পেটের উপরিভাগেসারাদিন অল্প অল্প করেব্যথা থেকে শুরু করে হঠাৎ তীব্র ব্যথা আর বদহজম বা আহার পরবর্তি ব্যথা - সবই সাধারন টার্মে আমাদের কাছে গ্যাস্টিক এর ব্যথা হিসেবে পরিচিত।
মেডিকেল টার্মে অবশ্য ব্যাপারটাকে পেপ্টিক/ গ্যাস্টিক আলসার এবং ডিওডেনাল আলসার হিসেবে প্রকাশ করা হয়।
আর সহজে বলতে গেলে, পাকস্থলিতে (স্টমাক-এ) বা ডিওডেনাম -এ আলসার তথা ক্ষত সৃষ্টি হওয়ার জন্য রোগকে আমরা সাধারন মানুষেরা গ্যস্ট্রিক এর সমস্যা বলে অভিহিত করি।
কেনো হয়?
প্রধানত স্টমাক এ অতিরিক্ত এসিডিটি হওয়ার জন্যই এই সমস্যা দেখা দেয়।অতিরিক্ত এসিডিটি হলে পাকস্থলী-র মিউকোসার বেরিয়ার নষ্ট হয়ে যায়, ফলে মিউকোসা লেয়ার এসিডের সংস্পর্শে আসে এবং আলসারেশান হয়। আর হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবে ও এই রোগ হয়, কেননা এই ব্যাকটেরিয়া প্রটেকটিভ মিকোসাল বেরিয়ার নস্ট করে দেয় এবং পাকস্থলির এসিডকে মিউকোসার সংস্পর্শে এসে আলসারেশান এর সৃষ্টি করে।
এখানে প্রশ্ন হতে পারে যে এই আসলার ব্যপারটা কি? এটা কি শুধু স্টমাক এ ই হয়?
শরীরের কোথাও লাইনিং টিস্যু (এপিথেলিয়াম) যেমন স্কিন বা ত্বক যদি কোনো কারনে নষ্ট হয়ে সেখানে ইনফ্লামেটরি সেল আসে তাকে আমরা আলসার বা ক্ষত বলি, সহজ ভাষায়, শরীরের যে কোনো স্থানের স্বাভাবিক আবরন নষ্ট হওয়াকেই আমরা আলসার বলি।
আর, ইতোমধ্যে বোঝা যাচ্ছে যে আলসার শরীরে যে কোনো স্থানে হতে পারে যেখানে স্বাভাবিক কোনো আবরন আছে।
পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক এর উপসর্গ:
* পেটের উপরিভাগে ব্যথা হওয়া
* খাওয়ার ঠিক পরপর ব্যথা বেড়ে যাওয়া (পেপটিক আলসার)
* খালি পেটে ব্যথা বেড়ে যাওয়া (ডিওডেনাল আলসার)
* খাওয়ার পর পর পেটের উপরিভাগে জ্বালাপোড়া করা
* গলায় জ্বালাপোড়া হওয়া এবং টক ভাব অনুভূত হওয়া
* বেলচিং তথা ঢেকুর ওঠা
* বদ হজম হওয়া
চিকিৎসা :
* বেশি করে পানি খেতে হবে
* খাওয়া নিয়ন্ত্রনে রেখে খেতে হবে (খুব বেশি পরিমানে খাওয়া যাবে না, বরং অল্প অল্প করে বেশি বারে খেতে হবে)
* খাদ্যে ফ্যাট তথা চর্বির পরিমান কমিয়ে আনতে হবে
* কফি & চকলেট খাওয়ার পরিমান কমাতে হবে, বেশি সমস্যা হলে বন্ধ ও করে দিতে হবে কিছু দিনের জন্য
* ধূমপান বন্ধ করতে হবে
যদি এভাবে জীবনযাপনের পর সমস্যা কমে না আসে অথবা যদি কখনো সমস্যা হঠাৎ করে বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে ঔষধ এর মাধ্যমে সমস্যা নিরসন করতে হবে।
ঔষধ:
* এন্টাসিড - লিক্যুইড ও ট্যাবলেট দুই ধরনের পাওয়া যায়, তবে হঠাৎ সমস্যা বেশি হলে ২ চা চামচ এন্টাসিড ভালো কাজ দিবে।
* H2 ব্লকার - রেনিটিডিন ট্যাবলেট নামে পরিচিত, খাওয়ার ১/২ ঘন্টা পূর্বে দিনে ২ বার করে খেতে হবে।
* প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর - ওমিপ্রাজল ট্যাবলেট নামে পরিচিত, এটাও খাওয়ার ১/২ ঘন্টা পূর্বে দিনে ২ বার করে খেতে হবে।
* এই গ্রুপে আরো ঔষধ রয়েছে, যেমন ইসোওমিপ্রাজল, প্যানটোপ্রাজল, র্যাবেপ্রাজল।
* এর ভিতর ইসোমিপ্রাজল এবং প্যানটোপ্রাজল খাবারের ১/২ ঘন্টা পূর্বে খেতে হবে, কিন্তু র্যাবেপ্রাজল, খাবারের ঠিক পূর্বে এমনকি পরেও খাওয়া যেতে পারে।
হঠাৎ খুব গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে কি করবেন?
