বর্ষার থম থমে মেঘ যখন পুরো আকাশটা ছেয়ে যায় তখন শহুরে কাকদের নিজস্ব একটা রিচুয়াল আছে। প্রকৃতির সাথে সংযোগ এই আমরা শহুরে মানুষেরা প্রায় সবটাই হারিয়ে ফেললেও পাখীদের ভিতরে অদৃশ্য বন্ধনটা অনেক বেশি পোক্ত। তাই বৃষ্টি নামার আগেই প্রকৃতির পরিবর্তনকে বুঝে নিয়ে সেটাকে উযযাপনের একটা সাড়া পড়ে যায় পাখীদের ভিতরে। তাই আজকে একটু আগে পুরো ঢাকার উপরে যখন ঘন কালো মেঘ তার আগে থেকেই পাখিদের ভিতরে কি একটা যে ব্যস্ততা সেটা অফিসের ভিতরে বসেও টের পাওয়া যাচ্ছিলো।
আমার বিগত জনমের কোন শুভ আমলের বদৌলতে একেবারে অফিসের বিল্ডিং ঘেষে একটা বিশাল কদমফুল গাছ। জীবনে কদম ফুলগাছের এত কাছে থাকিনি। চার তলার বারান্দায় দাড়ালে বড় গাছটার সাথে নিজেকে সমান ধরে নেওয়া যায়, ওর কান্ডকারখানা আর ফুল পাতার খেলাটা কাছ থেকে দেখা যায়। কদম ফুল গাছের কাছে থাকার একেবারে ঠিক সময় এটাই। বারান্দায় দাড়ালে ফুটে থাকে কয়েকশ কদম ফুলের মাদক গন্ধ আলিঙ্গন করে একসাথে। এই গাছটা যে এত দ্রুততার সাথে নিজেকে হালকা সবুজ সবুজ কদম ফুলের গুটিতে ছেয়ে ফেলবে এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা পুষ্ট হলুদ রঙের কদম ফুলে নিজেকে সাজাবে নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। প্রায় প্রতিদিন গাছটাকে দেখি, কদম ফুলগুলোর বেড়ে ওঠা দেখি, তারপরেও এখনকার পুরো বড় বড় কদম ফুলগুলো যে কিভাবে কখন এত বড়, এত সুন্দর হয়ে উঠেছে তা ধরা যায় নি একেবারেই।
এই বিরাট কদম গাছের সৌজন্যেই প্রচুর পাখির কিচিরমিচির। বৃষ্টির মেঘ করায় তাদের প্রাণচাঞ্চল্য আরো বিশাল আকার নিয়েছিলো। যখন ঢাকার আকাশ অনেক মেঘ থম থম তখন অফিসের বারান্দায় দাড়াতেই শহুরে কাকদের বৃষ্টি নামার পূর্বের সেলিব্রেশন রিচুয়ালটা চোখে পড়লো। খালি আকাশ, তার উপরে থোকা থোকা বৃষ্টির মেঘের নিচে গোল হয়ে তাদের সবার মিলে সেকি উড়ে বেড়ানো! শিশুরা যেভাবে মাঠে সবাই মিলে হাত ধরে গোল হয়ে খেলার ব্যাপারটা করে, কাকদেরও এর কাছাকাছি একটা ব্যাপার আছে। ওরা প্রায় পাখা স্পর্শ করে গোল হয়ে আকাশে উঠে বেড়ায় বৃষ্টির ঠিক আগে আগে। অথচ যখন বৃষ্টির ফোটারা নেমে আসে তখন কিন্তু ওরা আর ওড়ে না। কোন গাছের কোন পাতার নিচে ততনে তাদের আশ্রয় নেবার কাজ সারা।
ছবিগুলো গুলশান ২, ঢাকার আকাশ, অফিসের পাশের কদমফুল গাছের।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০০৯ রাত ৮:৫৬