায় ফোন নাম্বার ঠিকমত বুঝতে না পারায় ফের ছুটে গেল ফার্মগেট, তারপর উদ্ধারকৃত নাম্বারে ফোন দিল; কিন্তু ফোন কেউ রিসিভ করলো না; হয়তো সেই ব্যাক্তি সুন্দর হাতের লেখার গুণে কিংবা কোন গুণ ব্যতিরেকেই পাওয়া স্ত্রীর সাথে সঙ্গমে রত কিংবা পরস্ত্রীর সাথে সঙ্গমের কল্পনায় বিভোর কিংবা সঙ্গম বা সঙ্গমের কল্পনাশেষে সে এখন গভীর ঘুমে নিমগ্ন! তবে সে যে ঘুমানোর আগে ব্যাকুল হয়ে সঙ্গমের বদলে সঙ্গমের কল্পনায় হস্তমৈথুন করতে বাধ্য হয়নি, তা আমরা নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারছি না।
অন্যদিকে অনবরত হাতের লেখা সুন্দর করার প্রশিক্ষণকেন্দ্রে কিংবা কোচিং সেন্টারে ফোন দিতে দিতে সেই যৌবনে পদার্পণ করতে থাকা তরুণ একসময় রাতে তার ফোন রিসিভড না হওয়ার বাস্তবতা অনুধাবন করে অর্ধনগ্ন অবস্থায় ফিরতে থাকে বাসায়; আর তাকে দেখে পথে পথে আনন্দ পেতে থাকে নৈশসুন্দরীর সাথে রাত কাটানো শেষে ভোরের আলো প্রকাশিত হওয়ার পূর্বেই ঘরে ফিরতে থাকা নিতান্ত সংসারী জোয়ান-বুড়ো-তরুণ-যুবাগণ; ভোরের আলোর সাথে ঘরে প্রবেশ করে সেই যৌবনে পদার্পণ করতে থাকা তরুণ দিনের প্রকাশের সাথে সাথে ঘুমিয়ে পরতে থাকে।
পরেরদিন সেই নাম্বারে ফোন করে যোগাযোগ করে সে পৌছে যায় হাতের লেখা সুন্দর করার অসাধারণ জাদুকরী প্রলয়ংকরী কার্যকরী অর্থকরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা কোচিং সেন্টারে, যেখানে পা দিলে হাতের লেখা সিগারেটের মূল্যের মত পরিবর্তিত হতে থাকে, যেখানে ভর্তি ফি পরিশোধ করলে হাতের লেখা বেদানার মত সুন্দর হতে থাকে, যেখানে ক্লাশ করলে হাতের লেখা ঝিনুকের মত ঝকঝক করতে থাকে, যেখানে কোর্স শেষ করলে কলম থেকে হীরা-মণি-মুক্তা মূত্রের মত ঝরতে থাকে। সেই যৌবনে পদার্পণ করতে থাকা তরুণের হাতের লেখা নিয়ে আর কোন দুশ্চিন্তা করার কোন প্রয়োজন নেই, তার সকল দুশ্চিন্তা মহান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা কোচিং সেন্টার তার অসাধারণ জাদুকরী প্রলয়ংকরী কার্যকরী অর্থকরী কাঁধে কৃপা করে তুলে নিয়েছে। অতএব সে এখন নিশ্চিন্তে খেতে পারে, ঘুমাতে পারে, টয়লেটও করতে পারে; কোন মেয়ের সাথে প্রেম বা প্রেমের নামের আড়ালে সঙ্গম করার সময় তার মাথায় আকস্মিক হাতের লেখা সংক্রান্ত দুশ্চিন্তার আক্রমণ তার ক্ষরণে ব্যঘাত ঘটাবে না, সে সঙ্গমের কথা মনে করে রাতে শিশ্নে শান দেওয়ার সময় সে দুশ্চিন্তার আক্রমণে তার শিশ্ন নেতিয়ে পরবে না, রাম কিংবা হুইস্কি খাওয়ার সময় সেই দুশ্চিন্তার আবির্ভাবে তার পেগের পরিমাণে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটবে না, দুশ্চিন্তার হাত থেকে মুক্তির জন্য তাকে আর পোটলা-ল্যাজ-ট্যাবলেটের শরণাপণ্ণ হতে হবে না; তার জীবন এখন নিরাপদ, নিশ্ছিদ্র, নিরবচ্ছিন্ন, নির্ভার!
আসলেই কোচিং সেন্টারগুলো তুলনাহীনা! ওগুলো না থাকলে যৌবনে পদার্পণ করতে থাকা তরুণদের যে কী হতো! তাদের জীবনটাই তো নষ্ট হয়ে যেতো। তাদের জীবনের প্রধান অংশ ও অঙ্গই তো এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা কোচিং সেন্টারগুলো। কোচিং ছাড়া কি আর জীবনযুদ্ধে একটা পাও ফেলা যায়! তাদের বাপ-দাদারা যে কিভাবে কোচিং ছাড়া জীবন যাপন করতো!
‘বাপ-দাদারা যে কিভাবে কোচিং ছাড়া জীবন যাপন করতো!’ যৌবনে পদার্পণ করতে থাকা তরুণের হাতের লেখা সুন্দর করার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা কোচিং সেন্টারের কল্যাণে প্রাপ্ত নিশ্চিন্ত নির্ভার নিরবচ্ছিন্ন জীবনে হঠাৎ এই দুর্ধর্ষ প্রশ্ন হানা দিলে আবার তার পৃথিবী মাতালের মত টলে ওঠে। তবে সে এবার এই ভয়ানক চিন্তায় আমস্তিষ্ক নিমজ্জিত হয়ে নেশায় আকণ্ঠ নিমজ্জন করে না; কারণ সে জানে তার সকল সমস্যা দূর করার জন্যই আছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা কোচিং সেন্টারগুলো! সুতরাং সে এবার এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য বিশেষায়িত কোচিং সেন্টার খুঁজে বের করতে অভিযানে নেমে পড়ে, যে অভিযানের শেষে নতুন কোন সমস্যার উদ্ভবের আগ পর্যন্ত সে আবারও লাভ করবে নিরাপদ, নিশ্ছিদ্র, নিরবচ্ছিন্ন, নির্ভার জীবন!
[পরিশেষে একটি শিক্ষামূলক প্রস্তাবনা : আসুন, আপনারা যারা এখনো জীবনের সকল স্তরে কোচিংয়ের অনস্বীকার্য প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করে চলেছেন, তারা জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপের প্রতিটি পর্যায়ের প্রতিটি ঘণ্টার প্রতিটি মিনিটের প্রতিটি মুহুর্তের প্রতিটি পলে কোচিংয়ের অনস্বীকার্য ভূমিকা ও প্রয়োজনীয়তাকে অনতিবিলম্বে স্বীকার করুন এবং আপনার পক্ষে যতগুলো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা কোচিং সেন্টারে যতগুলো কোর্সে ভর্তি হওয়া সম্ভব, ভর্তি হউন। নচেৎ যারা কোচিং করে ফেলেছে, ফেলছে বা ফেলবে তারা জীবনযুদ্ধের ভয়ানক ময়দানে আপনাকে ল্যাং মেরে ভেংচি কেটে ধরাশায়ী করে ফেলবে! তখন অবশ্য আপনি চাইলে কোচিং সেন্টারগুলোর ‘না করিয়া পস্তাচ্ছি’ শীর্ষক বিজ্ঞাপনের মডেল হতে পারবেন!]
১৯.০৮.২০১০