এক্ষেত্রে লিক্যুইড এন্টাসিড খুব ভালো কাজ দিবে।
আর অল্প পরিমানে ঠান্ডাপানিও খুব ভালো কাজ দিবে।
সাথে র্যাবেপ্রাজল এর ২টা ট্যাবলেট খেয়ে নিলে উপকার পাওয়া যাবে।
সমস্যা বেশি হলে শিরায় ওমিপ্রাজল ঘরানার ঔষধ ও নেয়া লাগতে পারে।
হার্ট বার্নঃ
গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসার -এর উপসর্গের একটা পরিচিত টার্ম হচ্ছে হার্ট বার্ন! যেহেতু এই ব্যথা পেটের উপরিভাগে (হার্টের নিকটে) হয়, সেহেতু এই ব্যথাকে হার্ট বার্ন বলা হয়।
স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস এবং শৃঙ্খলা বদ্ধ জীবন যাপনের মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব।
কমপ্লিকেশানঃ
* খাদ্যনালীতে ব্লিডিং হওয়া
* পারফোরেশান বা খাদ্যনালীতে ছিদ্র হওয়া
* খাদ্যনালী সংকুচিত হয়ে স্বাভাবিক খাদ্য সঞ্চালন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া (পাইলোরিক স্টেনোসিস)
প্রতিটা কম্লিকেশান-ই মারাত্মক এবং অতি সত্ত্বর সার্জিক্যাল ব্যবস্থা না নেয়া হলে মৃত্যু-র ও ঝুকি আছে এসব ক্ষেত্রে, সেজন্য পেপ্টিক/ গ্যাস্টিক আলসার এবং ডিওডেনাল আলসার কে খুব হালকা ভাবে না নিয়ে সচেতনতার মাধ্যমে একে কমিয়ে আনা এবংস্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস এবং শৃঙ্খলা বদ্ধ জীবন যাপনের চেষ্টা করা উচিৎ, আর, হঠাৎ কোনো অবস্থায় ঔষধের মাধ্যমে রোগকে নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
স্বাস্থ্য নিয়ে বেশির ভাগ ব্যপার-ই সঠিক ইনফরমেশান, আর সচেতনতার মাধ্যমে প্রায় ৬০% কমে আনা সম্ভব, সেজন্য নিজে জানুন-সচেতন হোন এবং পরিচিত জনকে জানিয়ে সচেতন করে তুলুন।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কপিরাইটঃ
অরিজিনাল পোস্টের কোনো অংশ পরিবর্তন না করে এবং রাইটার এর নাম "Dr N. H. Sarja" বা "ডাঃ এন. এইচ. সার্জা" এবং কন্টাক্ট হিসেবে " http://www.facebook.com/drnhsarja " ব্যবহার করে যে কেউ প্রিন্ট বা অনলাইন মিডিয়াতে হেলথ পোস্ট প্রকাশ করতে পারবেন।
ফেসবুক-এ আপডেট পেতে ফলো করুন – Dr. N. H. Sarja
টুইটার-র আপডেট পেতে ফলো করুন – @drnhsarja
স্বাস্থ্য ব্লগ – http://drsarja.wordpress.com/
কোনো প্রশ্ন বা সাজেশানথাকলে এখানে কিংবা ফেসবুক পেজ বা টুইটারে করতে পারবেন!